somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যদি এত কিছু না হত, তবে আমরা মানুষ থাকতাম

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবী যদি আবার আগের জায়গায় ফিরে আসত! ইন্টারনেট নামক কিছু নেই। মার্ক জুকারবার্গকে হার্ভাড থেকে বের করে দেয়ার পর সে কষ্টে গিয়ে আইসক্রিমের দোকানে চাকরি নিয়েছে। আর তাই ফেইসবুক আবিস্কার হয় নাই। টুইটার, ইউটিউব থেকে শুরু করে টিকটক নামক সকল পাগলদের একত্রিতকরণ করা কোন এপ্স আসে নাই। আসবে কোথা থেকে মোবাইল নামের যা এসেছে সেটা সেই নোকিয়া ১১০০ মডেলের উপরে উঠতে পারে নাই।


শিশুকাল

সেকেন্ডের মধ্যে ম্যাছেজ দেয়ার কোন উপায় নাই। পত্র লিখে অপেক্ষা করতে হত ৩ সপ্তাহ। তবে তাতে ভালবাসা আর আবেগের আদান প্রদানের কোন কমতি হত না। যা কিনা এখন এই ১ সেকেন্ডের মধ্যে করা যোগাযোগে নেই।পাশে মানুষটিকে বসিয়ে রেখে হাজার মাইলের কারো সাথে যোগাযোগ স্থাপন করাটা কালচার হত না।

দেশে শুধু একটা বিটিভি আছে, তবে সেই বিটিভি লেবু বিক্রি করে না। মানুষের আনন্দের খোরাক দেয়। ইউটিউব, ফেইসবুকে এত বারবাতারী ভিডিও আসত না। এক জিনিস বারবার দেখা লাগত না। সত্য-মিথ্যা না জেনেই কাউকে ছোট কিংবা বড় করার প্রবনতা থাকত না। অনেক মেয়ে-ছেলে অনলাইন বুলিংয়ের শিকার হত না। পৃথিবীটা লাইক-কমেন্টস আর রিএকশনের হত না। হত একশনের। প্রতি শুক্রবার বিটিভিতে একটা ছবি দেখাত। সেটা দেখার জন্য গ্রামের সব মানুষ টিভিওয়ালার বাড়ীতে ভিড় জমানো। সপ্তাহব্যাপি রাজ্জাক আর শাবানা কি করেছে, জসিম কাকে মেরেছে আর জাম্মু কিংবা নাসির খান কি কি খারাপ কাজ করেছে-এগুলোর বিশ্লেষনেই সব আনন্দ থাকত। সেই সাথে বাড়ত সম্পর্ক। এই পাড়ার সাথে ওই পাড়ার মানুষ মিলেমিশে বাস করত।

হাত বাড়ালেই অনলাইনে বইয়ের পিডিএফ কপি পাওয়া যেত না। অনেক খুজে জানার জন্য পড়ত। কোন লেখক কিংবা প্রকাশক বই প্রকাশ করে- "আমার বইয়ের পিডিএফ চলে আসলে আমার সব কষ্ট শেষ"- এটা ভেবে ভয়ে থাকতে হত না। ছাত্ররা পরিক্ষার আগে প্রশ্নপত্র পেতে আগ্রহ দেখাত না। শিক্ষকেরা ছাত্রদের ফেইসবুকে লাইক দিয়ে "বাহ খুব ভাল" না বলে মাথায় হাত দিয়ে "বড় হও বাবা" বলে দোয়া করত।

এত মিডিয়া থাকত না। সেকেন্ডে সেকেন্ডে সংবাদ পরিবর্তন হত না। চারদিকের এত খারাপ সংবাদ দেখে দেখে সামাজিক ভাবে আমরা মানসিক বিকারগ্রস্থ হতাম না। মিথ্যে সংবাদের আড়ালে মানবিকতা হারিয়ে যেত না।

সামান্য একটা ফেইসবুক মন্তব্যের কারনে কেহ হত্যা হত না। নেতারা এতটা প্রদর্শনেচ্ছা দেখাত না, রাজনীতি এত নোংরা হত না। শিশুরা স্কিন দেখে দেখে ছোট বয়সে চোখে কম দেখত না, মানসিক ভাবে ভারসম্যহীন হত না। তারা মাঠে খেলতে যেত। খোলা বাতাস কিংবা নদীর ঢেঊয়ের মত তাদের জীবন থাকত প্রফুল্ল।



এত বেশী বিজ্ঞাপন থাকত না। মানুষের অপ্রোয়জনীয় কিছুকে খুব দরকারী হিসেবে দেখিয়ে সেটা কেনার জন্য কেহ মানসিক ভাবে জোর করত না। অন্য মানুষ কিনেছে বলে আমাকে কিনতে হবে- দরকারে দেনা করে। এমন মানুষ থাকত না। খাবারের ছবি ফেইসবুকে না এসে অনাহারির সামনে যেত।

প্রেম নামের সম্পর্ক এত সস্তা হত না। পার্টনার না থাকলে কেহ কাউকে ছোট করত না। প্রেমের নামে নষ্টামী করে সেগুলো ভিডিও করে জাতীর জন্য উন্মুক্ত করে দিত না। কোন মেয় সেই কষ্টে আত্মহত্যা করত না। ব্যক্তিগত অনুমতি ছাড়া কেহ কারো গোপন কিছু তুলে ধরতে পারত না।



"কোথাও কেহ নেই" কিংবা "আজ রবিবারের" মত নাটকের বিনিময়ে আমাদের "বদমাইশ পোলাপাইন" কিংবা "ব্যাচেলর পয়েন্ট" দেখতে হত না।" মাটির ময়না" সিনেমার বিনিময়ে "সাহসী হিরো আলম" দেখাতে পেতাম না।

এতকিছু না হলে আমিও এখন অযথা সময় দিয়ে এগুলো না লিখে ৫ পৃষ্ঠা বই পরতাম কিংবা আমার বউকে বিরিয়ানী রান্নায় হেল্প করতাম। বাড়ত জ্ঞান কিংবা ভালবাসা।

এতকিছু না হলে আমরা যান্ত্রিক হতাম না, মানুষ থাকতাম। অনুভূতি অনলাইনে না, অফলাইনে প্রকাশ করতাম।

বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। আসুন বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহার করি।।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৩১
১০টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×