somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মতপ্রকাশ ব্যহত হলে বিকাশ ঘটতে পারে উগ্রপন্থার?

১৮ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে ব্যাঙ্গাত্মক পোস্ট দেয়ার অভিযোগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষিকা সিরাজাম মুনিরাকে ১৩ জুন গভীর রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তফা কামাল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। এরপর মোহাম্মদ নাসিমের সময়ে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহিদুর রহমানকে গভীর রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। নগরীর সাগরপাড়ার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট তাপস কুমার সাহা বাদী হয়ে এ মামলা করেন। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা জামিন পাননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন অধ্যাপককে গ্রেফতার করায় যারা মুক্তচিন্তা করতে চায় তারা আতঙ্কের মধ্যে পড়েছে।

মানুষ মত প্রকাশ করতে চায়। ব্যর্থ হলে সুবিধা নেয় উগ্র ও প্রতিক্রিয়াশীলগোষ্ঠী। দেশে করোনা পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রতি সপ্তাহই আগের সপ্তাহের চেয়ে খারাপ হচ্ছে। মানুষ ঢুকে যাচ্ছে হতাশার মধ্যে। এ সময়ে সবকিছু বিবেচনা করে করা যায় না। মানুষ ক্ষোভের কারণে বেফাঁস বলে ফেলছে। জনাব সিরাজুম মুনিরা পোস্ট দিয়েই তা ডিলিট করে দিয়েছিলেন হয়তো ভয়েই। তারপরেও রেহাই না পেলে ভুল বার্তাও যেতে পারে মানুষের কাছে।

প্রথম আলোর এক রিপোর্ট অনুযায়ী ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে করোনাকালীন জটিলতা মোকাবিলায় সরকারগুলোর সঠিক কর্মপরিকল্পনার অভাবে জনগণের একটা অংশ চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই পরিস্থিতিতে সহিংস উগ্রবাদ মোকাবিলায় আগের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। দেখা যাচ্ছে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে এই উগ্রবাদ মোকাবিলার মতো জরুরি বিষয়টির ক্ষেত্রে অধিকাংশ দেশগুলোই ছাড় দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার সংঘাতবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মোন ইয়াকুবিয়া গত মাসে বলেন, চরমপন্থার জন্য আগে থেকেই নানাভাবে তৈরি হয়ে থাকা ক্ষেত্রগুলোতে এখন আমরা খুব দ্রুতগতিতে এবং আরও গভীরভাবে চরমপন্থী মতবাদ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখতে পাচ্ছি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাউন্টার টেররিজম সমন্বয়ক গিলেস দ্য কেরশোভের আশঙ্কা, করোনাকালীন বিপর্যয়ের কারণে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষায় যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে, তাতে সহিংসতা নিরোধের নিরাপত্তার দিকটি খুবই দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

মত প্রকাশের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়লে মানুষ হতাশ হয়ে ঝুঁকে পড়বে উগ্রপন্থার দিকেই। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে বহু রিপোর্ট পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ফলে সে নিয়ে মানুষ ফেসবুকে লিখে যদি ক্ষোভ প্রশমন করে তবে তা ভাল হিসেবেই বিবেচনা করা যেতে পারে। গত ৫ বছরে বাংলাদেশে অন্তত ৬০ জন মানুষ জঙ্গীদের হামলায় নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যেকোনো ধরনের উগ্রপন্থা ছড়িয়ে পড়ার সঠিক ক্ষেত্র হিসেবে অনেক আগে থেকেই চিহ্নিত হয়ে আছে। এমন গ্রেফতার মানুষের মধ্যে হতাশা ও ভীতি বাড়িয়ে দিবে।

ফেসবুকে উগ্রপন্থা ছড়ানোর লক্ষ লক্ষ আইডি রয়েছে। উগ্রপন্থীদের অনেকেই সুবিধা নেয়ার জন্য সরকারি দলে ছদ্ম আশ্রয় নেয়। ব্যক্তিগতভাবে আমাকেই অন্তত ২৫টি আইডি থেকে হুমকি দেয়া হয়েছে। উগ্রপন্থীরা নিরবিচ্ছিন্নভাবে তাদের প্রচারণা চালাচ্ছে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও তথ্যবিকৃত করে। তারা দিনের পর দিন ভুল তথ্য ও ছবির ভুল ব্যাখ্যা বা এডিট করে উপস্থাপন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে আসছে।

টংগীর ইজতেমার ছবি এডিটিং করে প্রচার দেয়া হল- এটা করোনা ভয়ে চায়নারা ব্যাপকহারে মুসলমান হয়ে যাওয়ায় নামাজ পড়ার জায়গা পাচ্ছে না বলে রাস্তার উপরেই নামাজ পড়ছে। চীনের প্রেসিডেন্ট কয়েক বছর আগে একটি মসজিদ পরিদর্শন করেছিলেন। সেই ছবি দিয়ে প্রচারণা চালনো হল যে, চীনের প্রেসিডেন্ট মসজিদে এসেছেন দোয়া চাইতে। আবার করোনা ভাইরাসের কথা কোরআনে আগে থেকেই লেখা আছে দাবি করে বসলেন কেউ কেউ। কেউ কেউ কাছাকাছি কোন শব্দকেই হাজির করলেন। বিজ্ঞানের সব কিছুই আবিষ্কার হয়েছে কোরান গবেষণা করে এমন মতামতও বহুজন প্রচার করেন। ইসলামিক স্বর্ণযুগের দার্শনিকদের সামনে নিয়ে আসেন। তাদের কর্মকাণ্ড আরো বাড়িয়ে প্রচার দেন। কিন্তু তাদের সাথে ওই সময়ে রাষ্ট্র ও ধর্মান্ধ শ্রেণি কি ভয়ঙ্কর আচরণ করে তাদের কণ্ঠরোধ করে দিয়েছিল এবং মুসলমানদের জ্ঞানচর্চা চীরতরে বন্ধ করে দিয়েছিল তা তারা বলেন না।

আমরা দেখি অধিকাংশ শিক্ষক ও সচেতন মানুষই আজকাল ফেসবুকে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছেন। তারা আশঙ্কা করেন, এতে কোন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে পারেন। চাকরি হারাতে পারেন। এ দুটি গ্রেফতার তাদের আশঙ্কাকে হাজারগুণ বাড়িয়ে দিল। সমাজের শিক্ষিত ও সচেতন মানুষরাই অন্যদের এগিয়ে নেয়ার জন্য ভাবাদর্শ গঠন করে দেন। যদি মুক্তভাবে ফেসবুক-ব্লগসহ বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়াতে লেখা যেতো তাহলে মানুষ বিতর্কটা শুনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। উগ্রপন্থাকে নাশ করার জন্য স্বাধীনভাবে লেখার সুযোগ খুবই জরুরী। চুপ করে থাকলে উগ্রপন্থীরাতো চুপ করে থাকবে না। তারা সামাজিক মাধ্যমে সমাস্যায় পড়লে সরাসরি যোগাযোগ করবে। যদি সঠিক তথ্য নিয়ে হাজির হওয়া না যায় তবে উগ্রপন্থাকে মোকাবেলা করা যাবে না। ভারতে মৌলবাদের বিকাশ আমাদের জন্য আরো ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মধ্যে করোনা বহু মানুষকে কর্মহীন করে দিয়েছে। তারা দাঁড়িয়ে আছে হতাশা ও ভয়ঙ্কর চাপের মধ্যে। এই হতাশাগ্রস্থ ও চাপের মধ্যে থাকা তরুণদের উগ্রপন্থার দিকে টেনে নেয়া সহজ হয়ে যাবে।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:০৫
১৮টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×