এই সরকারের সর্বশেষ ও ভয়াবহতম কীর্তি দেশের ১০ লাখ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ার নাম করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার ব্যবস্থা করা। সারাদেশ তোলপাড় হয়েছে এই ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল নিয়ে। হাজার হাজার শিশু হয়ে পড়েছে অসুস্থ। বহু শিশু ঢলে পড়েছে মৃত্যুর কোলে। তারপরও সরকার এত বড় একটি হৃদয়বিদারক ঘটনার কারণ উদঘাটন বাদ দিয়ে, কোনো তদন্তের ব্যবস্থা না করে, ধামাচাপা দেয়ার জন্য প্রাণান্ত প্রয়াস চালিয়েছে। প্রথমে ভাড়াটে বিশেষজ্ঞ দিয়ে বলানোর চেষ্টা করেছে যে ‘এ’ ক্যাপসুলের জন্য কোথাও কিছু হয়নি। তারপর নিজেরা এবং নিজেদের ‘নিমক হালাল’ মিডিয়া দিয়ে একযোগে প্রচার করেছে যে এটা হলো গুজব। এই গুজব ছড়িয়েছে জামায়াত শিবির। অর্থাত্ ‘কেষ্টা বেটাই চোর’।
অন্যায়ের প্রতিরোধ না করে, দেশের লাখ লাখ শিশুর জীবনকে রক্ষার ন্যূনতম কোনো উদ্যোগ না নিয়ে, উল্টো নিজেদের পাপকে পুণ্য বলে জাহির করার জন্য কেন এই অপচেষ্টা? কোনো অপরাধীদের পাকড়াও না করে, এত বড় ঘটনাকে কেন গুজব বলে চালিয়ে দেয়ার নির্লজ্জ কোশেশ?
দেশের বেশিরভাগ মিডিয়া যদিও সরকারের কাছে বিবেক বন্ধক দিয়ে সাংবাদিকতা করে, তারপরও কেউ না কেউ তো এখনও আছে, যাদের কাছে অর্থ— কীর্তির চাইতে দেশ ও দেশের মানুষই বড়। এই রকম সংবাদপত্রের কল্যাণেই জানা গেছে আসল কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)সহ সংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠানের আপত্তি এবং অনিয়মের অভিযোগ সত্ত্বেও, একজন বিশেষ নেতার কারণে, তার প্রতিষ্ঠান জনতা টেডার্সের ‘জনতা হেলথ কেয়ার’কে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য, ভারতের অলিভ হেলথ কেয়ার নামক একটি অনভিজ্ঞ ও WHO-এর সার্টিফিকেটহীন প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হয় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল। তারপর স্বাস্থ্য দফতরের মাধ্যমে গেলানো হয় দেশের শিশুদের। তারপর যা হওয়ার তাই হয়েছে। সারাদেশের প্রতিটি ঘরের শিশুর জীবন আজ কণ্ঠার কাছে। হাজার হাজার নিষ্পাপ শিশু হয়ে পড়েছে অসুস্থ। মরে বেঁচেছে অনেক শিশু। পিতামাতাদের কান্নায় বাতাস ভারী।
তারপরও সরকার এই জঘন্য অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করেনি। বন্ধ করেনি ক্যাপসুল খাওয়ানো। কারণ? এই ‘বিশেষ নেতা’ আর কেউ নন, তিনি আমাদের শাসক দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, পার্টির মুখপাত্র, অতি বাকমুখর মাহবুব-উল আলম হানিফ। বিরোধী দলকে যা-তা ভাষায় গালাগাল এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলতে বলতে হানিফ সাহেব চোখে-মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। ব্যক্তিগত লোভ ও লালসার কারণে হাজার হাজার নিষ্পাপ শিশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া মুক্তিযুদ্ধের কোন চেতনার মধ্যে পড়ে তা অবশ্য হানিফ সাহেব বলেননি।
প্রশাসনে হানিফ সাহেবের দাপট কোন পর্যায়ে তা বোঝা যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের আপত্তিকে পাত্তা না দেয়া থেকে। বিশ্বব্যাংক থেকেও এ ব্যাপারে তদন্ত হয়েছিল। সে তদন্তে দেখা যায়, ক্যাপসুল সরবরাহ করার জন্য যেসব যোগ্যতা লাগে তা ভারতীয় কোম্পানিটির নেই। এমনকি ভারতীয় কোম্পানিটির কাছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO-এর অবশ্য-পালনীয় সার্টিফিকেটও নেই। এসব গুরুত্বপূর্ণ আপত্তি ও অভিযোগকে সামান্যতম কেয়ার করারও প্রয়োজন বোধ করেননি হানিফ সাহেব। তিনি হয়তো তার ক্ষমতার জোরে ভারত থেকেই ওষুধ আমদানির ব্যবস্থা করতে বাধ্য করেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে।
বাংলাদেশের শিশুরা জনাব হানিফের লোভের খেশারত দিচ্ছে জীবন দিয়ে। অনেক শিশু জ্বরে ভুগছে। অনেকে আক্রান্ত হয়েছে বমিতে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়, সরকারি হাসপাতালগুলো এইসব অসুস্থ শিশুকে ভর্তি করাতে চাচ্ছে না। ফলে বেসরকারি হাসপাতাল বা চিকিত্সকের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে অসহায় পিতামাতাদের। কি পোড়া কপাল, বিষাক্ত ওষুধ খেয়ে শিশুরা মরবে। অথচ তারা চিকিত্সা পাবে না। শুধু একজন নেতার ইমেজ বাঁচাতে এই নিষ্ঠুরতা! ----তথ্যসূত্র আমারদশে