somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

স্টার্ট-আপ: আমার বন্ধু আবরার

০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্টার্ট-আপ শব্দটা যতটা সুন্দর লাগে শুনতে ঠিক ততটাই তেতো। এই বাংলায় “স্টার্ট-আপ” শব্দ থাকার কোনো বিশেষ প্রয়োজন নেই বলে মনে হয়। তার উপর ই-কমার্স। যেখানে মানুষ অফলাইনে এখন আর অন্য মানুষ কে বিশ্বাস করে না সেখানে আবার ই-কমার্স! একটু বেশি প্রত্যাশা করা হয়ে গেল না?

আবরার ইসলাম ও তুলি রায় দুজনে মিলে একটা চা-স্টলে চা খাচ্ছে। একে অপরের দিকে কেমন জানি বিরুক্তিভরে তাকাচ্ছে। দুজনের চলার পথ কীভাবে এক জায়গায় মিলিত হয়ে গেছে খুব সম্ভবত ওরা নিজেরাও জানে না।

“স্নাতক শেষে আমরা দু’জন মিলে শুধু এটুকু ঠিক করতে পারছিনা যে, এবার শুরুটা ঠিক কি দিয়ে করবো!” – চায়ের কাপ হাতে আবরার ইসলাম।

‘কি চুপ কেন! ম্যাডাম? অন্তত একটা আইডিয়া দিয়ে আমাকে একটু উদ্ধার করুন। প্লিজ… এই নীরবতা অসহ্য লাগছে। চারপাশটা কেমন সংকীর্ণ লাগছে বুঝতে পারছো তো!’ – তুলি রায় কে যেন একরকম শাসিয়ে যাচ্ছে আবরার। একসময় তুলিও উত্তর দিতে শুরু করলো…

- আবরার! শান্ত হও। আমরা কোনটা বাদ রেখেছি, তুমি-ই বলো? ই-কমার্স প্লাটফর্মে দীর্ঘদিন দু’জন মিলে কাজ করতে করতে এখন দেউলিয়া বনে। এছাড়া তোমার খাপছাড়া কী যেন এক ব্লগিং আইডিয়া ছিলো সেটাও মার্কেটে প্রায় ফ্লপ হবার পথে… আর তুমি আমার ওপর চেঁচাচ্ছ?

- পারলে আরো শোরগোল পাকাতাম… তোমার ডিসকাউন্টে রাখা টাকাগুলো কোথায় গেলো? কি যেন ডট কম? হ্যাঁ, মনে পড়েছে… ই-ড্যালি ডট কম কই? শোনলাম এই কোম্পানী নিজেই দেউলিয়া হয়ে পথে বসে গেছে।

- আবরার, এটা সময় নয় একে অন্যকে দোষানোর। এজন্য আমরা আরো সময় পাবো।

খানিকক্ষণের নীরবতা… ‘তুলি, আমার হাতে একটা আইডিয়া আছে’ – একরকম উল্লাস নিয়ে আবরার বলে উঠলো। ‘তোমার অবান্তর আইডিয়াগুলো কোনো একদিন যদি কাজে লেগে যায় সেটাই তো অনেক! যাইহোক, বলো? কি সেই আইডিয়া?’ – হালকা খোঁচা মেরে বললো তুলি।

অসম এই প্রেমে বিষম সব আইডিয়া নিয়ে আবরার ও তুলির পথে বসার হাল। নতুন স্টার্ট-আপ মানে আবার শুরু থেকে শুরু করা। লেগে যাতে পারে আরো কিছু সময়। অন্যদিকে সময় ব্যয় করার মত সময় নেই দুজনের হাতেই। শেষমেশ ঠিক হলো, ওরা একটা চায়ের স্টল দেবে। সিলেট থেকে চা’পাতা এনে কাজ করা হবে। উন্নত মানের এই চা স্টলে থাকবে দুটো কক্ষ। সাধারণ ক্লাস ও ভি.আই.পি ক্লাস। মানে সবাই নিজ নিজ বাজেটের মধ্যে এখানে চা খেতে পারবে এবং পাশাপাশি আড্ডাও দিতে পারবে।

তুলির কাছে প্রথম প্রথম এই আইডিয়া ভালো না লাগলেও একসময় আবরারের কথায় সায় দিলো। তাছাড়া রাস্তাও তো নেই! মাত্র পাঁচ লাখ টাকা দু’জনে মিলে যোগান দিতে পারবে। আর এই টাকায় একটা স্টার্ট-আপ বেশ রিস্কি বৈ কি।


দুই বছর পর…

সব ঠিকঠাক চলছে। নতুন এই আইডিয়া বেশ কাজে লেগে গেছে। চা তো রাস্তার মোড়ে মোড়ে পাওয়া যায় কিন্তু আবরার ও তুলির চা-স্টল মানে আলাদা ফ্লেভার। অনেকটা স্বল্পে বা সাধ্যে সবটুকু।

“বাংলার চা – শুধু চা নয়, একগুচ্ছ স্মৃতি” এই ব্রান্ড নামেই এতদিন চলছিলো। তারপর ক্রমান্বয়ে লাভাংশ থেকে একটা বড় রেস্টুরেন্ট শুরু করলো। ঠিক যেন বাংলা সিনেমার নায়ক জসিমের লটারি পাওয়ার গল্পের মত। রাতারাতি ওরা খুব ভালো করছিলো; ভালো চলছিলো।

কিন্তু রেস্টুরেন্ট মানে বিশাল ব্যাপার। এখানে শুধু আইডিয়া মানুষকে খাওয়ানো যায় না। সাথে সাথে কিছু বিশেষ বিশেষ খাবারও যোগান দিতে হয়। আবরার ও তুলি দু’জনে মিলে খাবার সার্ভও করে যাচ্ছে। যদিও চারজন মানুষকে নিয়োগ দেয়া আছে।

খাবার খুব ভালো না হলেও, সেবা ভালো হওয়ায় এই রেস্টুরেন্ট একদিন নাম কুড়ালো পুরো শহরে। সবার মুখে মুখে নাম উঠলো, “ডালভাত রেস্টুরেন্ট – ষোলআনা বাঙালীয়ানা” ।

অন্যদিকে বরাবরের মত অ্যাকাউন্ট দেখে রাখতো আবরার। ব্যবসা বড় হবার সাথে সাথে আরো কিছু মানুষকে নিয়োগ দেওয়া হলো। এখন আর আবরার এবং তুলি কে খাবার সার্ভ করতে হয় না। নতুন দায়িত্ব পেল তুলি। শাড়ি পড়ে ম্যানেজার হিসেবে সবাইকে স্বাগত জানানোর দায়িত্ব।

এরমধ্যে ওদের যে একটা সম্পর্কও আছে তা যেন ভুলে বসতে শুরু করেছে আবরার। আবরার নতুন নতুন টার্গেট তৈরি করছে রেস্টুরেন্টকে সামনে এগিয়ে নেবার। কিন্তু ঠিক ততোতাই তুলি তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে ভয় পেতে শুরু করলো।

এক পর্যায়ে রোজ রোজ আবরার ও তুলির মধ্যে ঝগড়া হতে আরম্ভ হলো। কখনো আবরারের পরিকল্পনা নিয়ে সমালোচনা করছে তুলি; আবার কখনো আবরার তুলির ম্যানেজার পদে অবহেলার জন্য। একদিন তো তুলি কে বলেই ফেললো, “তুলি, আমাদের এখন টাকা আছে। রোজ রোজ একই শাড়ি কেন?” ওদিকে তুলিও মুখেই বলে ফেললো, “কিছু টাকা হয়েছে, তাই এই হাল!”

ওদের এই রোজ রোজ ঝগড়ার কারণে আস্তে আস্তে মানুষ এই রেস্টুরেন্টে আসা কমিয়ে দিতে শুরু করলো। এক পর্যায়ে, রান্না ভালো না হওয়ার দরুণ দশজন কাস্টমারের ফুড পয়জন হলো। চারপাশে এই নিয়ে বেশ কানাকানি। আর এই সুযোগে অন্য রেস্টুরেন্ট যা-তা বলে এই রেস্টুরেন্টের সমালোচনা করতে লাগলো। হাজার হোক ব্যবসা… প্রতিযোগী কে ঠকানোর সেরা সময়। একদিন তো এক ফুড ভ্লগার এসে খাবারে “চুল” মিশিয়ে দিয়ে দিলো। ব্যস! ইন্টারনেট দুনিয়ায় এই ভিডিও ঘুরতে শুরু করলো আর মানুষ ওদের ওপর ছিঃ ছিঃ করা শুরু করলো।

কিন্তু ঝগড়া কমলো না। অভিমান বাড়তে বাড়তে একসময় দুজনের মধ্যে ঘৃণার সৃষ্টি হতে শুরু হলো। আবরারের কথা আর তুলি কানে নেয় না। তুলির পরিকল্পনাও আবরার গ্রহণ করা বন্ধ করে দিলো। একদিন এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক এই রেস্টুরেন্টে এসে এসব দেখে বললেন, “আরেহ্, দুজনে মিলে তো একটা রেস্টুরেন্ট সামলাতে পারছো না। সংসার সামলাবে কি করে! হ্যা?”

গত ক’দিন তুলি কাজে আর আসছে না। আবরারও রাগ করে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। ওদিকে বাকি পড়ে গেছে কাজের মানুষদের মাইনে। আবরারের সব সেভিংস আস্তে আস্তে কমতে শুরু করলো। এক পর্যায়ে, “ডালভাত রেস্টুরেন্ট – ষোলআনা বাঙালীয়ানা” স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেল।

সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে হঠাৎ আবরারের সাথে দেখা। ক্যাম্পাসে বসে চারপাশে কি যেন অবাক হয়ে দেখছে!
আমি বললাম: তুই ক্যাম্পাসে কি করছিস? আর তুলি কই?
আবরার একটু স্মিত হেসে: দেখছি! ঐ… ওখানে আমি আর তুলি বসতাম রোজ। কখনো কখনো মিষ্টি করে ওর মাথায় চুমু এঁকে দিতাম।
আমি: ঠিকাছে, কিন্তু স্মৃতি রোমন্থন কেন করছিস? আর তুলি কই?
আবরার: নেই… আমরা আর একসাথে নেই।
আমি: তুই ঠিক আছিস? আর তোর কাঁধে ব্যাগ কেন?
আবরার: হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি। এখনো আমার স্নাতকোত্তর বাকি আছে রে…

এরপর আস্তে আস্তে উঠে ক্লাসের দিকে চললো আবরার। বাকিটুকু আমার জন্য একরাশ রহস্য হয়ে রইলো। তাই ক্যাম্পাস স্টারদের অবস্থা দেখে নিজের ভবিষ্যত নিয়ে আজকাল খুব চিন্তা হয়… কি করি বলুন তো?



বিজ্ঞাপন নয়, আপনি চাইলে আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থেকে একবার ঘুরে আসতে পারেন: https://www.backspace-journal.com
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ৩:২০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাদ্রাসা শিক্ষা, বৈশ্বিক রাজনীতি, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


লেখাটির শুরুতে একটি ভূমিকা দেওয়া যাক। সর্বশেষ দেশে গিয়ে কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। উত্তরবঙ্গে, নিতান্ত অনুন্নত আমাদের সেই গ্রামে এতগুলো কওমি মাদ্রাসা হয়েছে দেখে অবাক হয়েছিলাম। আগে গ্রামে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চোখের জল

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪৬


সুদীর্ঘ ১৭ বছরের জমে থাকা
বিনম্র চোখের এক কোণে জল!
প্রকাশে এলো এই জনসমুদ্রে-
জনসমুদ্র তুলছে আনন্দাশ্রুর
ঢেউ- দেখছে নতুন ফুলের গন্ধ;
এ নৈঃশব্দের আর্তনাদ বুঝতে
হবে শুধু তোমাকে- আমাকে
গড়ে তুলতে হবে মনুষ্যের প্রণয়ে
সূর্য ভোর- যেখানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?



পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছরই বৃষ্টিপাত হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার কিছু দেশ এবং দক্ষিন আমেরিকার কিছু দেশ ও অঞ্চলে বছরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×