আজকের গল্প হোয়াদের জোতা খালি ছোট হয়ে যায়।
দীর্ঘ এক মাস পর বাবু আর তার মাকে গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়ে আসলাম। আসার পর বিপত্তি বাধল জুতো নিয়ে। বাবুর ঘরের পড়ার জুতা, বাহিরে পড়ার জুতা এমনকি ওয়াসরুমে পড়ার জুতা ছোট হয়ে গেছে । তার পায়ে ঠিক মত লাগছে না। এই নিয়ে সে খুবই বিরক্ত।
সে নিজে নিজেই বলে যাচ্ছে, আমার নতুন জুতা কিনত হেবে। আমি চুপ করে আছি। যদি বলি হ্যা কিনতে হবে তাহলে সে আজই কিনার জন্য বায়না ধরবে।
ওয়াসরুমে ঢুকে জুতো গুলো কোনমতে পড়ে আমাকে দেখালো, বাবা-দেখছো কেমন টাইট হয়ে গেছে। পরে দরজা বন্ধ করে একটু বিষন্ন কন্টে বলল, হোয়াদের জোতা খালি ছোট হয়ে যায়।
এই হোয়াদ শব্দটা সে গ্রাম থেকে শিখে এসেছে। আমার প্রচন্ড হাসি পেল তার কথা শুনে। আমাদের এলাকায় কারো হাত থেকে কোন কিছু পড়ে গেলে বলে, হোয়াদের জিনিসটা কেন পড়ে গেল। কারো খবার পুড়ে গেলে বলে, হোয়াদের খাওন খালি পুড়ে যায়.....................।
এবার ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে বলল, বাবা ছোট বেলা তোমারও কি এরকম হতো, জুতো ছোট হয়ে যেত।
আমি মাথা নেড়ে বললাম-হ্যা।
-তখন তোমার আব্বু কি নতুন জোতা কি দিত ?
আমি বললাম, না। সবসময় নতুন জুতা কিনে দিত না।
-কেন ?
কারণ তোমার মত আমাদের এত জুতো ছিলনা। তোমার ঘরে বাহিরে পড়ার তিন জোড়া জুতা আর বেড়াতে যাওয়ার চার জোড়া আর আমাদে ছিল সব মিলিয়ে তিন জোড়া।
-এ্যা এটা আবার কেমন ?
ঘরে পড়ার এক জোড়া, স্কুলের জন্য এক জোড়া আর বেড়াতে যাওয়ার জন্য এক জোড়া।
-তাহলে আম্মুর কেমন ছিল ?
-সেটাতো আমি জানিনা। তোমার আম্মুতো তখন ছিলনা, তোমার আম্মুকে জিজ্ঞেস করো তার কয় জোড়া ছিল ?
বাবুর মা শুনে বলল, সেটা জেনে কাজ নেই। মেয়েকে অভাব শিখান। চাইলেই দিতে হবে এমন কোন কথা নেই।
আমি বললাম, তা ঠিক আছে এখন ০১ জোড়া তো কিনে দেওয়া দরকার।
তার মা বলল, শোর্যাক খুলে দেখেন জোতা দিয়ে বোঝাই এতটুকু বাচ্চার এত জোড়া জোতা লাগে ?
বাবুর আবার জুতো খুব পছন্দ। তার জীবনের প্রথম জুতা থেকে শুরু করে ব্যবহত কিন্তু এখন ভাল রয়েছে এরকম৪/৫ জোড়া জোতা রাখা আছে সে কাউকে দেয়ওনা, ফেলে দিতেও দেয়না। মাঝে মাঝে বের করে দেখে আর এটা সেটা প্রশ্ন করে ?
গতকাল বের হয়েছিলাম তার জুতো কিনব বলে। কিন্তু অন্য কিছু কিনে টাকা শেষ তার জুতা কেনা হলনা। সে রিক্সায় বসে চুপ মেরে ছিল। তার মানে মন খারাপ। তাকে কিছু একটা দোকান থেকে নিতে বললাম খাওয়ার জন্য সে কিছু নিতে চায়না। তবু জোড় করে বিস্কুট দিলাম যাতে বাসায় এসে কান্না কাটি না করে আর বললাম আগামীকাল কিনে দিব ?
রাতে ঘুমানোর আগে নিজেই কাগজ দিয়ে জুতা বানিয়ে পড়ে দেখালো, এটা যেন একটা প্রতিকী প্রতিবাদ। আমরা অবাক তার বুদ্ধি দেখে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:১৩