somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সপ্তর্ষীমন্ডল ঝুলে আছে প্রশ্নবোধক হয়ে

২৭ শে মে, ২০১০ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

*****

আমার জানালা থেকে আকাশের ছোট্ট একটা টুকরো দেখা যায়। সময় পেলেই আমি মুখ তুলে ঐ এক টুকরো নীল দিকে চেয়ে থাকি। রাতের বেলায় আকাশের হাজারটা তারা আমি দেখি না। শুধু আমার জানালার ওপর বড় একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ণ হয়ে ঝুলে থাকে সপ্তর্ষীমন্ডল। আমি চোখ মেলে সেই প্রশ্নটা দেখতে পাই। চোখ বন্ধ করলেও দুচোখের পাতায় প্রশ্নটা আঁকা হয়ে থাকে। মাথার ভেতর আমি প্রশ্নের চিৎকার শুনতে পাই।

কি? কি?? কি???
কেন? কেন?? কেন???
কিভাবে? কিভাবে?? কিভাবে???

জীবনটাই এক বিশাল প্রশ্নবোধক হয়ে গেছে। কতগুলো অর্থহীন মূহুর্তের সমষ্টি। কতগুলো অবান্তর প্রশ্ন। প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গেলে হুড়মুড় করে চলে আসে কত কথা। তারপর আরো প্রশ্ন, আরো আরো প্রশ্ন। সব মিলে কেমন একটা জট পাকিয়ে যায়। ভীষণ এলোমেলো লাগে তখন। ভীষণ অস্থির!


*****

মাঝে মাঝে হাপ ধরে গেলে আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই। দৃষ্টি মেলে দিই সামনে............আমি সামনে তাকাই, ডানে তাকাই, বামে তাকাই। সব উঁচু উঁচু দালানে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে আমার দৃষ্টি। চারদিকটা এমন বদ্ধ হয়ে গেছে। যেন দৈত্যের প্রাণ ভরে রাখা কৌটোটা। চারদিকে বড় বড় দালানের মাঝখানে আমাদের দালানটা। এর ভেতর আমাদের ছোট্ট বাসাটা। বাসার ভেতর তারচেয়েও ছোট আমার ঘর। আর ঘরের পাশে এক চিলতে একটা বারান্দা।
একটার পর একটা কৌটো খুললেইতো দৈত্যের প্রাণটা হাতের মুঠোয় চলে আসে, তাই ঐ কৌটো হারাতে দৈত্যের কত ভয়! আমারও কেমন ঐ এক চিলতে বারান্দা থেকে বের হয়ে, বাসা থেকে বের হয়ে, চারদিক ঘিরে রাখা বড় বড় দালানের বেষ্টনী ছেড়ে বের হয়ে খোলা মাঠে যেতে ভয় লাগে। যেখানে গেলে আমি যেদিকেই তাকাই না কেন, দৃষ্টি আটকে যাবে না। তবু আমি ভয় পাই। দৃষ্টি আটকে না গেলেও আমার দম আটকে আসে। ভয়! ভয়! খুব ভয়!! বন্দী হয়ে থাকতে থাকতে এখন মুক্ত আকাশেই আমার ভয়।


*****


আজকাল খুব ইচ্ছে হয় ঝুমবৃষ্টিতে ভিজি। ছোটবেলায় কেমন হইহই করে ভিজেত যেতাম। তাহলে নাকি গায়ের ঘামাচি মরে! এখনতো ভেজার নামই নেয়া যায় না। এই ধাড়ী মেয়ে সবার চোখের সামনে বৃষ্টিতে ভিজবে!

"কতজন কত কী বলবে!"
---"সবার মুখে স্কচটেপ এঁটে দিবো"
"কুদৃষ্টিতে তাকাবে যে!"
---"চোখ গেলে দিবো সব ক'টার"
"ছুটে আসবে অপমান করতে"
---"ঠ্যাঙ ভেঙে দিবো"

খুব বিদ্রোহী হয়ে উঠতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে। কিন্তু কিছুই করা হয় না।
তাই যখন এসিড বৃষ্টি হবে শুনলাম, খুব খুশি লাগছিল। আমি ভিজবো, ভিজাবো সবাইকে। বহু বছরে মনের সমতলে জমা হ্ওয়া নোংরামি, নীচতা, লোভ, লালসা, হিংসা, ঘৃণার ক্লেদ এসিডে গলে গলে ধুয়ে যাবে। কেউ তখন আর কুকথা বলবে না, কুদৃষ্টিতে তাকাবে না, কুকাজ করবে না।

কিন্তু আমার কিছুই করা হয় না। চাতকের মত ব্যাকুল হয়ে দূর থেকে বৃষ্টি দেখি। ছুঁতে পারি না।


*****


ফেসবুকে সবার স্ট্যাটাস দেখে বুঝলাম আজ পূর্ণিমা। বিশাল থালার মত চাঁদ আকাশে। জোছনায় ভেসে গেছে চারদিক। কি মায়াময়, কি মোহনীয় পরিবেশ! সবাই মুগ্ধ! আবেগে আপ্লুত! আমার জানালা থেকে ছোট্ট এক টুকরো আকাশ দেখা যায় শুধু। আমি সেই জানালা দিয়ে চাঁদটা দেখার কত চেষ্টা করলাম। কাত হয়ে, চিৎ হয়ে, গলা বাড়িয়ে, চোখ বাঁকিয়ে। দেখতে পেলাম না। শুধু দুটো বিল্ডিং এর ফাঁক গলে জোছনার মরা সাদাটে একটুখানি আলো পিছলে নেমে এসেছে। সে আলো আমাকে ছুঁতে পারে না। আমি মুগ্ধ হই না, আবেগে আপ্লুত হই না। কেমন নিরাসক্ত ভঙ্গিতে একবার হাত বাড়াই সাদা আলোটার দিকে। তারপরেই আবার টেনে নিই। সরিয়ে নিই মুখ।

আমার ছোট্ট অন্ধকার ঘরের এককোণে মুখ গুজে বসে থাকি চুপচাপ। আমার বন্ধ চোখের পাতায় সপ্তর্ষীমন্ডল ঝুলে থাকে প্রশ্নবোধক চিহ্ণ হয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১০:৪৯
৫৬টি মন্তব্য ৫৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×