somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্যরকম এক ভালোবাসার ভালোলাগার গল্প…

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েক দিন আগে স্বপরিবারে বেড়াতে গিয়েছিলাম এক বন্ধুর বাড়ি। উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবার। সুবিশাল দু’তলা বাড়ি। সামনে বিস্তৃত আঙিনা। বন্ধুর স্বামীটি পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বহুজাতিক একটি কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও। খুবই আন্তরিক ও মিশুক মানুষ। বন্ধুটি কোমল মনের গোছানো গৃহিণী। ছোট্ট শিশুসন্তান নিয়ে আপাতদৃষ্টিতে সুখী এক ছিমছাম পরিবার। বাড়িটিতে স্বামীর দিকের এক বৃদ্ধ পিসিমা ছাড়া আছে ‘আগস্ট’ নামে একটি আদুরে কুকুর। তাদের ভাষ্য, আগস্টও তাদের পরিবারের সদস্য। সম্প্রতি ঘটা করে তার জন্মদিনও পালন করা হয়েছে। যাই হোক, তুমুল আড্ডা ও খাওয়া-দাওয়ায় বেশ সুন্দর সময় কাটলো আমাদের। স্বামীটির একটি বিচিত্র শখ আছে। অফিস শেষে কিংবা ছুটির দিনে বাড়ির একটি ঘরে কাঠের কাজ করা, নানা রকম আসবাব তৈরি করা। নিজেকে কাঠমিস্ত্রি পরিচয় দিতে বেশ অহংবোধ করেন। বলাটায় একধরণের স্বাচ্ছন্দ্য আছে- যা আমার ভালো লেগেছে। একরকম জোর করেই আমাকে নিয়ে গেলেন তার সেই আসবাব তৈরির কারখানাটি দেখাতে। ঘরটি জিনিসে ঠাসা; নানা আকৃতির কাঠ, সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রাংশ। দেশ-বিদেশ থেকে করাত-হাতুড়ি ইত্যাদি যন্ত্রপাতি কেনা তার শখের অংশ। এমন ঘর সাধারণত নোংরা হয়; বসার অযোগ্য থাকে। তাই যেতে নিমরাজি ছিলাম শুরুতে। তবে আমার ধারণার চুলোয় জল।
দেখলাম, ঘরটি বেশ পরিপাটি করে গোছানো। শুনলাম, বন্ধুটি তার স্বামীর এ ঘরটি প্রায় দিনই গুছিয়ে রাখে। কথাগুলো লিখছি অন্য একটি কারণে। আমরা তো জানি, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে।’ প্রবাদটি সম্পূর্ণতা পায় পরের লাইনটি যুক্ত হলে ‘যদি গুণবান পতি থাকে তার সনে’। যদিও অনেকে সেটি উল্লেখ করি না। পুরোটা চাপিয়ে দিই নারীদের ওপরই। তবে কথা হলো, গুণবতী বা গুণবান হলেই কি সংসারে সুখ নিশ্চিত হয়? সুখ তো কোনো পাটিগণিত অঙ্ক নয়, যা কষলেই ফল আসবে? এক্ষেত্রে আমার একটা পর্যবেক্ষণ আছে। সবার সঙ্গে সেটা না-ও মিলতে পারে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস, বোঝাপড়া, শেয়ারিং-এসব ভালোবাসার উপাদানগুলো সুখের নিয়ামক সত্যি, তার সঙ্গে থাকতে হয় কোমল প্রশ্রয় নামের একটা বোধ। ভালোবাসা তো আর নিউটনের আপেল নয়, যে গাছের তলায় বসামাত্রই টুপ করে এসে কোলে পড়বে। ওটা অর্জনের বিষয়। বন্ধুটিকে আপাত সুখের মনে হওয়ার পেছনে আমার চোখে যে বিষয়টি ধরা পড়েছে, তা হলো সেই কোমল প্রশ্রয়। স্বামীর পাগলামোকে গুরুত্ব দেওয়া, সেটার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো। এখানে স্বামীটির জায়গায় বন্ধুটিও হতে পারতো। সেক্ষেত্রেও একই কথা।
ক’জন মানুষই-বা পারে তার সঙ্গীর এমন বিষয়কে নিজের করে নিতে? বিষয়টা একপাক্ষিক হলে যন্ত্রণাদায়ক এবং ক্ষণস্থায়ী-তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একটা কথা প্রচলিত আছে, কবি’র বউকে কবিমনা না হলে বড়ো কষ্টের কারণ হয়। যেমনটা ঘটেছিলো জীবনানন্দের জীবনে। মৃত্যুর পর জীবনানন্দকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন সে সময়ের প্রতিষ্ঠিত কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। সুধীন দত্তকে দেখে শোক-আবহে লাবণ্য দেবী বিস্মিত হয়েছিলেন। পাশের একজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন-“আচ্ছা, তোমার দাদা কি অনেক বড়ো লেখক ছিলেন? সুধীন দত্তের মতো মানুষ এলেন!” লাবণ্য দেবীর জন্য বড়ো করুণা হয়। একবারের জন্যও কি তার কৌতূহল হলো না তার সঙ্গীটি কী করেন, কী লিখেন? ট্রাংকের ভেতর ঠাসাঠাসি করে কী এমন গোপন জিনিস রাখেন? জীবনানন্দ অন্তর্মুখী স্বামী ছিলেন সত্যি। লাবণ্য তো বহির্মুখী স্ত্রী ছিলেন। তিনি দেখিতে গিয়াছেন পর্বতমালা, দেখিতে গিয়াছেন সিন্ধু। অথচ দেখা হয় নাই তাঁর চক্ষু মেলিয়া একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু। সঙ্গীকে দেখতে হয় তার ভালো-মন্দ মিলায়ে সকল-ই। ভালোবাসতে হয় তার নিপাট সুস্থতা ও পাগলামোকেও। নইলে যে ব্যর্থতা গ্রাস করে সংসারে, তার আগুনে বালিশ-তোশকসহ পুড়তে হয় দু’জনকে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত…

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×