somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৭

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নানান যায়গায় বেড়াবার সময় বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট-বড় নানান ধরনের নবাব-জমিদার-ব্যবসায়ী-বনিক-বাবু-ঠাকুরদের শত-শত বাড়ি ঘর দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। তাদের কিছু ছবিও তুলেছি নানান সময়ে। বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্রের প্রতি পর্বে ৫টি করে জমিদার বাড়ির ছবি থাকবে, আর কিছু না।

০৩১ : যদুনাথ রায় জমিদার বাড়ি



যতদূর জানা যায়
গুরুন্ন প্রসাদের দুই পুত্র মথুরামোহন রায় এবং প্রিয় মোহন রায় এর উত্তরপুরুষ ভাগ্যকুলের বর্তমানের ওয়াপদায় বসতি স্থাপন করেন।

হরিপ্রসাদ রায় ১৮২৯ সালে ওলাউঠাতে মৃত্যুবরণ করলে গুরুন্ন প্রসাদ রায় ভ্রাতার বংশ রক্ষার্থে তার কণিষ্ঠপুত্র হরলাল রায়কে ১৮৩০ সালে পৌষ্যপুত্র প্রদান করেন। তীক্ষ্ণ বিষয়বুদ্ধি থাকায় হরলাল ব্যবসা বাণিজ্যে প্রভূত উন্নতিলাভ করেন। কলকাতায় বহু বাড়ি ক্রয় ও নির্মাণ করেন। তিনি ব্যয়শীল ও দাতা হিসাবে সুপরিচিত ছিলেন। কিন্তু মাত্র ২৬ বৎসর বয়সে বসন্ত রোগে নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। স্ত্রী মাণিক্যময়ী নিজের ৬ বছর বয়সী ছোটভাই হরেন্দ্রলালকে পৌষ্যপুত্র হিসাবে গ্রহণ করেন।

গঙ্গাপ্রসাদ রায়ের ৪র্থ ও কণিষ্ঠ পুত্র প্রেমচাঁদ রায়ের তিনপুত্র ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী জমিদার। এদের মধ্যে শ্রীনাথ রায় এবং জানকী নাথ রায় ইংরেজ সরকার কর্তৃক রাজা উপাধি দ্বারা ভূষিত হন। এই দুইজন ভাগ্যকুলে প্রাসাদ নির্মাণ করে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাদের প্রাসাদও অনেক বছর পূর্বেই কৃত্তিনাশা পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে। পরে বংশের পরিধি বাড়ায় জমিদার পরিবারটি ৭টি হিস্যায় ভাগ হয়ে যায়।

রাজা শ্রীনাথ রায় ছিলেন বিক্রমপুরের জমিদারদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী। কলকাতার অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৮৪১ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৫২সালে জমিদারি প্রথা বাতিল ও দেশ ভাগের কারণে তাঁদের নামে আর রেকর্ড হয় নি। ভাগ্যকুলের জমিদার নন্দলাল রায় ও যশোদালাল রায় বর্তমান ওয়াপদা ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন। এখানে তাঁদের সমাধিসৌধ আছে। ভাগ্যকুলের জমিদারদের এই অংশটিতে অল্প কিছু স্থাপনা এখনো টিকে আছে কালের স্বাক্ষী হয়ে। তবে সমস্যা হচ্ছে এই অংশটি বর্তমানে র‍্যাবের দখলে হওয়ায় দর্শনার্থীদের অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশ করতে হয়।

অন্যদিকে রাজা সীতানাথ রায়ের দুই পুত্র যদুনাথ রায় এবং প্রিয়নাথ রায়। যদুনাথ রায় বাহাদুর বালাসুর গ্রামে গড়ে তুলেছিলেন তার জমিদার বাড়ি। তিনি হুবহু একই ধরনের দুটি ভবন নির্মাণ করেন। যার একটি ছিলো জমিদার যদুনাথ রায়ের। আর অন্যটি ছিলো তারই ছোট ভাই প্রিয়নাথ রায়ের।



বাড়িটির চারপাশ এক সময় রাতের আধাঁরে বিলের মাঝে আলোয় জলমল করত। প্রথা বিরোধী লেখক, ভাষা বিজ্ঞানী ড. হুমায়ূন আজাদ তার লেখা এক প্রবন্ধে এ বাড়িটিকে প্যারিস শহরের সাথে তুলনা করে লিখেছেন, বিলের ধারে প্যারিস শহর। বাড়ির সামনে বিশালাকৃতির দীঘি রয়েছে। দীঘির চারপাশেই শ্বেতপাথরে নির্মান করা শানবাঁধানো ঘাট।



জমিদার বাড়ীর সামনে রয়েছে “নবকুঠি”, এটি মূলত গদিঘর ছিল। এছাড়া আরো আছে শ্রী শ্রী সর্বজনীন দুর্গা মন্দির, শ্রী শ্রী রাজলক্ষ্মী নারায়ণ জিউ মন্দির, বায়োস্কোপ ঘর , কাচারি ঘর। এই জমিদার বাড়ীটি আনুমানিক ১৯২০ সালের আগে পড়ে নির্মাণ করা হয়।

কাচারি ঘর



বায়োস্কোপ ঘর



ভাগ্যকুলের জমিদারদের সকলেরই কলকাতায় বাড়ি ছিল। তারা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ কলকাতামুখী হয়ে পড়েছিলেন। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র যদুনাথ রায় তার বিলের ধারের প্রাসাদে ছিলেন। তিনি ভাগ্যকুল ত্যাগ করতে চাননি। বৃদ্ধ বয়সে তার আত্মীয়-স্বজনরা জোর করে কলকাতায় নিয়ে যায়। তিনি কলকাতায় গিয়ে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট

ছবি তোলার স্থান : উত্তর বালাসুর, শ্রীনগর, মুন্সিগঞ্জ, বাংলাদেশ।
GPS coordinate : 23°31'50.0"N 90°13'13.9"E
ছবি তোলার তারিখ : ১৯/০৫/২০১৭ ইং






০৩২ : আঠারবাড়ি জমিদার বাড়ি



নেট ঘেটে যতটুকু জানা যায়-
১৭৯৩ খ্রিষ্ঠাব্দ পর্যন্ত হোসেন শাহী পরগনা রাজশাহী কালেক্টরের অধিনে ছিল। সে সময় মহা রাজ রামকৃষ্ণের জমিদারি খাজনা অনাদায়ে নিলামে উঠলে হোসেন শাহী পরগনাটি খাজে আরাতুন নামে এক আর্মেনীয় ক্রয় করে নেন।

১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে আরাতুনের ২ মেয়ে বিবি কেথারিনা, বিবি এজিনা এবং তার দুই আত্মীয় স্টিফেন্স ও কেসর্পাজ প্রত্যেকে চার আনা অংশে হোসেন শাহী পরগানার জমিদারী লাভ করেন।

১৮৫৩ খ্রিষ্টব্দে আঠারোবাড়ি জমিদার শম্ভুরায় চৌধরী, বিবি এনিজার অংশ কিংবা মতান্তরে কেসপার্জের অংশ ক্রয় করেন। পরে মুক্তাগাছার জমিদার রামকিশোর চৌধরীর জমিদারী ঋণের দায়ে নিলামে উঠলে তা শম্ভুরায় চৌধুরীর পুত্র মহিম চন্দ্র রায় চৌধুরী কিনে নেন।

১৯০৪ খ্রিষ্টব্দে মহিম চন্দ্র রায় চৌধরীর স্ত্রী জ্ঞানেদা সুন্দরীর স্বামীর উত্তরাধিকার ও ক্রয় সূত্রে হোসেন শাহী পরগনার ১৪ আনার মলিক হন। বাকী দুই আনা অন্য এলাকার জমিদাররা কিনে নেন।

জমিদারী প্রতিষ্ঠার পর তাদের আয়ত্তে আসে উত্তর গৌরীপুরের রাজবাড়ী, পশ্চিমে রামগোপাল পুর, ডৌহাখলা দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর ও নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলা। তাছাড়া বৃহৎত্তর ময়মনসিংহের জামালপুর জেলার কয়েকটি মৌজা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বেশ কিছু মৌজা ছিল এ জমিদারের দখলে। প্রতি বছরে নির্দিষ্ট এক সময়ে এসব জেলা শহরে স্থাপিত আঠারোবাড়ী কাচারী বাড়ীতে নায়েব উপস্থিত হয়ে খাজনা আদায় করত। আজ ও এসব কাচারী “আঠারোবাড়ী কাচারি” নামে নিজ নিজ জেলায় পরিচিত।

জমিদার শম্ভুরায় চৌধরীর পিতা দ্বীপ রায় চৌধুরীর প্রথম নিবাস ছিল বর্তমান যশোর জেলায়। তিনি যশোর জেলার একটি পরগনার জমিদার ছিলেন। সুযোগ বুঝে একসময় দ্বীপ রায় চৌধুরী তার পুত্র শম্ভুরায় চৌধুরীকে নিয়ে যশোর থেকে আঠারোবাড়ী আসেন। আগে এ জায়গাটার নাম ছিল শিবগঞ্জ বা গোবিন্দ বাজার। দীপ রায় চৌধুরী নিজ পুত্রের নামে জমিদারি ক্রয় করে এলাকার নাম পরির্তন করে "রায় বাজার” রাখেন। রায় বাবু এক একর জমির উপর নিজে রাজবাড়ী, পুকুর ও পরিখা তৈরী করেন। এটিই আঠারোবাড়ি জমিদার বাড়ি।

শোনা যায়, রায় বাবু যশোর থেকে আসার সময় রাজ পরিবারের কাজর্কম দেখাশুনার জন্য আঠারোটি হিন্দু পরিবার সংঙ্গে নিয়ে এসে তাদের বসবাসের জন্য আঠারোটি বাড়ি তৈরী করে দেন। তখন থেকে জায়গাটি আঠারোবাড়ী নামে পরিচিতি লাভ করে।

দ্বীপ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার পুত্র শম্ভুরায় চৌধুরী জমিদারী লাভ করেন। তবে তার কোন পুত্র সন্তান না থাকায় তিনি এক ব্রাহ্মণ প্রমোদ রায় চৌধুরীকে দত্তক নেন। পরবর্তীতে এই প্রমোদ রায় চৌধুরী আঠারোবাড়ি জমিদারী লাভ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভের শুভেচ্ছা বিনিময় ও শান্তিনিকেতনকে বিশ্ব নিকেতন করে গড়ে তুলতে নৈতিক ও আর্থিক সমর্থনের লক্ষ্যে ১৯২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় আসেন। প্রায় এক সপ্তাহ ঢাকায় অবস্থান শেষে ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ময়মনসিংহে পৌছান। এদিকে ততকালিন আঠারবাড়ীর জমিদার প্রমোদ চন্দ্র রায় চৌধুরী শান্তিনিকেতনের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং তার শিক্ষক ছিলেন স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রমোদ চন্দ্র রায় চৌধুরীর নিমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী আঠারোবাড়ি রাজবাড়ি ভ্রমণ করেছিলেন। সে সময় কবিগুরুর সম্মানে মধ্যাহ্নভোজ, বাউল, জারি-সারি গানের আয়োজন করা হয়েছিল। এছাড়া কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চন্দ্রকথা ছবির চিত্রায়ন এই জমিদার বাড়িতে হয়ে ছিলো।

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে,
চুকিয়ে দেব বেচা কেনা,
মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা দেনা,
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে--
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।

যখন জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়,
কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়, আহা,
ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পরবে সজ্জা বনবাসের,
শ্যাওলা এসে ঘিরবে দিঘির ধারগুলায়--
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।

তখন এমনি করেই বাজবে বাঁশি এই নাটে,
কাটবে দিন কাটবে,
কাটবে গো দিন আজও যেমন দিন কাটে, আহা,
ঘাটে ঘাটে খেয়ার তরী এমনি সে দিন উঠবে ভরি--
চরবে গোরু খেলবে রাখাল ওই মাঠে।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।

তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি।
সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি-- আহা,
নতুন নামে ডাকবে মোরে, বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে॥

কথিতো আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার বিখ্যাত এই গানটি আঠারবাড়ী জমিদার বাড়ির রানী পুকুরের ঘাটে বসে লিখেছিলেন।


১৯৬৮ সালে আঠারবাড়ি জমিদার বাড়িতে আঠারবাড়ী ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ডিগ্রি কলেজ প্রধান ফটক পার হয়ে ভিতরে ঢুকলে চোখে পড়বে বিশাল খেলার মাঠ এবং তার বিপরীতে জমিদার বাড়ীর অন্দরমহল। এগিয়ে গেলে পুরোনো শ্যাওলা পরা ভবনগুলো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। অন্দরমহলে নাচের জায়গা, চাকরবাকর থাকার ঘর, সুবিশাল একটি অট্টালিকা চোখে পড়বে যার প্রতিটি খাঁজ সুন্দর কারুকাজ করাছিল দেখে বুঝা যায়। এসব পার হয়ে কলেজের ভিতরে গেলে কাছারি বাড়ি ও দরবার হল। ভবনের উপরে রয়েছে সুবিশাল এক টিনের গম্ভুজ। পিছনে সারি সারি গাছ। সামনে রাণীপুকুর। কথিতো আছে এই পুকুরে আসার জন্য অন্দরমহল থেকে গোপন গুহা ছিল মাটির নিচ দিয়ে।
সূত্র : উইকিপিডিয়া

ছবি তোলার স্থান : আঠারবাড়ি, ঈশ্বরগঞ্জে, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।
GPS coordinates : 24°37'52.6"N 90°42'53.8"E
ছবি তোলার তারিখ : ২৮/০৭/২০১৭ ইং






০৩৩ : ধলা জমিদার বাড়ি



ধলা জমিদার বাড়িটি কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত তাড়াইল উপজেলার ধলা নামক গ্রামে অবস্থিত। এটি জমিদার গিরিশ চন্দ্র পালের বাড়ি। গিরিশ চন্দ্র পাল প্রথম জীবনে ছিলেন একজন সুদখোর মহাজন। তাড়াইল বাজারের কেরোসিনের ডিলারশিপ ছিল তার। ১৩৩১ বঙ্গাব্দে মদনের কাটল বাড়ী জমিদারের কাছ থেকে তিন আনা জমিদারী কিনে নেয় গিরিশ চন্দ্র পাল।

১৩৩৩ বঙ্গাব্দে গিরিশ চন্দ্র পালে বর্তমানের বাড়িটি ৫টি ভবন, দুটো সানবাঁধানো পুকুর সহ জমিদার বাড়িটি নির্মান করেন। শোনা যায় বাড়িটি উদ্বোধনকালে ৪০ মন মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছিল। জমিদার তার বাড়ির ভিতরে মহিলাদের জন্য একটি আলাদা সানবাঁধানো পুকুর তৈরি করেছিলেন। বাড়ির বাইরে কাচারী বাড়ির সামনে বিরাট পুকুর খনন করেন।

গিরিশ চন্দ্র পাল একজন অত্যাচারী বর্ণবাদী জমিদার ছিলেন। কথিত আছে জমিদার বাড়ির সামনে দিয়ে সাধারণ প্রজারা জুতা পায়ে কিংবা ছাতা মাথায় চলাচল করতে পারতেন না। তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিম্নবর্ণের হিন্দু ছেলে-মেয়েরা ভর্তি হতে পারতো না।

১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর জমিদার ও তার স্বজনরা এ বাড়ি ছেড়ে রাতের অন্ধকারে চলে যান ভারতে। পরবতীতে ১৯৬২ সালে জমিদারের অনুপস্থিতিতে জমিদারের নামেই এ বাড়ি এস.এ রেকর্ডভূক্ত হয়। ৯টি ভিন্ন ভিন্ন দাগে
প্রায় ১০ একর ভূমি নিয়ে ছিল এ জমিদার বাড়ি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে পরিত্যক্ত সমস্ত ভূমি ও স্থাপনা গুলি অধিগ্রহন করে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় বাংলাদেশ সরকার। বর্তমানে জমিদার বাড়ির একটি ভবনে ধলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস করা হয়েছে। অন্য ভবনে আছে ধলা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও কেয়েকটি ভবন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পরিত্যাক্ত হয়ে আছে।

জানা গেছে বর্তমানে জমিদার গিরিশচন্দ্র পাল এর বংশধরদের পশিমবংগের সৌদপুরে "রথীন্দ্র" এবং ব্যারাকপুরে "অথীন্দ্র" নামে দুটি সিনেমা হল সহ অন্যান্য ব্যাবসা প্রতিস্টান রয়েছে। কলকাতার অভিনেতা তাপশ পাল চৌধুরী ও গিরিশ পাল এই জমিদারের বংশধর।
তথ্য সূত্র : আন্তর্জাল

ছবি তোলার স্থান : ধলা, তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ, বাংলাদেশ।
GPS coordinate : 24°35'11.4"N 90°54'33.5"E
ছবি তোলার তারিখ : ২৮/০৭/২০১৭ ইং





০৩৪ : তালজাঙ্গা জমিদার বাড়ি



জমিদার রাজ চন্দ্র রায় ১৯১৪ সালে নিজের জমিদারি স্থাপনের পরে তালজাঙ্গা জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। তিনি তখনকার সময়ের এম.এ.বি.এল ডিগ্রীপ্রাপ্ত উকিল ছিলেন। তিনি ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৩ বছর জমিদারি করেন। তার মৃত্যুর পরে জমিদার হন তার ছেলে মহিম চন্দ্র রায়। মহিম চন্দ্র রায়ও বাবার মত এম.এ.বি.এল ডিগ্রীপ্রাপ্ত একজন উকিল ছিলেন।

জমিদার মহিম চন্দ্র রায় বাবার স্মৃতিস্বরূপ জমিদার বাড়ির পাশেই আর.সি.রায় হাই স্কুল নামে একটি হাই স্কুল নির্মাণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে তালজাঙ্গা জমিদারের জমিদরারি সমাপ্ত হয়। জমিদার মহেন্দ্র রায়ের ছেলে নৃপেন্দ্র চন্দ্র ও তার অন্যান্য ভাই মিলে ভারতের কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এখনো এই জমিদার বাড়ির বংশধররা কলকাতায় আছেন।

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ও অবহেলায় বর্তমানে জমিদার বাড়িটি দালান গুলি প্রায় ধ্বংসের মুখে। দালানে নকশা ও দেয়াল ভেঙ্গে গিয়েছে। পুরো বাড়িটিতে লতাপাতায় ছেয়ে আছে। জমিদার বাড়ি অনেকটা ধ্বংস হয়ে গেলেও মন্দির ও মঠ এখনো টিকে আছে।

জানা যায় জমিদার রাজ চন্দ্র রায়ের অনেকগুলি হাতি ছিল। তালজাঙ্গা হতে হাতিতে চড়ে ময়মনসিংহে যাতায়াত করতেন জমিদার বাড়ির লোকজন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেকগুলো হাতি বৃটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করে নেয় অস্ত্র বহন করারনো জন্য। পুকুরের দক্ষিণ পাশে হাতি রাখার জন্য শিকল পোঁতা ছিল যা রাস্তার উন্নয়নের সময় মাটির নীচে চাপা পড়ে যায়।
তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া ও আন্তর্জাল

ছবি তোলার স্থান : তালজাঙ্গা, তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ, বাংলাদেশ।
GPS coordinate : 24°31'04.2"N 90°49'39.8"E
ছবি তোলার তারিখ : ২৮/০৭/২০১৭ ইং






০৩৫ : আমিনপুর ঠাকুর বাড়ি



নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এর পানাম নগরির উত্তর পাশের খালের উলটোপাশেই আমিনপুর খেলার মাঠ। মাঠ পেরিয়ে সামান্য উত্তর দিকে হেঁটে গেলে ঝোপঝারে জঙ্গলাকীর্ণ একটি পুরনো দ্বিতল দালান রয়েছে। চারপাশে থেকে ঝোপঝাের জঙ্গল আর বড়বড় আম-কাঠালের গাছ এমন ভাবে দালানটিকে ঘিরে রেখেছে যে একেবারে কাছে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বুঝার কোনো উপায় নেই যে সেখানে একটি দালান আছে।

ইমারতটি সম্পর্কে কোনো কিছু্ই জানা যায় না। লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে এই বাড়িটি কোনো এক ঠাকুরের ছিলো। ঠাকুরের নামটিও জানা যায়নি। তাই এটির নাম কারো কাছে ঠাকুর বাড়ি কারো কাছে আমিনপুর ঠাকুর বাড়ি।

জরাজীর্ণ বাড়িটির একটি অংশে এখনো লোকজনের বাস আছে। অন্যপাশ একেবারেই ভেঙ্গে গেছে। সেই অংশেই ছিল বাড়ির মূল মন্দির। মন্দিরটি দেখতে খুবই সুন্দর ও কারুকাজময় ছিলো সেটি এখনো বুঝা যায়। এদিক দিয়েই বাড়ির প্রবেশ পথও ছিলো। পিছনের প্রবেশ পথ দিয়ে বেরিয়ে গেলে পাশেই একটি বিশাল মঠ (স্মৃতি মন্দির) রয়েছে। মঠটিও বড় বড় গাছ পালা দিয়ে এমন ভাবে ঘিরে আছে যে ঠিক মতো দেখা বা ছবি তোলা যায় না।

ছবি তোলার স্থান : আমিনপুর, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশ।
GPS coordinate : 23°39'31.9"N 90°36'13.5"E
ছবি তোলার তারিখ : ২৮/১০/২০১৬ ইং





=================================================================

হেরিটেজ ট্যুর ২৫ : আড়াইহাজার - সোনারগাঁও
হেরিটেজ ট্যুর ২৬ : মানিকগঞ্জ - নাগরপুর
হেরিটেজ ট্যুর ২৮ : চাঁদপুর
হেরিটেজ ট্যুর ৬৫ : নারায়ণগঞ্জ - মুন্সিগঞ্জ

=================================================================

মসজিদ দর্শন : ০১ : মহজমপুর শাহী মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০২ : ষাট গম্বুজ মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৩ : বিবি বেগনী মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৪ : চুনাখোলা মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৫ : নয় গম্বুজ মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৬ : জিন্দা পীর মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৭ : সিঙ্গাইর মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৮ : গোয়ালদি মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৯ : আবদুল হামিদ মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ১০ : পুরান বাজার জামে মসজিদ

আমার দেখা প্রচীন মসজিদ – ১ম পর্ব
আমার দেখা প্রচীন মসজিদ – ২য় পর্ব
আমার দেখা প্রচীন মসজিদ – ৩য় পর্ব


বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০১
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০২
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৩
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৪
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৫
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৬


আমার দেখা প্রচীন মন্দির সমগ্র - ০১
আমার দেখা প্রচীন মন্দির সমগ্র - ০২
আমার দেখা প্রচীন মন্দির সমগ্র - ০৩


বাংলার প্রাচীন মঠ (স্মৃতি-মন্দির) সমগ্র - ০১
বাংলার প্রাচীন মঠ (স্মৃতি-মন্দির) সমগ্র - ০২


=================================================================
মরুভূমির জলদস্যুর ভ্রমণ বিলাস
সিলেট ভ্রমণ : হযরত শাহজালাল ও শাহপরান দরগাহ, চাষনী পীরের মাজার, বিছনাকান্দি, লালাখাল, জাফলং, হরিপুর পরিত্যাক্ত গ্যাস ফিল্ড
শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ : লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক,
খাগড়াছড়ি ভ্রমণ : আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝর্ণা, শতবর্ষী বটগাছ, ঝুলন্ত সেতু, অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহার
রাঙ্গামাটি ভ্রমণ : সুভলং ঝর্ণা ও কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, রাজবাড়ি ও রাজবন বিহার
বান্দরবান ভ্রমণ : নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, নীলাচল, মেঘলা, স্বর্ণ মন্দির
কক্সবাজার ভ্রমণ : রঙ্গীন মাছের দুনিয়া, আগ্গ মেধা ক্যাং, বিজিবি ক্যাম্প মসজিদ, ভুবন শান্তি ১০০ সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধ মূর্তি, রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার, রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার, ইনানী সৈকত, টেকনাফ সৈকত, মাথিনের কুপ, টেকনাফ জেটি, সেন্টমার্টিন, ছেড়া দ্বীপ
নারায়ণগঞ্জ ভ্রমণ: ১নং ঢাকেশ্বরী দেব মন্দির, টি হোসেন বাড়ি, কদম রসুল দরগাহ, সোনাকান্দা দূর্গ, হাজীগঞ্জ দূর্গ, বাবা সালেহ মসজিদ, বন্দর শাহী মসজিদ, সিরাজ শাহির আস্তানা, কুতুববাগ দরবার শরিফ, বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ী, পালপাড়া মঠ, বীরেন্দ্র রায় চৌধুরী বাড়ি, মহজমপুর শাহী মসজিদ
দিনাজপুর ভ্রমণ: রতনপুর জমিদার বাড়ি বা রখুনি কান্ত জমিদার বাড়ি, স্বপ্নপুরী, কাঠের সেতু, সীতাকোট বিহার
=================================================================
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৪৫
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×