ক্যান্সারের শেষ স্টেজে আছে, কেমোথেরাপি চলছে এমন মানুষকেও দেখেছি দুচোখে
বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে উচ্ছ্বসিত হতে। কিডনি ডায়ালাইসিসের রোগিকে বলতে শুনেছি,'এতো কষ্ট এই ডায়ালাইসিসে, এরচেয়ে বরং মরে যাওয়া ভালো।' কিন্তু তারপরও সে নিয়মিত ক্লিনিকে যায় ডায়ালাইসিস করাতে। একবার করিয়ে ২ দিন ঝিম মেরে পড়ে থাকে, উঠবার মতোন শক্তি পায় না। তারপরও সে চিকিৎসা চালাচ্ছে। কেন? বেঁচে থাকার তীব্র আকাঙ্খায়।
এই তো কিছুদিন আগে সংগীত শিল্পি আবদুল গাফফার চৌধুরি দেশের সবার কাছে সাহায্য চেয়ে বলেছেন, ' আমি মরে গেলে আমার কবরে হয়তো ফুল দিবেন। সেটা না করে আমি জীবিত থাকতে আমার চিকিৎসার জন্য দান করুন। ১৬ কোটি মানুষ ১ টাকা করে দিলে আমার চিকিৎসা হয়ে যাবে৷ আমি আরো কিছুদিন পৃথিবীতে বাঁচতে চাই।' কেন সে আরো কিছুদিন বাঁচতে চায়? জীবনের অনেক বসন্ত পার করে এখন তো বার্ধক্যের শেষ সীমানায় পৌছে গেছেন। যশ খ্যাতিও অনেক পেয়েছেন। তারপরও কেন সে সাহায্যের জন্য আবেদন জানাচ্ছেন? কারনটা সবাই বুঝি। পৃথিবীটাকে আরো কিছুদিন নিজের চোখে দেখা। মানুষের এটাই নিয়ম। সর্বস্বের বিনিময়েও সে কেবল একটা জিনিসই চায়, জীবন। সে কেবল বাঁচতে চায়। জীবন জিনিসটা মানুষের কাছে এতোটাই দামি।
এই যে ক্যান্সারের রোগি, যার কেমো চলছে, ব্যাথা বেদনায় জীবন যার অতিষ্ট, কিডনি ডায়ালাইসিসের যে রোগিটা নিজের মুখেই বলছে "....এরচেয়ে মরে যাওয়া ভালো", এদের যে কাউকে কি চায় জিজ্ঞেস করে দেখবেন। এক কথায় বলবে বাঁচতে চাই। মৃত্যুশয্যায় পড়ে থাকা মানুষটিও সত্যিকার শেষ ইচ্ছে জানতে চাইলে বলবে আর কয়েকটা দিন, আর কিছু সময় পৃথিবীতে বাঁচতে চাই। হয়তো সে বলে না এটা। সম্ভব নয় জানে বলেই হয়তো বলে না।
এতো সাধের আকাঙ্খিত জীবন স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়ে মানুষ আত্মহত্যা কেন করে বলতে পারেন? এর উত্তরটা পাবার জন্যে আপনাকে বুঝতে হবে মানুষ বাঁচতেই বা কেন চায়। খুব সহজভাবে বলতে গেলে, একজন মানুষ তার কাছের মানুষদেরকে ছেড়ে যেতে চায় না। সে চায় না তাদের ভালোবাসা, তাদের যত্ন, তাদের অভিমান, অনুযোগ এসবকে ছেড়ে যেতে। কোন মানুষকে যদি বলা হয় যে মৃত্যুর ঠিক পরদিন থেকেই তাকে এবং কাছের মানুষদেরকে একসাথে একটা ঘরে থাকতে দেয়া হবে, তারা একসাথে থাকতে পারবে, পৃথিবীর কোন মানুষ বোধ করি মরতে ভয় পেতো না। বোধ করি জাহান্নামে যেতেও তার ভয় হতো না। কারন ভয় মানুষের ঐ কেবল একটা জায়গাতেই, মৃত্যুর পর একাকিত্বের ভয়। আরেকটা বিষয়ও আছে। স্বার্থপরতা। তার মানুষেরা সবাই দিব্যি জগতে ঘুরে বেড়াবে, ভালোবাসবে, ঘরসংসার করবে, সন্তান জন্ম দেবে, জীবনকে অর্জন আর উপভোগ করবে। অথচ সে থাকবে অনন্ত অপেক্ষায়। এটা সে মেনে নিতে পারে না। স্বার্থপরের মতো তাই সে চায় বেঁচে থাকতে। অনন্ত নিশ্চুপতার, প্রহরবিহীন প্রতিক্ষার ভয়, আর একাকিত্বের ভয়ে সে মরতে চায় না।
এই ভালোবাসার আর কাছের মানুষগুলো যখন তার থাকে না, যখন ঐ মানুষটা থাকে না যাকে তার; একান্ত তার নিজের মানুষ মনে করতে পারে, তখনই সে নিস্বার্থের মতো সবকিছু ছেড়ে দেয়। প্রচন্ড আকাঙ্খিত জীবনে সে যখন আর কোন আকাঙ্খার বিষয় খুঁজে পায় না, যখন নিশ্চুপতা আর শূন্যতার ভীতি তার কাজ করে না তখনই সে আত্মঘাতী হয়। সাধের জীবনকে মৃত্যুর পায়ে সঁপে দেয়।