প্রত্যেকদিন গড়ে তিনজন করে ফিলিস্তিনবাসী বাস্তুচ্যুত হয়। Statista এর তথ্যমতে ২০০৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ফিলিস্তিনি নাগরিকের আহতের সংখ্যা ৯২৫৩ জন। [চিত্রঃ-১] অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ২৫ জন, শুধুমাত্র বোমার আঘাত বা ইসরাইলি সৈন্য দ্বারা। এটা শুধুমাত্র কিছু সংখ্যা যা পশ্চিমা মিডিয়া এনেছে, বুঝতেই পারছেন কি পরিমান ছাকুনি পার হয়ে এই ডাটা এসেছে যাতে আমেরিকা , ইসরাইল নাখোশ না হয়। যাইহোক আপনাকে বললাম, এক বাবা আজকে তার দুই বছর বয়সী সন্তানকে দাফন করতে গিয়েছেন। যে কিনা বোমার আঘাতে মারা গেছে। এই তথ্যটা আপনি জানলেন, বুঝলেন সেখানে বোমা নিক্ষেপ হচ্ছে বা কিছু একটা হচ্ছে। কিন্তু অনুভব কি করতে পারছেন? পারবেন? আমি বা আপনি কখনও এই ব্যাথা অনুভব করতে পারবেননা যতদিন না পর্যন্ত আপনার বাড়ি থেকে আপনাকে উচ্ছেদ করা হবে এবং আপনারই চোখের সামনে দখলদার আপনার সন্তানকে বোমা মেরে নিহত করবে। এটা আজকে থেকে নয়। এটা শুরু হয়েছে ১৯১৭ সাল থেকে। আর সেটেলমেন্টের চিত্র দেখবেন? বেলফোর ডিক্লারেশনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের মাত্র ৬% জায়গা ইহুদিদের থাকার জন্য তৎকালিন সরকার অনুমোদন দিয়েছিল, সেই পরিমান এখন কত জানেন ৭৬%। অর্থাৎ এখন ইহুদীরা ৭৬-৭৮% স্থান তাদের নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে। [চিত্রঃ-২] বাকী যে জায়গাটুকু আছে এটাও কিন্তু ফিলিস্তিনের নিয়ন্ত্রনে নেই। গাযা স্ট্রিপ আনুমানিক ৩৪৫-৩৫০ স্কয়ার কিলোমিটার শুধুমাত্র হামাসের নিয়ন্ত্রনে তাও চারপাশ দিয়ে অবরুদ্ধ। আর ওয়েস্ট ব্যাংক বা পশ্চিম তীর ইহুদী নিয়োজিত মাহুমুদ আব্বাসের আন্ডারে যেখানে সকল আইন চলে ইহুদীদের তথা ইজরাইলের। আপনি কিভাবে আশা করেন, একটা সম্পূর্ন দেশ প্যালেস্টাইন শত বছরের অধিক সময় ধরে শুধু নির্যাতিতই হচ্ছে, আরও স্পেসিফিকভাবে বলতে গেলে ১৯৪৮ সাল থেকে অর্থাৎ প্রায় ৭৫ বছর ধরে নিজের ভুমি ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, যেই পবিত্র ভুমি হাজার হাজার বছর ধরে মুসলমান শাসনের আওতাধিন ছিল, সেটা এত সহজে ছেড়ে দেওয়া হবে? যেখানে বায়তুল মুকাদ্দাস, যেখান থেকে আমাদের প্রানের নবী (সাঃ) মিরাজে গিয়েছিলেন, যেটা দখল করেছিল ওমর (রাঃ), সালাহুদ্দীন আইয়ুবি (রহঃ), যেটা ছিল উমাইয়া, আব্বাসীয়, উসমানি খেলাফতের রাজত্বে, যেখান থেকে ইসা (আঃ) পুরো বিশ্ব জয় করবেন, শাসন করবেন।
চিত্রঃ১
আপনি এখন বসে বসে হামাসের আক্রমন করা ঠিক হয়নি, হামাসের এই স্ট্র্যাটিজি অনুসরন করা উচিৎ ছিল, রাস্ট্রীয়ভাবে আক্রমন করা দরকার ছিল বলে যে, পরামর্শ বা ফতোয়া বিতরন করছেন এটা কাকে খুশী করার জন্য? হাসপাতালে বোমা মারার পর কিভাবে আপনার মুখ দিয়ে এধরনের উপদেশ বের হয়? ২০১৮ সাল পর্যন্ত গাজা স্ট্রিপে নিহতের একটা জরিপ দেখানো হয়েছে।[চিত্রঃ-৩] এই ২০২৩ সালেই প্রায় ৬০০০+ মারা গেছে যার মধ্যে ২৭০০+ শিশু। এটা এখনও চলমান।
চিত্রঃ২
এত কথা বলছি কেন? আমি, আপনি দো’আ ছাড়া কিছুই করতে পারছিনা বা পারবনা। কিন্তু সত্যিটাতো জানা উচিৎ। আপনার সন্তানকে এটাতো বলুন যে, এই জেরুজালেম, এমনকিসামসহ ইউফ্রেটিস পর্যন্ত এমনকি পুরো বিশ্ব তোমাদের বাব দাদারা শাসন করেছিল। এই পবিত্র ভুমি প্যালেস্টাইন হাজার বছর ধরে ইসলামি শাসকের নিয়ন্ত্রনে ছিল। আপনার প্রজন্মকে সত্যটাতো বলুন। নিজেতো অন্তত অনুভব করার চেষ্টা করুন কেন আমরা সব হারালাম? কিভাবে সব ফিরে পাব? নিজেকেতো প্রস্তুত করুন। আপনি কিভাবে আশা করেন শুধুমাত্র শুক্রবারে নামায পড়া মুসলিমের হাতে আল্লাহ বিজয় দান করবেন? ২৫-৩০ বছর ধরে এই বিজ্ঞান, সেই চারুকলা, সেই ভার্সিটিতে পড়ে হাজার ডিগ্রী অর্জন করে কোর’আন পড়তে না পারা, নিজের ইতিহাস না জানা মুসলিমদের হাতে আল্লাহ বিজয় দিবেন? কখনও না।
চিত্রঃ৩
নিচের কিছু শব্দ, স্থান, সময় যেগুলো সব প্যালেস্টাইনের সাথে কানেক্টেড।
ইবরাহীম (আঃ), ইসহাক (আঃ),কেনান (সাম), ইয়াকুব (আঃ) বা ইসরাইল (আঃ), ইউসুফ (আঃ), ইউনুস (আঃ), সোলায়মান (আঃ), মুসা (আঃ), ইউসা ইবনে নুন, আমালেকা ট্রাইব, তালুত, দাউদ (আঃ), জালুত, রোম, নেবুচাদ নিজার, ইরাকের বাবেল শহর, বনী ইসরাইল, যাইয়োনিস্ট, ঈসা (আঃ), ইসমাইল (আঃ), মক্কা, (বনু জহরুল ট্রাইব), মুহাম্মদ (সাঃ), বনু কুরাইযা, বনু নাজির, বনু কিনানা, ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) সহ পরবর্তী চার খলিফা, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসী খিলাফত, ওসমানি খিলাফত, ফরাসি বিপ্লব, ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড-ব্যাসেল ১৮৯৭, বেলফোর ডিক্লারেশন- ১৯১৭, ১৯৪৮ (রাস্ট্র ঘোসনা) ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৫৭