মাশরাফি রাজিনীতিতে আসায় ইতিবচিক নেতিবাচক ধারনার সংমিশ্রনে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কারণ আমাদের ধারণা আমাদের দেশে নোংরা রাজনীতির চর্চা বেশ হয় অন্যদিকে মাশরাফি হচ্ছে ক্রিকেটীয় ভালোবাসার চাদরে মোড়ানো সুপ্ত নিরেট ভালোবাসার আদর্শিক এক নাম। আদর্শিক ইতিবাচক চরিত্রকে নেতিবাচক জায়গায় দেখে ইতিবাচক ভাবনা না হওয়াটাই স্বাভাবিক। দেশের হুলুস্থূল রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে ইতিবাচক আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করা আদৌ কি সম্ভব প্রশ্নটা হচ্ছে এখানেই…
ক্রিকেটের আস্থা,ভরসার জায়গা থেকে অনেকেই বলছে মাশরাফির মতো সৎ,নিষ্ঠা ভালো মানুষ রাজনীতিতে আসলে দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে অনেকেই আবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে উদাহারণ টেনে বলছে যদি ক্রিকেটের অধিনায়ক থেকে দেশের অধিনায়ক হতে পারে তাহলে মাশরাফি রাজনীতি করলে দোষের কি আমাদের ভাবনাটাই হয়ে যাচ্ছে সব নেতিবাচক এর কারণে আমরা ইতিবাচক কিছু ভাবতে পারি নাই….
রাষ্ট্রপতির এই সময়কার আলোচিত মন্তব্যে টেনে বলতে হয় আমাদের দেশে রাজনীতি হয়ে গেছে গরিবের ভাউজ ! গরিবের বউ যেমন সকলের ভাবী তেমনি রাজনীতিতে যে যেভাবে ডুকে পড়ছে। প্রথমেই আসা যাক মাশরাফির রাজনৈতিক জ্ঞান কতটুকু? মাশরাফি দর্শন শাস্ত্র নিয়ে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর খেলাধূলায় মনোনিবেশের কারণে শেষ করতে পারেনি এবং পূর্বে সে কোন রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট ছিলো না এবং সে ক্রিকেট থেকে এখনো অবসর নেয়নি। অন্যদিকে যদি পাকিস্থানের ইমরান খান ১৯৭২ সালে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত কেবল (কবনষব) কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করেন। এখানে তার পাঠ্য ছিল দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি; এই বিষয়ে। ইমরান খান লেখাপড়ার সাথে অনেকভাবেই সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তিনি তাই হতে পেরেছিলেন বিলাতের ব্রডফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর (২০০৫ নভেম্বর থেকে ২০১৪ নভেম্বর)। ইমরান খান কেবল রাজনীতি করেননি, করেছেন জনহিতকর কর্মও। যেমন তিনি তার মাতা শওকত খানমের নামে গড়েছেন শওকত মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্র এবং গড়েছেন নামাল কলেজ। ক্রিকেট থেকে অবসরের পর ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ২২ বছর আগে তিনি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ’ (ন্যায়বিচারপন্থী) রাজনৈতিক দল গঠন করে। এদিক থেকে মাশরাফির অবস্থান পুরো উল্টো । তবে কেন…….?
তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয় ২২ গজের মাঠ কাঁপানো পেসার এবং অধিনায়ক মাশরাফির মতো ভালো মানুষ যদি রাজনীতিতে আসে তবে আমাদের দেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট কিছুটা হলেও পরিবর্তন হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হচ্ছে আহমদ ছফা’র “গাভী বিত্তান্ত” উপন্যাসের মতো। যদি আপনার আশেপাশে নেতিবাচক প্রভাব পূর্বেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে তাহলে আপনি সেটি দ্বারাই প্রভাবিত হবেন একা শত চেষ্টা করেও ইতিবাচক দিক প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন না। আমাদের দেশের রাজনীতি হচ্ছে দাপুটে সব দূর্নীতিগ্রস্ত,আলখাল্লা জড়ানো অসৎ প্রভাবশালীর দখলে সেখানে কিভাবে ইতিবাচক প্রভাব প্রভাবিত করবে সেটা কি সম্ভব ? আরেকটি উদাহারণ টেনে যদি বলি, দাপুটে অভিনেতা এবং ১৯৬৩ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যোগদান করা আসাদুজ্জামান নূর বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অধীনে সংস্কৃতি মন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গনে কতটা ভালো কাজ উপহার দিতে পেরেছেন এবং আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গন কতটা উন্নত করতে পেরেছেন,বলেন তো ?
রাজনীতি ছাড়াও দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কল্যাণে,দেশের স্বার্থে নিজেকে সপে দিতে সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে অনেক ভাবে প্রভাবিত করা যায়। আর যদি রাজনীতির মাধ্যমেই দেশকে কিছু দেয়ার থাকে তাহলে কোন দলের বিজ্ঞাপন অথবা লেজুড়বৃত্তি না হয়ে স্বতন্ত্র ভাবে রাজনীতি করলে নেতিবাচক-ইতিবাচক সংমিশ্রণ ধারণার উর্ধ্বে জায়গা পেতেন শ্রদ্ধেয় মাশরাফি ! কারণ “মাশরাফি” নামটা আমাদের মহাত্ব,আদর্শিক ভালোবাসায় সিক্ত সবার উর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত একটি নাম !
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৩২