তোর কাছে চিঠি (১)
১৫ই মে, ২০১২
আমি জানি না তুই আসছিস কি না। ভয়ংকর রকম অনিশ্চয়তায় কাটছে আমার প্রতিটা মূহুর্ত। প্রতিবারই মনে হচ্ছে এই বুঝি আমার স্বপ্নটা ভেঙে গেল। সারাক্ষণ বুকের ভেতর ভীষণ এক ধুকপুকানি নিয়ে ঘুরছি।
এক একটা দিন যায়...আর আমি একটু একটু করে আরো ভয়ে, আরো অনিশ্চয়তায়, আরো আগ্রহে অধীর হয়ে উঠি। এক একটা দিন যায়...আর তোর আসার স্বপ্নটা আরো একটুখানি পূর্ণতা পায়।
পৃথিবীর আর কেউ না জানুক, তুইতো জানিস...কতটা ব্যগ্র আমি তোর আসার জন্য। আর কতদিন আমাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখবি? আর কতদিন আমার এই বাধভাঙা আবেগ দেখে আলোর পৃথিবী থেকে মুচকি মুচকি হাসবি? কবে যে চিন্তায় চিন্তায় আমি অসুস্থই হয়ে যাই! খুব আনন্দ হবে তখন না? দুষ্টুটা আমার!
তোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার শুরুতো আমার আজকে নয়। কতদিন ধরে যে আমি একটু একটু করে এই স্বপ্নের বীজ বুনেছি। তারপরও এখনও আমার বুকটা তিরতির কাঁপে, আমি কি পারবো? আমি কি পারবো এত বড় দায়িত্ব নিতে? তুইতো আর পুতুল নস, আস্ত একটা মানুষ। কেমন করে তোকে ধারণ করবো? আমি কি এখনো তৈরি! কেমন করেই বা তোকে বড় করে তুলবো! এই ছোট্ট ছোট্ট হাত-পা-নাক-চোখ...তুলতুলে ভঙুর একটা মানুষ। ধরতেই যে ভয় করবে খুব। আর এই নিষ্ঠুর নোংরা পৃথিবী...তুই কি করেই বা এখানে টিকে থাকবি? আমি কি পারবো তোকে রক্ষা করতে সমস্ত বিপদ, অন্যায়, আর কালোর হাত থেকে?
কত প্রশ্নই না মাথায় সারাক্ষণ ঘুরপাক খায়। মাথা বোঁ বোঁ করতে থাকে, মাথা ঝিম ঝিম করতে থাকে। আমার সমস্ত কাজ লাটে উঠেছে। সব ভুলে যাই, সবকিছুতে ভুল হয়ে যায়।
নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে যদি তোকে আমি একটা সুস্থ সুন্দর জীবন না দিতে পারি! 'কেন করলে এমন? এটা অন্যায়।' কোনদিন যদি প্রশ্ন করিস কি উত্তর আমি দিবো তখন।
তুইতো জানিস না, কি এক অনিশ্চয়তায় আমার বসবাস। তারপরও আমার কত্ত সাহস, তোকে আনার জন্য উঠে পড়ে লেগেছি। একদিন আমি কোনকিছুকেই ভয় পাই নি জানিস? আমি ভাবতাম যেকোন বাধাই ভেঙে-চুড়ে ফেলতে পারি আমি, তোর জন্য। কিন্তু আজকাল ভয় পাচ্ছি। তুই আসছিস, সেটা নিশ্চিত হবার আগেই তোর আসার পথটা রুদ্ধ করে দেয়াই বোধহয় ভাল...চিরতরে...
খুব সহজেই সেটা করা যায়, জানিস তো? আমি ছাড়া আসবি কি করে তুই? আমি যদি না থাকি তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। খুব সহজেই এই কাজটা শেষ করে দেয়া যায়।
চোখ বন্ধ করে আমি তোর ছোট্ট ছোট্ট হাত দুটোতে চুমু দিই, তোর নরম চুলের ঘ্রাণ নিই। কিন্তু এই অনিশ্চিত পৃথিবীতে তোকে আনার সাহস আমি করে উঠতে পারি না। তুই যেখানে আছিস, সেখানেই থাক। সেখানেই তুই ভাল থাকবি অনেক অনেক।
তোর কাছে চিঠি (২)
১৭ই মে, ২০১২
এখন আমি প্রায় আশি ভাগ নিশ্চিত যে তুই আসছিস। গতকালই জানতে পারলাম, খুব সকালে। আমি একা একাই কি যে অস্থির, কি যে টেনসন! তোর বাবা তখনো ঘুমে। ওকে না জানিয়েই চলে যেতে হল অফিসে। আর সারাদিন তোকে নিয়ে চিন্তায় ছটফট ছটফট। একদম যখন থাকতে পারছিলাম না তখনই তোর খালামনির সাথে কথা হল। উফ্ দুই বোনে কত যে জল্পনা-কল্পনা!
বাসায় ফিরে তোর নান্নানকে জানালাম ফোন করে। কেমন বোকা বোকা হয়ে চুপ হয়ে গেল, যদি শুনতি। তুই নিশ্চয়ই হাসতে হাসতে কুটিপাটি হয়ে যেতিস। আর তোর বাবার কান্ড দেখ, এতবার বলে দিলাম আজকে আগে এসো...তাও তার সবচেয়ে দেরি করাই চাই।
ওকে শুধু বললাম, তুমি বোঝো নাই? ও খুব অদ্ভুত একটা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর খুব অস্ফুটে বলল, সত্যি!
আর তারপরেই অস্থির...অস্থির...একবার উঠে দাঁড়ায়, আবার এসে বসে, আবার একটু বারান্দায় হেঁটে আসে। যেন কথাটা ওকে কোন ঘোরের মধ্যে নিয়ে গেছে, বিশ্বাসই করতে পারছে না। তারপরে অনেক অনেকক্ষণ আমাকে ধরে বসে থাকল।
তুই আসছিস...সেটা এখনো আমরা বুঝতে পারছি না কোনভাবেই। নিজেকে জানান দিসনি তুই। তারপরও গতকাল থেকে সবকিছু কেমন বদলে গেছে। তোর বাবা সারারাতে একটু পর পর আমার খেয়াল নিল। আমিতো জানি, আসলে সে তোকেই দেখে-শুনে রাখছে। বদলে গেছে ওর কথা বলার ভঙ্গি, তাকানো, স্পর্শ।
তোর দাদীকে বলছিল, আপনি দাদী হচ্ছেন। আর ও..............ও বাবা হচ্ছে। বদলাতে তো হবেই।
আমার কথা জানতে মন চাইছে বুঝি? তুইতো আমাকে প্রতি স্পন্দনে বুঝতে পারিস। বলে দিতে হবে? তুইতো জানিস এখনও সারাক্ষণ কেমন ধুকপুকানির মধ্যে থাকি। যদি সত্যি না হয়। যদি আবারও আগের মত তুই একটু লুকোচুরি খেলিস। সেই ভয়েই আমি অস্থির।
তাই তোকে লিখছি। যেন আরেকবার ফাঁকি দেয়ার আগে মা'র জন্য তোর খুব করে মায়া হয়। আমার সোনা তুইতো জানিস কত করে তোকে আমি চাই। তোর জন্য আমার বুকটা ভরা এক সমুদ্র ভালবাসা। তুই খুব শিগগির শিগগির চলে আয়।
তোর কাছে চিঠি (৩)
২১শে মে, ২০১২
তোর বাবার স্বপ্নে এলি কাল তুই। তোকে কোলে নিতে গিয়ে সেতো কি নার্ভাস, একেবারে কাপাকাপি অবস্থা। যদি ছোট্ট তুই ব্যথা পাস, হাড়গোড় ভেঙে যায়! কে যেন তখন বলল, ' ও তো তোমারই রক্ত। বাবাকে ও খুব ভাল করেই চেনে।' তখন সে তোকে কোলে তুলে নিল। আর তুই হাসতে লাগলি খুব করে।
দুইদিন ধরে তোর বাবা খুব জল্পনা-কল্পনা করে যাচ্ছে, তুই ছেলে হবি নাকি মেয়ে, দেখতে কেমন হবি, চোখের রঙ কেমন হবে, চুল বাবার মত নাকি মায়ের মত, নাকটা খাড়া না বোঁচা...এমনি আরো কত কি...
আমি শুধু হাসি আর হাসি এসব শুনে। তুই যে আসছিস তাতেই আমি অন্য কোন ঘোরে বাস করছি। এতকিছু ভাবনা আসেই না। আমাদের স্বপ্নে, কল্পনায়, কথায় আমরা 'ছেলে, ছেলে' করে অস্থির। তাহলে তুই আমার বাবানটাই আসছিস বুঝি?
তোর দাদী কিন্তু তার একজন বান্ধবী চাইছেন খুব করে। তোকে প্রজাপতির মত উড়ো উড়ো ফ্রক পরাবেন, লাল-নীল রিবন দিয়ে প্রপেলারের মতন চুল বাঁধবেন, তোর সাথে কত সুখ-দু:খের গল্প করবেন।
তা হোক, তুই যদি আমাদের ছেলেটাই হোস তাহলেও দাদীর বন্ধু হতে পারবি। আর নান্নানের বয়ফ্রেন্ড। খুব করে জ্বালাবি নাকি দুজনকে?
মাথায় কত ভাবনাই না আসে!
দুদিন ধরে তুই বুঝি একটু একটু করে জানান দিচ্ছিস তুই আসছিস। একটু একটু করে টের পাচ্ছি ভেতরের পরিবর্তন। কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু সেই কষ্টেই কত যে আনন্দ!
তোর বাবাতো অস্থির হয়ে বলছে, 'এত লম্বা প্রসেস কেন?' তাইতো রে সোনাটা, এত্ত দেরি করলে হয়! তোর জন্য যে আমরা অধীর হয়ে অপেক্ষা করে আছি।
তোর কাছে চিঠি (৪)
২৬শে জুন, ২০১২
বড্ড জ্বালাচ্ছিস তুই আজকাল। এইতো এতটুকুন এখনো, এক ইঞ্চি কোনরকমে। তোর দুষ্টুমির শেষ নাই। এত কষ্ট দিচ্ছিস তুই মাকে! গত কয়দিন কোমর ব্যথায় নড়তেই পারছি না। এপাশ থেকে ওপাশ ফিরতে কেমন কাতরাতে হয়, যেন আমার হাড় মটমট ব্যারাম হয়েছে। আর দুপুরবেলা খেতে বসলে সব অসহ্য লাগবেই লাগবে। যেন সমস্ত গলা দিয়ে উঠে আসছে। তোর জন্য অফিসেও কামাই দিচ্ছি ক'দিন পর পর। আর তারপরে বসের ঝাড়ি খাচ্ছি। তুই জানিস না কেউ বকলে মা'র কত মন খারাপ হয়! তবু তুই এমনি কষ্ট দিচ্ছিস আমাকে। মাঝে মাঝে এমন রাগ হয়ে যায় তোর উপরে। তোর জন্য এত প্ল্যান-প্রোগ্রাম করেও আমার ঘুরতে যাওয়া হল না। জার্নিতে যদি ক্ষতি হয় তোর! শুতে-বসতে-খেতে...সব কাজেই কত কষ্ট। ঠান্ডা লেগে কান ব্যথা করছে ক'দিন ধরে। অথচ এটাই আমার সহ্য করতে হবে। ওষুধ খেয়ে সুস্থ হবো, সে উপায় নেই। ক্ষতি হবে তোর। মাঝে মাঝে মাথা ব্যথায় অস্থির হয়ে যাই, কিন্তু ব্যথার ওষুধ খাওয়া একেবারে নিষেধ। তুই আসার পর থেকে বদলে গেছে সব। আমি আর আগের আমিটা হতে পারবো না। একটা দিনের জন্যেও না। আমি এটাই চেয়েছি সবসময় মনে-প্রাণে। কিন্তু তারপরও হঠাৎ কখনো সেই আগের আমিটার জন্য মনটা কেমন করে উঠে! তাই বলে তুই ভাবিস না যে আমি চাই না তোকে, কিংবা ভালবাসি না। যতটা ভাল আমি বাসি তোকে পৃথিবীর আর কেউ তার কাছে যেতে পারবে না।
এই এতটুকুনি মানুষটা তুই, আঙুল দিয়ে মাপতে গেলে চোখেই লাগে না। এরমধ্যেই কি না তুই পুরোদস্তুর আস্ত একটা মানুষের মত দেখতে হয়ে গেছিস। এমনকি তোর দাঁতও তৈরি হতে শুরু করে দিয়েছে। ভাবতেই কেমন অবাক হয়ে যাই!
গত একটা মাস তুই আছিস এই কথাটাই আমার বিশ্বাস হতো না। কিছু অনুভবও করতাম না। কিন্তু গত কয়দিন খুব ভাবছি তোকে। আর কি অদ্ভুত সুন্দর সব স্বপ্ন যে দেখছি। গতকাল আর পরশু দিন খুব মেঘলা ছিল। সারাদিন একটু পর পর বৃষ্টি। রাতে আমি স্বপ্ন দেখলাম তোকে নিয়ে আসছি ইশকুল থেকে। এমনি সময় বৃষ্টি নামল। আমি ঝট করে বললাম, 'মা চল ভিজি'। আর তারপরে দুইজনে পুরো রাস্তা হই হই করে ভিজতে ভিজতে ফিরলাম। তারপরে দাদীর কাছে বকা। দাদী বকছে, আর আমরা দুই আসামী মাথা নিচু করে মিট মিট করে হাসছি। কি সুন্দর স্বপ্নটা! আবার দুপুরে স্বপ্ন দেখলাম তুই আমার ভিতরেই আস্তে আস্তে বড় হচ্ছিস। কিন্তু তোকে দেখতে একটা ডিমের মতন। সেদ্ধ ডিম। যত দিন যাচ্ছে তোর আকৃতি বদলে গোল থেকে মানুষের মত হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও তুই ডিমটাই আছিস। কি যে মজার!
এখনো তুই নড়া চড়া করছিস না। আমি খুব ব্যগ্রভাবে অপেক্ষা করছি তোকে অনুভবের। পরম করুণাময়ের কাছে শুধু একটাই চাওয়া, তুই ভাল থাক। সুস্থ, স্বাভাবিকভাবে আয় এই পৃথিবীতে। মা তোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
তোর কাছে চিঠি (৫)
২৮শে জুলাই, ২০১২
বিশ্বাস কর সোনা, মা কখনোই এত ভীতু ছিল না। সবকিছুতেই কি আসে যায় একটা ভাব নিয়েই চলতো। মরে যাবে, বিপদ হতে পারে.....এমন চিন্তা কখনো মার মাথায় আসতোই না। একবার কি হয়েছে জানিস? রেললাইনে বাস আটকা পড়ে গেছে। ওদিকে ট্রেন আসছে। সবাইতো হুড়মুড় করে বাস থেকে নামছিল। কিন্তু মা কি করেছে জানিস? যেখানে বসে ছিল সেখানেই চুপটি করে বসে অলস চোখে ছুটে আসতে থাকা ট্রেনের দিকে তাকিয়ে ছিল। বাসটাকে ধাক্কা দেবার অল্প কয়েক সেকেন্ড আগে বহুকষ্টে ট্রেনটা ব্রেক করতে পেরেছিল। মা কিন্তু সেদিন একটুও ভয় পায় নি। আরেকবার দোতলা একটা বাস ট্রাকের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটছিল। এই ধাক্কা লাগে তো, সেই উল্টে পড়ে অবস্থা। বাসের ভেতর সবাই ভয়ে চিৎকার, ড্রাইভারকে বকাঝকা। মা কিন্তু ওই বিষম ছুটে চলায় অন্নেক মজা পেয়েছিল। আর এখন!!
আমার সোনা, জানিস না সারাক্ষণ আমি ভয়ে কুনো হয়ে থাকি। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে-নামতে মেপে মেপে একটা একটা করে পা ফেলি। যাতে কোনভাবেই ঝাকি লেগে তোর কষ্ট না হয়। বাস একটু জোরে ছুটলেই আমি ভয়ে সিঁটিয়ে যাই আর প্রাণপণে আল্লাহকে ডাকতে থাকি। রিকশা ভাঙা রাস্তা দিয়ে গেলে ঝাকি লাগবে বলে আমি রিকশাতেই চড়ি না, তারচেয়ে বরং হেঁটে যাওয়া ভাল। আর যদি কখনো চড়তেই হয়, ভাঙা বা উঁচু-নিচু এলে আমি একেবারে দাঁড়িয়ে যাই যাতে কোনভাবেই তোর ঝাকি না লাগে। আমার আজকাল বড় ভয় হয়েছে। আমি সবকিছুকেই ভয় পাই, এমনকি বাতাসকেও। কোনভাবে, কোনভাবেই কেউ যেন তোর ক্ষতি না করতে পারে।
জানিস, সবসময় একটা কথা খুব শুনে এসেছি। আমি নাকি খুব গোঁয়াড় আর জেদী, আর বোকাও। এইসব অর্থহীন জেদ বা বোকামির জন্য নিজের নাকি অনেক ক্ষতিও করে ফেলেছি কত বার। কিন্তু তারপরও আমি চাই তুই আমার মতই জেদী, একগুঁয়ে হবি। আমি চাই তুই আমার মতই খুব আবেগী আর বোকা একটা মেয়ে হবি। মানুষ হিসেবে তোর পরিচিতি তৈরি হয়ে গেছে। ছোট্ট ছোট্ট আঙুলের মাথায় তোর আঙুলের ছাপও তৈরি হয়ে গেছে এর মধ্যেই। তবে লিঙ্গ বৈষম্য এখনও তোকে স্পর্শ করে নি। বোঝা যাচ্ছে না তুই মেয়ে নাকি ছেলে। কিন্তু আমি আজকাল খুব করে চাই তুই মেয়ে হবি। ঠিক মায়ের মতই।
কেউ তোকে দুটো কথা শুনিয়ে গেলে তুই ফিরে ঝগড়া করবি না। বরং গোঁ ধরে নিজের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করবি তুই কি আর কি করতে পারিস। তুই শান্ত, চুপ-চাপ, নরম থাকবি কিন্তু প্রয়োজনে ভীষন কঠোরও হবি। কিছুতেই যেন তোকে ভাঙতে না পারে কেউ। তোর হাসিমুখটাই যেন সবাই সবসময় দেখে। কিন্তু প্রয়োজনে তোর মানসিক বল হবে সবার চেয়ে বেশি। হাসিমুখে, শান্তভাবেই সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি সবচেয়ে সহজে সামলে নিবি। সবার সাথে খুব সহজে মিশে গেলেও তোর ব্যক্তিত্ব যেন তোকে সবার থেকে আলাদা করে রাখে।
তুই আবার ভাবিস না তোর ওপরে সব চাপিয়ে দিচ্ছি যা মন চাইছে তাই। খুব খুব কঠিন একটা জায়গায় আসছিস তুই পাখি। এখানে কেউ তোকে সাহায্য করবে না। নিজের জন্য চারপাশ চেয়ে তুই কেবল নিজেকেই পাবি। তাই তোকে শিখতে হবে এখন থেকেই।
আমি জানি এখন তোর জন্যই আমাকে অনেক হাসি-খুশি আর আনন্দে থাকতে হবে। কোনরকম মন খারাপ, দুঃশ্চিন্তাই করা যাবে না। ভয় পাওয়াতো একেবারেই নিষেধ। কিন্তু গত কয়দিন ধরে এমন সব ভয়ংকর ঘটনা ঘটছে আশে পাশে, কিছুতেই পারছি না নিজেকে স্থির রাখতে। এমনকি তোর সাথে কথাও বলা হয়ে উঠছিল না। তুই বুঝি ভাবছিস তোর প্রতি মনযোগ কম দিচ্ছি? খুব অভিমান হচ্ছে নিশ্চয়ই তোর। একদম মার মতই। কক্ষণো এমন ভাববি না লক্ষ্মী সোনা। তোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নাই আমার। এইতো কদিন একটু মন খারাপের বাতাস গেল। দেখবি কাল সকাল থেকেই মা খুব লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে গেছে। আর আগের মতই তোর সাথে অনেক মজার মজার গল্প করছে।
আমার সোনা মানিক, তোর জন্যই আমাকে যেমন ভাল থাকতে হবে। তোকেও ঠিক একইরকমভাবে মার জন্য ভাল থাকতে হবে। মনে হচ্ছে বুঝি এই লম্বা একটা পথ পাড়ি দিচ্ছিস তুই। মোটেই না। এইতো আর কদিন। এরমধ্যেইতো তুই তিন ভাগের এক ভাগ পথ পার হয়ে এসেছিস। বাকি সময়টুকুও দেখতে দেখতেই চলে যাবে। আর আমি জানি সেটা তুই ভালভাবেই করতে পারবি। সেই সাহস তোর আছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৭