somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিষিদ্ধ পরীঃ

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত প্রায় আড়াইটা। ক্লাবে ক্লায়েন্টদের সাথে আড্ডা শেষ করে রাতের অন্ধকারে একাকী হেঁটে চলেছে রুদ্র প্রতাপ। পথিমধ্যে গাড়ি নষ্ট হওয়ায় ড্রাইভার কে গাড়িতে রেখে আসাই তার এই একাকীত্বের কারন।

হাত দু'য়েক সামনে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পড়া এক তরুণী। রুদ্র প্রতাপ ছোট বেলা থেকেই গ্রামে বড় হয়েছে। সংগত কারনেই কুসংস্কারে সে একটু বেশি বিশ্বাসী, সে ভাবল এটা নিশ্চয় অশুভ কোন কিছু হবে। উপায়ান্তর না পেয়ে জোড় পায়ে অশুভ জিনিসটাকে অতিক্রম করতে গেল রুদ্র প্রতাপ।

ঠিক তখনই ওপাশ থেকে একটি মেয়েলি কন্ঠস্বর ভেসে আসল —

তরুণীঃ বসবেন নাকি?

রুদ্র প্রতাপঃ (রুদ্র মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখল ভয়ঙ্কর সুন্দরী বলতে যা বোঝায় এই মেয়ে তার থেকেও ভয়ঙ্কর সুন্দরী।) বসব মানে?

তরুণীঃ একবার বসলে ৬০০/=, ডাবল বসলে ১,০০০/=, ফুল নাইট ২,৫০০/=।

রুদ্র প্রতাপঃ (ভিতরে ভিতরে রুদ্রর পশুবৃত্তি জেগে উঠলেও অজানা ভয়ে তাকে দমন করল সে।) দেখে তো ভদ্রই মনে হয়, তো এই পথে কি জন্য? নাম কি?

তরুণীঃ আমি পরী। আমার বাবা মারা গেছে, ঘরে অসুস্থ মা। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে একটি কোম্পানীতে জব নিয়েছিলাম, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারনে আমার বস আর তার দুই চামচার কাছে রেপ হয়েছি তাই আজ এ পথে। যাইহোক, আপনি কি বসবেন?

রুদ্র প্রতাপঃ না বসব না। আচ্ছা, তুমি কি কেবলমাত্র পেটের দায়ে এ পথে এসেছ না কি অন্যকিছু?

তরুণীঃ হ্যাঁ, কেবল পেটের দায়ে আজ আমি এই অন্ধকার জগতে। আচ্ছা, আপনি কি করেন, আমায় একটা কাজ দিবেন? আমার বেশি স্যালারি দরকার নেই, শুধুমাত্র আমি আর আমার মা দু'মুঠো খেতে পারলেই হবে। এ নষ্ট জীবন আর ভাল লাগে না।

রুদ্র প্রতাপঃ এই কার্ড টা রাখ। আমার বন্ধুর কার্ড, ওখানে গিয়ে আমার কথা বলবে ও নিশ্চয় একটা ব্যবস্থা করে দিবে।

তরুণীঃ (উচ্চস্বরে কাঁদতে কাঁদতে) অনেক অনেক ধন্যবাদ .....................।

অতঃপর প্রস্থান —

পরেরদিন সকালে ঐ ঠিকানায় গিয়ে হাজির হয় পরী, বস কে রুদ্র প্রতাপের কথা বললে চাকুরী হয়ে যায় তার। মনে মনে রুদ্র প্রতাপকে দেবতার আসনে বসায় পরী।

পরবর্তী দিনগুলি বেশ ভাল ই চলছিল। এক রবিবারে অফিস অডিট করার জন্য টেস্টার আসল, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অফিস ইনচার্জ সেদিন উপস্থিত ছিল না। পরী ই ঐ টেস্টার কে ম্যানেজ করে ফেলে।

বস বুঝতে পারে পরী শিক্ষিতা মেয়ে, বস আরও অবাক হয় যখন জানতে পারে পরী মাস্টার্স পাশ। বস খুশি হয়ে পরীকে প্রমোশন দেয়। এখন পরীর মাসিক বেতন ৬০,০০০/=। পরীর কষ্টের দিন শেষ।

একদিন রুদ্র প্রতাপ কে ফোন করে পরী। কিছুক্ষন কথা বলার পরে রুদ্র পরী কে তার ফ্লাটে যেতে বলে।

পরেরদিন খুব সেজে-গুজে সরল মনেই রুদ্র প্রতাপের ফ্লাটে যায় পরী। অতঃপর তাদের কথোপকথনঃ

রুদ্র প্রতাপঃ আস, আস! ভিতরে আস। তোমার জন্যই ওয়েট করছিলাম।

পরীঃ কেমন আছেন?

রুদ্র প্রতাপঃ হুম, ভাল। তুমি কেমন আছ?

পরীঃ আপনার দয়ায় ভাল আছি। আপনার রিন আমি জীবনেও শোধ করতে পারব না।

রুদ্র প্রতাপঃ কে বলল পারবে না? তুমি ইচ্ছা করলেই পারবে।

পরীঃ কিভাবে?

রুদ্র প্রতাপঃ আমার শয্যা সংগী হয়ে।

পরীঃ অবাক হলেও সম্মতি দিল কারন সে যে ভালবেসে ফেলেছে রুদ্র প্রতাপ কে।

অতঃপর ..........................................।

অফিস আওয়ার শেষে বাড়ি ফিরছে পরী। পথিমধ্যে এক জায়গায় জটলা পাকানো লোকের ভীড় দেখে এগিয়ে যায় সে, লটারী বিক্রি করছে এক বৃদ্ধ। ১ম পুরুষ্কার ৬০ লক্ষ টাকা। একটি লটারী কিনে বাড়ি ফিরে আসে পরী।

তিনদিন পরে লটারীর ড্র। অনাকাঙ্খিতভাবে ১ম পুরুষ্কার পায় পরী। খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় সে, ভাবে এবার মায়ের ওপেন হার্ট সার্জারি টা করিয়ে ফেলবে। খুশি মনে বাড়ি ফিরে আসে সে। একি! বাড়িতে এত ভীড় কেন? এত মানুষ কোথা থেকে আসল?

পরীর মা আকাশের তারা হয়ে গিয়েছে। পরী কে নিতান্তই একা করে দিয়ে ভিনদেশে পাড়ি জমিয়েছে তার মা। পরীর আপন বলতে আর কেউই রইল না।

১১ দিন পরী নিখোঁজ।

এক বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় রুদ্র প্রতাপের ফ্লাটে গিয়ে হাজির হয় পরী। অতঃপর তাদের কথোপকথন —

রুদ্র প্রতাপঃ আরেহ তুমি! এতদিন কোথায় ছিলে? তোমায় বিছানায় পাবার জন্য মন টা উতলা হয়ে আছে। অনেক বার ফোন করেছি তোমায়।

পরীঃ (কান্না ভেজা কন্ঠে) ১১ দিন আগে আমার মা মারা গিয়েছে, আমার আপন বলতে আর কেউ রইল না...........।

কিছুক্ষন নীরব, নিস্তব্ধ...............

রুদ্র প্রতাপঃ সো স্যাড। নো টেনশন ডার্লিং, আই এম হিয়ার। তোমার সব চাহিদা আমি মিটিয়ে দিব বিনিময়ে তুমি শুধু...............।

পরীঃ (অশ্রুসিক্ত মায়াবী দু চোঁখে, মলিন বদনে) আমি জানি, আমি নষ্টা মেয়ে। আচ্ছা, আপনি কি পারেন না আমায় একটা পরিচয় দিতে? আপনি কি পারেন না আপনার পায়ের নিচে আমায় একটু ঠাঁই দিতে? আমি সারাজীবন আপনার দাসী হয়ে থাকব, আর কখনোই কিছু চাইব না।

রুদ্র প্রতাপঃ আর ইউ ম্যাড? এই মূহুর্তে আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও নতুবা পুলিশ ডাকতে বাঁধ্য হব।

মাথা নিচু করে নীরবে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসে পরী।

পরেরদিন সকাল বেলা রুদ্র প্রতাপের কাছে একটি বেনামী বক্স আসে। বক্সটি ওপেন করে রুদ্র প্রতাপ। বক্সের ভিতর ৬০ লক্ষ টাকা আর একটি চিরকুট।

চিরকুটে লেখা ছিলঃ

"কোন সম্বোধন ছাড়াই শুরু করছি। জীবনে অনেক বার অনেক স্বপ্ন দেখেছি কিন্তু নিষ্ঠুর বিধাতা আমার কোন স্বপ্ন ই পূরণ করতে দেন নি। আমাদের বোদহয় স্বপ্ন দেখতে নেই, স্বপ্ন বোদহয় সবার জন্য নয়।

এ সমাজে যারা পতিতালয়ে গিয়ে তাদের দৈহিক চাহিদা মেটায় তারা সবাই ভদ্র মানুষ আর যে সমস্ত অভাগা, অসহায় মেয়েরা বাঁধ্য হয়ে দেহ বিক্রিতে নামে তারা সবাই পতিতা। এ সমাজে তাদের কোন ঠাঁই নেই। তারা এ সমাজের জঘন্য কীট।

এই জঘন্য কীট যতক্ষন বিছানায় থাকে তখন হয় পরম আদরের বস্তু অথচ যখন সে একটু মর্যাদা চায় তখন সে হয় গলা ধাক্কার পাত্রী।

এটাই আপনাদের সমাজ, এটাই আপনাদের সমাজতন্ত্র, এটাই আপনাদের বিচার ব্যবস্থা।

আমি চলে যাচ্ছি আপনাদের সমাজের বাইরে, আমি চলে যাচ্ছি আপনাদের সমাজতন্ত্রের বাইরে, আমি চলে যাচ্ছি আপনাদের বিচার ব্যবস্থার বাইরে।

আপনি একদিন আমার উপকার করেছিলেন, আমায় স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তার বিনিময়ে আমি আপনাকে ৬০ লক্ষ টাকা দিয়ে গেলাম।"

ইতি —
নিষিদ্ধ পরী।

আর কখনও পরী কে দেখা যায় নি। নষ্ট দুনিয়া জানে না পরী এ সমাজ, এ সমাজতন্ত্র ছেড়ে কোথায় গেছে, নষ্ট দুনিয়া জানে না পরী সত্যি সত্যিই কাল্পনিক পরী বা তার মায়ের মত আকাশের তারা হয়ে গিয়েছে কিনা!

কারন, এটাই আমাদের সমাজ, এটাই আমাদের সমাজতন্ত্র, এটাই আমাদের বিচার ব্যবস্থা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×