somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পশুরিকাঠি-ছোট গল্প

০১ লা জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সোনা বরুর বয়স ষাট পেরিয়েছে কন্তিু দারিদ্র আর রোগে-শোকে তিনি নুয়ে পড়েছেন দেখলে মনে হবে যেন আশি বছর বয়স্কা কোন নারী। স্বামী মারা গেছে বছর সাতেক আগে। নিজের বলতে এখন আর কিছুই নেই। না আছে বাড়ি না নিজস্ব আছে ঠিকানা। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকতেন বোনের বাড়ি। ছেলে চট্টগ্রামে পোশাক শ্রমিক আর মেয়েকে কোন রকম বিয়ে দিয়েছেন। এখন ঝাড়া হাত-পা।

কথায় আছেনা-অভাগা যেদিক চায় সাগর শুকিয়ে যায়। সোনা বরুর হয়েছে সেই দশা। ছেলে মাসে দুই মাসে কিছু টাকা পাঠাতো আর মেয়েও সাধ্য মত কিছু দিত তাতেই বেশ চলে যেত। কিন্তু করনা এসে সব বদলে দিল। ছেলের কাজ বন্ধ তাই টাকা দেওয়াও বন্ধ। মেয়ের জামাই মারা গেল, মেয়েরই দিন চলেনা মাকে দিবে কি করে ? সব বন্ধ থাকলেও ক্ষিধাতো বন্ধ থাকেনা। সময় সময় মোচর দিয়ে উঠে ক্ষিধার রাক্ষস। কিছু রসদ না দিলে দম কেড়ে নিতে চায় সে। কষ্ট বড় কষ্ট। পশুরিকাঠি গ্রামের সোনা বরুরের বড় কষ্ট।

দু’মুঠো শাক-লতা-পাতার খোজে পাথারে নামে সোনা বরুর। সেখানেই দেখা মিজি বাড়ির বৌ মুক্তা বেগমের সাথে। মুক্তা বেগম কাজ করতো মাটি কাটার কাজ। এখন কাজ নাই। স্বামী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। দুটি ছেলে মেয়ে নিয়ে ধার দেনা করে অনাহারে- অর্ধাহারে দিন যাচ্ছিল। বাধ্য হয়ে বাসাবড়ির কাজ নিলেন। কিন্তু সেইটাও কপালে সইলনা। করোনা আইয়া ছিনাইয়া লইলো।
মুক্তা-দিদি কেমন আছেন গো ?
সোনা- নারে দিদি ভালা নাই। গরীবের আবার ভালা থাকনের জো আছে।
মক্তা - বরুণা কি শ্বশুরবাড়িই থাকবো। না নিজের কাছে লইয়া আইবেন।
সোনা- কি কপাল লইয়া মাইয়াডায় আইলো দুনিয়ায়। বাপ মরলো এহন আবার স্বামীরে হারাইলো। নাগো দিদি আমার নিজের বইলা কিছু আছে। আইনা কই রাখুম। খাওয়াইমু কি ? তারচেয়ে হেয় হেনেই থাকুক যেমন-ই হোক দুই মুড ভাততো খাইয়া বাঁচতে পারবো।
মুক্তা- ঠিকই কইছ দিদি। আরেকটা খবর হুনছ দিদি ?
সোনা- কি খবর মুক্তা!
মুক্তা- ঘূর্ণিঝড় বলে হইবো। হের নাম বলে আম্পান। বেবাক বাড়ি ঘর নাকি তলাইয়া নিবো।
সোনা- দুর্দিনের কি শেষ নাই। একটা না যাইতে আরেকটা। আর ভাললাগেনা। কোন মতে চোখ বন্ধ করতে পারলেই বাঁচি।

সময় ক্ষেপন হচ্ছে ভেবে কীর্তনখোলা নদীর তীরের এই দু্ই নারী যে যার কাজে চলে গেল। অভাবের সংসারে নারীকেই সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়। নিজে না খেয়ে সন্তানের পেটে দানা-পানি দেওয়ার জন্য অস্থির আর ব্যাকুল হয়ে থাকেন। আর মনে মনে প্রার্থনা করেন সুদিনের।

সত্যি সত্যি ক’দিন পর ঘূর্ণিৃঝড় তার দানবীয় রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে। তান্ডবলীলা চালিয়েছে যতটা পেড়েছে। নদীপাড়ের অসহায় মানুষগুলো জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত হতে হতে আবারও লড়ে যায়।

নির্মাণ শ্রমিক রফিক গ্রামে সবাইরে জানায় আগামীকাল সকালে দুর্গত মানুষজনদের সহায়তা দিতে একটা পত্রিকা অফিস থাইকা লোক আইবো। সকাল ১০ টায় যেন সকলে স্কুল মাঠে উপস্থিত থাকে।

খবরটা শুনে শাহনাজ বেগম খুশ হন। তার বাচ্চাগুলানরে প্যাড ভইরা খাওন দিতে পারেন না আজ কদিন। দিন-রাত কান্নাকাটি লেগেই আছে। ভাদাম্মা স্বামীকে সাপ-সপান্ত করতে করতে নিজেই ছুটলেন স্কুলের দিকে। তার পিছু পিছু দেখা গেল-মুক্তা, সোনা, রফিক, করিমন, আনিছসহ আরও মানুষের মুখ।

সামাজিক দূরত্ব মেনে সবাই বসে আছে কিছু পাবার আশায়। চাল, আলু, ডাল ও অন্যান্য খাদ্য সহায়তা পেয়ে মানুষগুলো যেন হতাশার সাগরে একটু আশার আলো দেখলো। বাড়ি ফিরার পথে তাই কথা হচ্ছে একে অপরের সাথে।

মুক্তা- খাওনের টানাটানি। সামনে বর্ষাকাল। যাক কয়দিন চলন যাইবো।
সোনা- চাউল-সওদা পাইয়া কলিজায় পানি আইছে। দুইডা দিন শান্তিতে খাইতে পামু।
শাহনাজ- বাঁচা গেল। বাচ্চাগুলার পেট শান্তি হইবো কয়দিন। গরিবের দুর্দিনের শেষ নাই। মরলে যদি শেষ হয়।
রফিক- খাওনের চিন্তা, ভাঙ্গা ঘর মেরামতের চিন্তা। চিন্তায় চিন্তায় জীবন শেষ।

এমনি সুখ-দু:খের আলাপ নিজেদের মধ্যে করতে করতে যে যার বাড়ির পথ ধরে। পশুরিকাঠি মাটিতে আবার সুখের দিন আসবে। সেই নতুন স্বপ্ন নিয়ে ওরা ফিরে যায়।

কিন্তু বোকা মানুষগুলো জানেনা। যতক্ষন জীবন আছে ততক্ষনই যুদ্ধ। একমাত্র মৃত্যুতেই শেষ হয় জীবন যুদ্ধ।




ছবি-নিজের তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:২৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×