অমিতের কথা মনে আছে ? বিরল, দুরারোগ্য “পোলিও ওয়াইল্ড” রোগে আক্রান্ত হয়েছিলো সে। এই খবর পেয়ে জনকন্ঠ পত্রিকা তার বাসায় যায়। পরের দিন সকালে জনকন্ঠে হেডলাইন হয়েছিলো রিপোর্টারের সামনে বাবাকে বলা ছোট্ট অমিতের সেই বিখ্যাত উক্তি, “বাবা, ঢাকা শহরে এতো মানুষ, সবাই এক টাকা করে দিলেও তো আমি বেঁচে যাই।“
ভাইরাসের চেয়েও দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে গেছিলো সেই খবর। দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিলো। বহু অর্থসাহায্য এসেছিলো এবং এক পর্যায়ে মজুদ অর্থের পরিমাণ প্রয়োজনকেও ছাড়িয়ে গেছিলো। বাঙালি প্রমাণ করে ছেড়েছিলো, রোগের কাছে তারা হারতে জানে না, সম্ভাবনাময় প্রাণকে তারা হারিয়ে যেতে দেয় না। এরপর দীর্ঘদিন বেঁচে ছিলো অমিত।
আমাদের ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের একজন মেধাবী ছাত্র আছে। অত্যন্ত ব্রিলিয়ান্ট ছেলে। ৫ম ও ৮ম শ্রেনীতে বৃত্তি পেয়েছে। জেএসসি, এসএসসি – দুই পরীক্ষাতেই সব বিষয়ে এ-প্লাস পেয়েছে। অসাধারণ বিতর্ক করে। বিজ্ঞান প্রজেক্টে বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও জাতীয় পর্যায়ে সে ১৮ বার পুরস্কার পেয়েছে। রেসিডেন্সিয়ালের বিখ্যাত ডিবেটিং ক্লাব RDS –এর সাথে জড়িত সে। বিভিন্ন আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতায় নিজের কলেজের নাম উজ্জ্বল করেছে বেশ কয়েকবার।
আহনাফ নাম ওর। পুরো নাম নূর-এ-শাফি আহনাফ। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে একাদশ শ্রেণীতে পড়ে। এমনিতে সুস্থই ছেলে, ক্লাস আর সাংস্কৃতিক কাজকর্ম নিয়ে থাকে। হঠাৎ করেই তার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। ব্লাড ক্যান্সার, বা ডাক্তারি ভাষায় যেটাকে বলে ক্রনিক লিউকেমিয়া – সেটা হয়েছে আহনাফের। যতো সহজে রোগের নামটা বলে ফেললাম, রোগটা ততো সহজ নয়। এর চিকিৎসা হচ্ছে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট। আমাদের শরীরের হাড়ের ভেতরে মজ্জা থেকে রক্ত তৈরি হয়। যেহেতু মজ্জাতে সমস্যা, তাই আহনাফের শরীরের হাড়ের ভেতরের নতুন মজ্জা বসাতে হবে।
বাংলাদেশে এই বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট হয় না। কাছাকাছির মধ্যে এটা ভারতের মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতালে হয়, আর হয় সিঙ্গাপুরে। আহনাফকে তার রোগের কথা জানানো হয়নি শুরুতে। হাসপাতালের বিছানায় একাকী ছেলেটা সময় কাটাতে মোবাইল দিয়ে ফেসবুকে ঢুকেছে। ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্ট থেকে সে তার ক্যান্সারের ব্যাপারে জেনে ফেলেছে। ভয়ে, হতাশায়, অর্থনৈতিক সমস্যার লজ্জায় একেবারে কুঁকড়ে গেছে ছেলেটা। মানসিকভাবে একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে সে, আর এর প্রভাব পড়ছে তার শরীরে। ক্রমেই তার শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। তবে আশার কথা ক্যান্সারটা প্রাথমিক স্টেজে আছে এখনও। ডাক্তাররা বলেছেন, খুব দ্রুত দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করালে ধীরে ধীরে সেরে যাবে আহনাফ।
মাঝখানে শুধু মোটা দাগ হয়ে বিশাল এক টাকার অংক প্রতারণার হাসি হাসছে। আশি লক্ষ। আটের পর ছয়টা শূন্য। আহনাফকে ভালো করে তুলতে হলে আশি লক্ষ টাকা যোগাড় করতে হবে।
ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, ফ্যামিলিতে মাত্র একজনেরও যদি এই রোগ হয়, তাহলে তীব্র একটা ধাক্কায় সেই ফ্যামিলির অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ধ্বংস হয়ে যায়। মা-বাবার সারা জীবনের সঞ্চয়, একটা ঝড় এসে তুমুল ঝাঁকি দিয়ে একেবারে খালি করে দিয়ে চলে যায়। আহনাফদের পরিবার মধ্যবিত্ত। তাদের একটা বাড়ি আছে। ছেলেটাকে বাঁচানোর জন্য বাড়িটা বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আপনারা জানেন, জমি-জমা বিক্রির ব্যাপার অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। চিকিৎসা শুরুর পরের কাজগুলো করার জন্য জমি বিক্রির টাকাগুলো হয়তো কাজে লাগবে। কিন্তু চিকিৎসা শুরু করার জন্য যে প্রাথমিকভাবে কিছু ক্যাশ লাগে, আহনাফের স্কুল টিচার বাবা-মায়ের হাতে সেটাও নেই। এর চেয়ে বড় হতাশার ব্যাপার আর কী হতে পারে ?
যতো দেরি হচ্ছে, আহনাফের শরীর থেকে শ্বেত রক্ত কণিকা ততো কমে যাচ্ছে। আর কিছুদিন দেরি হলে যদি ওর সারা শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে যায়, তাহলে কী হবে সেটা আর বললাম না – আপনারা জানেন। এই ঈদ আর পূজা একসাথে পড়ে যাওয়াতে ঢাকা শহর প্রায় খালি হয়ে গেছে। সব স্কুল-কলেজ বন্ধ। কিছুই করা যাচ্ছে না। স্কুল-কলেজগুলো বিশ তারিখের দিকে খুলবে, কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন থাকবে ? জানি না আমরা।
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষকেরা মিলে এক লাখ বিশ হাজার টাকা জোগাড় করেছেন। বিভিন্নভাবে আরও সাহায্য পাওয়া গেছে আরও প্রায় এক লাখ। আশি লক্ষের মধ্যে কতোটা পারবো আমরা ? জানি না, তবে এইটুকু জানি যে, আহনাফ বাঁচবেই।
আমরা, আহনাফের বন্ধুরা, বিতর্কের সহযোদ্ধারা, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের প্রতিটা ছাত্র আহনাফের জন্য কিছু টাকা যোগাড় করার আশা নিয়ে বিস্তারিত কর্মসূচী তৈরি করেছি। অনেক টাকা দরকার আমাদের। ঘটনাচক্রে এইবারও, ঢাকা শহরের সবাই যদি এক টাকা করেও দেয়, তাহলেও বেঁচে যাবে আহনাফ। বেঁচে যাবে আমাদের যুক্তিবাদী সমাজের একজন বিতার্কিক, বেঁচে যাবে একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যত। আমাদের বিস্তারিত কর্মসূচী ও জরুরী তথ্যগুলো এখানে দিয়ে দিচ্ছিঃ
চলতি মাস অক্টোবরের ২০ তারিখ পর্যন্তঃ
১) ঢাকা শহরের বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্ট, যেগুলোতে আমাদের কলেজের ছাত্ররা থাকে, সেগুলো থেকে টাকা সংগ্রহ করা হবে।
২) বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্সের সামনে আমাদের ছেলেরা থাকবে। এখানে একটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। ঈদের মৌসুমে শপিং মলগুলো কাস্টমারদের অসুবিধার কথা ভেবে পার্মিশন দিচ্ছে না।
৩) বিভিন্ন এলাকার ঈদগাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমামদের সাথে কথা বলে ঈদের দিন নামাজের আগে বা পরে ঘোষণা দেয়ার চেষ্টা করা হবে আহনাফের ব্যাপারে। ঈদগাহের বাইরে আমাদের ছেলেরা থাকবে।
৪) অনলাইনে প্রচারণা চালানো হবে।
২০ তারিখের পরঃ
১) স্কুল-কলেজ খুলে গেলে কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের মাধ্যমে তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া হবে।
২) একটা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, একটা বিতর্ক প্রতিযোগিতা এবং সম্ভব হলে একটা কনসার্টের আয়োজন করা হবে। এগুলো থেকে প্রাপ্ত পুরো টাকা আহনাফের চিকিৎসায় ব্যয় করা হবে।
আহনাফের বন্ধুরা, যারা এই কাজগুলো করছে, তাদের বয়স ১৮-১৯ হবে। এই বয়সটা এখনও এসব পরিস্থিতির মোকাবেলা করার জন্য ত্রুটিহীন নয়। তাই ওদেরকে বিভিন্ন মতামত দিয়ে সাহায্য করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
এই লেখার মাধ্যমে আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছিঃ
১) অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল বাংলাদেশি ও প্রবাসী বিভিন্ন ব্যক্তিদের
২) বিভিন্ন ব্যান্ড ও চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত শিল্পীদের
৩) টিভি ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের
৪) ফেসবুকের জনপ্রিয় লেখকদের
৫) বিভিন্নভাবে প্রচারে সক্রিয় যে কোনো মানুষের
আপনাদের মাধ্যমে আমরা এই খবরটাকে সবার কাছে পৌঁছে দিতে চাচ্ছি এবং এই বিশাল অংকের অর্থ সংগ্রহের কার্যক্রমে আপনাদের অংশগ্রহণ চাচ্ছি। একজন বিতার্কিক আবেগ দিয়ে কিছু চায় না, তার অস্ত্র হচ্ছে যুক্তি। একটা সম্ভাবনাময় জীবন যদি আপনাদের কাছে যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত মনে হয়, তবে এগিয়ে আসুন।
আহনাফের বাবা ( মোঃ আবুল কাশেম ) : 01916216748
আহনাফের মা ( মিসেস নূরজাহান ) : 01917637310
ব্যাংক অ্যাকাউন্টঃ
১ - Golam Mahbub,
Dutch Bangla Bank,
Digpait, Jamalpur.
Account no. : 200.103.200
২ - Nurzahan,
Islami Bank Bangladesh limited,
Jamalpur Branch.
Mudaraba saving account no : 11598 (online)
বিকাশ (b-Kash)
01917637310 (আহনাফ এর মা)
01715015075 (আহনাফ এর মা)
01724921889 (আহনাফ এর মামা)
01682608664 (তানজিল )
01676942188 (রুদ্র )
01921670683(পাভেল )
01671102028 (আদনান )
01681685780 (জালাল)
ফেসবুক ইভেন্টঃ Click This Link
আহনাফের ফেসবুক প্রোফাইলঃ https://www.facebook.com/nurashafee.ahnaf
আহনাফের জন্য বানানো কাভার ফটোঃ সবাই প্রোফাইলে লাগিয়ে নিন
রোগের বিরুদ্ধে মানুষের জয়ের ইতিহাস লেখার সমীকরণটা খুব সহজ। আপনাদের মধ্যে একজনের অবহেলা, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার পথে আমাদের একধাপ এগিয়ে যাওয়া। আপনাদের মধ্যে একজনের সাহায্য, আহনাফের শরীরে এক ফোঁটা নতুন রক্ত।
অমিতের পর আমরা কি আরেকটা ইতিহাস লিখতে পারবো ?
(লেখাটি ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের এবং আমার শিক্ষিকা সাবেরা সুলতানা ম্যামের ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া)
**সামুর মডারেটরদের প্রতি অনুরোধ থাকবে লেখাটি দৃষ্টি আকর্ষণ অংশে যুক্ত করার জন্যে। এই ছোট কাজটিই হয়তো একটি ছেলের জীবন বাঁচাবে!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৪