ইন্সিওরেন্সের কাগজে একদম নিচের দিকে ছোট হরফে কিছু কথা লেখা থাকে।
এর পোষাকি নাম 'টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস'।
এজেন্টের মন ভোলানো কথা আর রঙিন, চকচকে কাগজ আমাদের বুদ্ধিকে এতটাই আচ্ছন্ন করে
যে নিচের ক্ষুদে কালো অক্ষরগুলির কথা আমাদের মনেই থাকেনা।
আর সেখানেই ঘটে বিপত্তি।
আমরা ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হই।
রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রচেতনার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
আমরা জানি তিনি লিখেছিলেন, "ও আমার দেশের মাটি..."।
ব্যস মিডিয়ার লাগাতার প্রচারে আমরাও শিখে নিলাম, দেশ মানে মাটি।
দেশমাতৃকা এমন এক দৈবী সত্ত্বা যাকে বিনা প্রশ্নে পুজো করতে হয়।
কিন্তু, তিনি তার পরের লাইনে লিখলেন, "তুমি অন্ন মুখে তুলে দিলে, শীতল জলে জুড়াইলে"।
আমরা তা ভুলে গেলাম।
বাকি গানটির মধ্যেও তিনি মৃণ্ময়ী দেশমাতৃকার ভিতরেও চিন্ময়ী, কল্যাণী রূপের খোঁজ করেছেন আমরা তা বুঝলামই না।
তাই ভারতমাতা আমাদের কাছে একটা নির্জীব সত্ত্বাই থেকে গেল।
আত্মার আত্মীয় হতে পারলনা।
এবার সেই টার্মসের কথা হোক।
তিনি 'আত্মপরিচয়' প্রবন্ধে আমাদের সতর্ক করেছিলেন যে দেশ মাটি নয়, মানুষে তৈরি হয়।
তাই শাসকের দ্বারা দেশের মাটি, জল বিষিয়ে গেলে কাব্যকথায় দেশের লজ্জা ঘুচবেনা।
এক্ষেত্রে, কাব্যকথা বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন?
আমরা তার পরিণত বয়সের প্রবন্ধ এবং উপন্যাস যেমন 'আত্মপরিচয়', 'নেশন', 'লোকহিত', 'ঘরে বাইরে'
পড়লেই দেখতে পাব তিনি বারবার "দেশমাতৃকা" ও "বন্দেমাতরম" ধ্বনি কে ঘিরে মাত্রাতিরিক্ত ভাবাবেগের
তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
কারণ, এই মাত্রাতিরিক্ত ভাবাবেগ দেশপ্রেমের মুখোশ পরে দেশেরই ক্ষতি করে।
তিনি বড়মানুষ।
তাই তিনি যে কথা একশ বছর আগেই বুঝেছিলেন, আমরা তা আরও দুশো বছর পরে বুঝব এটাই স্বাভাবিক।
তাই, আজ এসকল কথা বলা মানেই দেশদ্রোহীতা।