আমার টানা পড়ার রেকর্ড বিমল মিত্রের ‘সাহেব বিবি গোলাম’ উপন্যাস। সকাল ১০টার পড়তে বসে, রাত ২টায় শেষ করেছিলাম প্রায় সাড়ে ৪শ পাতার বইটি। ছাত্রাবস্থায় হলে থাকার কারণেই সম্ভব হয়েছিল। ১৯৯১ সালে বইটি পড়ি বিমল মিত্রের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পরে। তিনি বইটি লিখেছিলেন ১৯৫৩ সালে। যদিও কাহিনী ১৯১২ সাল পর্যন্ত। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জমিদার সাহেব, বাড়ির ছোট বউ হল বিবি-যে চেয়েছিল সত্যিকারের স্ত্রী হতে যেখানে থাকবে সুখ, সম্ভোগ, রোমান্সময় এক দাম্পত্য জীবন, আর মোহিনী সিঁদুরের কেরানী গোলাম ভুতনাথ ক্ষয়িষ্ণু জমিদার বাড়িতে আসেন দূরের গ্রাম থেকে তারই এক আত্মীয়ের কল্যাণে। সেই গ্রামেই একদিন জমিদারবাবু নিজের সুন্দরী কন্যা জবাকে শিশুকালে বিয়ে দিয়েছিলেন ব্রাহ্মণপুত্র অতুল চক্রবর্তীর সঙ্গে। পছন্দের পাত্রের সাথে জবার বিয়ে চূড়ান্ত হওয়ার সময়েই জমিদার বিষয়টি প্রকাশ করেন এবং ভুতনাথকেই দায়িত্ব দেন অতুল চক্রবর্তীর খোঁজ আনার। ভুতনাথ কেঁপে উঠেছিল। সে জানে তাঁর নামই অতুল। মিলে যায় গ্রামের নাম এবং পিতার নামও। কিন্তু এই বিয়ের কথা তার মনে নেই অথবা আবছা মনে আছে। তবুও তিনি খোঁজ করতে যান। ভুতনাথ অতুলের ভুয়া মৃত্যু সংবাদই প্রকাশ করেন। অথচ জবা যখন জেনেছিল তার স্বামী রয়েছে সেটা মেনেও নিয়েছিল। ভূতোনাথ প্রথমে চিঠি লিখে জানিয়েছিল পরে সাক্ষাতে জানায়। প্রেমিকের সাথে বিয়ের আহবান জানায়। জবার অস্বস্তি দেখে নিজেই উদ্যোগী হয়ে বিয়ে সম্পন্ন করে দেয়। কতো আগের পড়া তবুও দুর্বল কিন্তু অসাধারণ চরিত্র ভুতনাথের কথা মনের গহীনে রয়েছে। জবার সাথে তাঁর আরেকবার বিয়ে কি সম্ভব ছিল? এ উপন্যাসটি লেখক লিখেছেন আর বিয়ে না করা ভূতোনাথের কাছ থেকে গল্প শুনে। এ উপন্যাসের মূল নারী চরিত্র জবা নয়- ছোট বৌঠান!মোহিনী সিঁদুরের বিজ্ঞাপনে সব সমস্যার সমাধানের নিশ্চয়তা থাকতো। কিন্তু মালিক পক্ষের পরিবারের ভিতরে বাইরে থাকা কোন সমস্যাই এই সিঁদুর দূর করতে পারেনি। বড়বাড়িটি হাতছাড়া হয়ে যায়। সবাই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। থেকে গিয়েছিল সেই ছোট বৌঠানই। ভূতোনাথ বাড়ি ভাঙ্গা তদারকি করতে এসে পেয়েছিল একটি কঙ্কাল! সেটি ছোট বৌঠানেরই।
আমার পড়া বৃহৎ বইয়ের মধ্যে বিমল মিত্রের ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ অন্যতম। ওটা সাহেব বিবি গোলামের চেয়েও অনেক বড়, পড়তে সময় লেগেছিল ৭দিন। পাবলিক লাইব্রেরিতে সকালে ঢুকতাম, লাইব্রেরির লোকেরা বেরিয়ে যেতে বললে বের হতাম। এখন ৪/৫শ পৃষ্ঠার বই পড়তেই ৭দিন লেগে যায়। রিভারগড ও দ্য দা ভিঞ্চি কোড পড়তে এমন সময় লাগে কারণ দিনে অফিস থাকে রাতে পড়তে হয় আর শুক্র-শনিবার। সাথে বিভিন্ন কাজ করতেই হয়। গত বছর ‘নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা অতীশ দীপঙ্করের পৃথিবী’ পড়েছি টানা ৪দিনে। অফিস থেকে ফিরেই ফাঁকা কক্ষে পড়লে ভাল মতোই পড়া যায়। করোনাকালে রিভারগড ও ভিঞ্চিকোডের সিরিয়ালগুলো পড়তে পেড়েছি।সংসারের মধ্যে থেকে বেশি পড়া সম্ভব হয় না। আবার টানা পড়তে না পারলে বই পড়ে মজা পাওয়া যায় না। টানা পড়ার সময় চরিত্রগুলো সঠিক মনে থাকে ও রসাস্বাদন হয় পরিপূর্ণভাবে।
কিছু বই এখনো পড়া হয়নি। আগ্রহ আছে পড়ার। যেমন অশোক মিত্রের ‘তিন কুড়ি দশ’। শুনেছি এর দ্বিতীয় খণ্ডে বিক্রমপুরের কথা লেখা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৫২