somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০১ : বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সতর্কতা : এই পোস্টে ২৫টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ছবিগুলির মোট সাইজ ১৯.২ মেগাবাইট। ফলে পোস্টটি লোড হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।


বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন। সেই সমস্ত ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে একটি বিশেষ অবস্থান দখল করে আছে জমিদার বাড়িগুলি। এই জমিদার বাড়িগুলি বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ সহ ভারত উপমহাদেশে মুঘল ও ব্রিটিশ শাসনামলে জমিদারি প্রথা চালু ছিল। মুঘলামলে ছিলো "জায়গীরদারি" প্রথা। ব্রিটিশ শাসনামলে জমিদারী প্রথা চালু হয়। তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিশ "চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত" নামে ১৭৯৩ সালে জায়গিরদারি প্রথা বিলুপ্ত করে জমিদারী প্রথা চালু করেন। জমিদারী প্রথা চালু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল পুরো ভারতবর্ষ থেকে সহজে সরকারি খাজনা আদায় করা।

সেই সময় যারা ব্রিটিশদের কাছ থেকে জমিদারী ক্রয় করেন তারা জমিদার হিসেবে পরিচিত হন। জমিদাররা তাদের জমিদারীর কাজ দেখাশোনা ও বসবাসের জন্য যে প্রাসাদ বা বাড়ি তৈরি করতেন সেটিকে জমিদার বাড়ি বলা হয়। জমিদাররা ছিলেন অনেক ধন-সম্পদের মালিক। তাই তাদের বাড়িগুলো অপূর্ব কারুকাজ ও বেশ বড়সড়ো করে তৈরি করতে। সেগুলিছিলো দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয়।

নানান যায়গায় বেড়াবার সময় বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট-বড় নানান ধরনের রাজবাড়ি, জমিদার বাড়ি, নবাব বাড়ি, পোদ্দার বাড়ি, বনিক বাড়ি, বাবুর বাড়ি, ঠাকুর বাড়ি, কুঠি বাড়ি, কাচারি বাড়ি, চৌধুরী বাড়ি সহ শত-শত পুরনো বাড়ি ঘর দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। আমার দেখা সেই সমস্ত বাড়িগুলি আমি একে একে শেয়ার করবো এখানে।


বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি / বাইল্যাপাড়া জমিদার বাড়ি


বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়িটি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মণদি ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামের মূল সড়কের ঠিক উত্তর পাশে অবস্থিত। গ্রামের নামেই জমিদার বাড়িটির পরিচিতি। তবে স্থানীয় লোকজন আঞ্চলিক টোনে বাইল্যাপাড়া জমিদার বাড়ি বলে।

বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়িটির ইতিহাস শত বছরের পুরনো। এই বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মুকুন্দ মুরালী। যতদূর জানা যায় ১৯০০ সালের আগে মুকুন্দ মুরালী প্রথম জীবনে জমিদার কিশোরী পোদ্দারের খাজাঞ্চি (খাজনা আদায়কারী) ছিলেন। পরে তিনি ঢাকা- নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবসা শুরু করেন। একসময় তিনি একজন সফল ধনী ব্যবসায়ী হয়ে উঠেন। পরবর্তীতে মুকুন্দ মুরালী ব্রিটিশদের কাছ থেকে জমিদারী কিনেন।

ধারনা করা হয় ১৯০০ শতকের দিকে জমিদার মুকুন্দ মুরালী এই বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন। ঐতিহ্যবাহী এই জমিদার বাড়িটিন অনুপম স্থাপত্যশৈলীর চোখে লেগে থাকার মতো। জমিদার বাড়িটির বেশ বড় একটি যায়গা জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে ছিলো। সামনের মূল তিন তলা এল প্যাটার্ণের বাড়িটির পিছনে আরো একটি দোতালা ভবন ছিলো।

জমিদার মুকুন্দ মুরালী ছিলেন খুবই ভালো মানুষ ও প্রজাবৎসল জমিদার। অন্যান্য জমিদারদের মত তিনি প্রজাদের অত্যাচার নিপীড়ন করতেন না। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পরপরই মুকুন্দ মুরালীর জমিদারীর সমাপ্তি ঘটে। তিনি তার জমিদারীর সকল সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে স্বপরিবারে ভারতে চলে যান। কিন্তু তার এক মেয়েকে নারায়ণগঞ্জে বিয়ে দেওয়ার কারণে বালিয়াপাড়ার জমিদারবাড়িটি তিনি বিক্রি করেননি। জানা যায় ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত মুকুন্দ মুরালী ও তার পরিবাবের লোকজন মাঝে মধ্যে বালিয়াপাড়ায় এসে এই বাড়িটিতে থাকতেন।

১৯৬৫ সালের পরে এক প্রচন্ড ঘুর্নিঝড়ে বালিয়াপাড়া হাইস্কুলটির টিনসেড ঘর ভেঙ্গে গেলে এলাকাবাসী জমিদার মুকুন্দ মুরালী কাছে স্কুলটি চালু করার জন্য অনুরোধ করলে মুকুন্দ মুরালী জমিদার বাড়িটিতেই স্কুল চালু করার প্রস্তাব দেন। ১৯৬৬ সালে জমিদার মুকুন্দ মুরালী পাঁচ হাজার টাকা দলিল মূলে বালিয়াপাড়া হাইস্কুল পরিচালনা কমিটির কাছে জমিদার বাড়িটি লীজ প্রদান করেন। বর্তমাণে বাড়িটি কাদের আন্ডারে আছে আমার জানা নেই। তবে জমিদারদের কেউ এখানে থাকে না এটি নিশ্চিত।

বর্তমাণে বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে। মূল বাড়ির অনেকটাই এখন ধ্বংসের মুখে। অনেকটা অংশ শ্যাওলায় ঢাকা পড়েছে, দালানের গায়ে গজিয়েছে বট-পাকুরের ঝোপ। বেশ কয়েক বছর আগে ভূমিকম্পে মূল দালানের বাম পাশের দোতলার ছাদ ভেঙে পড়ে। তখন থেকে এটি পরিত্যক্ত হয়ে এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পরেছে। বাড়ির বাম দিকের অংশ এবং পিছনের অংশে নানা ধরনের গাছ-গাছালি ঝোপ-ঝাড়ে প্রায় জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। ঐতিহ্যের স্মৃতি বুকে নিয়ে লাল ইট ও চুন সুরকির মিশ্রণে তৈরি বাড়িটি এখনো কালের স্বাক্ষী হয়ে কোনো রকমর টিকে আছে সত্যি তবে এখনই সংরক্ষণ করতে না পারলে আর কয়েক বছর পরে হয়তো বিশাল এই জমিদার বাড়িটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।































বাড়ির ভিতরের মন্দির


বাড়ির পিছনের অংশ


বাড়ির পিছনের অংশ


এটি ছিলো রান্নাবান্না করার রসইঘর, বাড়ির কাজের লোকেরাও এখানেই থাকতো হয়তো।























বাড়ির পিছনের দোতলা বাড়িটিতে কিছুদিন আগেও লোক বসতি ছিলো দেখে এসেছি আমি।

মূল বাড়ির পিছনে এই বাড়িটি


মূল বাড়ির পিছনে এই বাড়িটি



ছবি তোলার তারিখ : ২৮/১০/২০১৬ ইং
অবস্থান : বালিয়াপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশ।
GPS coordinates : 23°46'13.7"N 90°35'16.0"E
গুগল ম্যাপ : https://goo.gl/maps/ST7J1KhP7gWptnhn6

তথ্য সূত্র : বাংলাপিডিয়া ও উইকিপিডিয়া, বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন, অন্তর্জাল।
বর্ণনা ও ছবি : নিজ

=================================================================
আরো দেখুন -

বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০১
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০২
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৩
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৪
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৫
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৬
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৭

=================================================================

হেরিটেজ ট্যুর ২৫ : আড়াইহাজার - সোনারগাঁও
হেরিটেজ ট্যুর ২৬ : মানিকগঞ্জ - নাগরপুর
হেরিটেজ ট্যুর ২৮ : চাঁদপুর
হেরিটেজ ট্যুর ২৯ : নরসিংদী - কিশোরগঞ্জ
হেরিটেজ ট্যুর ৩১ : নরসিংদী - গাজীপুর
হেরিটেজ ট্যুর ৬৫ : নারায়ণগঞ্জ - মুন্সিগঞ্জ

=================================================================

মসজিদ দর্শন : ০১ : মহজমপুর শাহী মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০২ : ষাট গম্বুজ মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৩ : বিবি বেগনী মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৪ : চুনাখোলা মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৫ : নয় গম্বুজ মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৬ : জিন্দা পীর মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৭ : সিঙ্গাইর মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৮ : গোয়ালদি মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৯ : আবদুল হামিদ মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ১০ : পুরান বাজার জামে মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ১১ : হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ


আমার দেখা প্রচীন মসজিদ – ১ম পর্ব
আমার দেখা প্রচীন মসজিদ – ২য় পর্ব
আমার দেখা প্রচীন মসজিদ – ৩য় পর্ব


আমার দেখা প্রচীন মন্দির সমগ্র - ০১
আমার দেখা প্রচীন মন্দির সমগ্র - ০২
আমার দেখা প্রচীন মন্দির সমগ্র - ০৩


বাংলার প্রাচীন মঠ (স্মৃতি-মন্দির) সমগ্র - ০১
বাংলার প্রাচীন মঠ (স্মৃতি-মন্দির) সমগ্র - ০২

=================================================================
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:১০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×