somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাইকর
অনেক বড় মাপের একজন মানুষ হতে চাই। কারণ- ভালোবাসার মানুষটির নাম ছোট্ট কোন মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাইনা, ভালবাসার মানুষটির নাম বড় কোনো মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাই।আই লাভ ইউ (মা)

খেয়াঘাটের মাঝি ও তার ভালবাসা (ছোট গল্প

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নদীর পাড়ের কড়ই গাছের উপরে বইয়া আছি। হালকা পাইনসা বাতাসের লগে সন্ধ্যা নামুনের আগের সূর্যের আলো গায়ে মাইখা হুন্দরী কুলসুমের রুপের জলে ডুব দেওয়ানের কথা ভাবতাছি। গলার গামছা মুহে লইয়া। মাইয়াডারে দেহুন যাই করিম চাচার ক্ষেতের জাতি লাউ গাছের ডোগার লাহান। এক্কেবারে ধলা -ফক-ফকা চাঁদের লাহান।
ইশ.....কুলসুম যদি আমার বউ হইতো তাইলে ঘর থাইকা বাইর হইতাম না টানা তিনমাস। নাহে-মুহে তাজা সরিষার তেল লাগাইয়া কুলসুমের বুকের উপুর মাথা রাইখা ঘুম দিতাম তিনমাসের মনে।

হঠাৎ কইরা আমার তিমাসের হংসারে আগুন লাগাইয়া খেয়াঘাট থাইক্যা ডাহুন শুরু কইরা দিল মন্ডল চাচায়। আমি ধপাস কইরা মাঠিতে পইরা গেলাম। ইট্টুহানি মাজায় ব্যাথা পাইছি মাগার মন্ডল চাচারে বুঝবার দেইনাই। মন্ডল চাচায় গ্রামের হকল মুরুব্বী গো চাইতে মজবুত। এহোনো তারে বিয়া করাই দিলে একদমে হংসার চালাই যাইবো বিষ বছর। যৌবনকালে যে মন্ডল চাচাই কত মাইয়ারে ঠিক রাখছে হেইডা তার চাহুনি দেইহাই টের পাই। আর আমার হালার পোড়া কপাল! কুলসুম আমার মনডারে এহনো ইট্টূ বুইঝলো না।

মাজায় গামছা কইষা বাইধা মন্ডল চাচারে নিয়া টান মারলাম নৌকা। বইটার শব্দের লগে বেসুরা গলায় ভাটিয়ালি গানে টান মারলাম। এই নদীর লগে আমার খুউব ভালা সম্পর্ক। মন খারাপ হইলে নদীর টাকি মাছগো লগে কথা কই। নদীর কিছু মাছ আমার খেকুরা গলা হুইনা জাইগা উঠলো। টাকি মাছে কইয়া উইঠলো, "ওই বোকা হালা হুন - নদীর মইধ্যে এইহব চ্যাকা খাওয়া গান চুলে না। টুই তো হালা বোকারাম। আমি টাকি মাছ হইয়া ইলিশের লগে প্রেম-ট্রেম করি আর তুই শালা কুলসুমরে ভালবাসুনের কথা কইতে পারুস না। তোর নদীর মইধ্যে গান গাওয়া বন্ধ। তাছাড়া তোর গলার কন্ঠে গন্ধ! আমি মনকষ্টেও হুইনা দাত বাইর কইরা হাসি।

খেয়াঘাটের জীবন আমার। মাঝি আমি। হারাদিনে যা পয়সা-কুড়ি পাই তা দিয়াই কোনরহম চুলি। দুপুর বেলায় কুলসুম নদীর পাড়ে পানির লাইগা আইলে মনডায় টান দেয়। কত না কইবার মনডা চাই, কুলসুম আমি তরে ভালাবাসি। হত্যি কইতাছিরে কুলসুম তরে আমি মেলা ভালাবাসি। কইবার পারিনা!

ধানক্ষেতের আইলপথ দিয়া চোখ বুইজা হাটতাছি। কিছু সাদা কইতরের দল হুন্দর গলায় বাকুম বাকুম করতাছে আর পাকা ধানের সোনালী শিষে ঠুক মারতাছে। মাঝে-মইধ্যে দূর থাইক্যা বাতাস আইয়া আমার ময়লা চুল উড়াই দিতাছে। আমি পায়ের লুংগি রান হাটুতে তুইলা কাচা ঘাসের উপর দিয়া দৌড়াইতাছি। আহ.....কি হুন্দর বাংলাদেশ। মাঝে-মইধ্যে পাশের গ্রামের কালাচান পাগলের লাহান উবুত হইয়া শুইয়া হামাগুড়ি দিতাছি কুলসুমরে ভাইবা।

আইজ শনিবার। কাচা ছনের বেড়ার লগে একখান মেলা বড় চাঁদের লাহান আয়না ঘরের মইধ্যে লাগাইছি। কুলসুমরে আজ কমুই কমু..... আমার ভালাবাসার কথা। তাই ঘর থাইক্যা বাইর হবার আগে মাথায় আচ্ছামতো তেল মাখছি। সাদা চিকুন চিড়ুনি দিয়া মাথার মইধ্যে দিয়া যমুনা নদীর লাহান হিতি করছি। মাজার লুংগি ইট্টু নিচে নামাই পড়ছি লগে গামছা গলাই ঝুলাইছি। গ্রামের হগলে আমারে দেইখা কইতাছে নায়ক।

আমি ভাব ধইরা সালবাগানের পথ ধইরা খেয়াঘাটে যাইতাছি। কুলসুমরে আইজ কমুই..... কমু। সাহস বাড়াবার লাইগা সাল বাগানের মোটা গাছরে ধইরা কইলাম, কুলসুম আমি তরে ভালাবাসি। তরে আমি শেষ রাইতে মইধ্যে নদীর মাঝে লইয়া গান শুনামু। তর লগে ভালবাসাবাসির দুইটা কথা কমু। তরে লইয়া সংসার সাজামু। আমাগো ছোট্ট সংসারে আইবো লাল টকটকে একখানা মাইয়া। তরে কইবো মা আর আমারে আব্বা। তুই ভাত রাইন্দা বইয়া থাকবি আমার লাইগা। আমি আইয়া তরে বুকের মইধ্যে জড়াই নিয়া কমু ছরি। তারপর, দুইজনে মিলা মাঠিতে বইয়া চাকুম-চুকুম কইরা খামু।

হঠাৎ কইরা চোহের কোণাই নদীর জল। আইজ থাইক্যা দুই বছর আগেই কুলসুম নদীর পানিতে পইড়া মারা গেছে। মাইয়াডা সাতার পারে নাই। আমার খুউব কাছের নদী আমার কুলসুমরে মাইরা ফালাইছে। আমার ভালাবাসারে নদীর জলে ভাসাই দিছে। আমি কুলসুমরে কইতে পারিনাই। কইতে পারি নাই, কুলসুম আমি তরে খুউব ভালাবাসি, মেলা ভালাবাসি তরে কুলসুম। এহন আমার বুক ফাইটা কান্দুন আহে। জোরে কইরা চিক্কুর দিবার মনডা চাই। দিবার পারিনা......

আমার এহন জোরে কইরা চিক্কুর দিয়া কইতে মন চাই, ভালাবাসি তরে কুলসুম...........মেলা ভালাবাসি। আই ফিরা আই, নদীর বুকে মাথা রাইখা এহন কুলসুমরে খুজি। আমার কুলসুমরে। যারে আমি মেলা ভালাবাসি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:০৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×