somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

শরৎচন্দ্রের দত্তার নরেনই ছিল আমার হিরো

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার কিশোরকালটা কেটেছে মূলত শরৎ, বঙ্কিম, ফাল্গুনী, রোমেনা আফাজ পড়ে। এরমধ্যে শরৎসাহিত্যই আমার কাছে ছিল শ্রেষ্ঠ সাহিত্য। কখনো হাসতাম, কখনো চোখ ডলতাম পড়ে পড়ে। জানি কেউ মানতে চাইবেন না, কারণ বোদ্ধাদের কাছে শরতের শ্রীকান্তই শ্রেষ্ঠ রচনা, তাই হওয়া যৌক্তিক। কিন্তু আমার যে, বিজয়ার প্রতি অগাধ টান তা বোঝানো দুর্জ্ঞেয়। হয়তো নরেনের মাঝে নিজেকে খুঁজে পাওয়া অথবা অন্যকোন নিগূঢ় করণ দত্তাকে সেরা স্থানেই রাখতে ইচ্ছা করে। কৈশোরে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম শরৎচন্দ্রের দত্তা পড়েই। আমার নায়ক ছিল নরেন। আমি নরেনের মতোই ছিপছিপে লম্বা বলে নরেনের ভিতরেই নিজেকে দেখতাম। নরেন স্বচ্ছ জলের মতোই পরিস্কার মনের মানুষ। বিজয়ার ভালবাসাটাও ধরতে পারেন নি, অথচ নিজেও বিজয়াকে ভালবেসেছে মনে মনে। বিজয়ার ভালবাসার প্রকাশকেও মনে করেছে উপহাস। অপমান তাকে অবশ করে না, কোন লোভের কাছের পরাস্ত নন, ত্যাগ করতে কুণ্ঠিত নন, কোন রক্ত চক্ষু দেখে ভীত নন। এ উপন্যাস অবলম্বনেই শরৎ একটি নাটকও লিখেছেন ‘বিজয়া’ নামে। নাটকটিও পড়েছি, আরো ভাল লেগেছে।

অসাধারণ কিছু ডায়ালগ বা মন্তব্যও আকর্ষণীয়। দুষ্টু পিতা রাসবিহারীর দুষ্টু পুত্র বিলাস বিহারীর চরিত্র বুঝাতে লেখক বিভিন্ন উপমা ব্যবহার করেছেন। তার দুটি নিম্নরূপ-
১। দুষ্টুব্রণের মতো এমন মানুষও আছে, যাহার বিষাক্ত ক্ষুধা একবার কাহারও ত্রুটির মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করিলে আর কোন মতেই নিবৃত্ত হইতে চাহে না।
২। এ-সকল লোকের স্বভাবই এই যে, ছিদ্র পাইলেই তাহাকে নিরর্থক বড় করিয়া দুর্বলকে পীড়া দিতে, ভীতুকে আরও ভয় দেখাইয়া ব্যাকুল করিয়া তুলিতেই আনন্দ অনুভব করে-

অসাধারণ সব উপমার ফুলঝুড়ি রয়েছে উপন্যাসটিতে। নরেনের সাথে কয়েকবার বিজয়ার দেখা হলেও বিজয়া জানতেন না, ইনিই নরেন। তাদের প্রথম সাক্ষাৎ নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে। দ্বিতীয় সাক্ষাতেই বিজয়ার মন বিজয় করে নিয়েছিল লোকটি। তৃতীয় সাক্ষাতের আগে লেখক মন্তব্য করেন-
যাঁহারা মনে করেন যথার্থ বন্ধুত্বের জন্য অনেকদিন এবং অনেক কথাবার্তা হওয়া চাই-ই, তাঁহাদের এইখানে স্মরণ করাইয়া দেওয়া প্রয়োজন যে, না, তাহা অত্যাবশ্যক নহে।
ততদিনে বিজয়া জেনে গেছে সেই আগুন্তকই নরেন। তাদের সাক্ষাৎ হলে বিতর্কের মুখে যখন বিজয়া পরিচয় গোপনের অভিযোগ তুলে তখন নরেনের অবস'া বর্ণনা করেছেন-
ফুঁ দিয়া আলো নিভাইলে ঘরের চেহারা যেমন বদল হয়, বিজয়ার প্রত্যুত্তরে চক্ষুর নিমিষে নরেনের মুখ তেমনি মলিন হইয়া গেল।
বিতর্ক চলার মধ্যেই বিজয়া জানতে চাইল, আপনার নিজের সম্বন্ধে কোন কথা জানতে চাইলে কি-
নরেন কথা কেড়ে নিয়ে বলে, রাগ করব? না না।
বলিয়াই তৎক্ষণাৎ প্রশান্ত নির্মল-হাস্যে তাহার সমস্ত মুখ উজ্জ্বল হইইয়া উঠিল। এতদিন এত কথাবার্তাতেও এই লোকটির যে পরিচয় বিজয়া পায় নাই, একমুহূর্তের হাসিটুকু তাহাকে সেই খবর দিয়া গেল। তাহার মনে হইল, ইহার সমস্ত অন্তর-বাহির একেবারে যেন স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ। সেই স্বচ্ছতা আরো মুগ্ধ করেছিল বিজয়াকে। বিজয়া জানতো তার জমিদার পিতা আগেই বন্ধু রাসবিহারীর পুত্র বিলাসের সাথেই বিয়ে ঠিক করে রেখেছিল। আবার নরেনও কখনো প্রকাশ করেনি তার ভালবাসার কথা। এসব ভালবাসা আর জটিলতার চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় বিজয়া-নরেনের প্রতিটি সাক্ষাৎ। তাদের কথোপকথন পাঠককে মুগ্ধ করে। বিজয়া একদিন জানতে পারে তার পিতাই নরেনকে বিলেত পাঠিয়ে ডাক্তার বানিয়েছিল জামাতা করার জন্যই। নরেনের পিতার বন্ধক রাখা বাড়িটিও জামাতাকে যৌতুক দিতে চেয়েছিলেন। নরেনের উপর একটি হঠাৎ সন্দেহ সব উলটপালট করে দেয়। সে ব্রাহ্মধর্মের রীতিতে বিলাসকেই বিয়ে করার জন্য সাক্ষর করে দেয়। তাহলে? নরেন ও বিজয়ার মিলন কিভাবে ঘটবে? সাক্ষর দেয়াই গুরুত্বপূর্ণ না মন দেয়া?
দেখেছি ‘বিজয়া’ ও ‘দত্তা’ নামের সিনেমাও। সিনেমা দেখে খুবই হতাশ হয়েছি। খুবই নিম্নমানের পরিচালনা। কলকাতায় দত্তা নামের দ্বিতীয় সিনেমায় নরেন ও বিজয়ার চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও সুচিত্র সেন অভিনয় করেন আর রাসবিহারীর চরিত্রে উৎপদ দত্ত। সৌমিত্র ও সুচিত্রার বয়স অনেক মনে হয়েছে। অথচ নরেনের বয়স ২৪ আর বিজয়ার আরো কম। মনে হয়েছে একজনের পরে আরেকজনের ডায়লগ দিতে অনেক সময় লাগছে। আর শেষ দৃশ্যের অনেক আগেই শেষ দৃশ্যের টাচ দেয়া হয় যা মূল উপন্যাসে নেই। ভেবেছিলাম- উপন্যাসে একেবারে শেষ দৃশ্যটি আকস্মিক হয়েছে। এখন দেখলাম সেটাই ভাল ছিল। শুনেছিলাম দত্তাকে নিয়ে আরো সিনেমা হবে। দেখবো আবারো। নরেনকে এখনো বুকের ভিতরে লালন করি। শতাধীক বছর আগের একটি সৃষ্টি এখনো হৃদয় ভরিয়ে দেয়। এটাই শরৎ সাহিত্য!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২১
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×