somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৫ : বড় সর্দার বাড়ি

২২ শে মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন। সেই সমস্ত ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে একটি বিশেষ অবস্থান দখল করে আছে জমিদার বাড়িগুলি। এই জমিদার বাড়িগুলি বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।


নানান যায়গায় বেড়াবার সময় বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট-বড় নানান ধরনের রাজবাড়ি, জমিদার বাড়ি, নবাব বাড়ি, পোদ্দার বাড়ি, বনিক বাড়ি, বাবুর বাড়ি, ঠাকুর বাড়ি, কুঠি বাড়ি, কাচারি বাড়ি, চৌধুরী বাড়ি সহ শত-শত পুরনো বাড়ি ঘর দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। আমার দেখা সেই সমস্ত বাড়িগুলি আমি একে একে শেয়ার করবো এখানে।



বড় সর্দার বাড়ি
ঢাকা থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত সোনারগাঁয়ের "বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন" যা "সোনারগাঁও জাদুঘর" নামে লোকজন বেশী চিনেন। সেখানে ঢুকতেই প্রথমেই হাতের বাম দিকে একটি অসম্ভব সুন্দর কারুকাজ খচিত ঝলমলে বাড়ি চেখে পরে। চোখ ধাঁধানো অপরূপ এই বাড়িটি "গোপীনাথ সাহা সরদার বাড়ি" বা "বড় সর্দার বাড়ি"। তবে "ঈশাখার জমিদার বাড়ি" নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। প্রচলিত আছে যে সোনারগাঁওয়ের এই দ্বিতল বড় সর্দার বাড়িটি ঈসা খাঁ তৈরী করেছিলেন কিন্তু আসলে তা সত্য নয়।



বাড়ির পূর্ব ও পশ্চিমে প্রকাণ্ড দুটি দিঘি রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমের দিঘিটি খুবই মনকাড়ে। বাড়িটির প্রতিচ্ছবি পরে দিঘির জলে। দেখতে অসাধারন লাগে তখন। বাড়ির পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দুইপাশের দিঘিতেই একাধিক ইটের তৈরী বাঁধানো ঘাট নেমে গেছে দিঘির জলের নিচ পর্যন্ত। পশ্চিমের দিঘির একটি ইটের তৈরী বাঁধানো ঘাটের দুই দিকে দুজন ইংরেজ অশ্বারোহীর মূর্তি রয়েছে।



কারুকাজময় দৃষ্টিনন্দন এই বাড়িটি নির্মাণ করিয়েছিলেন "গোপীনাথ সাহা অথবা ঐশ্বর্যকান্ত সাহা সরদার" নামের একজন ধনী ব্যবসায়ী। ঐশ্বর্যকান্ত সাহা সরদারের তৈরি করা বাড়িটি কি করে "গোপীনাথ সাহা সরদার বাড়ি" হলো তা আমার জানা নেই। এখানে তথ্যগতো কোনো ভুল থাকতে পারে। সেই কাল থেকেই লোকমুখে বাড়িটি পরিচিতি পায় "বড় সরদার বাড়ি" নামে। যদিও উইকিপিডিয়ার বাংলা অংশে এই বাড়িটিকে "ছোট সর্দার বাড়ি" লিখে রেখেছে।

একটি দেয়াল লিখনে এর নির্মাণকাল ১৩০৮ বঙ্গাব্দ লেখা আছে। ১৩০৮ লেখা থাকলেও অনুমান করা হয় মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয় প্রায় ছয়শ’ বছর আগে। সম্ভবতো বাড়ির মালিকানা হাতবদল হয়ে সর্বশেষ সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজ হয় ১৩৩০ সনে। যতদূর জানা যায় পিছনের ভবনটি মুঘল আমলের প্রথমদিকে নির্মিত। মধ্যভাগের লাল বর্গাকার ভবনটি বাংলার বারো ভূইয়ার সময় নির্মিত হয়েছে। সামনের অংশটি ১৯০২ সালে নির্মাণ করা হয়েছে।






বাড়িটির প্রবেশ পথের গেট হাউসটি দক্ষিণমুখী। চিনিটুকরির কারুকাজময় এই প্রবেশ পথটি যেকোনো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই। মুগ্ধ হয়ে শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে সেদিকে। চিনিটুকরির এমন কারুকাজ সচারাচর দেখা মেলে না। গেট হাউজের প্রহরীদের কুঠুরি পার হলে আছে প্রকাণ্ড জলসা ঘর। প্রায় ৩০ ফুট উঁচু ছাদ। পরের দ্বিতল ভবনের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। নিচতলায় ও দ্বিতল বারান্দায় পাঁচ ফুট পর পর সুনিপুণ কারুকার্যময় খিলান। কার্নিশে লতাপাতার মনোরম কারুকাজ। ভবনের নিচ তলায় রুমের সংখ্যা ৪৭টি আর দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ৩৮টি রুম। ৮৫টি রুম সহ সম্পূর্ণ ভবনের আয়তন ২৭ হাজার ৪০০ বর্গফুট।












১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় পর বাংলাদেশ সরকার এটি অধিগ্রহণ করে। আশির দশকের প্রথম দিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটি উদ্ধার করে আংশিক সংস্কার করে। তখন এটিকে লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা হয়।

২০১২ সালের দিকে কোরীয় বহুজাতিক কোম্পানি ইয়ংওয়ান করপোরেশন ২০ লক্ষ ডলার ব্যয়ে সর্দার বাড়িটি যথাযথ ভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়।

নওগাঁ ও পাহাড়পুর থেকে অভিজ্ঞ ১৫০ জন নিপুণ রাজমিস্ত্রি নিয়ে আসা হয়েছিলো এই সর্দার বাড়িটিকে সংস্কার করানোর জন্য। তাদের দক্ষ হাতের ছোঁয়ায় অতিসম্প্রতি আদিরূপে ফিরে এসেছে বাড়িটির সৌন্দর্য। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে প্রায় পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে বড় সর্দার বাড়িটি।










পথের হদিস :
ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হবে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা। গুলিস্থান থেকে স্বদেশ , দোয়েল ও বোরাকের বাসগুলো মোগরাপাড়া চৌরাস্তা হয়ে যায়। মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় নেমে যেকোনো ব্যাটারি চালিত অটো নিয়ে সহজেই চলে যাওয়ার যায় সোনারগাঁও যাদুঘর।



সময়সূচী :
শীত মৌসুমে ১লা অক্টোবর থেকে ৩০-শে মার্চ পর্যন্ত সকাল ৯টা হতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
গ্রীষ্মকালে ১লা এপ্রিল থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সকাল ১০টা হতে বিকেল ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
সপ্তাহে দুই দিন বুধবার ও বৃহস্পতিবার পর্যটকদের জন্য এটি বন্ধ থাকে।

প্রবেশ মূল্য :
বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা। বিদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০০ টাকা।


ছবি তোলার তারিখ : ২৮/১০/২০১৬ ইং
অবস্থান : সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশ।
GPS coordinates : 23°38'57.2"N 90°36'01.0"E
গুগল ম্যাপ : https://goo.gl/maps/no7pXg7vyXQ4Aryn7
তথ্য সূত্র : প্রথম-আলো (২০ আগস্ট ২০১৬), যুগান্তর পত্রিকা (৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮), উইকিপিডিয়া, অন্তর্জাল, নিজ।
ছবি ও বর্ণনা : নিজ।




=================================================================
আরো দেখুন -

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০১ : বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি
জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০২ : বীরেন্দ্র রায় চৌধুরী বাড়ি
জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৩ : জ্যোতি বসুর পৈতৃক বাড়ি
জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৪ : আমিনপুর ঠাকুর বাড়ি

বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০১
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০২
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৩
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৪
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৫
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৬
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৭
=================================================================
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০১
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বনাম তরুণশক্তিঃ লিমিট, ব্যালেন্স, সিস্টেম বোঝাটা খুব জরুরী

লিখেছেন শেহজাদ আমান, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০৬



লিমিট, ব্যালেন্স ও সিস্টেমটা বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনের শক্তিধর সংগঠনগুলোকে বুঝতে হবে। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম যখন বলে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বতী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে চাচ্ছে, তখন সেটা যৌক্তিক শোনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রিয় কবি হেলাল হাফিজ আর নেই

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩২





'যে জলে আগুন জ্বলে'র কবি হেলাল হাফিজ মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

আজ শুক্রবার দুপুর ২টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লাগবা বাজি?

লিখেছেন জটিল ভাই, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৫০

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছলনার বালুচরে

লিখেছেন আজব লিংকন, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩



কিছু প্রশ্নের উত্তর তুমি নিরবতায় খুঁজে নিও
ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে ভুলগুলো বুঝে নিও।।
ছলনার বালুচরে মোহ মায়া ছুঁড়ে দিয়ে
বিষাদের প্রবল স্রোতে তুমি নিজেকে খুঁজে নিও।।

বুঝে নিও।।
ছটফটানিতে গিলে খায়
জীবনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হায়রে সিইও, কী করলি জীবনে....

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫

ছবি রয়টার্স

দেশের বিখ্যাত কোম্পানীর সিইও হোটেল থেকে বের হয়েছেন, এমন সময় তাকে একজন ঠান্ডা মাথায় গুলি করে খুন করল। সিসিটিভিতে সেই গুলি করার দৃশ্য স্পষ্ট ধরা পড়ল। এখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×