somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়েতে স্বল্প নগদ দেনমোহর নারীর জন্য এক প্রকার বৈষম্য

১৪ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাজনিন আকতার (ছদ্মনাম) এসএসসি পাস করার পর বিয়ে হয় গ্রামের এক মসজিদের ইমাম ওবাইদুলের সাথে। নাজনিনের বাবা কৃষি অফিসের ব্লক সুপারভাইজার । বিয়েটি ছিলো যৌতুকবিহীন। স্বামী বিয়ের আসরে নগদ দেনমোহর পরিশোধ করে দেন। নাজনিন আকতারকে মাত্র ৪ হাজার টাকা নগদ দেনমোহর প্রদান করে মৌলভী স্বামী নিজ এলাকা ও শ্বশুরের এলাকায় ব্যাপক প্রশংসিত হন। বিয়ের প্রায় ৬ মাস পরে সামান্য পেটের পীড়া’র কারণে নাজনিন কে স্বামী তালাক দিয়ে দেন। ঘর ভেঙ্গে যায় নাজনিনের। মূলত কোন অপরাধ ছিলো না তার। কারণ পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হতে পারে যে কোনো মানুষ। সেজন্য রয়েছে চিকিৎসা। জানা যায়, ওই মৌলভী সাহেবের আগে অন্যত্র বিবাহ হয়েছিলো। কিন্তু সেখানে পূর্বের স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটানোর সময় ৮৫ হাজার টাকা দেনমোহর দিতে হয়েছে। ফলে সে দ্বিতীয় বিয়েতে নগদ দেনমোহর দিয়েছে মাত্র ৪ হাজার টাকা।
কেস স্টাডি-২: শাহেদ উদ্দীন মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস। বিয়ে করে নুরজাহান (ছদ্মনাম) নামের এক গ্রাম্য সুন্দরী নারীকে। তেমন কিছু করে না। ছেলেদের প্রাইভেট পড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। বিয়েতে উভয়ের সম্মতিক্রমে মাত্র ৫ হাজার টাকা নগদ মোহর প্রদানের বিনিময়ে বিবাহ হয়। বিয়ের পর নুরজাহানের ঘরে এক ছেলে সন্তান জন্ম লাভ করে। শাহেদ হাসান অন্য একজন নারীর পড়কিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। নুরজাহান প্রতিবাদ জানালে তৎনাৎ তালাক দেয়।

শুধু নাজনিন আকতার ও নুরজাহান নয়, এ ধরনের সমস্যার সম্মুর্খিন হচ্ছে অসংখ্য নারী। ফলে অকালে ভেঙ্গে যাচ্ছে নারীর। বর্তমানে যৌতুকের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সোচ্চার কণ্ঠ উচ্চারিত হলেও নারীদের বিয়েতে যৌতুক প্রদানের প্রবাণতা এখনও বন্ধ হয়নি। প্রতিদিন পত্রিকা পাতা খুললে আমরা যৌতুকের কারণে নারীকে বিভিন্ন কায়দায় নির্যাতন করার নিত্য নতুন সংবাদ প্রত্য করি। এছাড়াও সাম্প্রতিককালে নারীর উপর নির্যাতন যেমন: নারী পাচার, ধর্ষণ. এসিড নিপে, যৌন হয়রানি. অপহরণ, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ একেবারে ধবংস হয়ে যায়নি। দেশের প্রায় একশত মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে। সংগঠন সমূহ নারীর অধিকার, নারী নির্যাতন, যৌতুক নিরোধসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কাজ করছে। সময়ের সাথে-সাথে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কৌশলে নির্যাতন। তার মধ্যে একটি হলো- বিয়েতে নগদ দেনমোহর পরিশোধের নামে স্বল্প দেনমোহর ধার্য্য। নায্য দেন মোহর নির্ধারণ করলে তা হতে পারে নারীর জন্য মর্যাদার বিষয়।

সাধারণত এখনও গ্রাম-গঞ্জ এলাকায় যৌতুকের ওপর ভিত্তি করে দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। প্রায় দুই বা তিন দশক আগে বিয়েতে কাবিন করা হতো না, স্বামীর নিকট দেনমোহরানা ধার্য্য করে গ্রামের মৌলভী সাহেবের নিকট সাদা কাগজে লেখা থাকত প্রমাণ স্বরূপ । ফলে অনেক নারীর অকালে বিনা দোষে ঘর ভাঙ্গলেও আদালতে মামলা-মোকাদ্দামা করে খালি হাতে ফিরতে হতো নারীকে। আধুনিক কালে নারীর মতায়নের সাথে-সাথে অতীতের অবস্থা পাল্টে গেছে বটে।

কিন্তু একশ্রেণির পুরুষ নতুন কৌশলে স্ত্রীদের প্রতি নির্যাতন করছে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে সত্যি নারীর অধিকার বাস্তবায়ন হচ্ছে। আসলে নারী নির্যাতিত হচ্ছে। সেটি হচ্ছে- বিয়েতে নগদ দেনমোহর প্রদানের নামে স্বল্প দেনমোহর প্রদান। এতে দেখা যাচ্ছে যে, সামান্য বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রী বা পরিবারের লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে কথায়-কথায় স্বামী স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ভয় দেখায়। এতে নারী মানসিকভারে নির্যাতিত হয়ে থাকে। এমনকি কোন নারীর অকালে ঘর ভেঙ্গে যায়। গ্রাম বাংলার মফস্বল অঞ্চল সমূহে এই ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। ওসব ঘটনার অধিকাংশ সংবাদ বা চিত্র মিডিয়ার মাধ্যমে জনসম্মুখে প্রকাশ পায় না।

অভিভাবকদের বক্তব্য: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মা জানান, মেয়েদের বিয়েতে স্বল্প দেন মোহর নির্ধারণ করা ঠিক নয়। কারণ, স্বল্প দেন মোহর নির্ধারণ করায় বিয়ের মজলিসে তা পরিশোধ করে দেয়। বিয়ের কিছু দিন পর থেকে স্বামী কথায় কথায় তালাকের ভয় দেখাবে, শশুর-শ্বাশুড়ি নির্যাতন করবে। এক সময় ঘাড় ধরে বাড়ি থেকে বের করে দিলেও আদালতে কিছুই করার থাকে না।

আইন কী বলে:“বিয়েতে নগদ দেনমোহর নারীর ব্যক্তিগত অধিকার। মুসলিম পারিবারিক আইন,১৯৬১, ধারা ১০: এ উল্লেখ রয়েছে- নিকাহনামায় বা বিবাহের চুক্তিতে দেনমোহর ঋণ পরিশোধের পদ্ধতি নির্দিষ্টভাবে উল্লিখিত না থাকলে, দেনমোহরের সমগ্র অর্থ চাওয়া মাত্র দেয় বলে ধরে নিতে হবে।”

শেষকথা: মফস্বল এলাকায় বিয়ের কিছুদিন পূর্বে দেনমোহর নির্ধারণ করে। ধর্মের দোহাই দিয়ে একশ্রেণির পুরুষ বিয়েতে স্বল্প দেনমোহর নির্ধারণ করে তা বিয়ের আসরে পরিশোধ করে সুনাম কুড়ায়। কিন্তু যদি দেনমোহরের পরিমাণ বেশী হয়, তাহলে স্বামী কথায়-কথায় তালাক প্রদানের ভয় বা তালাক দেওয়া কথা সহজে মাথায় আনবেনা। এ ছাড়াও পরিমাণমত দেন মোহর নির্ধারিত হলে তা সাথে সাথে পরিশোধ করলে নারী সে টাকা দিয়ে বাড়তি কিছু একটা করতে পারবে। নারী নিজের পায়ে দাঁড়াতেও পারবে। বিষয়টি প্রতি সবাইকে সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০০
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×