স্কুলের খুব কাছের বন্ধুটিকে আজ আর কাছের মনে হয় না। চা বিক্রেতা তো!
খুব বয়েসও হয়নি, বুড়োও হইনি। কিন্তু লোকে বলে, আমি না কি এখন বড় হয়ে গেছি। মানে গায়ে গতরে আর কি!
খোশ মেজাজে কলেজের বন্ধুটির সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে কত সিগারেট ফুঁকেছি। আজ তার স্ত্রী আছে, সংসার আছে। খুব ব্যস্ত।
আমি "হ্যালো..." বলে চিৎকার দিলাম। পেছনে ফিরে তাকাতেই বললো, "বন্ধু, বাসায় যেতে হবে। বাজারটা বাসায় পৌঁছে দিতে হবে"।
খোশ মেজাজে একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধুর প্রশংসা করেছিলাম তখন সে আমাকে মতলবি ভেবেছিলো। আজ সময় সময় ফেসবুকে "হ্যালো... হাই... " লিখে ম্যাসেজ পাঠায়।
কত বন্ধুত্ব ভাঙলো, আর কত শত্রু বন্ধু হলো এত হিসেব রাখার মতন আলাদা সময় হাতে নেই, কিন্তু বোঝা যায়। বোঝা যায়, আমি আজকাল খুব কম সময় দেই ওদের।
সমস্যা বেশি হলো তো তখন, যখন ওরা বিপদে পড়লো। আড্ডাটা এখন নির্ধারিত হাতেগোনা কিছু মানুষদের সাথেই হয়।
মুশকিল হলো, অল্প জীবনের এই দৌড়ে সবারই ট্র্যাক আলাদা-আলাদা হয়ে গেছে সেই কত আগে। এখন বন্ধুত্ব কম আমরা বেশ কিছু দলে বিভক্ত।
যেনো, একেকটা প্রিমিয়ার লিগ!
জাতীয় রাজনীতির প্রভাবও হতে পারে। নেই মতেরও মিল, তাই ব্রিটিশদের দেয়া মৃত প্রায় ট্রেনের মত ভাঙারি লাগছে সারাদিন।
পানসে হয়ে গেছে সম্পর্ক। টুম্পারও বিয়ে হয়ে গেছে। চায়ে আর বাঙালীয়ানার স্বাদ নেই।
বলছি ভালো, আমার বই দেখতে খুব মজা লাগে। আরেকজন হুট করেই বলছে, ধূর! আজকাল বাংলা বই কেউ দ্যাখে!
তোমার মত সরকারী, আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আমি উদ্যেক্তা হতে বললে খুব রাগ না! ঝাড়ার মতন জায়গাও পাও না।
কিন্তু এই জেতার নেশা যেমন আমার হয়ে গেছে, তেমন ঠিক ওদেরও। সম্পর্কের উপর হারা জেতার একটা ব্যাপার আছে না।
বাংলায় আজকাল "টক্সিক" শব্দ বেশি চলছে। তাই সম্পর্কে বটুলিনাম টক্সিন বিষের আর আলাদা প্রয়োজন হচ্ছে না।
ইচ্ছে হলে কাউকে অপদস্ত বা হেয় করা যাচ্ছে, এতে বেশ পাশবিক আনন্দ মেলে।
বিশ্বাস চিরিয়াখানায় আজ বন্ধক রাখা আছে, পারলে পাজামাটাও খসে নেওয়া যায় কিনা কেবল সেটা বাকি আছে।
শব্দচয়নের সৃজনশীলতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর আস্তে-ধীরে সম্পর্কের প্রতি টানও হারিয়ে যাচ্ছে।
একজন হঠাৎ ডাক দিয়ে বললো, "প্রতারণাও ঠিক মতন করতে পারিস না?" আমি বললাম, "আমি দেখতে কিছুটা আমার বাবার মতন না?"
তাই কেউ কেউ হুট করেই হারিয়ে যায়, রোদের তীব্রতায় ফাঁকা মাঠে জল যেমন শুকিয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১১:০১