somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসা দিবস হতে আমার ভালোবাসার অংক

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চলুন একটা অংক কষি।
ছোট্ট বেলায় অংক করতাম। চার টাকা আর চার টাকা সমান সমান আট টাকা। আবার মা বলতেন, তোমাকে ১০ টাকা নিয়ে বাজারে পাঠালাম। বাজার থেকে ২ টাকার মাছ, ২ টাকার কাঁচা বাজার, ২ টাকার তরকারী কিনে আনলে কতটাকা ফেরত দিবে? আমি হাতের আঙ্গুল কষে কষে বলতাম। আম্মু খুশী হয়ে ১ টাকা দিতেন। সে’কি লাফ দিতাম। হৈচৈ পড়ে যেতো চারিপাশ। আম্মুকে দেখতাম কি যেন হিসেব করেই যেতেন বারবার। তখন অতটা বুঝতাম না আজ যতটা বুঝি।

অষ্টম শ্রেণিতেই আমি প্রথম বীজগণিত পাই। গণিতে আমি কিঞ্চিত ভালো ছিলাম। অন্যত্র থেকে আসার ফলে সকল ক্ষেত্রেই আমার জন্য ছিলো চ্যালেঞ্জ। মা বলতেন “আমি জানি তুমি পারবে” সেই একটি কথাই যেন আমাকে পারতে হতো। আমি চেষ্টা করতাম কুপির আলোর ভীতর। পাশেই বসে থাকতেন মা। আমার চাইতেও তাহাকেই ক্লান্ত দেখতাম কিন্তু পরা না শেষ করা অব্দি উঠতেন না। আজ বুঝি তাহার সে বসে থাকার রহস্য কি...

এসএসসি পরীক্ষা দেবার সময় মা কেঁদেছিলেন। আমি শুধু মা’কে বলেছিলাম তোমার ছেলে ফেল করবেনা এটা নিশ্চিত থাকো। আল্লাহ চাইলে অনেকের চাইতেও ভালো রেজাল্ট করবো। খালাম্মা আর খালাতো ভাইগুলো তখন অনেক শিক্ষিত। আম্মুর ইচ্ছে ছিলো আমিও যেন তা হই। কতটুকু হতে পেরেছি জানিনা কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দিন নিজেই গিয়ে রেজাল্ট আনি। মায়ের মুখের সেদিনের হাসিটা আজও আমাকে অনুপ্রাণিত করে।

এইচএসসি থেকেই সংগ্রামের শুরু। টিউশনি, পড়া আর পড়া। মা বলতেন নিজের যুদ্ধে নিজে না নামলে কাজ করতে হবে। সিদ্ধান্ত তোমার। পড়াকেই ভালো লাগতো। ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের পরাতাম। ফাঁকে ফাঁকে বাবার ব্যবসায় সময় দিতাম। বাবা যেন ঠিক থেকেও না থাকার মতই ছিলেন। সে কিসসা না বলে এইচএসসি পাশের তৃপ্ততার ঢেঁকুর তুললাম।

পড়াশুনা আর করবোনা। পরিবারের হাল ধরবো বলেই ঢাকায় আমার অবস্থান। খালাতো ভাইগুলো আমাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করলো। কেউ এখানে কেউ ওখানে বলে বলে শেষ পর্যন্ত কোন প্রস্তুতি ছাড়াই সরকারী কলেজে হিসাববিজ্ঞানে ভর্তি হলাম। পেট চলতে ও চালাতে টিউশনের সাথে এখন যোগ করলাম খন্ডকালীন শিক্ষকতা। সেখান থেকেই আসল যুদ্ধটা শুরু। রোমান্স নামক ভালোবাসারা কাছে ভীড়লেও বারবার বেড়িয়ে গেছি গভীর মাটি বাইং মাছের মতই। ইহা আমার জন্য ছিলোনা বলেই...

জীবনে ভালোবাসা বলতে আমার একটাই আঁচল ছিলো। আমার কাছে একটাই বিশ্বাসের যায়গা। যেখানে কোন দিন নেই, ক্ষণ নেই, সময় নেই। তিনি আমার “মা” অনেক মেয়ে দেখেছি, অনেক সংগ্রামের কাহিনী পড়েছি কিন্তু আমার মায়ের মতন হয়নি। আমার সংগ্রামের মতন নয়। হয়তো আরোও কঠিন কেউ কেউ তবে আমি মহাখুশী এই শিক্ষাকে নিয়ে। রব এখানেই আমার জন্য বরকত রেখেছেন। আর তাইতো মায়ের মুখের এক চিলতে হাসির জন্য জীবন কোরবানি দিতেও দ্বিধা হয়না।

আমি যে অংকের হিসেব কষতে ছিলাম। চলেন না একটা কাজ করি। আজ অন্যধর্মের কিংবা যে লোকটা ইসলামের নয় কিন্তু তাহারা একটা দিবস দিয়েছেন। আর আমরাও পালন করেই যাচ্ছি। আর তাহাকে উত্তম হিসেবে ব্যবহার করি। যেমনি ভাবে বীজগণিতের সূত্রের ন্যায় মাইনাস আর মাইনাসে প্লাস হয়। তাহাদের দেয়া আধুনিকতায় ভালোবাসা বিনিময় করি সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষগুলোকে। বিশ্বাস করেন, থমকে যাবে। জড়িয়ে (হাগ) ধরবে। যে তৃপ্ততা আমি ১০০ সুন্দরী মেয়ে কিংবা ১০০ সুন্দর পুরুষের সাথে জড়িয়ে ধরে পাবেন না। যতটা পাবেন আপনার মা-বাবাকে একবার জড়িয়ে ধরলে। এটা বন্ধন, রক্তের স্পন্দন, এটা অন্যরকম অনুভূতি। যা আসলেই ভাষায় প্রকাশিত নয়।

অনেক ইচ্ছে হচ্ছিলো মা, আজ একবার জড়িয়ে ধরে গন্ধটা নেই তোমার আঁচলের। চাকুরি নামক দায়িত্বের ফলে পারিনি। তবে খুব শীগ্রই হবে। ভালোবাসা দিবসে বারবার তোমাকে না বলা কথাটাই বলে বেড়াই। নিজের অজান্তেই শান্তনা দেই। বড্ড ভালোবাসি মা। বড্ড ভালোবাসি হে মহিয়সী নারী। তোমাকে নিয়ে আমার কলমের কালি শেষ হবার নয়। তুমি আমার শুধু মা নও। তুমি আমার আসল শিক্ষক, পথ প্রদর্শক। তোমার গর্ভে জন্ম নিয়ে আমি ভাগ্যবান। তুমি শুধু বেঁচে থাকো এই দোয়াই করি আজকের দিনে। বেঁচে থাকুক সকল মা-ময় নারীরা। হারিয়ে যাক সকল ছলনাময়ীরা।

সকলকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা। যে ভালোবাসাতে ফুটে উঠুক আসল তৃপ্ততা, আসল সুখময় বন্ধন। যে অংকের হিসাবে সদাই যোগফল বাড়বে কমবেনা। যে অংক কষে শেষ হবার নয় কক্ষনোই।

ভালোবাসা দিবস হতে আমার ভালোবাসার অংক / মিনহাজ উদ্দিন
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৫৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×