somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নযাত্রা - Shirobako এনিম রিভিউ

২৭ শে জুন, ২০১৫ রাত ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রোজকার মতন ফাইল ঠেলাঠেলি করে আর বসের ঝাড়ি খেয়ে লোকাল বাসে ঝুলতে ঝুলতে কখনও কি মনে হয়েছে “ব্যাস, অনেক হয়েছে; আর না?” মাঝে মাঝে কিছুটা একাকী সময়ে কি মনে হয়েছে এখন যেটা করছেন হয়ত সেটা করার কথা ছিল না কখনও? কিংবা হয়ত সেই সময় এখনও আসে নি; হয়ত এখনও ছাত্রজীবন পার করছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন একটা সাব্জেক্টে বছর দুয়েক পার করে ফেলেছেন; হটাত করেই কোন এক নির্ঘুম রাতে সোডিয়াম আলোয় ফাঁকা রাস্তায় হাটতে হাটতে মনে হল “এরপর কি?” ভবিষ্যতে আসলে কি করবেন বা কি করতে চান সেই সমন্ধে আপনার পরিষ্কার কোন ধারণাই নেই। হয়ত ক্লাসে ফলাফলের দিক থেকে আপনার অবস্থান ততটা আশাপ্রদ না; খুব চেষ্টা করে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু ঠিক যে পরিমাণ ফলাফল আসার কথা তার কিছুই পাচ্ছেন না? সবকিছু ছেড়েছুড়ে দেবার; দু’টো বছর আগে ফিরে যাবার; আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করার প্রবল ইচ্ছেটা মাঝে মাঝেই একগাদা সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ফেরত আসে সুযোগ পেলেই?

হুম, জীবনের কোন না কোন সময়ে অথবা কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক সময়েই এইরকম সময়ের মুখোমুখি হই আমরা সবাই। কিন্তু কঠোর বাস্তবতা হল বেশিরভাগ সময়েই এইসব প্রশ্ন বা ইচ্ছের কোন জবাব থাকে না। শুধু নিজের উপর বিশ্বাস ধরে রেখে সামনে আগাতে হয়, পথের শেষটা দেখার জন্য; জীবন সেই পথের শেষে কোন বিস্ময় লুকিয়ে রাখে কি না তা খোঁজার জন্য। ঠিক এমনই একটা থিমকে কেন্দ্র করে দাঁড় করানো এনিম সিরিজ “shirobako”.



আওই, এমা, সিজুকা, মিসা এবং মিদোরি - হাইস্কুলের এনিমেশন ক্লাবের পাঁচ বান্ধবী স্কুলের ফেস্টিভালের জন্য ছোট্ট একটা এনিমেশন তৈরি করার সময়েই বুঝতে পারে যেভাবেই হোক এনিমের জগতই হবে তাদের ভবিষ্যতের ঠিকানা। সকলে মিলে লক্ষ্যও ঠিক করে ফেলে একটা; একদিন না একদিন তারা একসাথে খুব বড় কিছু একটা সৃষ্টি করবে। কিন্তু তারা যেমনটা ভেবেছিল বাস্তবতা আসলে ততটা সহজ নয়। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে সবাই-ই টিকে থাকার সংগ্রাম আর নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয় প্রতিদিন। কিন্তু তার পরেও কেউ হাল ছেড়ে দেয় নি। সবাই সবাইকে অবলম্বন করে একটু একটু করে এগিয়ে যায় তাদের স্বপ্নের পথে।

পুরো সিরিজটা মোটামুটি ভাবে আবর্তিত হয়েছে আওইকে ঘিরে, যে তার ক্যারিয়ার শুরু করে বড় একটা এনিম কোম্পানির প্রোডাকশন সেক্টরে। একটা এনিম তৈরি করা বিশাল হ্যাপার কাজ; ডিরেক্টরের স্টোরি বোর্ড ড্রয়িং থেকে শুরু করে এনিমেশন, মোশন, সিজি ইফেক্ট, সাউন্ড ইফেক্ট, ব্যাকগ্রাউন্ড, ভয়েস এক্টিং থেকে ফিনিশিং কিংবা ডেলিভারি – প্রতিটা এপিসোডই এক একটা বিরাট কর্মযজ্ঞ। প্রোডাকশনের দায়িত্ব এই সকল কাজের জন্য আলাদা আলাদা টিমের মাঝে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া, তাদের শিডিউল তৈরি করা, ইন হাউজ প্রোডাকশনে না কুলালে বাইরে থেকে কাজ করিয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় দেখভালের। আওইর পারস্পেক্টিভ থেকে আমরা তাই একটা এনিম তৈরি করতে কি পরিমাণ এফোর্ট এবং টানাপোড়েন চলে তার প্রায় পুরো ছবিটাই স্পষ্ট দেখতে পাই। সেই সাথে ক্রিয়েটিভ লোকজনের পারস্পরিক ইগো ক্ল্যাশ, নিজের সাথে যুদ্ধ, নিজেকে দিন দিন নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সংগ্রাম; স্বপ্ন, আশা; বাস্তবতার সাথে কল্পনার জগতের ব্যালেন্স করার লড়াই – সব কিছুই খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সিরিজটায়।

সিরিজটার শক্তির জায়গাগুলোর একটা হল বেশিরভাগ প্রোটাগোনিস্ট চরিত্রই মেয়ে হলেও তাদের কেউই ট্রেডিশনাল এনিম সিরিজের ড্রামাকুইন ক্যারেক্টার না; বরং তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা স্বপ্ন পুরণে তারা সকল সন্দেহ আর প্রতিবন্ধকতার সাথে লড়াই করে যায় নিরন্তর। প্রত্যেকটা চরিত্রই ভীষণ রকম বিলিভেবল, একটু খুজলেই আমাদের আশেপাশেই পাওয়া যাবে এমন লোকজন। এরা প্রত্যেকেই হোঁচট খায়, মাঝে মাঝেই সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দেবার চিন্তা ভর করে মাথায়; এবং সেই চিন্তাগুলো দূরে সরিয়ে আবারও যার যার কাজে নেমে পড়ে।



কিছু ছোটখাট পয়েন্টঃ
১) রোজার দিন সিরিজটা দেখা খানিকটা কষ্টকর। নাহ; ফ্যানসার্ভিস না; ফ্যানসার্ভিস বলে একটা বস্তু পুরো সিরিজে একেবারেই নাই (থ্যাঙ্ক গুডনেস); বরং কিছুক্ষণ পর পরই কেউ না কেউ কিছু না কিছু মজাদার খাবার খেতে থাকে। :(

২) বিপুল পরিমাণ চরিত্রের উপস্থিতি। আবছা আবছাভাবে সবার নাম আর একজনের সাথে আরেকজনের সম্পর্কগুলো বুঝে উঠতেই আমার ৪-৫ পর্ব লেগে গেছে। এই দিকটার জন্য প্রথম প্রথম সিরিজটার সাথে তাল মিলাতে কষ্ট হতে পারে; কিন্তু একবার এই Phase পার হয়ে গেলেই আসল মজাটা পাওয়া যাবে। :)

৩) ম্যাল এ সিরিজটায় দুটো ট্যাগ দেওয়া; একটা ড্রামা, আরেকটা কমেডি। পুরো সিরিজে কমেডি এসেছে মুলত লোকজনের পারস্পরিক ইন্টারেকশনে, খুব ন্যাচারালি; কোথাও খুব বেশি অতিরঞ্জন নেই; জোর করে হাসানোর চেষ্টাও নেই। তারপরেও হেসেছি, দম ফাটায়েই হেসেছি, খুব দুর্দান্ত কিছু সিচুয়েশনাল কমেডি এবং ওভারঅল সিরিজের লাইট থিমের জন্যই।


সিরিজটার সাউন্ডট্র্যাক অত আহামরি কিছু না; তার কারণ পুরোটাই সংলাপ নির্ভরতা এবং দ্রুতগতি। প্রায় পুরোটা সিরিজেই টেকনিকাল টার্ম এক্সপ্লেনেশন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা সেক্টরের কাজকর্ম, দায়িত্ব ব্যাখ্যা করেছে খুব সুন্দর করে, এবং সেটা সিরিজের ফ্লো-তে কোনরকম বিঘ্ন না ঘটিয়েই।

P.A. Works এর এনিমেশন এবং ডিজাইন, এবং তারা তাদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পেরেছে পুরোপুরিই। প্রত্যেকটা চরিত্রের এক্সপ্রেশন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দুর্দান্তভাবে; যেটার উপর অনেকটাই সিরিজটার সাফল্য – ব্যার্থতা নির্ভর করছিল।

ছাত্রজীবনের প্রায় শেষ দিকে থাকার দরুণ ব্যাক্তিগত জীবনে আমি নিজেও বেশ খানিকটা ধাঁধার মধ্যে আছি, ভবিষ্যৎ, ক্যারিয়ার, স্বপ্ন, পরিবার – সব কিছু নিয়েই। সে দিক থেকে সিরিজটার সাথে খুব সহজেই নিজেকে রিলেট করতে পেরেছি, উপভোগ করতে পেরেছি, প্রত্যেকটা চরিত্রের স্ট্রাগল দেখে তার মাঝে নিজেকে খুজেছি, তারা কি করে সেখান থেকে উৎরে আসে সেটা দেখেছি আগ্রহভরে, তাদের সাথে তাদের সাফল্যে আমিও হেসেছি। বেশ কিছুদিন ধরেই দুই দিনে ২৪ পর্বের একটা সিরিজ শেষ করা আমার জন্য খুব দুর্লভ, shirobako আমাকে সেই দুর্লভ মুহূর্তের সাথে আবারও দেখা করিয়ে দিয়েছে। :)

I simply loved it !

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১৫ রাত ২:১৩
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×