somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোহান, আমার একটা ছোটভাই

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছোটবেলায় যে বাসায় ছিলাম সেখানে পাশের বাসায় ছিল একটা পিচ্চি, যার নাম সোহান। আমার ছোট ভাইয়ের চেয়ে বোধহয় পাঁচ-ছয় মাসের ছোট হবে বয়সে। জন্মের পর থেকে ও আমাদের বাসাতেই বড় হয়েছে। আমার ছোট ভাইয়ের সাথে।
আর সব বাবুর মত সোহানও দেখতে অনেক কিউট ছিল। ফরসা, বোঁচা, থ্যাবড়ানো নাক আর কপালের ওপর পড়ে থাকা শনের মত সোজা সোজা চুল। ওর একটা ভীষণ বদঅভ্যাস ছিল, বুড়ো আঙুল চুষতো। কিছুতেই এই অভ্যাস ছাড়াতে পারিনি। একটা সময় দেখা গেল মুখে আঙুল দিয়ে রাখতে রাখতে ওর সামনের দাঁতগুলো কেমন উঁচু হয়ে গেছে।
ও সারাদিন থাকতো আমাদের বাসায়, আমার আম্মাকে আম্মা, আব্বুকে আব্বু ডাকতো আর আমরা দুইবোন ছিলাম ওর দুইটা আপা, বড় আপা আর ছোট আপা। সক্কাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই চলে আসতো বাসায়, আমার ছোটভাইয়ের সাথে খেলতো, একসাথে খাওয়া-দাওয়া, বাথরুম করা, গোসল, দুপুরের ঘুম, আবার বিকালে খেলা, সন্ধ্যায় আব্বু অফিস থেকে আসলে আব্বুর সাথে সারাদিনের কাহিনী শেয়ার করা, সমস্ত শেষে রাত দশটা-এগারোটায় বহুকষ্টে ওর আম্মা ওকে নিয়ে যেতে পারতো ওদের বাসায়, শুধু রাতে ঘুমানোর জন্য। আবার পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই দৌড় দিতো আমাদের বাসায়।
কখনো কোথাও বেড়াতে গেলে ও অস্থির হয়ে থাকতো আমাদের বাসায় আসতে। যত রাতই হোক ফিরতে একবার দেখা দিয়ে যেতো। একবার ঈদের দিন ও ওর নানুবাসায় গেছে। আসতে আসতে রাত সাড়ে দশটা। এসেই দুমদাম দরজায় ধাক্কা। আর চিৎকার, 'আম্মা দরজা খুলেন।'
আমার আম্মা বলছে, 'তুমি কে?'
-'আমি সোহান।'
-'সোহান কে?'
-'আপনার ছেলে।'
এই কথা বলার পর কি আর বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা যায়! আমার আম্মা তাড়াতাড়ি দরজা খুলে ওকে কোলে তুলে নিয়েছে তখন।
আবার কখনো যদি বাসায় মাংস বা ভাল কিছু রান্না হতো , সে গন্ধ পেয়েই আম্মার আশপাশে ঘুরঘুর করতো আর বলতো, 'আম্মা আপনাদের বাসায় আমার আজকে দাওয়াত।':)
আমার আম্মা একটা স্কুলে ছিল তখন। দুপুর একটার দিকে ছোট ভাইটাকে নিয়ে স্কুল থেকে এসে রাতের পান্তা ভাত ডাল আর ডিমভাজি দিয়ে খেতে দিতো। সোহানও সাথে এসে বসতো। যে ছেলেকে ওর আম্মা মেরে ধরে কিছু খাওয়াতে পারতো না, দেখা যেতো আমাদের বাসায় এসে মাটিতে বসে ওই পান্তা ভাতই চেটেপুঠে খাচ্ছে।
একদিন বাসায় পিঠা বানানো হচ্ছে। আমার ছোটভাইটা ঘুমিয়ে পড়েছে সন্ধ্যায়ই। সব সুনসান। তাই সোহানকে ডেকে আনা হল। সে সারাটা সময় চালের গুড়ির লেই আলনায় ডলে ডলে মেখে পুরো আলনাটাকে সাদা করে তুলল আর একটু পর পর বলতে লাগল, 'আম্মা আমি পিঠা বানাই।'
সারাদিন একসাথে খেললেও মাঝে মাঝে দুই বন্ধুর ঝগড়াও লেগে যেতো। তখন তারা কার কি আছে তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা লাগতো। খেলনা, জামাকাপড় সব দিকথেকেই দেখা যেতো সোহান এগিয়ে আছে। শেষ মূহুর্তে আমার ছোটভাই মোক্ষম অস্ত্রটা ছাড়তো, 'আমার দুইটা আপা আছে, তোমার আছে?'
সোহান থেমে যেতো, মন খারাপ করে সরে যেতো। কারণ ও ছিল এক ছেলে। পরে চুপচুপ করে আমাকে এসে বলতো, 'ছোটআপা আপনি আমার আপা, তাই না?'
ছোটআপার জন্য ওর টানটা একটু বেশি ছিল। কারণ ছোটআপা ওদের সাথে খেলাধূলা করতো, শয়তানিগুলা প্রশ্রয় দিতো, আর ছোটআপা নিজেওতো তখন ছোটই ছিল, তাই বনতো ভাল।
সালমান শাহ যখন মারা গেল, তখন আমি এইটে নাকি নাইনে পড়ি যেন। সবার মধ্যে একটা ক্রেজ ছিল। সালমান শাহর পোস্টার, ভিউকার্ড সংগ্রহের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। আমিও কিছু কিছু যোগাড় করেছিলাম। একদিন ঘরে বসে আছি, সোহান খেলার মাঝখান থেকে ছুটে আসছে, হাতে ছোট্ট একটা স্টিকার। হার্ট আকৃতির, মাঝখানে সালমান শাহ আর শাবনাজের ছবি। 'ছোটআপা নেন', হাতে দিয়েই আবার খেলার মধ্যে দৌড়। ও কিভাবে যেন বুঝছিল ছোটআপা এটা পেলে খুশি হবে। ওই স্টিকারটা আমি এখনও যত্ন করে রেখে দিয়েছি।

এগারো বছর আগে ওই বাসা ছেড়ে এসেছি। তখন সোহানের বয়স ছয় কি সাত। যেদিন আসি ও সামনে আসে নাই। এত মন খারাপ করেছিল। তারপর বছর দুয়েক আগে ওর সাথে দেখা হয়েছিল একটা বিয়েতে। অনেক বড় হয়ে গিয়েছিল। আমার ওই ছোট্ট ভাইটার সাথে কোন মিলই নাই। আর এতগুলো বছরের কারণে তৈরি হয়েছিল বিশাল দূরত্ব। কিন্তু সোহান নামটা শুনলেই আমার চোখের সামনে ওই থ্যাবড়া নাকের পিচ্চিটার চেহারাই ভাসে।



.........................................................

এই লেখাটা ব্লগার রাজসোহানের জন্য। ওকে দেখে আমার সেই ছোটভাইটাকে অনেক মনে পড়ছিল। রাজসোহানের চেহারা আর ওর কপালের ওপর পড়ে থাকা চুল, ঠিক আমাদের সোহানের মত। রাজসোহান, ছোটভাইটা.............অনেক ভাল থেকো, অনেক বড় হও কিন্তু দূরে সরে যেও না।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১২:৩৭
৬২টি মন্তব্য ৬২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×