somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘের আড়ালেই রয়ে যাবে সাগর-রুনি হত্যার বিচার - শহীদুল ইসলাম

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার আশঙ্কাই সত্যি হল। সাগর-রুনি খুন হবার পর বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা মাথায় রেখে আমি একটি লেখা লিখেছিলাম। আমি বলেছিলাম, সাগর-রুনি খুনের পর হয়তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলবেন, খুনী যেই হোক তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। সাধারণত বড় কোনা ঘটনা ঘটলে রাজনীতিকরা এমন কিছু বলেই পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম হয়নি। শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় খোদ প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন এ ধরনের কথা। কিন্তু বাস্তবে কী হল, সাংবাদিক দম্পতি খুনের ঘটনায় সর্বত্র তোলপাড় শুরু হলেও সরকারের কাছে তা গুরুত্ব পেল না। হত্যাকাণ্ডের কোনো কুলকিনারা হলো না। ধারের কাছেও নেই পুলিশের তদন্ত। বরং, বিচার চেয়ে সাংবাদিকদের রাজপথে নামতে হয়েছে।
এখন বিচার পাওয়া দূরের কথা, আসামি গ্রেপ্তার আর রহস্য উদঘাটনেই তালবাহানা করছে সরকারের ক্রীড়ানক পুলিশ। আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য না দিলেও শুরু থেকেই তারা শুধু আশার বাণী শুনিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সহযোদ্ধারাতো এটা মানতে নারাজ। দেশের অনেক হত্যাকা-সহ আলোচিত বিষয় নিয়ে যারা লেখালেখি করেন। শেষ পর্যন্ত তারাই বিচার পাবেন না? অতীতেও অনেক সাংবাদিক বন্ধু খুন হয়েছেন, একটিরও বিচার পায়নি পরিবার।
গত দু’দশক ধরে আমি সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত। মার্কিন মুল্লুকে যান্ত্রিক জীবন কাটালেও পেশার পরিবর্তন করিনি। ক্ষুদ্র সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতায় যা শিখেছি বা জেনেছি, একজন সাংবাদিকের নিজস্ব অনুসন্ধান ক্ষমতা যত তিনি পেশায় তত সফল। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনই সংবাদপত্র বা মিডিয়ার প্রধান খোড়াক। অথচ জনগণের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী বেডরুমের নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টি নাকচ করে যেদিন বক্তব্য দিলেন, সেদিন তিনি একথাও বলেছিলেন যে সাংবাদিকদের কাজ গোয়েন্দাগিরি নয়, এটা পুলিশের কাজ। প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের কথায় আমি অবাক হয়েছি। ওই মুহূর্তেই আমার প্রবাসী একজন রাজনীতিকের কথা মনে পড়ে যায়। বিএনপি এবং মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ওই নেতা আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন ‘সাংবাদিকদের মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ।’ উত্তরে আমি বলেছিলাম ‘না, আসলে আওয়ামী লীগ মিডিয়া ফ্রেন্ডলি এবং তাদের মিডিয়া উইং বিএনপির চেয়ে শক্তিশালী।’ আমি উদাহরণ টেনে এও বলেছিলাম, ‘শেখ হাসিনা কোথাও গেলে তিনি স্বয়ং তার সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের খোঁজ-খবর নেন, যেমন তারা খেয়েছেন কিনা, কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা ইত্যাদি। কিন্তু খালেদা জিয়া সরাসরি এ ধরনের খোঁজখবর নেন না। এ ধরনের আরো অনেক যুক্তিযুক্ত বিষয় তুলে ধরেছিলাম ওই নেতার কাছে। কিন্তু বন্ধু সাগর-রুনী হত্যাকা-ের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যে আমি বিস্মিত হয়েছি। শুধু দেশজুড়ে নয়, সারা বিশ্বে প্রধানমন্ত্রী এ বক্তব্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দিয়ে তৈরি রিপোর্টটির মন্তব্য পড়লে বোঝা যায়, সচেতন মানুষগুলো কী ধরনের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অনেকে তো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে নানান হয়রাণির আশঙ্কার কথাও বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর সাংবাদিক হিসাবে আমার ভেতরেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, তবে তা শুধুই আমার চিন্তাধারায়, চেতনায় নয়।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর দেশ-বিদেশের অনেক বন্ধু তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন লেখালেখি করে। আমি কয়েকবার লিখতে বসেছি। আমার লেখা মুছে ফেলেছি এই কারণে যে সাগর-রুনীকে নিয়ে লেখায় আমি এও উল্লেখ করেছিলাম যে এটাই যেন এ বিষয়ে শেষ লেখা হয়। কিন্তু পারলাম না। ২৮ ফেব্রুয়ারি পত্রিকায় একটি সংবাদ পড়ে খুব অস্বস্তি লাগছিল। খবরটি হল হাইকোর্টের একটি রুলের। আর তা হল, ‘সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকা-ের প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা এবং হত্যার কারণ নির্ণয়ে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।’ খবরের এ পর্যন্ত পড়ে বেশ সুখসুখ অনুভব করতে লাগলাম। পরের খবরটুকু হল ‘একই সঙ্গে এ হত্যাকা- সম্পর্কে আনুমানিক (যেমন জজ মিয়া প্রস্তুত, আরেক জজ মিয়া খুঁজছে পুলিশ) সংবাদ প্রকাশ বন্ধে আদালত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে তথ্য সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন।’ এই পরের অংশটুকু পরে আমার মনে পড়ে গেল স্বৈরাচারি এরশাদ শাসনামলের কথা। তখন নাকি সংবাদপত্রে ঘণ্টায় ঘণ্টায় সংবাদ প্রচারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হতো। আমি তখন স্কুলছাত্র। এসব ঘটনা অবশ্য পরে জেনেছি। সর্বশেষ সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের বার্তা সম্পাদক ছিলাম। তখন টের পেয়েছি সংবাদ নিয়ন্ত্রণ কাকে বলে! আমার ঘাড়ের উপর ঝুলতো পিআইডির রেড নোটিশ। কী প্রকাশ করবো, আর কী করবো না। অনেক সময় সংবাদ চলাকালীন টেলিফোন বেজে উঠতো। এখন যে আমলারা দায়িত্ব পালন করছেন তখনও তারা ছিলেন। পার্থক্য শুধু সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক আর নির্বাচিত সরকার। এখন আমলারা কিছুটা বিনয়ে সঙ্গে কথা বলেন, তখন বলতেন কর্কশ ভাষায়, নির্দেশও দিতেন। বিনয়ী বরং আমাকে হতে হয়েছিল। উপায়ও ছিল না। দু’বার আমাকে বিশেষ স্থানে গিয়ে কৈফিয়ত দিতে হয়েছে নানান বিষয়ে। আমার গ্রন্থণায় প্রচারিত প্রতিদিনের সংবাদ বিশ্লেষণ অনুষ্ঠানে অতিথির নাম আগে জানাতে হতো। একতিন তো হঠাৎ অনুষ্ঠানের উপস্থাপককেই (একটি সাপ্তাহিকের সম্পাদক) বাদ দিতে হলো। তার অপরাধ, তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নানান কর্মকা-ের সমালোচনা অতিথির মুখ দিয়ে বলাতে সহায়তা করতেন।
উপরের উদাহরণ এ কারণে দিলাম যে হাইকোর্টের দুজন বিচারপতির দেয়া রুলে তথ্য সচিবকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জজ মিয়া সংক্রান্ত খবর বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। আমার প্রশ্ন হল, জজ মিয়া নাটক সাজানোর যে চেষ্টা চলছে না তা আদালত নিশ্চিত হলেন কিভাবে? সবাই জানেন, আদালত বিচার করেন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে। আমিদেশে থাকলে আদালতের এই রুলের বিরুদ্ধে অবশ্যই রিট করতাম। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে সংবিধান আমাকে সে অধিকার দিয়েছে। কারণ আদালতের এই রুল যুক্তিযুক্ত নয়। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের রক্ষক, ভক্ষক নয়। আদালতের রুলের বিরুদ্ধে এ কারণে রিট করতাম যে সাগর-রুনি হত্যা মামলা একটি তদন্তাধীন। এটি তদন্তের দায়িত্ব আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার। আদালত নির্দেশ দিলেই কেন দ্রুত তদন্ত হবে। তাহলে পুলিশ কি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না। আদালত যদি মনে করেই থাকেন তদন্তে গাফিলতি হচ্ছে তাহলে সাংবাদিকরা যে জজ মিয়া নাটক লিখছেন তা যথাযথ। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কেউ প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমি তো মনে করি আদালতের এই নির্দেশে বরং মামলার প্রকৃত তদন্ত ব্যাহত হবে।
মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করলে সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। পুলিশ এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য দিতে পারে। এখানে তথ্যসচিব কী ব্যবস্থা নেবেন তা আমার বোধগম্য নয়। যেহেতু সাংবাদিক খুনের ঘটনা, সহকর্মীরা তো উদ্বিগ্ন হবেনই। এ ঘটনাকে গুরুত্ব দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। যদি আসামি গ্রেপ্তার হতো, রহস্য উদঘাটন হতো, তাহলে তো সাংবাদিকদের বিচার চেয়ে রাস্তায় নামতে হতো না। এখন আদালত যে রুল জারি করেছেন তাতে কী দাঁড়াবে, পুলিশ মুখে কুলুপ দেবে আতালতের নির্দেশের কথা বলে? পুলিশ বলবে, সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। আর তথ্যসচিব পিআইডির মাধ্যমে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক আমলের মতই নির্দেশ জারি করবে সাগর-রুনি হত্যাকা- নিয়ে অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ না করার জন্য। অর্থাৎ পুলিশের তদন্ত নিয়ে সবার যে আশঙ্কা তা হয়তো বাস্তবে রূপ নেবে। তাহলে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক আমল আর একটি নির্বাচিত সরকারের আমলের মধ্যে পার্থক্যটা কি থাকলো?
আসলে সাগর- রনি হত্যা মামলার পরিণতি কী হবে তা আদালতের নির্দেশ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু তাই বলে কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। উচ্চ আদালতে কতিপয় বিচারপতিকে নিয়েও তো অনেক বিতর্ক অতীতে ছিল। সংবাদপত্রে এ নিয়ে কম লেখালেখি হয়নি। রাজনৈতিকভাবেও বিচারপতি নিয়োগ হয়েছে, এসব ব্যাপারেও দেশবাসী কমবেশী অবগত। আজ যদি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত সঠিক পথে এগাতো তাহলে তো জজ মিয়া প্রসঙ্গ উঠতো না। জজ মিয়া নাটকের ঘটনা কি আদালত জানেন না? তাহলে সংবাদপত্রে এ নিয়ে লেখালেখি হলে দোষের কী। যেহেতু এ প্রশ্নটি সামনে এসেছে পুলিশের উচিত হবে স্বচ্ছ তদন্ত করে খুনীদের বের করা। আদালত কি একটি গণতান্ত্রিক দেশে একজন আমলাকে দিয়ে সংবাদপত্রে লেখা বন্ধের নির্দেশনা দিতে পারে? যদিও ইদানিং আদালত স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে অনেক বিষয়ে রুল জারি করছে। দেশবাসী বিষয়টি গভীরভাবে অবলোকন করছেন। সবকিছুই যদি আদালতের রুল জারি করে করতে হয় তাহলে নির্বাচিত সরকারের কী প্রয়োজন। নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত মামলার ভাগাড় জমে আছে। এসব নিষ্পত্তির চেয়ে নতুন নতুন বিষয়ে রুল জারি করতে গিয়ে কী সময়ের অপচয় হচ্ছে না। পুলিশকে প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য আদালতের নির্দেশ কেন দিতে হবে, এটা তো পুলিশেরই কাজ। তাহলে ধরে নিতে হবে পুলিশ তার দায়িত্ব ঠিকমত পালন করছে না। এখন আদালত বলেছে, তাই দ্রুত সব রহস্য বেরিয়ে আসবে। সবকিছুই অবাস্তব, হাস্যকর। আসলে বিচার বিভাগ নামেই স্বাধীন। আমার মনে হয় এটা সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপের বহিঃপ্রকাশ। আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে একটি কথা বলতে চাই, জজ মিয়া নাটক হচ্ছে বলেই লেখা হচ্ছে। সাংবাদিকরা জেল খাটতে রাজি আছে। কিন্তু তথ্যসূত্র আদালতকে জানাতে বাধ্য নয়। সার্টিফিকেট জালিয়াতি করেও এদেশে বিচারপতি হওয়ার নজির আছে। সরকার মুখে বলবে সংবাদপত্র স্বাধীন। আর কিছু হলে আদালতের মাধ্যমে রুল জারি করবে। তা কী করে হয়। আদালতের কাজ আদালত করুক। তাই বলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। সংবাদপত্র রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এটি স্বীকৃত। সবশেষে একটি কথা বলতে চাই, মানুষের জন্য আইন-আদালত। আদালত আর আইনের জন্য মানুষ নয়। আমরা মহামান্য আদালতের কাছে সাগর-রুনি হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।
সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া : বুধবার সরকার সমর্থক ও সরকার বিরোধীদের সমর্থক সাংবাদিকদের প্রধান সংগঠনের নেতারা এক বিবৃতিতে সাগর-রুনি হত্যা নিয়ে উচ্চ আদালতের মন্তব্য ও নির্দেশে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বিভক্ত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) পক্ষে ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে একথা জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘হাইকোর্ট তথ্য সচিবকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তা প্রকারান্তরে গণমাধ্যমের ওপর সেন্সরশিপ হিসাবে পরিগণিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতায় হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানিয়ে আদালতের প্রতি বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেছেন, ‘আপনাদের গণ্ডির মধ্যে থাকুন, গণমাধ্যমের কাজে নাক গলাবেন না।’ সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাসহ সব সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত, দৃষ্টান্তমূলক বিচার, সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের গণঅনশনে তিনি এ কথা বলেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ অনশন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি বুলবুল বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও গণমাধ্যমের কাজে আদালতের এরকম হস্তক্ষেপের নজির নেই।’ তিনি বলেন, ‘আদালত কেন, কারও নির্দেশনা মেনে গণমাধ্যম দায়িত্ব পালন করবে না। এটা অগ্রহণযোগ্য, অগ্রহণযোগ্য, অগ্রহণযোগ্য।’ সাংবাদিক নেতা বুলবুল আরও বলেন, ‘এর আগে সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দাদের গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপ করার সময় আমরা যেমন বলেছিলাম, ক্যান্টনমেন্টের ভেতর থেকেই প্যারেড করুন, হাতপা ছোড়াছুড়ি করুন, গণমাধ্যমের দিকে বন্দুক ধরবেন না। তেমনি আদালতকেও বলছি গণ্ডি পেরুবেন না, নিজ গণ্ডি বুঝে ভেতরেই থাকবেন।’ সাগর-রুনি হত্যাকারী সনাক্ত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কেন খুনিকে আড়াল করতে চাচ্ছে আমি বুঝি না। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের তো কোনো আসন বাড়বেও না। পুলিশের ওপর আস্থা রেখে তিনি বলেন, ‘হাত্যাকারীকে খুঁজে বের করতে না পারলে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো এক হয়ে নিজেরাই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে হত্যাকারীদের ঠিকই খুঁজে বের করতে পারবে।’
আদালতের রুলের প্রতিক্রিয়ায় এবার সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কাল হয়তো অন্য কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করবে। এভাবে যদি আদালতের বিচারবহির্ভূত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানানো শুরু হয় তাহলে আদালতের সম্মান কি অক্ষুণ্ন থাকবে? আদালত কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি বা সরকারের চেয়ে শক্তিশালী নয়। আদালত শ্রদ্ধার জায়গায়। দেশবাসীর আস্থার জায়গা আদালত। সেই জায়গাকে দাগমুক্ত রাখা সবার জন্য মঙ্গল। কাউকে খুশী করা বা কারো হুকুম-ইশারা মেনে কাজ করা আদালতের জন্য শোভনীয় নয়। এ ব্যাপারে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের উচিত হবে বিষয়গুলো অবলোকন করা, বিশেষ করে আদালেতের স্বপ্রণোদিত রুলগুলোর ব্যাপারে।
পাদটীকা : যা হবার তাই হল। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি প্রায় বন্ধ। আমি অস্কীকার করছি না যে এই সাংবাদিক দম্পতির হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমাদের কোনো বন্ধু নেতিবাচক বা নীতিবিরুদ্ধ রিপোর্ট লেখেননি। তাই বলে আদালতের ভয়ে লেখালেখি বন্ধ হলে কী হতে পারে তা কদিন পরে দেশবাসী টের পাবেন। শুধু জজ মিয়া নাটক নয়, অন্য সব সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের মত আমার বন্ধু সাগর-রুনি হত্যারও সুষ্ঠু বিচার হবে না। বিচার পাবে না সাগর-রুনির একমাত্র সন্তান মেঘ। মেঘের আড়ালেই রয়ে যাবে এই হত্যার বিচার।


[ শহীদুল ইসলাম : যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাঙালীর বিশেষ প্রতিনিধি এবং দৈনিক ইত্তেফাক-এর যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি ]
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×