somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"চারটি শিক্ষা এবং একটি বিয়ের দাওয়াত/ ক্ষনিকের-ডায়েরী-১৯"

১০ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আসসালামু আলাইকুম
(স্বাগতম আমার ধারাবাহিক ক্ষনিকের ডায়েরীতে। আজকে ১৯তম পর্ব। আজকের লেখাটাকে আমি চারটি পার্টে ভাগ করেছি। চারটি পার্টে চারটি আলাদা আলাদা শিক্ষা আছে (আমার স্বল্প জ্ঞানে তাই মনে হয়েছে)। আপনাদের কাছে অনুরোধ খুঁজে বের করবেন চারটি শিক্ষা এবং কমেন্টে জানাবেন। তাহলে পরবর্তিতে এইভাবে প্যাটার্ন আকারে ক্ষনিকের ডায়েরী লেখার ইচ্ছা আছে।)



গত শনিবার টঙ্গী গিয়েছিলাম এক বিয়ের দাওয়াতে এটেন্ড করতে। কথা ছিল আমি আমার রেসিডেন্স থেকে একা যাব টঙ্গীতে এবং ঢাকা থেকে দুই দ্বীনি ভাই আসবেন। শনিবার আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে উইকেন্ড। প্রতি শনিবারই চিন্তা করি ফযরের সলাত আদায় করে লম্বা একটা ঘুম দিব, একেবারে মিনিমাম সকাল ১০-১১ টা পর্যন্ত। কিন্তু এরকম কখনও হয়ে ওঠে না। প্রতিদিনের অভ্যাস সকাল ৭:৩০ এ উঠে পড়া তাই শনিবারেও দেখি সাতটার দিকে ঘুম ভেঙে যায়। সেদিনও ঘুম ভেঙে গেল ঠিক ৮টায়। যেহেতু দাওয়াত দুপুরে তাই চিন্তা করলাম আরেকটু ঘুমিয়ে নেই। ঘুম আর আসল না। অগত্যা ইউটিউবে ঢু মারলাম। হঠাৎ মাওলানা তারিক জামিলের "Will Allah be Happy to meet you?" টাইটেলের একটা ভিডিও সামনে চলে আসল। ভিডিওটা দেখলাম এবং তারিক জামিলের হৃদয় নিংড়ানো অনুভুতি আমাকে ছুঁয়ে গেল। চোখের দুই কোন বেয়ে কখন পানি বের হয়ে আসল বুঝতেই পারলাম না। এবং এই প্রথম উর্দু ভাষা পরিপূর্ণভাবে না বোঝার জন্য অন্তরে একটা আক্ষেপ তৈরী হল। আহ! কি ভিডিও দেখলাম । কি দরদ সেই কন্ঠে! ভিডিওতে যখন মাওলানা তারিক জামিল বলেন, “ ও ম্যারে ভাই অর বেহনো এইছি মওত মাংগো আল্লাহছে , যাব যারাহাতো আল্লাহ খুশ হোরাহা” । এই অংশটুকু শুনে মনে হল আল্লাহ আমাকে এরকম মওত দিবেতো? মহানবী (সাঃ) বলেন, সাদ বিন মু’আজ (রাঃ) এর মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ খুশীতে ভরে উঠেছিল। আহ! কি অসাধারন মৃত্যু!

সকাল ১০টায় আমি রুম থেকে বের হলাম নাস্তা করার উদ্দেশ্যে। চোখ মুছতে মুছতে জুতা খুঁজতে লাগলাম। জুতা পরে লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আর মনে মনে সুবহানাল্লাহ বলা শুরু করেছি কারন নিচে নামার সময় সুবহানাল্লাহ বলতে হয়। নাস্তা শেষে রুমে ফিরে আসলাম এবং এসেই আবার মাওলানা তারিক জামিলের আরও ভিডিও দেখা শুরু করলাম। এতটাই ডুবে গেলাম ভিডিওতে যে ভুলেই গেলাম একটা দাওয়াতে এটেন্ড করতে হবে। দ্রুত বিছানা থেকে উঠে হাতের যাবতীয় কাজ শেষ করে বের হয়ে গেলাম টঙ্গীর উদ্দ্যেশে। বাসে উঠেই মোবাইলের পিডিএফ ওপেন করলাম।মুহাম্মদ ছালেহ আল মুনাজ্জিদের “প্রবৃত্তির অনুসরন” বইটার পিডিএফ পড়তে লাগলাম। প্রবৃত্তির অনুসরন বইটিতে সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) এর একটি উক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যেটা আমার খুব ভাল লেগেছে। উক্তিটি শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছিনা। “হে মন! তুমি তওবা করো, কেননা মরন অতি নিকটে। আর প্রবৃত্তির বাধ্য হবেনা, কেননা প্রবৃত্তি তো সব সময় ফিৎনা সৃষ্টিকারী।”
মোবাইলের হোম স্ক্রিনে আমার তৈরী করা ওয়ালপেপারটা আবার মনে নাড়া দিয়ে উঠল। “You can never escape from death” আসলেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম How can I escape from death? হয়তো এই মুহুর্ত বা সর্বোচ্চ ৫০-৬০-৭০ কত বছর থাকব এই দুনিয়াতে?

বিয়ের অনুষ্ঠানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তিনটা বেজে গেল। যাইহোক বিয়ের অনুষ্ঠানের বিবরন দিতে গেলে আপনারা হতাশ হবেন । উইডিং ফটোগ্রাফি, কড়া মেকাপ, বিয়ের গান , সুন্দরী ললনাদের চঞ্চল ছুটে বেড়ানো ছাড়াও যে বিয়ের অনুষ্ঠান হয় এবং এটাই যে সবচেয়ে সুন্দর বিয়ের মাধ্যম এটা হয়তো আপনাদের অনেকেরই অজানা। ছেলে এবং মেয়েদের খাওয়া, বসা সবকিছুর ব্যবস্থা আলাদা করা হয়েছিল। কমিউনিটি সেন্টারের ওয়েটাররা যে মনে মনে অখুশী হয়েছে তাদের চাপা কথা বার্তায় সেটা কিছুটা আঁচ করতে পারলাম। কারন জামাই মানে আমাদের দ্বীনি বড় ভাই এবং আমরা তিন চারজন একসাথে বসে খেয়েছিলাম এবং ওয়েটার এসে জামাইয়ের হাত ধুয়ে দেওয়ার বিনিময়ে কিছু হাদিয়া চাইছিল। সম্ভবত ভাইকে কেউ ডাক দেওয়ায় তৎক্ষণাৎ উঠে যায়। এই ব্যাপারটা আমার একেবারেই অপছন্দ। সিস্টেমটা কতটা গ্রহনযোগ্য আমার মনে সন্দেহ আছে। হাত কেন ধুয়ে দিতে হবে জামাইয়ের? সে কি নিজের হাত নিজে ধুতে পারেনা? এছাড়া এরকমতো না যে, কমিউনিটি সেন্টারে যে পরিমান লেনদেনের ডিল হয়েছে তারচেয়ে কম দেওয়া হয়েছে। আমার জানা নেই অবশ্য ইসলাম এ ব্যাপারে কি বলে? ভাবীর সাথে ছবি তুলে আমরা ফেসবুকে যে গর্বিত চেহারার একটা পোঁজ দেই সেটা আলহামদুলিল্লাহ সম্ভব হয়নি, ইন-শা-আল্লাহ কখনও সম্ভব হবেও না। ভাইয়ের আব্বু, শ্বশুরের সাথে কুসলাদি বিনিময় করে আমরা বিদায় নিলাম।
.
আমরা পাশের মসজিদে তিনজন আসরের সালাত আদায় করলাম। যদিও ঢাকায় যাওয়ার একটা ইচ্ছা ছিল কিন্তু দেরী হয়ে যাওয়ায় আমি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম। ব্যাক করছি আমার রেসিডেন্সে। যথারিতী বাসে চড়েছি। বাস সম্ভবত তখন কোনাবাড়িতে। যাত্রাপথে আমি আলুর চিপস খেতে পছন্দ করি। হাতে বানিয়ে ভাজা চিপস কিনতে পাওয়া যায় সেগুলো। দশ টাকা নেয় এক প্যাকেট। কোনাবাড়ির জ্যামে বাস দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ সালামের আওয়াজ আসল কানে। দেখলাম দাড়িওয়ালা এক যুবক হাতে আলুর চিপসের প্যাকেট নিয়ে উঠেছে। এবং দাড়ির সাইজ দেখে বুঝতে পারলাম সুন্নাহ আদায় করার জন্যই এই দাড়ি রাখা হয়েছে। আমি খুব যত্ন সহকারে যুবকটির মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলালাম। পায়ের দিকে প্যান্ট টাখনু থেকে দুই ইঞ্চি উপরে উঠানো। যদিও আমি আলুর চিপস পছন্দ করি কিন্তু তখন পেট লোডেড থাকায় প্রথমে মন সায় দিলনা কিনার জন্য। কিন্তু শুধুমাত্র চিপস বিক্রেতা ভাইটির দ্বীন পালনের(আমার ধারনা ছিল এটা,অন্তত বাহ্যিকভাবে দ্বীন পালনের ব্যাপারে সচেতন মনে হয়েছে।) প্রচেষ্টা দেখে এক প্যাকেট কিনেই ফেললাম। আগেই বলেছি পেট ভরপুর ছিল তাই চিপসটা তখন খেলাম না। পকেটে রেখে দিলাম, রুমে গিয়ে খাব এই আশায়। রুমে এসেই কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি রাত সাড়ে আটটা বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি নিচে গেলাম এশার সলাত এবং খাওয়া সেরে উপরে উঠলাম। রুমে এসে লকার থেকে ল্যাপটপ বের করতে যাব তখন চিপসের প্যাকেটটা চোখে পড়ল। সাথে সাথে বের করে আনলাম আর বিক্রেতা ভাইটির চেহারা ভেসে আসল চোখে। আমি আর আমার রুমমেট দুইজনে চিপসটা ভাগ করে খেলাম। এক অদ্ভুত তৃপ্তি পেলাম । আলহামদুলিল্লাহ।
বিঃদ্রঃ-
চারটি প্যারা করেছি লেখাটায়। চারটি শিক্ষা আছে চারটি প্যারাতে। হয়তো ধরতে পারবেন। না পারলে আমি ব্যার্থ। ভাল যা কিছু সব আল্লাহ সুবহানাহু ও’আ তা’আলার পক্ষ থেকে। মন্দ যা কিছু তা আমার বা শয়ত্বানের পক্ষ থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ১১:০৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×