somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা প্রাচীন মসজিদ – ৩য় পর্ব

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রাচীন স্থাপত্য দেখার আলাদাটা একটা আকর্ষণ আছে। আমি মাঝে মাঝেই সুযোগ হলে তাদের দেখতে বেরহই। প্রাচীন স্থাপত্য গুলির মধ্যে বাংলাদেশে মসজিদগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রাচীন মসজিদগুলি প্রমান করে কতটা আদিতে দেশেই ঐ অঞ্চলে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিলো। এই প্রাচীন মসজিদগুলি আমাদের দেশের ইতিহাসেরই অংশ। আজ আমার দেখা ৫টি প্রচীন মসজিদের ছবি এখানে রইলো। প্রতি পর্বেই আমার দেখা ও ছবি তোলা ৫টি করে প্রাচীন মসজিদের ছবি ও সামান্য তথ্য উপস্থাপন করবো।


১১ : অসমাপ্ত মসজিদ


GPS coordinates : 24°11'06.1"N 89°54'39.4"E
অসস্থান : আতিয়া মসজিদের কাছে, দেলদুয়ার, টাঙ্গাইল

ছবি তোলার তারিখ : ২৩/০৫/২০১৪ইং
পথের হদিস : ঢাকা > টাঙ্গাইল / দেলদুয়ার > আতিয়া মসজিদ > অসমাপ্ত মসজিদ।




১২ : দেওয়ান বাড়ি মসজিদ
ভাগলপুর দেওয়ান বাড়ি মসজিদ


অবস্থান : ভাগলপুর, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ।
GPS coordinates : 24°12'03.0"N 90°55'25.8"E

নির্মাতা : দেওয়ান গৌউস খান
নির্মাণকাল : ১১০৫ হিজরী সনে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

আকার : মসজিদটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৪৬ ফুট এবং প্রস্থে প্রায় ৩০ ফুট। ২২ ফুট প্রশস্ত একটি বারান্দা রয়েছে।
গম্বুজ : মসজিদের ছাদে এক সারিতে ৩ টি গম্বুজ রয়েছে। মাঝের গম্বুজটি পাশের দুটির তুলনা সামান্য বড়।
মিনার : মসজিদের ৪ কোণে ৪ টি বড় কোণিক মিনার রয়েছে।
মেহরাব : পশ্চিম দেয়ালে ৩ টি মেহরাব রয়েছে।
কারুকাজ : মোঘল ও সেন বংশীয় স্থাপত্যের স্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে।

প্রবেশ পথ : মসজিদের মোট ৫ টি দরজা রয়েছে। যাদের মধ্যে মসজিদের পূর্বের দেয়ালে ৩ টি, উত্তর দেয়ালে ১ টি ও দক্ষিণের দেয়ালে ১ টি দরজা রয়েছে। সেই সাথে ২টি জানালাও আছে।

অন্যান্য তথ্য : দেওয়ান গৌউস খান মোঘল আমলে এখানকার গভর্ণর ছিলেন। বৃটিশ আমলে ভূমিকম্পে মসজিদটির ব্যাপক ক্ষতি হয়ে ছিলো। পরবর্তীতে এটিকে পুনঃ সংস্কার কর হয়। মসজিদে আরবী ও ফার্সী ভাষায় ২ টি শিলালিপি রয়েছে। মসজিদটি এখনও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতায় আসেনি।

ছবি তোলার তারিখ : ২৪/০২/২০১৭ ইং

পথের হদিস : ঢাকার মহাখালি বা সায়েদাবাদ থেকে বাসে বাজিতপুর। বাজিদপুর থেকে প্রায় ৪ কিলমিটার দূরে ভাগলপুরে যেতে পারেন লোকাল যানবাহনে।





০১৩ : বন্দর শাহী মসজিদ


অবস্থান : বন্দর, নারায়ণগঞ্জ।
GPS coordinates : 23°36'45.9"N 90°31'00.7"E

নির্মাতা : মালিক আল-মুয়াজ্জম বাবা সালেহ
নির্মাণকাল : ১৪৮২ খ্রিস্টাব্দ (৮৮৬ হিজরি)

আকার : বর্গাকার এ মসজিদের পরিমাপ অভ্যন্তরভাগে ৬.২০ মিটার এবং বহির্ভাগে ৯.৭০ মিটার।
গম্বুজ : ছাদে রয়েছে একটি বৃহৎ গম্বুজ।
মিনার : চার কোণে রয়েছে অষ্টভুজাকৃতি চারটি মিনার।
মেহরাব : মসজিদটিতে তিনটি অর্ধবৃত্তাকার মিহরাব আছে। এদের মধ্যবর্তীটি সবচেয়ে বড়।
কারুকাজ : গম্বুজের গোড়ার দিকে চারপাশ ঘিরে রয়েছে পদ্মফুল ও কলসের নকশা-বেষ্টনী।

প্রবেশ পথ : মসজিদের পূর্বদিকের তিনটি প্রবেশপথের মধ্যবর্তীটি প্রশস্ততর এবং এটির উচ্চতা ২.২০ মিটার ও চওড়া ১.৩৭ মিটার। দক্ষিণ ও উত্তর দিকে অপর দুটি প্রবেশপথ ২ মিটার উঁচু ও ১ মিটার প্রশস্ত। পার্শ্বের প্রবেশপথগুলো সম্মুখের মধ্যবর্তী প্রবেশপথের সমান আকৃতির।

অন্যান্য তথ্য : মসজিদটি পুনর্নির্মিত হয়েছে এবং পূর্ব, দক্ষিণ ও উত্তর দিকে বারান্দা সংযোজন করে এর পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এর দুই দিকে এমন ভাবে নতুন দালান করা হয়েছে যে পুরনো মসজিদটি আর দেখাই যায় না।

ছবি তোলার তারিখ : ২৪/০২/২০১৭ ইং

পথের হদিস : পথের হদিস : ঢাকা থেকে বাসে মদনপুর, মদনপুর থেকে শেয়ার সিএনজি বা ইজি বাইকে নবীগঞ্জ। নবীগঞ্জ থেকে রিকসায় “বন্দর শাহী মসজিদ”। তাছাড়া বাস বা ট্রেনে নারায়ণগঞ্জ গিয়ে নৌকায় নদী পার হয়ে রিকসা নিয়ে চলে আসা যায় “বন্দর শাহী মসজিদ”।




০১৪ : শাহ মাহমুদ মসজিদ


অবস্থান : কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর গ্রামে।
GPS coordinates : 24°15'41.0"N 90°39'49.8"E
নির্মাতা : শেখ মাহমুদ
নির্মাণকাল : ১৬৮০ সালে

আকার : বর্গাকৃতি এই মসজিদের প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ৩২ ফুট।
গম্বুজ : ছাদে রয়েছে একটি বৃহৎ গম্বুজ।
মিনার : চার কোণায় আট কোণাকৃতির বুরুজ রয়েছে।
কারুকাজ : মোঘল স্থাপত্যরীতি নির্মিত এই মসজিদের ভিতর ও বাইরের রয়েছে পোড়ামাটির চিত্রফলক

প্রবেশ পথ : মসজিদের পূর্বের দেয়ালে ৩টি দরজা। তবে মসজিদ প্রাঙ্গনে প্রবেশের মূল দরজাটি ছনের কুটীরের ন্যায় অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি পাকা দোচালা ভবন মধ্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

অন্যান্য তথ্য : মসজিদটির নির্মাতা বণিক শেখ মাহমুদ এবং তার নামেই মসজিদটির পরিচিতি। কিন্তু ইউনেস্কো থেকে প্রকাশিত মুসলিম স্থ্যাপত্যের ক্যাটালগে একে "শাহ মোহাম্মদ মসজিদ" হিসাবে নির্দেশ করা হয়েছে। মসজিদের চার কোণায় চারটি মূল্যবান প্রস্তর ফলক ছিল যা চুরি হয়ে গেছে।

ছবি তোলার তারিখ : ০৮/১০/২০১৮ ইং

পথের হদিস : ঢাকা থেকে প্রথমে আপনাকে চলে যেতে হবে টোকের থানার ঘাট বাস স্টপ। সেখান থেকে রিকসা বা হেঁটেই চলে যেতে পারেন।

তথ্য সূত্র : উইকি




০১৫ : সাদী মসজিদ


অবস্থান : কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর গ্রামে।
GPS coordinates : 24°15'44.9"N 90°39'34.8"E

নির্মাতা : শাইখ সাদী।
নির্মাণকাল : মুঘল সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলে ১৬৫১ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

আকার : বর্গকার এই মসজিদের প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ২৫ ফুট।
গম্বুজ : মসজিদের ছাদে আছে বিশাল একটি গম্বুজ।
মিনার : চার কোণায় চারটি বুরুজ রয়েছে।
মেহরাব : পশ্চিম দেয়ালে ৩টি মিহরাব রয়েছে যার মধ্যে মাঝেরটি অপেক্ষাকৃত বড় আকৃতির।
কারুকাজ : প্রতিটি দেয়ালেই টেরাকোটার নকশা করা রয়েছে। প্রবেশপথ ও পুরো ইমারতের উপর রয়েছে পোড়ামাটির আস্তর যাতে বিভিন্ন নকশা বিদ্যমান রয়েছে।
প্রবেশ পথ : পুরো মসজিদটির দেয়ালে মোট ৫টি প্রবেশপথ রয়েছে যার মধ্যে পূর্বদেয়ালে ৩টি, উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ১টি করে। সবগুলো প্রবেশপথের আকার ধনুকের ন্যায়।

অন্যান্য তথ্য : সাদী মসজিদে সংযুক্ত একটি ফরাসি শিলালিপি রয়েছে।

ছবি তোলার তারিখ : ২৪/০২/২০১৭ ইং
পথের হদিস : ঢাকা থেকে প্রথমে আপনাকে চলে যেতে হবে টোকের "থানার ঘাট" বাস স্টপ। সেখান থেকে রিকসা বা হেঁটেই চলে যেতে পারেন।

তথ্য সূত্র : উইকি


=================================================================
আরো দেখুন -
আমার দেখা প্রাচীন মসজিদ – ১ম পর্ব
আমার দেখা প্রাচীন মসজিদ – ২য় পর্ব
আমার দেখা প্রাচীন মসজিদ – ৩য় পর্ব


বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০১
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০২
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৩
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৪
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৫
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৬


বাংলার প্রাচীন মঠ (স্মৃতি-মন্দির) সমগ্র - ০১
বাংলার প্রাচীন মঠ (স্মৃতি-মন্দির) সমগ্র - ০২


আমার দেখা প্রাচীন মন্দির সমগ্র - ০১
আমার দেখা প্রাচীন মন্দির সমগ্র - ০২
আমার দেখা প্রাচীন মন্দির সমগ্র - ০৩
=================================================================

মসজিদ দর্শন : ০১ : মহজমপুর শাহী মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০২ : ষাট গম্বুজ মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৩ : বিবি বেগনী মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৪ : চুনাখোলা মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৫ : নয় গম্বুজ মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৬ : জিন্দা পীর মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৭ : সিঙ্গাইর মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৮ : গোয়ালদি মসজিদ
=================================================================
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×