কেন স্বাধীনতার চেতনায় সমুন্নত গালগালি ও অশ্লীলতামুক্ত সামহোয়্যার চাই? স্বাধীনতার চেতনার কন্ঠস্বর অনেক ব্লগার আমার আগের পোষ্টে (সামহোয়্যার আমার লেখার জমিন, কি চাই, কি চাইনা এবং কি জানতে চাই) স্বাধীনতার চেতনায় সমুন্নত গালগালি ও অশ্লীলতামুক্ত একটি ব্লগ দেখার ক্ষেত্রে যে সহমত প্রকাশ করেছেন তার প্রেক্ষিতে কিছু কথা ওঠায় আমাদের অবস্থানটি আরেকটু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন মনে করছি ।
আমি ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা করি এমন একজন ব্লগার (লাল দরজা) আমাদের এ অবস্থানের ফলে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি লাভবান হবে কিনা এই প্রশ্ন তোলায় আবার কলম ধরা। আমাদের গালিবিরোধী, অশ্লীলতা বিরোধি অবস্থান কেন এবং এই অবস্থান যে স্বাধীনতার চেতনার কন্ঠস্বরকে আরো উচ্চে তুলে ধরবে সেটা ব্যাখ্যা করতেই এই পোষ্ট ।
গালিবাজি, অশ্লীলতাটা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের আশ্রয়ে যেয়ে যে কাউকে নোংরা গালাগালি করা হচ্ছে, শুধু গালাগালি নয় আদি রসাত্বক ভাষায় বিভিন্ন অশ্লীলতার রগরগে বর্ণনা দেয়া হচ্ছে । এর সাথে দেশ বিরোধি পোষ্টের বিরোধিতা করার যোগাযোগ খুব বেশী নয়। এটাকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সুবিধাবাদিতার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে কারো কারো রুচি বিকৃতির প্রকাশ ঘটানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে ।
একটু উদাহরণ দেই । আমি মিরাজ, রাগ ইমন, উদাসী স্বপ্ন, মাহবুব মোর্শেদ কালপুরুষ এরা সবাই কিন্তু স্বাধীনতার চেতনা বুকে লালন করা স্পষ্ট কন্ঠস্বর । আমাদের প্রত্যেককে এত নোংরা ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে যেটা কোন সভ্য সমাজে চিন্তাও করা যায়না। এর অনেক ক্ষেত্রেই (অন্তত: আমার নিজেরটা বলতে পারি) মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আড়াল নেয়া হয়েছে । অন্যান্যদের ক্ষেত্রেও একই টেকনিক দেখেছি (সম্ভবত: কালপুরুষ ব্যতিক্রম তবে গোষ্ঠী একই), তারা তাদের কথা আরো ভালোভাবে বলতে পারবেন। আজ দেখলাম আরেক স্পষ্ট কন্ঠস্বর বিহংগকেও নোংরা কথা বলা হলো তার অবস্থানের কারনে। একই কাজ করা হয়েছে ফারহান দাউদ, মেহরাব শাহরিয়ারের মত ব্লগারদের ক্ষেত্রে যাদের ব্লগপোষ্ট গুলিতে স্বাধীনতার চেতনার কথা স্পষ্ট ।
এই গালিবাজির সংস্কৃতির কারণে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তিও পাল্টা গালি দেবার সুযোগ পাচ্ছে । এছাড়া তারা গালিবাজির শিকার দেখিয়ে অনেক সাধারণ ব্লগারের সহানুভূতিও পেয়ে যাচ্ছে । প্রকারান্তরে গালিবাজি করে তাদেরকে শক্তিশালী করা হচ্ছে । আমরা তাদেরকে কোন প্রকার সুবিধা দিতে চাইনা ।
ব্লগ মুক্ত চিন্তার জায়গা, মুক্ত গালাগালির নয়। আর কেউ যদি ব্যক্তিগত ভাবে বিচ্ছিন্নভাবে গালাগালি করত তাহলে সেটাকে টুকরো ঘটনা বলা যেত। এখানে গালাগালির, অশ্লীলতার আর হ্যারাসমেন্টের একটা সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছে । আর আমার আপত্তি সবচেয়ে বেশী এখানে মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করায়। অনেক ব্লগার আছেন যারা গালাগালির ভয়ে কিছু বলছেন না, অনেকে আছেন যারা ব্লগেই আসছেননা এই গালাগালি সংস্কৃতির কারনে। আমার অনেক বন্ধু আছেন বিভিন্ন ফোরামে যারা আমি কিভাবে এখানে লেখালিখি করার সাহস দেখাচ্ছি সেটা জানতে চান। চোখ বন্ধ করে না রাখলে যা বললাম তার প্রতিটি ব্যাপার অধিকাংশ ব্লগারের চোখে পড়ার কথা । লাল দরজাকে বলেছিলাম যে আপনার পোষ্টের মানের কারণে , চিন্তার কারনে আপনার উপর শ্রদ্ধা আছে যেটা অনেকের উপরেই নেই । একই শ্রদ্ধা আছে তীরন্দাজ, জামাল ভাস্কর, জেবতিক আরিফ এর মত ব্লগারদের ক্ষেত্রে । এরা সবাই কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিষ্ঠার কাজ করে যাচ্ছেন গালাগালিতে অংশগ্রহণ ছাড়াই । আমি স্পষ্ট করে বলছি, অনেকেই সেটা বলার সাহস দেখাচ্ছেনা ।
আর এখানে কিছু মেয়ে ব্লগারের উপর যে নোংরা ভাষায় কু-ইঙ্গিত বা মুখের ভাষায় ধর্ষণ করা হয়েছে সেটা কোন আদর্শের আড়ালে থেকেই কেউ করতে পারেনা । আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, যুদ্ধাপরাধীরা আমার মা - বোনদের উপরে যে বর্বরতা চালিয়েছে, অনলাইনে আদর্শের দোহাই তুলে কোন ভাবেই কারো যুদ্ধাপরাধীদের মত আচরণকে মেনে নেয়ার কোন কারণ নেই ।
নিজের লেখার জমিনকে এই রূপে কোনভাবেই দেখতে চাইনা । তাই গালাগালি ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে অবশ্যই আমি উচ্চকন্ঠ থাকবো ।
এবার আসুন রাজাকার ও প্রতিক্রিয়াশীলদের ব্যাপারে । একটা উদাহরণ দিন যেখানে গালিবাজি বা অশ্লীল মন্তব্য করে কাউকে ঠেকানো গেছে। এক নিকে লেখা বন্ধ করে, আরেক নিকে এসে লিখেছে। মাঝখান দিয়ে আমাদের লেখার পাতা নোংরা হয়েছে আর এটার সুযোগ নিয়ে হ্যারাস হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অনেক ব্লগার এবং অনেক সাধারণ ব্লগার যারা সামহোয়্যারে এসেছেন তাদের ভাবনা প্রকাশ করতে। অনেকেই এই পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে চলে গেছেন ।
সামহোয়্যার এর মত ওপেন প্ল্যাটফর্মে গালাগালি দিয়ে রাজাকারি চিন্তাভাবনা বা প্রতিক্রিয়াশীলতা ঠিকানো সম্ভব নয় । এখানে একটা ই-মেইল এ্যাড্রেস হলেই একটা একাউন্ট খোলা যায় । গালি দিয়ে..ফ্ল্যাডিং করে...ব্লগ স্তব্ধ করে দিয়ে কতজন প্রতিক্রিয়াশীলকে থামানো যাবে? থামালাম এক দলকে। কিন্তু তারপর তারাই আবার আরেক ই-মেইল ব্যবহার করে (ওয়েবমেইল এর ১০০০ একাউন্ট খোলাও কোন ব্যাপার নয়), ভিন্ন নিকে আসবে। আবার তারা পোষ্ট দেবে... আবার গালিবাজি হবে... ফ্ল্যাডিং হবে.. বিষ্ঠার ছবি আসবে... ব্লগ স্তব্ধ হবে। এই চক্র কতবার চলবে?
এর ফলে কি মুক্ত চিন্তার চর্চা যারা করতে চান, স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী সাধারন ব্লগার তাদের লেখালিখি, চিন্তার প্রকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে না? আমরাই তো সংখ্যায় অনেক বেশী। তাই নয় কি? আমরা কেন আমাদের লেখালিখিকে চিন্তার প্রকাশকে রুদ্ধ করছি? এটা চলতে পারেনা ।
তাই গালি নিজেদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি ছাড়া রাজাকার ঠেকাতে কোন কার্যকর উপায় নয় । বরং যুক্তির অবস্থানে থাকা, উপেক্ষা করা, তাদের ব্লগে না যাওয়া, নিজেদের ব্লগে ব্লক করে রাখা অনেক বেশী কার্যকর। আমাদের কোন দুর্বলতা নেই, আমরা সঠিক পথে আছি, আমরা যুক্তি দিয়ে ওদের হারাতে চাই। আর পারবও এই বিশ্বাসও আছে।
এর সাথে সাথে যেটা দরকার সেটা হলো কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা । গালাগালি ও অশ্লীলতা বন্ধ হলে আমাদের দাবী হবে আরো জোড়ালো। আজকে শিবির জামাতের এত পোষ্টের মাঝেও ছাত্র শিবিরের প্রেস বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করার পর সেটা সরানো হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ যারা আমাদের ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম দিচ্ছে তাদের গালাগালি করে, বিপক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা না করে তাদেরকে ব্লগকে স্বাধীনতার চেতনায় আনতে সাহায্য করতে হবে । সামহোয়্যার এর অনেক দুর্বলতা আছে সত্যি তবে আমাদের কিছু ব্লগার গালাগালি আর অশ্লীলতার সংস্কৃতি চালু করে তাদেরকে আরো বেশী দুর্বল করে দিচ্ছেন ।
এখন অনেক কথাই গালাগালির আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়, তখন আমাদের কথা আরো উচ্চ শোনাবে এবং আমরা ব্লগকে সত্যিকারভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পারবো ।
আমাদের সবার চেষ্টায় সামহোয়্যারইন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মুক্ত বুদ্ধির চর্চা ক্ষেত্র হবে যেখান কোন গালাগালি, হ্যারাসমেন্ট বা অশ্লীলতা থাকবেনা ।
আশা করি আমাদের অবস্থান পরিস্কার হবে এবং স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ মুক্ত চিন্তার ব্লগাররা আমাদের সাথে থাকবেন ।
আমাদের সুস্পষ্ট দাবী
-----------
-একটা পরিস্কার নীতিমালা দেখতে চাই , স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী কোন পোষ্ট ব্লগের কোনো পাতায় থাকবেনা।
- মানুষ, মুকুল, বিষাক্ত মানুষ, নরাধম, নেই মানুষ, সামী মিয়াদাদ, আব্দুর রাজ্জাক শিপনসহ ব্লগাররা যারা ফ্ল্যাডিং করতে গিয়ে ব্যান হয়েছেন তাদের অবিলম্বে ব্যানমুক্তি চাই ।
- মুক্ত চিন্তার চর্চাক্ষেত্র হিসাবে ব্লগ দেখতে চাই । আমরা সেইসব মানুষদের আমাদের সাথে চাই যারা যারা যুক্তিতে থাকতে চান । ব্লগকে তর্ক-বিতর্কের প্রাণকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে চান ।
- ব্লগে স্বাধীনতার চেতনার প্রতিফলণ দেখতে চাই । এই প্রতিফলণ শুধু কথার প্রতিফলন নয়, বাস্তব চিন্তার প্রতিফলন । মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক মুক্তির জন্য । মুক্তিযুদ্ধের ফসল বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক মুক্তির জন্য কার্যকর চিন্তাভাবনার প্রকাশ দেখতে চাই ।
- ব্লগে গালাগালি দেখতে চাইনা । কোনভাবেই না । চিন্তার প্রকাশে দৈন্যতা থাকলেই গালাগালি আসে প্রকাশ মাধ্যম হিসাবে। গালাগালির ক্ষেত্রে এর বাইরে কোন সত্য নেই, যা আছে তা হলো বানানো সত্য ।
- ব্লগে অশ্লীলতা এবং ব্যক্তি আক্রমণ চাইনা। সেটা কোন আদর্শের আড়ালে থেকেই নয়। বিশেষ করে কোন নারীর প্রতি কু-ইঙ্গিত বা মুখের ভাষায় ধর্ষণ তো নয়ই ।
- ব্লগে কোন রেসিজম দেখতে চাইনা । রেসিজম এর স্থান বর্তমান বিশ্বে নেই ।
- ব্লগে সু-নির্দিষ্ট আইন চাই এবং সেই আইন সকলের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রয়োগ দেখতে চাই ।
ধন্যবাদ
(জানিনা এই পোষ্টের জন্য আমাকে কি কি আক্রমণের স্বীকার হতে হবে! তবে সত্য উচ্চারণে আজীবন নির্ভীক থেকেছি, আজীবন তাই থাকতে চাই )

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


