somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে নামানো হয়েছে। তারপরেও পোস্টটি লোড হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে আমি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে কলকাতা থেকে রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল নামে একজন ধনাঢ্য ব্যাক্তি টাঙ্গাইল জেলার পাকুটিয়ায় এসে ইংরেজদের কাছ থেকে ক্রয় সূত্রে মালিক হয়ে পাকুটিয়ায় জমিদারী শুরু করে।

রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডলের ছিল দুই ছেলে, বৃন্দাবন চন্দ্র মণ্ডলরাধা গোবিন্দ মণ্ডল
রাধা গোবিন্দ মণ্ডল ছিল নিঃসন্তান, অন্যদিকে বৃন্দাবন চন্দ্র মণ্ডলের ছিল তিন ছেলে। এরা হলো- ব্রজেন্দ্র মোহন মণ্ডল, উপেন্দ্র মোহন রায় ও যোগেন্দ্র মোহন মণ্ডল। নিঃসন্তান রাধা গোবিন্দ মণ্ডল তাঁর ভাই বৃন্দাবন চন্দ্র মণ্ডলের মেজ ছেলে উপেন্দ্র মোহন রায়কে দত্তক নেন।


পাকুটিয়া মধম্য তরফা, জমিদার উপেন্দ্র মোহন রায়ের বাসভবন











পাকুটিয়া মধম্য তরফা ভবনের মুকুট








মুকুটের মাঝখানে নীল ময়ূর


নিচ তলার বাড়ান্দার অংশ





ভবনের একপাশের অংশ


১৯১৫ইং সালের ১৫ই এপ্রিল প্রায় ১৫ একর এলাকা জুড়ে তিন ভাইয়ের নামে উদ্ভোদন করা হয়া পাশাপাশি তিনটি প্যালেস বা অট্টালিকা। তখন থেকে জমিদার বাড়িটি তিন মহলা বা তিন তরফ নামে পরিচিতি পায়। যদিও এর আরেক নাম "পাকুটিয়া সাত আনি জমিদার বাড়ি"। সাত আনি কেনো, সেটি আমার জানা নেই। অট্টালিকাগুলির নানান কারুকাজগুলি প্রায় একই রকম হলেও প্রতিটি মহল ছিলো আলাদা নকশায় তৈরি। তবে প্রতিটি মহলের ছাদের মুকুট ছিল প্রায় একই রকম দেখতে। প্রায় একই রকম দেখতে হলেও তাদের প্রতিটির ছিলো আলাদা আলাদা নিজস্ব সৌন্দর্য আর পার্থক্য।

জমিদার যোগেন্দ্র মোহন মণ্ডলের বাসভবন





জমিদার যোগেন্দ্র মোহন মণ্ডলের বাসভবনের মুকুট











জমিদার যোগেন্দ্র মোহন মণ্ডলের বাসভবনের পূর্ব পাশ


জমিদার যোগেন্দ্র মোহন মণ্ডলের বাসভবনের পিছনের দিক


জমিদার যোগেন্দ্র মোহন মণ্ডলের বাসভবনের পূর্ব পাশ

প্রতিটি জমিদার বাড়ির ছাদের উপরে মাঝ বরাবর মুকুট হিসাবে লতা ও ফুলের কারুকার্যময় প্রায় নগ্ন পূর্ণাঙ্গ দুই রূপসী নারী মূর্তি ছিল। কালের প্রবাহে তার অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেলেও কিছু কিছু অংশ এখন টিকে আছে। নগ্ন দুই নারী মূর্তির ঠিক মাঝখানে রয়েছে একটি নীল ময়ূর।


জমিদার বজেন্দ্র মোহন মণ্ডলের বাসভবন


জমিদার বজেন্দ্র মোহন মণ্ডলের বাসভবনের মুকুট







এছাড়া কোনো তরফের ছাদে আবার কোনো তরফের দ্বিতীয় তলার রেলিং বা কার্নিশের উপর রয়েছে কিছুদূর পর পর বিভিন্ন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য সুন্দর সুন্দর ছোট আকৃতির নারী মূর্তি। তাদের যেগুলি নগ্ন নয় সেগুলির কিছু কিছু এখনো টিকে আছে। তবে বেশ কিছু নারী মূর্তির উপরের অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। নিচের অংশ দেখে ধারনা করা যায় উপরের অংশটি হয়তো কিছুটা নগ্ন ছিলো বলেই এগুলি ইচ্ছে করে ভেঙ্গে ফেলেছে।



















জমিদার বাড়ির সামনে বিশাল মাঠ আর মাঠের একপাশে রয়েছে টিনের তৈরি দ্বিতল নাচঘর বা নাট মন্দির। সেকালে পূজার সময় ও পূজার পরে নাকি নাচে-গানে মুখর থাকত এই নাট মন্দির। টিনের তৈরি চৌচালা এই ঘরটি আকারে যেমন বড় তার গঠনও অভিনব।







জমিদার বাড়ির পশ্চিম দক্ষিণ দিকে আছে একটি মন্দির বা পূজামণ্ডপ। একসময় কলকাতা থেকে নামকরা সব কারিগর এসে দেবী দূর্গার মূর্তি তৈরি করতো পূজার আগে আগে। সেইসব দিন আর নেই। মন্দির সম্ভবত এখন আর পূজা হয়না। মণ্ডপটি বেশ কারুকাজময়। সম্ভবতো এখানে পূজা ছাড়াও অন্য অনুষ্ঠানও উদযাপন করা হতো।
















জমিদাররা সকলেই ছিলেন প্রজাপ্রিয়। তাদের দ্বারা প্রজা অত্যাচারের তেমন কোনো কাহিনী আমার জানানেই। তাবে জমিদার বাড়ির সামনে দিয়ে প্রজাদের জুতা পায়ে বা ছাতা মাথায় চলাচল নিষেধ ছিলো শুনতে পাই।

তিন ভাই নিজেদের প্যালেস তৈরীর পর ১৯১৬ইং সালে তাঁরা তাদের পিতা বৃন্দাবন চন্দ্র মণ্ডল এবং কাকা রাধা গোবিন্দ মণ্ডলের যৌথ নামে বৃন্দাবন চন্দ্র রাধা গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয় (বিসিআরজি) প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে জমিদারি প্রথা বাতিল হয় এবং তৎকালীন সরকার কর্তৃক জমিদারদের পুরো সম্পদ অধিগ্রহণ করা হয়। পরে ১৯৬৭ সালে পাকুটিয়া জমিদার বাড়িতেই প্রতিষ্ঠা করা হয় বিসিআরজি ডিগ্রী কলেজ


যদিও বর্তমানে বিসিআরজি ডিগ্রী কলেজের নতুন একটি ভবন তৈরী করা হয়েছে এবং কলেজের ক্লাস ঐ নতুন বিল্ডিং-এ নেওয়া হয়। এদিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ বর্তমানে পাকুটিয়া জমিদারদের পাকুটিয়া মধম্য তরফা ভবনটি, যেটি ছিলো জমিদার উপেন্দ্র মোহন রায়ের বাসভবন সেটিকে গ্রামীন ব্যাংক ও জমিদার যোগেন্দ্র মোহন মণ্ডলের বাসভবনটি গ্রামীন কল্যাণকে ভাড়া দিয়েছেন। যেখানে তাঁরা অফিস করেন কিনা জানি না তবে তাঁদের ফ্যামেলি কোয়ার্টার হিসাবে বাড়ি গুলো ব্যবহার করছেন সেটা বুঝা যায়। এছাড়া জমিদার বজেন্দ্র মোহন মণ্ডলের বাসভবনটিতে কলেজের কিছু কর্মচারী পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন সম্ভবত



জমিদার বাড়ির পেছনে একটি দীঘি রয়েছে। পিছন দিকে রয়েছে একসাথে তিনটি টাট্টিখানা। বাড়িটিতে আছে দু’টি পরিত্যক্ত কূপ। তাদের একটি আবার প্রাচীর ঘেরা। সম্ভবত জমিদারি আমলে জমিদার গিন্নিরা স্নান করতেন এখানে। আজ আর সেই দিন নাই। কালের প্রবাহে মলিন হয়েছে সব কিছু। এখনই সংরক্ষণের সঠিক পদক্ষেপ না নিলে কিছুদিন পরেই হয়তো ধ্বংস হয়ে যাবে এই চমৎকার স্থাপনাগুলি। ML Saha নামের কোনো একজন ইঞ্জিনিয়া এই জমিদার বাড়িগুলির ডিজাইন করেছিলেন। নতুন করে এমন কিছু তৈরি হবেনা আর।

জমিদার গিন্নিদের স্নানের কূপ








টাট্টিখানা








তথ্য সূত্র ও বর্ননা : উইকিপিডিয়া, অন্তর্জাল, নিজ। https://bangla.bdnews24.com/blog/119883
অবস্থান : পাকুটিয়া, নাগরপুর, টাঙ্গাইল, বাংলাদেশ।
GPS coordinates : 24°01'15.0"N 89°59'21.7"E
গুগল ম্যাপ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
ছবি তোলার তারিখ : ২৫শে নভেম্বর ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ।
ছবি ও বর্ণনা : নিজ

=================================================================
আরো দেখুন -
মরুভূমির জলদস্যুর ভ্রমণ বিলাস

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০১ : বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি
জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০২ : বীরেন্দ্র রায় চৌধুরী বাড়ি
জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৩ : জ্যোতি বসুর পৈতৃক বাড়ি
জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৪ : আমিনপুর ঠাকুর বাড়ি
জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৫ : বড় সর্দার বাড়ি
জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৬ : বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৭ : বালিয়াটি ছয়আনি জমিদার বাড়ি


বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০১
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০২
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৩
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৪
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৫
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৬
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৭
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০৩
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

= দাওয়াত বা কোন অনুষ্ঠানে খাবার গ্রহণের সময় যে কটি বিষয় আপনার বিবেচনায় রাখা দরকার =

লিখেছেন এমএলজি, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৪:২৩



১. দ্রুত খাবার গ্রহণের অভ্যাস থাকলে তা কিছুটা ধীর বা প্রলম্বিত করার চেষ্টা করুন যাতে অন্য সবার বেশ আগেই আপনার খাওয়া শেষ হয়ে না যায়।

২. কোন আইটেম খুব সুস্বাদু বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৩০

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা.........

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমাদের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার বিষাদময় গ্লানির সঙ্গেই বোধকরি বেশি সম্পর্ক। কদাচিৎ কোনো বড় দলকে পরাজিত করার পর আমরা পুরো বাংলাদেশ এখনো আবেগে আপ্লুত... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। অন্য দেশে চলে যাচ্ছে গার্মেন্টসের অর্ডার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:২০




এবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অর্ডারের একটি অংশ প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তানসহ অন্য দেশের বাজারে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকার পতন এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে দেশের সবচেয়ে বড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ভারতের উদ্বেগ!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


ভালোভাবেই শেষ হলো সনাতনীদের বৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজা কিন্তু দুর্গাপূজা ভালো ভাবে শেষ হওয়ায় অনেকেই বড্ড হতাশ হয়েছে; পূজা নিয়ে তারা ট্রামকার্ড খেলতে চেয়েছিল কিন্তু ট্রামকার্ড খেলার পরও সফল হতে পারেনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

উফ্! কি দারুণ!! WOW!!!

লিখেছেন মন থেকে বলি, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:০৬

চোখটা সবে যেই বুঁজেছি, ডাকল হুলো 'মিঁয়াও'।
মাথায় এলো আজিব টপিক - আরি সাবাশ! WOW!!

ল্যাংটাকালে 'আমার বই'-য়ে,
আঁকল ছবি কোন আঁকিয়ে?
তালগাছেতে উলটো ঝোলে কানাবগির ছাও।
সেটাই ছিল প্রথম অবাক, প্রথম বলা - WOW!!

আরও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×