নিউটন মণ্ডলঃ ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস! বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় দিবসটি যথাযোগ্য মর্যদায় বাংলাদেশেও পালন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নিজস্ব ক্যাম্পাসে অবস্থিত নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ-এ শিক্ষাদানরত শিক্ষকদের জন্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা, সিএসসি, রেজিস্ট্রার ফাদার আদম এস, পেরেরা, সিএসসি, প্রফেসর ফাদার ডেভিড বোরেল, সিএসসি, প্রফেসর প্রণব চন্দ্র দে সহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা শিক্ষকগণকে ফুলের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। স্বাগত বক্তব্যে উপাচার্য ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা, সিএসসি বলেন, ‘শিক্ষকতা হচ্ছে এক মহান পেশা। এ পেশায় যাঁরা নিয়োজিত রয়েছেন তাঁদেরকে আরও নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে। শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষককে হতে হবে আদর্শ মডেল ও শ্রেণীকক্ষের টেক্সট বুক’। ফাদার ডেভিড বোরেল, যিনি আমেরিকার নটর ডেম ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ও বর্তমান নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ-এর দর্শন শাস্ত্রের একজন শিক্ষক, তিনি তাঁর সহভাগিতায় বলেন, আমরা সব সময় শিখি। শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি তা গ্রহণের মনোভাবও থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী নোমান তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘আজকের দিনটা শিক্ষকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানোর এক মহান সুযোগ। আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ-এর সকল শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা আশা করব শিক্ষকগণ তাঁদের প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে সব সময় আমাদের সিক্ত করবেন যেন আমরাও ভবিষ্যতে অন্যদের সিক্ত করতে পারি’। শিক্ষকগণের উদ্দেশ্যে সুন্দর একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্যে সকল শিক্ষকগণের পক্ষে সহকারী অধ্যাপক রিদওয়ান রেজা নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ-এর রেজিস্ট্রার ফাদার আদম এস, পেরেরা-এর কাছে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে তাঁর মতামত, অনুভূতি ও ইউনেস্কো ঘোষিত মূলপ্রতিপাদ্য বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। আলাপচারিতায় তিনি জানান, মানবিক বিপর্যয় বা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে আক্রান্ত হয়েও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিনির্মাণে শিক্ষকগণ তাদের ভূমিকা রেখে চলেছেন। এ জন্য আমরা সকল শিক্ষকগণকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। তিনি আরও বলেন, বিশ্বখ্যাত দার্শনিক এরিস্টটল (খ্রি:পূ: ৩৮৪-৩২২) বলেছেন, “Educating the mind without educating the heart is no education at all” অর্থাৎ “হৃদয় গঠনের শিক্ষা ব্যতীত মন গঠনের শিক্ষা কোন শিক্ষাই নয়”। পরবর্তীতে পবিত্র ক্রুশ সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ধন্য ফাদার বাসিল মরো (১৭৯৯-১৮৭৩) বলেছেন, “…the mind will not be cultivated at the expense of the heart” অর্থাৎ “হৃদয়ের লোকসান দিয়ে মনের গঠন করা হবে না।” এই কারণে অন্যান্য মিশনারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ন্যায় নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়েরও মূল লক্ষ্য সকল শিক্ষার্থীর হৃদয় ও মন--উভয়েরই সুগঠন। আমাদের সকল শিক্ষকগণকে সেই লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে।
উল্লেখ্য যে, শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ হতে সারা বিশ্বে ৫ অক্টোবর দিনটি ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে ইউনেস্কো প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে। এ বছরও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, “শিক্ষকগণের ক্ষমতায়ন: টেকসই সমাজ বিনির্মাণ”, যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকতা পেশার মহান অবদানকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৩১