১৩৩৭ বঙ্গাব্দে হাজী আহমদ আলী পাটোয়ারী সাহেব হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ প্রতিষ্ঠাতা করেন। তিনিই এর প্রথম মোতওয়াল্লী। প্রায় ২৮,৪০০ বর্গফুট আয়তনের বিশাল মসজিদ এটি। এখানে প্রায় ১০,০০০ মুসল্লী এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। সমজিদের সামনের কারুকাজময় সুউচ্চ দৃষ্টিনন্দন প্রধান মিনারটির উচ্চতা প্রায় ১৮৮ ফুটে। মিনারের চুড়ায় উঠার জন্য রয়েছে সিঁড়ি। যতদূর জানা যায় বর্তমানে বাংলাদেশের বসচেয়ে বড় ১০টি মসজিদের মধ্যে "হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ" একটি।
মরজান মাসের শেষ শুক্রবার জুমাতুল বিদা-তে সর্ব বৃহত্তম জামাত হয় এই মসজিদটিতে। জুমাতুল বিদার জামাতের জন্য এই মসজিদটির পরিচিত দেশ জোড়া।
বাংলা একাদশ শতকের কাছাকাছি সময়ে হযরত মকিম উদ্দিন নামে এক বুজুর্গ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরব থেকে স্ব-পরিবারে চাঁদপুরের বর্তমান হাজীগঞ্জ অঞ্চলে আসেন। পরবর্তীতে তারই বংশধর হাজী মুনিরম্নদ্দিন (মনাই গাজী) এর প্র-পৌত্র হাজী আহমদ আলী পাটোয়ারী সাহেব হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক জামে মসজিদের জন্য জায়গা ওয়াকফ করেন। তিনি ১০০ বাই ২০ হাত আয়তনের একটি পাঁকা মসজিদ নির্মাণের জন্য নিয়ত করেন। কিন্তু সেই সময় ঐ এলাকায় কোন ইটের ভাটা ছিল না। তাই তিনি ইটের জন্য ভাটা তৈরি করেন। হযরত মাওলানা আবুল ফারাহ জৈনপুরী ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
মসজিদের প্রাচীর উঠার কাজ সমাপ্ত হলে হাজী আহমদ আলী পাটওয়ারী কলকাতা গিয়ে জাহাজ ভাড়া করে লোহার বীম ও মর্মর পাথর নিয়ে আসেন। ঢাকার ওস্তাগার মরহুম আঃ রহমান রাজের নেতৃত্বে মর্মর পাথর বসানোসহ মূল মসজিদের দালান প্রস্তুত হয়। ১০ অগ্রহায়ণ ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ রোজ শুক্রবার মসজিদের প্রথম আজান হয়।
পরবর্তীতে কয়েকবার মসজিদের উন্নয়ন কাজ করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত এসে আজকের এই রূপটি পায়।
বর্তমানে কুমিল্লা-চাঁদপুর মহাসড়কের উত্তর পাশে মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকার প্রবেশ তোরণটিতে দৃষ্টিনন্দন চিনিটুকরির কাজ করা আছে।
প্রবেশ তোরণ পেরুলে সামনে পাকা করা খোলা প্রঙ্গণ। তারপরেই মূল মসজিদ। সেখান থেকেই দেখা যায় মসজিদে ঢোকার একটি পার্শপ্রবেশ পথ।
মূল প্রবেশ পথটি আছে মসজিদের পূর্ব দেয়ালে। সেটি দেখতে খুবই সুন্দর। দৃষ্টিনন্দন চিনিটুকরির কাজ করা। সেই সাথে আছে ক্যালিগ্রাফির কাজ। তার ঠিক উপরেই আছে বিশাল সেই ১৮৮ ফুট উচ্চতার মূল মিনারটি।
মসজিদের পূর্বপাশের দুই প্রান্তে একটি করে চিনিটুকরির কাজ করা মাঝারি আকারের আরো দুটি মিনার রয়েছে।
মসজিদের ছাদের চার কোনার মধ্যে উত্তর-পশ্চিম কোন ছাড়া বাকি তিন কোনায় ৩টি চিনিটুকরির কাজ করা মাঝারি আকারের গম্বুজ রয়েছে। তাছাড়া মসজিদের পশ্চিম পাশের দেয়ালে একই রকম চিনিটুকরির কাজ করা চমৎকার একটি মেহরাব রয়েছে।
ছবি তোলার তারিখ : ২৭/০১/২০১৭ ইং
অবস্থান : হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর বাংলাদেশ।
GPS coordinates : https://goo.gl/maps/FdoDKayrQd6ZP7bp9
পথের হদিস : ঢাকা থেকে বাসে গেলে চাঁদপুরের বাস স্টেন্ডের আগেই হাজীগঞ্জ নামতে হবে। আর লঞ্চে গেলে লঞ্চ থেকে নেমে লোকাল বাস বা অন্য পরিবহনে আসতে হবে হাজীগঞ্জ বড় মসজিদে।
তথ্য সূত্র : বাংলাপিডিয়া ও উইকিপিডিয়া, অন্তর্জাল, নিজ।
=================================================================
আরো দেখুন -
মসজিদ দর্শন : ০১ : মহজমপুর শাহী মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০২ : ষাট গম্বুজ মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৩ : বিবি বেগনী মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৪ : চুনাখোলা মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৫ : নয় গম্বুজ মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৬ : জিন্দা পীর মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৭ : সিঙ্গাইর মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৮ : গোয়ালদি মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ০৯ : আবদুল হামিদ মসজিদ
মসজিদ দর্শন : ১০ : পুরান বাজার জামে মসজিদ
আমার দেখা প্রচীন মসজিদ – ১ম পর্ব
আমার দেখা প্রচীন মসজিদ – ২য় পর্ব
আমার দেখা প্রচীন মসজিদ – ৩য় পর্ব
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০১
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০২
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৩
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৪
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৫
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৬
বাংলার জমিদার বাড়ি সমগ্র - ০৭
আমার দেখা প্রচীন মন্দির সমগ্র - ০১
আমার দেখা প্রচীন মন্দির সমগ্র - ০২
আমার দেখা প্রচীন মন্দির সমগ্র - ০৩
বাংলার প্রাচীন মঠ (স্মৃতি-মন্দির) সমগ্র - ০১
বাংলার প্রাচীন মঠ (স্মৃতি-মন্দির) সমগ্র - ০২
হেরিটেজ ট্যুর ২৫ : আড়াইহাজার - সোনারগাঁও
হেরিটেজ ট্যুর ২৬ : মানিকগঞ্জ - নাগরপুর
হেরিটেজ ট্যুর ২৮ : চাঁদপুর
হেরিটেজ ট্যুর ২৯ : নরসিংদী - কিশোরগঞ্জ
হেরিটেজ ট্যুর ৩১ : নরসিংদী - গাজীপুর
হেরিটেজ ট্যুর ৬৫ : নারায়ণগঞ্জ - মুন্সিগঞ্জ
=================================================================