২০১৬ সালের অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ শুক্রবার ফেসবুক গ্রুপ Save the Heritages of Bangladesh তাদের ২৫তম ইভেন্ট পরিচালনা করছিলো। অন্য সব সদস্যদের সাথে আমি আমার বড় কন্যা সাইয়ারাও ঐদিন অংশ নিয়েছিলাম ডে ট্যুরে আড়াইহাজার ও সোনারগাঁয়ের কিছু প্রাচীন জমিদার বাড়ি, মন্দির, মঠ, মসজিদ ঘুরে দেখার জন্য। এখানে বলে রাখা ভালো এই ট্যুর গুলিতে শুধু প্রাচীন স্থাপত্যগুলি দেখার তালিকায় স্থান পায়।
ভোর ৬.৩০ মিনিটে আমাদের যাত্রা শুরু হয় লালমাটিয়ার আড়ং এর সামনে থেকে, প্রায় ৩০ জনের গ্রুপ ছিলাম। আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল আড়াইহাজারের “বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ী”। সকাল ৮টার দিকে আমরা পৌছাই বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ী। ৩০ মিনিটে আমরা বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ী দেখা শেষ করে রওনা হই আমাদের দ্বিতীয় গন্তব্য “পাল পাড়া মঠ” দেখতে। সকাল ৯টার সময় পৌছাই আমরা পাল পাড়া মঠের সামনে। ২০ মিনিট সময় লাগে পাল পাড়া মঠের পরিদর্শন শেষ হতে। এরপরে আমরা যাই আমাদের তৃতীয় গন্তব্য “বীরেন্দ্র রায় চৌধুরী বাড়ি”তে। মিনিট বিশেক সেখানে কাটিয়ে আমরা রওনা হই “মহজমপুর শাহী মসজিদ” দেখতে।
“মহজমপুর শাহী মসজিদ”
বাংলাদেশের প্রাচীনতম টিকে থাকা মসজিদগুলির মধ্যে মহজমপুর শাহী মসজিদ একটি। মসজিদটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার মহজমপুর গ্রামে মহজমপুর বাজারের কাছে, রাস্তার ঠিক পাশেই অবস্থিত। মদনপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এর অবস্থান।
যতদূর যানা যায় “সুলতান শামসুদ্দীন আহমদ শাহ” এর শাসনকাল ১৪৩২ থেকে ১৪৩৬ খ্রিস্টাব্দের কোনো এক সময় মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে। আবার অন্য একটি তথ্য মতে মসজিদের গায়ে একটি শিলালিপি ছিল। শিলালিপিটি ভেঙ্গে গেলেও কিছু অংশ পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। শিলালিপি অনুসারে মসজিদটি সুলতান জালাল-আল-দীন মোহাম্মদ শাহ এর পুত্র সুলতান শামস-আল-দীন মোহাম্মদ শাহ এর শাসনামলে ফিরোজ বা ফিরুজ খান নামে জনৈক ব্যক্তি নির্মাণ করেন।
ছাদের উপরে ভ্রমণসঙ্গীদের ছবি তোলার সময়।
ছাদের উপরে ভ্রমণসঙ্গীদের ছবি তোলার সময়।
মসজিদটি দৈর্ঘ্যে কমবেশী ৪২ ফুট এবং প্রস্থে কমবেশী ৩০ ফুটের মত। মসজিদের সামনের অংশে ছাদের উপরে দুই কোণে রয়েছে অষ্টভুজাকৃতির ছোট ছোট দুটি মিনার।
মিনার কোনে আমার বড় কন্যা সাইয়ারা সোহেন
মিনার কোনে আমার বড় কন্যা সাইয়ারা সোহেন
মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্বদিকে রয়েছে তিনটি প্রবেশপথ যার মাঝের প্রবেশপথটি পাশের দুটির তুলনায় সামান্য বড়। মসজিদের পশ্চিমদেয়ালের মধ্যবর্তী মূল মেহরাবটি দেয়াল থেকে পশ্চিম দিকে বাইরের বেরিয়ে আছে এবং বাইরের মেহরাবের অংশটিতে পোড়ামাটির ফলকে চমৎকার দৃষ্টনন্দন কারুকাজ করা আছে।
মসজিদের ছাদের উপরে গম্বুজ সংখ্যা ৬টি। গম্বুজগুলি উত্তর দক্ষীণ বরাবর দুটি সারিতে রয়েছে।
মসজিদের ছাদে সাইয়ারা
মসজিদের ছাদে সাইয়ারা
দলের কনিষ্ঠ সদস্য সাইয়ার সাথে প্রবিনতম সদস্য কবি সৈয়দ তারিক ভাই।
তবে মূল মসজিদটি কয়েকদফায় সংস্কার তরা হয়েছে। বর্তমানে মূল মসজিদের তিন দিকেই নতুন করে কাজ করে মসজিদের আয়তন বাড়ানো হয়েছে। মসজিদটি বর্তমানে জামে মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এই নোটিশের কোন মূল্য আছে বলে বুঝার কোন উপায় নেই, এখনো কাজ চলছে সেটা আমার ছবি দেখেই বুঝা যাচ্ছে। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই নোটিশ ঝুলিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করে।
আগামী পর্বে দেখা হবে পরবর্তী গন্তব্য বারদীর লোকনাথ ব্রক্ষমচারীর আশ্রমের সামনে।
তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট।
বর্ননা : নিজ
তারিখ : ২৮/১০/২০১৬ইং
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°44'06.0"N 90°36'18.4"E
পথের হদিস : দেশের যেকোন যায়গা থেকে মদনপুর বা ভুলতা বা অড়াইহাজার বাজারে আসতে হবে। সেখান থেকে যেতে হবে মহজমপুর বাজার। বাজারের কাছে পথের ধারে রয়েছে “মহজমপুর শাহী মসজিদ”।
=================================================================
মসজিদ দর্শন : ০১ : মহজমপুর শাহী মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০২ : ষাট গম্বুজ মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৩ : বিবি বেগনী মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৪ : চুনাখোলা মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৫ : নয় গম্বুজ মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৬ : জিন্দা পীর মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৭ : সিঙ্গাইর মসজিদ
=================================================================
আরো দেখুন -
আমার দেখা প্রচীন মসজিদ – ১ম পর্ব
আমার দেখা প্রচীন মসজিদ – ২য় পর্ব
আমার দেখা প্রচীন মসজিদ – ৩য় পর্ব
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০১
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০২
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৩
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৪
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৫
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৬
বাংলার প্রাচীন মঠ (স্মৃতি-মন্দির) সমগ্র - ০১
বাংলার প্রাচীন মঠ (স্মৃতি-মন্দির) সমগ্র - ০২
আমার দেখা প্রচীন মন্দির সমগ্র - ০১
আমার দেখা প্রচীন মন্দির সমগ্র - ০২
আমার দেখা প্রচীন মন্দির সমগ্র - ০৩
=================================================================
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:৩৮