somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন পরিবেশ রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি

০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়ে থাকে। পরিবেশ দূষণের হাত থেকে এ বিশ্বকে বাঁচানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতি বছর ৫ জুন দিবসটি যথাযোগ্য ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ, বাঁচায় প্রকৃতি বাঁচায় দেশ’।

১৯৭২ সালে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) উদ্যোগে প্রতিবছর সারা বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে এ দিবস পালন করা হয়।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, সরকার পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় অত্যন্ত আন্তরিক। পরিবেশ, প্রতিবেশ, বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে আমাদের কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, সরকার রূপকল্প ২০২১ এবং ২০৪১ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। বায়ু, পানি এবং মাটির দূষণ রোধে এরই মধ্যে নানা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমরা বন্যপ্রাণীকে ধ্বংস করে দিচ্ছি। গাছ না লাগিয়ে বন জঙ্গল কেটে ধ্বংস করছি যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।

বিগত কয়েক বছরের হরতাল ও অবরোধের সময় সারা দেশে সড়ক- মহাসড়ক বন্ধ করার জন্য হাজার হাজার গাছ নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে। যে গাছগুলো হয়তো আগামি ২০ বছরেও আর পুন:স্থাপন করা সম্ভব হবে না বলে অনেক পরিবেশবাদি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মনে করেন । এর ফলে পরিবেশের যে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে তা আর আলোচনার অপেক্ষা রাখে না। বৃক্ষ নিধনে পরিবেশগত অর্থনৈতিক ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকার উপরে। দেশে ভূমির তুলনায় বন বা বৃক্ষের সংখ্যা যেখানে অনেক কম সেখানে এভাবে ব্যাপক হারে বৃক্ষ নিধন শুধু দায়িত্বহীনতাই নয় তা পরিবেশের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপরাধ হিসাবে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে। তারপরেও থেমে নেই গাছ কাটা।

রাজনৈতিক সহিংসতায় ২০১৩ সালে যে হারে অযথা গাছ কাটা হয়েছে তার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আরো ২০-৩০ বছর লাগবে এবং দেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। গাছ নিধনের মাধ্যমে দেশকে দীর্ঘ মেয়াদে প্রাকৃতিকভাবে বিপর্যস্ত করার পাঁয়তারা চলছে। ফেব্রুয়ারী মাসের ২৮ তারিখে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর বিচারের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশের বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়। মে মাসের ৫ তারিখে হেফাজতে ইসলামী ঢাকার মতিঝিলে মহাসমাবেশ করে এবং পল্টন, নয়া পল্টন, কাকরাইল, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা মোড়, শাপলা চত্ত্বর এলাকায় ব্যাপকহারে বৃক্ষ নিধন করে। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার গাছ কাটা হয়। নভেম্বর মাসের ২৬ তারিখের অবরোধের পর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়।

বর্তমান সময়ে যদিও আমরা পরিবেশ সর্ম্পকে অনেক সচেতন হয়েছি। তবু অনবরত পরিবেশের বিপর্যয়ের কাজ করে যাচ্ছি। পৃথিবীকে আমরা বসবাসের অযোগ্য করে তুলছি। নিজেরা যদি গাছ না লাগিয়ে শুধু আন্দোলন করি পরিবেশ বাঁচাও। তাহলে কাজের কাজ হবে না। পরিবেশ রক্ষার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে মানুষের প্রকৃত বন্ধু গাছ। এজন্য আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্লেগান দিয়ে থাকি-‘গাছ লাগান, গাছের পরিচর্যা করুণ, পরিবেশ রক্ষা করুন’। গাছ লাগানোর পর তা পরিচর্যা করতে হবে আর যে গাছ বর্তমান আছে, তা ধ্বংস করে পরিবেশ রক্ষা হবে? তাছাড়া যে গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিয়ে আমাদের রক্ষা করার কাজ করে সে বুঝি পরিবেশের বাইরে? গাছ না লাগিয়ে অামরা গাছ কাটছি। অথচ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাছ লাগার জন্য আমাদের বার বার তাগিদ দিচ্ছে। একটি কথা না বললেই নয় যে, আলাদা একটি প্রকৃতিময় জগৎ রয়েছে। যেখানে আমরা খুঁজে পাবো এমন এক প্রকৃতি – মানুষ প্রাণ খুলে হাসতে পারবে, পাবে মুক্ত বাতাস, দৃষ্টি হবে প্রসারিত, পাখির গানে মুখরিত হবে পথ- প্রান্তর, জীববৈচিত্র্য দেখে মুগ্ধ হবো আমরা। এমন কল্পনার জগৎ, এমন রঙিন ফানুস উড়াতে বড়ো ভালো লাগছে। আমরা বাস্তবেও চাই প্রকৃতির আলোয় আলোকিত হতে। কবির মতো বলতে চাই, ‘সুগন্ধ ফুলগুলি আমাদের বোন’, ‘হরিণ, ঘোড়া, বিশাল সব ঈগল পাখি’, এরা আমাদের ভাই।’ আমরা সুন্দর সুস্থ জীবনের জন্য, বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতির ছাড়পত্র চাই। জীবন ও প্রকৃতি হবে নিসর্গের মতো সুন্দর ও নিরাপদ।

পরিশেষে বলতে চাই, নিজে বাঁচো এবং প্রকৃতিকে বাঁচতে দাও- এ মানবিকতাকে নিয়ে প্রকৃতি রক্ষা করার লক্ষ্যে যা করণীয় তা করার জন্য প্রতিটি গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন। কারণ প্রকৃতি বাঁচলে আমরা বাঁচব। বসবাস করতে পারবো সুখ-শান্তিতে।

লেখক-
আজমাল হোসেন মামুন
সহকারী শিক্ষক ও নাগরিক সাংবাদিক
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:২৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×