somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

আমাদের বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা কেন বিজ্ঞানমনস্ক নন

২১ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার এক শিক্ষিকার সাথে কিছুটা ঘণিষ্ঠতা হল। আমরা একই বিষয়ে পড়েছি। একদিন হাঁটতে হাঁটতে তাকে এগিয়ে দিতে গিয়ে দেখলাম তিনি একটি কালি মন্দিরে যাবেন। কদিন পরে তিনি জানালেন, তিনি কালি সাধনা করেন। সাভারে তাদের প্রধান সাধনালয়। সেখানে আমাকে নিমন্ত্রণ করছেন। আমি অবাক হয়ে তাকে বলেছিলাম, পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হয়ে কালি সাধনা কি যায়! তিনি আরো অবাক হয়ে বলেছিলেন, কালিও শক্তি, পদার্থও শক্তি তাহলে দুটো এক হল না! তাঁর আরেক সহকর্মী তাবলীগ জামাত করেন। অনেকেই পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক আল্লামা ড. এম. শমসের আলীর কথাও বলেন। জনাব আলী কোয়ান্টাম মেথড নিয়েও কাজ করেন। পদার্থবিদ্যার কোয়ান্টাম মেকানিক্স থেকে ধার করে কোয়ান্টাম শব্দটি ব্যবহার করছেন তারা। পদার্থবিদ্যার শিক্ষক আল্লামা শমসের আলীরা যখন কোয়ান্টাম মেথড নিয়ে কাজ করেন তখন মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে ভেবে নেয়, কোয়ান্টাম মেথডও হয়তো পদার্থবিদ্যারই অংশ। আসলে কোয়ান্টাম মেথড একটি অবৈজ্ঞানিক আধ্যাত্মিক ধ্যান চর্চা ছাড়া কিছুই নয়। এর সাথে পদার্থবিদ্যার কোন সম্পর্কই নেই। কেন বাংলাদেশের অনেক পদার্থবিদ্যার শিক্ষকই তাদের বিষয় ছেড়ে জড়িয়ে যাচ্ছে বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কহীন বিষয়ের সাথে। কিভাবে ও কেন তাদের এমন মতাদর্শ গঠিত হল?


কেন একজন রসায়নের অধ্যাপক বলেন, পানি পড়াতেও রাসায়নিক বিক্রিয়া তৈরি হয়ে রোগমুক্তি দিতে পারে। একজন প্রাণিবিজ্ঞানের শিক্ষক (নটরজেম কলেজের মিজান স্যার) বিবর্তনবাদ পড়াতে এসে বলেন, বিবর্তনবাদ সত্যি হলে পৃথিবীতে কোন বানর থাকতো না। বানর আছে দেখেই প্রমাণ হয় বিবর্তনবাদ ভুল।’পদার্থবিদ্যা পড়তে এসেছিলেন আমার হুজুর টাইপের দুই সহপাঠী। দুটি ছেলেরই এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রথম বিভাগ। পদার্থবিদ্যার সাথে ওরা এডজাস্ট করতে পারলো না। সর্বদা অমনযোগী থাকায় ও পড়া না বুঝতে পারায় আমাদের এক শিক্ষক ওদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা হুজুর হয়ে পদার্থবিদ্যা পড়তে আসলা কেন? টুটুল দাঁড়িয়ে বলল, স্যার আমরা পদার্থবিদ্যা বিশ্বাস করি না। ভুলে না বুঝে নিয়ে ফেলছি এখন মুখস্থ করি পাশ করার জন্যই। শেষ পর্যন্ত ওরা আর পাশ করতে পারেনি। টুটুল পরবর্তীতে পাস কোর্স থেকে বি.এ পাশ করে কোন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছে।


একটি আলিয়া মাদ্রাসায় খন্ডকালীন শিক্ষকতার সুযোগ পাই, অনার্স পরীক্ষার পরেই। মাদ্রাসাটিতে প্রথম শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ানো হয়। শিক্ষকদের কক্ষে সবসময় গল্প গুজব এবং ওয়াজ অনুশীলনে সরগরম থাকে। ক্লাশগুলোও সরগরম থাকে ছাত্রদের হইচইয়ে। শিক্ষকরা ক্লাসে যেতেই চায় না। ছাত্রদের মান খুবই খারাপ। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাও ঠিকমতো বাংলা-ইংরেজি রিডিং পড়তে পারে না। সবচেয়ে অসুবিধায় পড়ি অস্টম শ্রেণীর গণিত খাতা দিতে গিয়ে। আমি যোগদানের আগেই পরীক্ষা শেষ হয়েছিল। সেই খাতা দেখার দায়িত্ব পড়েছিল আমার উপর। আগের দিন এক ছাত্র বলেছে, স্যার প্রথম সাময়িকী পরিক্ষায় স্যারে ৯৯ দিছে; আপনি কিন্তু কম দিতে পারবেন না। আকাশ থেকে পড়ি। সর্বোচ্চ পেয়েছে ২৭! (সম্ভবত ১৭) ছেলে বলে ৯৯ দিতে পারবো না, ১শ দিতে হবে। সিদ্ধান্ত নেই, সবাইকে বুঝাবো কেন এবং কোথায় তারা ভুল করেছে। সবাই অংক মুখস্ত করেছে। যে প্রশ্ন ঘুরিয়ে এসেছে সেগুলো ভুল করেছেই। প্রশ্নে এসেছে এক অংক উত্তর দিয়েছে অন্য অংক যা পরীক্ষায় আসেনি। তারা প্রশ্নের আজগুবি ও বিস্ময়কর উত্তর দিয়েছে। জ্যামিতির ক্ষেত্রেও তাই। দুএকজন বাদে সবাই খুব কম প্রশ্নের উত্তরই দিয়েছে, অধিকাংশই পেয়েছে ১০ এর নিচে। আগের শিক্ষক এদের ম্যানেজ করতো বেশি নম্বর দিয়ে, খুশি করে। ওরা ওদের ভুল বুঝতে পারে। সবাই খুশি হয়, ফেল করেও।


দুর্বল শিক্ষকরাই দুর্বল ছাত্র তৈরি করে। আমরা স্কুল জীবনে এটা টের পেয়েছি। টেনে পড়ার সময় আমাদের গণিতের এক শিক্ষক আমাকে ধরলেন, তুমিতো অংক বুঝ! আমাকে অংক শিখাও কদিন। তিনি রাত দশটার দিকে আসতেন। এভাবে মাস দুয়েক আমার এক শিক্ষককে অংক শেখালাম। আমাদের শিক্ষকদের অনেকেই ক্লাসে আসতেন অংক মুখস্ত করে। তাদের বুঝানোর সামর্থ্যও ছিল না, নিজেরাইতো বুঝে না। কেউ যদি বলতো, স্যার এইডা কেমনে অইল? সর্বনাশ! তারা রেগে যেতেন- যাতে বুঝাতে পারেন না; সেটা যেন ফাঁস না হয়ে যায়। দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের কজন হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন? আমার এক বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমকম করে আসলো স্কুলে শিক্ষকতা করবে। নিয়োগ পরীক্ষার পরে ঘোষণা দেয়া হল সে ৬ পেয়েছে আর মেট্রিক-ইন্টার-বিকমে তৃতীয় বিভাগ পাওয়া একজন পেয়ে গেল ৯৬ এবং তারই চাকরি হল। আমার স্ত্রীও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে এমএসসি করে ওই স্কুলে ঢুকতে পারেনি। তার পরিবর্তে ঢুকলে মাদ্রাসা থেকে বিএ পাশ করা একজন। এখানে দুটো বিষয় কাজ করতো- ১) কোন শিক্ষকই চাইতো না মেধাবী কেউ শিক্ষকতা করতে এসে তাদের অজ্ঞতার গোমর ফাঁস করে দিক, ২) কর্তৃপক্ষের নিয়োগ বাণিজ্যও থাকতো।


গত বছর একজন সচিবের সাথে কথা বললাম। তিনি দুঃখ করে বললেন, বৃত্তি দিবো তবে পৃথিবীর সেরা ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনটিতে ভর্তি হতে হবে। দেখা গেল কেউ পারলো না। পরে করলাম সেরা ৩০০টিতে তাও কেউ পারলো না। এরপরে সেরা ৪০০টি করার পরে কজন পাওয়া গেল। মাঝে মধ্যে দুএকজন সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন তবে কতজন সে প্রশ্নও উঠবে। ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং এ ১০০০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরিয়াল করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আন্তর্জাতিক কোন ছাত্রও নেই। মেডিক্যাল কলেজগুলোতে অল্প কিছু শিক্ষার্থী রয়েছে সম্ভবত নেপাল, ভূটানের মতো দেশের। কেন এই দুরবস্থা?


ছাত্র পড়াতে গিয়ে- ধর্ম পড়ানোর সময় আদম হাওয়ার কথোপকথনের কথা বললাম। হাওয়া কিভাবে আদমকে প্ররোচিত করে কি বলছে। একটু পড়েই সমাজ পড়াতে গিয়ে বললাম, আদিম মানুষ কথা বলতে পারতো না। শিক্ষার্থী প্রশ্ন করলো, স্যার আপনি আগে পড়ালেন, আদম হাওয়ার কথা বললো, এখন বলছেন, আদিম মানুষ কথা বলতে পারতো না। তাহলে আদম-হাওয়া কি আদিম মানুষ নয়? বললাম, ধর্ম পড়ানোর সময় শুধু ধর্মের প্রশ্ন আর সমাজ পড়ানোর সময় শুধু সমাজের প্রশ্ন করতে হবে। বাস্তবিক কি ঘটেছিল? ওই ছাত্রের মধ্যে পড়াশোনাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি আর, হওয়ার কথা নয়। আমাদের শিক্ষার্থীরা কি বিশ্বাস করবে? একই বিষয়ে যখন বিজ্ঞান একরকম বলছে, বাংলা আরেক রকম বলছে, ধর্ম আরেক রকম বলছে তখন সে কোনটা মানবে? স্বাভাবিক সে ধর্মই মানবে। শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, মিডিয়া থেকেও শিক্ষা গ্রহণ করে। সেখান থেকেই তাদের মধ্যে সামাজিক দর্শন তৈরি হয়। সেই দর্শনে বিজ্ঞানের কোন স্থান ছিল না। ফলে সে বিজ্ঞান পড়লেও বিজ্ঞানের দর্শনটা গ্রহণ করতে পারে না। তার গহীনে রয়ে যায় অলৌকিক বিশ্বাস। সেই বিশ্বাস থেকে বিজ্ঞানের শিক্ষকরাও বের হতে পারেন না, তাদের ছাত্ররাও পারেন না। ফলে বিজ্ঞানের ছাত্ররা হয়ে থাকে বিজ্ঞানবিমুখ, বিজ্ঞানমনস্কতাহীন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:০৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×