বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত মসজিদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাগেরহাট ষাট গম্বুজ মসজিদ। এই মসজিদের নাম শুনেননি এমন লোক বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া ভার।
খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার আইকন এই ষাট গম্বুজ মসজিদ। ষাট গম্বুজ মসজিদে কোনো শিলালিপি না থাকায় এটি কে নির্মাণ করেছিলেন সেটার সঠিক তথ্য জানা যায়নি। তবে ধারনা করা হয় হযরত খানজাহান আলি (র.) ষাট গম্বুজ মসজিদটি নির্মান করেছিলেন। যেহেতু কোনো শিলালিপি পাওয়া যায়নি তাই এর নির্মাণকাল সম্পর্কেও অনুমান করা ছাড়া উপায় নেই। অনুমান করা হয় ১৫শ শতাব্দীতে এটি নির্মাণ হয়েছে।
ষাট গম্বুজ মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৬০ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১০৪ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮·৫ ফুট পুরু।
মসজিদটির নাম ষাট গম্বুজ (৬০ গম্বুজ) মসজিদ হলেও মসজিদটির গম্বুজ সংখ্যা ৬০টি নয়। বরং ষাট গম্বুজ মসজিদের গম্বুজ সংখ্যা ৭৭টি। ৭৭টি গম্বুজের মধ্যে ৭০ টির উপরিভাগ গোলাকার এবং পূর্ব দেয়ালের মাঝের দরজা ও পশ্চিম দেয়ালের মাঝের মিহরাবের মধ্যবর্তী সারিতে যে সাতটি গম্বুজ সেগুলো দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের চৌচালা ঘরের চালের মতো। তাছাড়া মিনারের গম্বুজের সংখ্যা ৪ টি। এই ৪টি হিসেবে ধরলে গম্বুজের সংখ্যা দাঁড়ায় মোট ৮১ তে ।
ষাট গম্বুজ মসজিদের ৪ কোণে ৪টি মিনার আছে। মিনার গুলির চূঁড়ায় গোলাকার গম্বুজ রয়েছে। মিনারগুলি ছাদের চেয়ে উচু। সামনের দুটি মিনারে প্যাঁচানো সিঁড়ি আছে এবং এখান থেকে আজান দেবার ব্যবস্থা ছিল। এদের একটির নাম রওশন কোঠা, অপরটির নাম আন্ধার কোঠা।
ষাট গম্বুজ মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে ১০টি মিহরাব আছে। মাঝের মিহরাবটি আকারে বড় এবং কারুকাজময়। এই মিহরাবের দক্ষিণে ৫টি ও উত্তরে ৪টি মিহরাব আছে। মসজিদের মাঝের মিহরাবের ঠিক পরের জায়গাটিতে উত্তর পাশে যেখানে ১টি মিহরাব থাকার কথা সেখানে আছে ১টি ছোট দরজা। কারো কারো মতে, হযরত খানজাহান আলি এই মসজিদটিকে নামাজের কাজ ছাড়াও তাঁর দরবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন, আর এই দরজাটি ছিল দরবার ঘরের প্রবেশ পথ। হযরত খানজাহান আলি (র.) ১৪৫৯ইং সালের ২৫শে অক্টোবর তারিখে ষাট গম্বুজ মসজিদে এশার নামাজ রত অবস্থায় ৯০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ বা পিলার আছে। এগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণে ৬টি সারিতে অবস্থিত। প্রতিটি সারিতে ১০টি করে স্তম্ভ আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথর কেটে বানানো। পাথরগুলো আনা হয়েছিল ভারতের উড়িষ্যার রাজমহল থেকে। প্রচলিত মিথ হচ্ছে- হযরত খানজাহান আলি তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা বলে পাথর গুলি জলে ভাসিয়ে বাগেরহাটে নিয়ে এসেছিলেন। মসজিদের গম্বুজ সংখ্যা সর্বমোট ৮১টি হলেও ধারণা করা হয় এই ৬০ পিলারের কারণেই এর নাম হয়েছে ষাট গম্বুজ মসজিদ।
ষাট গম্বুজ মসজিদের পূর্ব দেয়ালে ১১টি বিরাট আকারের খিলানযুক্ত দরজা আছে। মাঝের দরজাটি অন্যগুলোর চেয়ে বড়। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে আছে ৭টি করে দরজা। প্রবেশ পথের উপরে পোড়ামাটির কারুকাজ করা আছে।
আমি মূলত গিয়েছিলাম পরিবার নিয়ে সুন্দরবন সফরে। সুন্দরবনে ৩ দিনের সফর শেষে বাকিদের সাথে ঢাকায় না ফিরে থেকে গিয়েছিলাম খুলনায়। আমি যখন ষাট গম্বুজ মসজিদটি দেখতে গিয়েছিলাম তখন এটিতে কাজ চলছিলো। ভিতরের পাথরের পিলারগুলি প্লাস্টার করে ঢেকে দিচ্ছিলো। ছাদের উপরে উঠার ইচ্ছে থাকলেও তেমন কোনো সুযোগ পাইনি। আমি প্রথম বার যখন বাগেরহাট গিয়েছি তখন আমার বয়স ছিলো সম্ভবতো ৬ বছর। আগামীতেও আবার যাওয়া হবে ইনশাআল্লাহ।
ছবি তোলার তারিখ : ২৪/১১/২০১৪ইং
অবস্থান : বাগেরহাট, খুলনা, বাংলাদেশ
GPS coordinates : 22°40'28.2"N 89°44'30.6"E
পথের হদিস : ঢাকা থেকে সরাসরি বাগেরহাটে বাস যায়। ভাড়া নন এসি ৪৫০ টাকার মত। বাসের হেলপারকে বলে রাখলে ষাট গম্বুজ মসজিদের সামনে নামিয়ে দিবে। বাস স্টেশন থেকে ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে, ইজিবাইক নিয়ে অনায়াসেই চলে যাওয়া যায়।
তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট।
=================================================================
মসজিদ দর্শন : ০১ : মহজমপুর শাহী মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০২ : ষাট গম্বুজ মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৩ : বিবি বেগনী মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৪ : চুনাখোলা মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৫ : নয় গম্বুজ মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৬ : জিন্দা পীর মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৭ : সিঙ্গাইর মসজিদ
=================================================================
আরো দেখুন -
আমার দেখা প্রচীন মসজিদ – ১ম পর্ব
আমার দেখা প্রচীন মসজিদ – ২য় পর্ব
আমার দেখা প্রচীন মসজিদ – ৩য় পর্ব
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০১
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০২
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৩
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৪
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৫
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৬
বাংলার প্রাচীন মঠ (স্মৃতি-মন্দির) সমগ্র - ০১
বাংলার প্রাচীন মঠ (স্মৃতি-মন্দির) সমগ্র - ০২
আমার দেখা প্রচীন মন্দির সমগ্র - ০১
আমার দেখা প্রচীন মন্দির সমগ্র - ০২
আমার দেখা প্রচীন মন্দির সমগ্র - ০৩
=================================================================
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৪:০২