somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্যাক স্পারো... ওহ্! সরি ক্যাপ্টেন জ্যাক স্পারো!

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রকাশকালঃ ২৩ই মার্চ, ২০১৮

শিরোনাম দেখেই হয়তো বুঝে গেছেন যে, আমি কার কথা বলছি। জ্বী, ঠিক ধরেছেন। আমি এক নির্লজ্জ জলদস্যুর কথা বলছি। “পাইরেটস্ অব ক্যারিবিয়ান” মুভি সিরিজ খ্যাত তারকা “জনি ডেপ” এর সুনিপণ অভিনয়ে উঠে আসা চরিত্র “জ্যাক স্পারো” নিয়ে আজ আলোচনা করবো। এই মুভি সিরিজের প্রত্যেকটা অংশ আলাদা-আলাদা করে বিশ্লেষণ করলেও মূল চরিত্র হিসেবে জ্যাক স্পারো আজীবন অনবদ্য হয়েই থাকবেন বলে আমার বিশ্বাস। তার মুক্ত জীবন, খামখেয়ালি আচরণ এবং শুধুমাত্র নিজভাবনা দর্শকদের বিরুক্তও করতে পারতো! কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। আমরা তার এই চরিত্রকে বাস্তব জীবনেও যেন অনেক পছন্দ করি, মন থেকে বিশ্বাস করি আর হয়তো মনের ভুলে কখনো কখনো বলতে থাকি, ইশ্! আমি যদি জ্যাক স্পারো হতে পারতাম!

আবার কখনো কখনো মনে হয় রুপকথা তার জায়গায় থাকুক, সেখানেই তাকে ভালো মানায়; বাস্তব জীবনে নয়।

প্রথম যখন তার সাথে আমাদের পরিচয় হলো ঠিক তখন আমরা হয়তো একটু সময় নিচ্ছিলাম। হাজারহোক গল্পের নায়ক বলে কথা- একটু নামীদামী জাহাজে নামীদামী পোষাকে গল্পে অবতরণ করলে আমাদের ব্যাপারটা সহজভাবে নিতে সুবিধে হত। কিন্তু ইনি গল্পে প্রবেশ করছেন “ব্ল্যাক পার্ল” নামের একটি ক্ষুদ্র একটি জাহাজের ক্যাপ্টেন হিসেবে, আর বেশভূষা যা নিয়েছেন তা অবাক করে দেবার মত। তবুও এই জীবনটা নিয়ে ক্যাপ্টেন জ্যাক স্পারো বেশ মুগ্ধ। কিন্তু সে জীবনকে দ্যাখে অন্য আঙ্গিকে। এবং বিশ্বাস করে একদিন সেই জীবনটা সে কিনে নিতে পারবে। সে যেন সদাপ্রস্তুত, লজ্জাহীন, বাচাল এবং যে কোন মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করতে তার কোনো দ্বিধাদন্দ নেই। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার করছি, আমি জ্যাক স্পারো চরিত্রকে ভালোবাসি কিন্তু সবসময় তাকে পছন্দ করা আমার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সে মোটেই একজন ভালো মানুষ নয় শুধু সময় সময় তার ভালোমানুষী চোখে পড়ে। হায় খোদা! কিন্তু সে যে যথেষ্ট অদ্ভূত, যে লিখতে লিখতেও আমি রীতিমত হাসছি। একটা ডায়ালগ মনে পড়ে গেলো,

“দ্যাখো! লর্ড বলেছে, সে এলিজাবেথকে বিয়ে করবে। সে তার কথা রাখছে। আমি বলেছিলাম আমি তোমাকে এখানে আসতে সাহায্য করবো। আমি আমার কথা রেখেছি। তুমি বলেছিলে যে, তুমি এলিজাবেথের জন্য তোমার জীবনটাও দিয়ে দিতে পারো। মোটকথা আমরা সবাই এক কথার মানুষ।
এলিজাবেথকে ছাড়ো। সে তো মেয়ে মানুষ।”

হয়তো বাড়ি থেকে আমাদের মা বলে দিয়েছেন, জীবনটা জ্যাক স্পারোর মত খামখেয়ালি রুপে কাটানোর জন্য অনেক ছোট কিন্তু বিশ্বাস কোরো তুমি এই জীবনে একঘেয়েমির কোন স্পর্শ পাবে না। জ্যাক স্পারো একজন ধূর্ত ব্যক্তি এবং এমন জীবন গল্পে সে বিশ্রামহীনভাবে আগ্রহী কারণ এই খেলা শেষ হবার নয়। সে সবসময় বিশেষ কোন কিছুর পেছনে লেগে থাকে যেখানে তার নিজের কোনো লাভ রয়েছে। কিন্তু সে যখন এই খেলাটা খেলে তখন সে তার নিজের স্টাইলে খেলে থাকে, যা সত্যিই হাস্যকর, রোমাঞ্চকর এবং একইসাথে অনেক মজার। এটা সত্যিই তাকে দেখতে আমাদের ভালো লাগে কিন্তু তার চরিত্রকে বাস্তব জীবনে টেনে আনলে সেটাকে পাগলামী ছাড়া আর কিছু বলা যাবে না হয়তো। আমার আশ্চর্য লাগে, কীভাবে গিবস্ এবং তার সবচেয়ে পুরনো বন্ধু বুটস্ট্রাপ তার সাথে রয়েছে এতটা বছর ধরে। আবার অন্যদিকে আমার মনে হয়, জ্যাক পাগল নয় শুধুমাত্র যখন ডেভি জনসের লকারে আবদ্ধ থাকে সেই সময়টা বাদে। সে একজন কৌশলী, তবে আরো সোজা করে বলতে গেলে বলতে হয় ঠক। কারণ একজন পাগল মানুষের জন্য একজন সাধারণ মানুষের অসতর্কতা থাকে পাশাপাশি আবার ভয়ও কাজ করে। আর জ্যাক স্পারো এই অসতর্কতা ও ভয়কে কাজে লাগিয়ে তার নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করে নেয়। সময় সময় সে ভাঁড়ের মত অভিনয় করে। অবশ্য এটা তার কাছে কোনো বড় একটা বিষয় নয়। কারণ সে অনেক বেশি ফোকাস করে তার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যকে নিয়ে। আবার মনে হয় এটা স্রেফ কৌতুহল যা ক্রমাগত জ্যাক স্পারো চরিত্রকে সামনের দিকে চলার জন্য রসদ জোগায়।

জ্যাক তার খ্যাতিকে খুব ভালোবাসে। যখন নরিংটন বলছিলোঃ আমার শোনা মতে সবচেয়ে জঘন্যতম জলদস্যু। তখন জ্যাক উত্তর দিয়েছিলোঃ কিন্তু তুমি আমার নাম শুনেছো। আবার জ্যাক স্পারো এর চেয়ে গিবস্ একজন ক্যাপ্টেন হিসেবে বেশি কমান্ড দিচ্ছে। সুতরাং একটা পয়েন্ট দাড়াচ্ছে, জ্যাক না ভালো একজন জলদস্যু, না ভালো একজন ক্যাপ্টেন। অদ্ভূত ব্যাপার হলো সে যে কাউকে খুন করতে পারে শুধু বারবোসা বাদে। প্রত্যেকটা গল্পেই সে ফুরিয়ে যাচ্ছে নিজেকে জাল থেকে মুক্ত করে বা সমস্যা থেকে উত্তরণ পেয়ে। স্বাধীনতা-ই হলো জ্যাক স্পারোর জন্য সবকিছু। সে নিজের প্রয়োজনে যে কাউকে ইচ্ছে মত ব্যবহার করতে পারে, মিথ্যে আশ্বাস দিতে পারে এমনকি প্রয়োজনে খুনও করে ফেলতে পারে। আবার অন্যদিকে দর্শকের মাথা ঘুরাতে পারে এটা ভেবে যে, চিরজীবী হবার জন্য এক বিশাল সুযোগ সে হাতছাড়া কেন করলো! তাই এই চরিত্রটি যথেষ্ট জটিল এবং দর্শকদের মাথা চিবিয়ে খেতে সক্ষম। সে বাচ্চামী রকমের স্বার্থপর এবং সোজাসাপ্টা ম্যানুপুলেটিভ। তবে কি জ্যাক স্পারো তার কম্পাস নিয়েই শুধু মাথা ঘামায়! এবং শুধু এটার দিকনির্দেশনা-ই মেনে চলে! কারন ক্র্যাকনদের হামলায় বিপদে পড়লে সে পালিয়ে সেফ-বোটে চলে যায় আবার কম্পাস দেখে তার হয়তো মনে হয় ফিরে যাওয়া উচিত এবং সে ফিরেও আসে। আর এলিজাবেথ! এলিজাবেথ কি তার হৃদয় স্পর্শ করতে পেরেছিলো? তাহলে জ্যাক পরবর্তীতে কোন আগ্রহ দেখালোনা কেন?

সর্বশেষে, আরো একটা সন্দেহযুক্ত বাক্যে লিখে আজ শেষ করছি। আর তা হলো, জ্যাক কি সবকিছু আগে থেকেই জানতো! না কি পরিস্থিতিতে পড়ে গেলে ওর মাথাটা কাজ করা শুরু করে দেয়!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:১১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×