'বাংলাদেশের ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনা'। শুনেই কেমন যেনো একটু আগ্রহ খেলা করছিলো কী পরিকল্পনা তা জানার। বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে যে যাই বলুক না কেনো তা জানতে মনের অজান্তেই এক প্রকার আগ্রহ জন্মে। আর যখন শুনলাম এই উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরী করেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জেষ্ঠ পূত্র তারেক রহমান স্বয়ং নিজে, তখন তা জানার আগ্রহ বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। কে কিভাবে দেখেন জানিনা, তবে আমার নিজের কাছে সব সময়ই মনে হয় তারেক রহমান দেশ কে নিয়ে ভাবেন, দেশের জন্য কিছু একটা করার প্রবল ইচ্ছা তার রয়েছে। আমি এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, যদি আমি শুনতাম দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এরকম কোন পরিকল্পনা করছেন তবে আমার আগ্রহের ব্যারোমিটার এতো উচ্চ পর্যায়ে পৌছাতো না। আর এটা তো অনুমিতই সত্য যে, যদি আগামীতে বিএনপি নের্তৃত্ত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসে তবে তারেক রহমানই হবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাই ভাবী এই প্রধামন্ত্রীর মুখ থেকে দেশকে নিয়ে তার ভাবনার কথা, দেশেকে কীভাবে সাজাবেন সেই পরিকল্পনার কথা সর্বোপরী দেশের আর্তসামাজিক উন্নয়নে তিনি কী চিন্তা ভাবনা করছেন তা জানতে মনের হার্টবিট যেনো দ্রুতই বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। খবর পেয়েছিলাম তারেক রহমান তার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরবেন ১৫ জুলাই যুক্তরাজ্য বিএনপি'র ইফতার মাহফিলে। স্হানীয় একটি পত্রিকার সাব এডিটর এবং একটি টেলিভিশনে কাজ করার সুবাদে মোক্ষম সুযোগটা পেয়ে যাই। আমাকে দাওয়াত করা হয় তারেক রহমানের প্রোগ্রামে। এ যেনো একই সাথে রথ দেখা ও কলা বেঁচা!
তো অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। অধীর আগ্রহ নিয়ে রওয়ানা হলাম তারেক রহমানের ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনা শুনার জন্য। কিন্তু আমার চিন্তা আর চেতনায় প্রচন্ড হোচঁট খেলাম অনুষ্টানস্হলে পৌছে। চারদিকেই অব্যবস্হাপনার ছাঁপ সুস্পষ্ট। এতোবড় একটি অনুষ্টান, কিন্তু নেই কোন পরিকল্পনার বিন্দুমাত্র ছিটেঁফোটা। কথায় আছে না, 'প্রথমেই দর্শন দেউড়ী তারপর গুণ বিচারী।' তো তারেক রহমানের অনুষ্টান স্হলে পৌছেই আমার মনের মাঝে লালন করা আশার বেলুন টুঁশ করে ফেটে গেলো। তারপরও অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন জনাব তারেক রহমান তার বক্তব্য শুরু করেন।
আমার ব্যাকুলতার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বিকেল প্রায় ৮টার দিকে শুরু হয় তারেক রহমানের উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা। আমি প্রায় মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে থাকলাম তারেক রহমানের বক্তব্য। আর মনে হতে থাকলো সত্যিইতো আমরা যদি এই ফর্মুলাগুলো কাজে লাগাতে পারি তাহলে দেশ সত্যি সত্যিই উন্নয়নের শিখরে পৌছুতে পারে। কিন্তু বিধিবাম! আমার মুগ্ধতার মাত্রা বাড়ার আগেই কোঁপ দিয়ে তা কেটে দিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপি'র নেতা-কর্মীরা। তারেক রহমানের বক্তব্য আর শেষ হতে পারলো না। শুরু হলো বিএনপি'র অন্ত:র্কোন্দলের প্রকাশ্য রূপ। আর তাদের নেতা ও সরাসরী প্রত্যক্ষ করলেন তার দলীয় কর্মীদের কুৎসিত চেহারা। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, যিনি কিনা তাদের ভাষায় 'দেশ নায়ক', তার সামনেই নেতা-কর্মীরা শুরু করলেন হাতাহাতি-মারামারি। আর ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারের মতো তারেক রহমান শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলেন। এ যেনো মহাপরাক্রান্ত কিন্তু পরিশ্রান্ত এক রাষ্ট্রনায়ক!!
শুধু কী তাই, তারেক রহমান তার বক্তব্যের মাঝে প্রায় ৮ থেকে ১০ বার দলীয় কর্মীদের কথা না বলে, হট্রগোল না করে মনোযোগ দিয়ে তার বক্তব্য শুনার অনুরোধ জানান। কিন্তু কে শুনে কার কথা। 'আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে' এই মনোভাব নিয়ে এখানে সব নেতা-কর্মীরা চলা ফেরা করেন। তো তাদের আর খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই, তারেক রহমানের কথা শুনতে বইয়ে গেছে। নেতা-কর্মীদের এ অবস্হা দেখে ভীষন ক্ষুব্ধ তারেক রহমান পরে তার রাগ ঝারেন যুক্তরাজ্য বিএনপি'র সিনিয়র নেতাদের উপর। তিনি দলের সভাপতি, সেক্রেটারীসহ সংশ্লিষ্টদের সরাসরীই তার ক্ষোভের কথা জানান। তারেক রহমানের ভাষায়, "কোন দিন আপনারা পারছেন প্রপারলি একটা জিনিস অ্যারেন্জ করতে। যতোগুলো প্রোগ্রাম দেখলাম কোনদিনইতো পারেন নি আপনারা।" তারেক রহমানের এই কথা থেকেই বুঝা যায় তিনি কতোটা বিরক্ত হয়েছিলেন সেই সময়।
চরম অব্যবস্হাপনার এই প্রোগ্রামে এক পর্যায়ে তারেক রহমানকে অনেকটা অসহায়ের মতো মনে হয়। তিনি তার সামনের প্রত্যেককেই এক প্রকার অনুরোধ করতে থাকেন চুপ করে তার বক্তব্য শুনার জন্য। কিন্তু কে শুনে কার কথা! এখানে দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়। তাই যার যার অনুসারীরা তার নেতার প্রচার প্রচারনায় ব্যস্ত। কিন্তু মূল নেতা যে বসা সেদিকে কারো বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। যাদের মাধ্যমে তারেক রহমান তার পরিকল্পনা দেশের তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন সেই কর্মীরাই তার বক্তব্য ধৈর্য্য সহকারে শুনতে রজী নন।
এখানে একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে তারেক রহমান বাংলাদেশের ভবিষ্যত পরিকল্পনার ব্যাপারে সত্যিই একটি সহজ ধারনা দিতে চেয়েছিলেন। কী করে দেশের উন্নয়ন করা যায়, কী করে সাধারণ মানুষের মুখে হাঁসি ফুটানো যায় সেই স্বপ্ন নিয়েই তিনি হাজির হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন 'দল, মত,বিশ্বাস ও দর্শন যার যার, কিন্তু দেশটা সবার। আমাদের সবার।' তিনি তার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অনুষ্টানে আগত দলীয় নেতা-কর্মীরা তাকে বার বার বাধাগ্রস্ত করেছেন। সেজন্য তাকে অনেকবারই বক্তব্য অসম্পূর্ণ রেখে তাদেরকে শান্ত করতে ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিশৃংখল পরিবেশ মারামারি ও হাতাহাতিতে রূপ নেয়ায় তিনি তার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য হন। তারেক রহমানের মতো একজন নেতার অনুষ্টানে এরকম বিশৃংখল অবস্হা দেখে উপস্হিত অনেকেই যুক্তরাজ্য বিএনপি'র সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আর এ পরিস্হিতি সৃষ্টির জন্য যুক্তরাজ্য বিএনপি'র সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কেউই দায় এড়াতে পারেন না।