somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক পিস মিষ্টি-১

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাহিদ আমেরিকা প্রবাসী আইটি বিশেষজ্ঞ। উচ্চ বেতনের চাকুরীজীবী। আয় বা বেতন অনুপাতে তার অবস্থান হচ্ছে আমেরিকান উচ্চবিত্ত সমাজের পাঁচ শতাংশ মানুষের মধ্যে। অবশ্য এই অবস্থায় আসতে তাকে কঠোর পরিশ্রম আর ধৈ্যের পরিচয় দিতে হয়েছে। দীর্ঘ আট বছর পর স্ত্রী অপিকে নিয়ে ঢাকায় এসেছে বেড়াতে। থাকবে মোট পাঁচ সপ্তাহ। বিয়ের পর তাদের এই প্রথম ঢাকায় আসা। তার স্ত্রীও আমেরিকায় উচ্চ বেতনের চাকুরীজীবী।

নাহিদ আর অপি দু জনেই রিকশায় চড়ে ঢাকা শহর ঘুরে বেড়ায়। এদিক ওদিক যায়। বন্ধু-বান্ধব আর আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করেই দিনগুলো পার করছিল। একদিন ওরা মালিবাগে রিকশা দিয়ে যাবার সময় এক মিষ্টির দোকানের সামনে থামল। উদ্দেশ্য নাহিদের ফুপুর বাসায় নিয়ে যাবার জন্য কিছু মিষ্টি কেনা। রিকশাওয়ালাকে অপেক্ষা করতে বলে নাহিদ অপি দুজেনে দোকানে ঢুকে মিস্টি দেখতে লাগলো। হরেক রকম মিষ্টি দেখে দোকানদারকে বলল প্রত্যেক প্রকার হতে এক কেজি করে দুটো বাক্সে মোট পাঁচ কেজি মিষ্টি দিতে। আড়াই কেজি করে প্রতিটি বাক্সে।



দোকানি যখন মিষ্টি তুলছিল অপি তখন আয়নার প্রতিফলনে লক্ষ্য করলো যে একটা ছোট ছেলে রাস্তার দিকে কাঁচের অন্যপাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের মিষ্টি মাপা দেখছে। জরাজীর্ণ দেহের সাত কি আট বছরের একটা ছেলে। হাতে একটা বড় ঝুড়ি। দেখলেই বোঝা যায় কুলি মজুরীর কাজ করে। ওখানে দাঁড়িয়ে সে মিষ্টি দোকানীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে কিছু একটা বলছে। দোকানদারের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সে ব্যস্ত পাঁচ কেজি ওজনের মিস্তি মাপা নিয়ে। অপি স্পষ্টই শুনতে পেল ছেলেটা দোকানীর কাছে জানতে চাচ্ছে, “এক পিস মিষ্টির দাম কত”?

- পাঁচ টাকা, দোকানীর উত্তরে ধমকের স্বর।

মিষ্টি মাপা শেষ হলে অপি দোকানী’কে আর একটা আধা কেজির মত বাক্সে দেখিয়ে বলল ওটা মিষ্টি দিয়ে ভরে দিতে। তারপর বিল পরিশোধ করে সে ছুটে বাইরে এলো ছেলেটার হাতে মিষ্টির বাক্সটা ধরিয়ে দিতে। কিন্তু ইতিমধ্যেই ছেলেটি লাপাত্তা। অপি ডাইনে, বাঁয়ে, সামনে, পেছনে বার বার করে ছেলেটাকে হন্য হয়ে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোন লাভ হল না। অতটুকু সময়ের মধ্যেই ছেলেটি যেন হাওয়া হয়ে উড়ে চলে গেছে।

সেই রাতে অপি বিষণ্ণ মন নিয়ে ঘুমাতে গেল। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখল সে কোথায় যেন বেড়াতে গেছে। একা একা। সাথে নাহিদ নেই। তার সামনে বিশাল একটা নদী। সে খুবই চিন্তিত নদী পার হবে কিভাবে।
এমন সময় দেখল মিষ্টির দোকানে দেখা সেই ছেলেটি তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তাকে মা বলে ডাকছে। তার পরনের কাপড় বলতে ছোট একটা ঢিলেঢালা প্যান্ট, সামনের দিকে চেইন নেই। প্যাণ্টের কোমরের অংশ রশি দিয়ে বাঁধা। হাতে মালামাল বহন করার বিশালাকার একটা ঝুড়ি।
- আম্মা, আমারে আপনে খুঁজতাছিলেন? কি আশ্চর্য্য! ছেলেটি অবলীলায় অপিকে আম্মা বলে সন্মোধন করছে। কিন্তু অপি তার কোন প্রতিকার করছে না। বরং তার ভালই লাগছে। ছেলেটি বলে চলল,
- “আমি এক সাহেবের বাজার নিয়া যাওয়ার ক্ষেপ পাইছিলাম। তাই মিষ্টির দোকানে আর দাঁড়াইতে পারি নাই। আমি বুজছিলাম আপনি আমার লাইগা মিষ্টি কিনছিলেন। এহন আইছি, আমারে মিষ্টি দেন”।

অপি নিজেকে আপাদমস্তক পরিক্ষা করে দেখে নিল যে তার সাথে মিষ্টির বাক্সটা আছে কিনা। নাহ তার সাথে কিছুই নেই। এক কাপড়ে সে এখানে এসেছে। তার সামনে একটা বিশাল নদী আর ছেলেটা ছাড়া কিছুই নেই।

(চলবে)
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×