somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

আধুনিক দাসত্ব (Modern Slavery) এবং ঋণের ফাঁদ

৩০ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আধুনিক দাসত্ব (Modern Slavery) এবং ঋণের ফাঁদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় হলেও এ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হতে দেখা যায় না। বিষয়টি দুঃখজনক। এখন তো আমরা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ইউনিভার্সিটির ডিগ্রীও অর্জন করে ফেলেছি কিন্তু একটু কষ্ট করে কোন বই আজ আর তেমন হাতে নেওয়া হয় না।

For Example: ‘WhatsApp’ and ‘Facebook’ Universities are rocking and rule in our country.

আর এই সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সঠিক তথ্য খুব কম-ই খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু সত্যের সাথে কাটাকুটি খেলা এসব প্লাটফর্মে সবচেয়ে বেশি চলছে এবং এটি আমার মনগড়া কথা নয়। যাইহোক, আধুনিক দাসত্ব (Modern Slavery) এর মোটাদাগে কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করবার চেষ্টা করছি,

১. এই ‘Hidden Crime’ ঘটেই চলেছে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে। কোনো দেশ এই অপরাধ থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়। কিন্তু এই অপরাধ চোখে দেখতে পাবেন না; মানে স্পষ্ট অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নিতে হিমশিম খেতে পারেন।
২. ব্যক্তিগত এবং আর্থিক প্রয়োজনে কাউকে জোর করা, শোষণ করা, বাধ্য করা বিভিন্ন উপায়ে।
৩. ‘Human Trafficking’ এর মধ্যে অন্যতম। তবে আধুনিক দাসত্ব নিজে থেকে শোষিত হবার জন্য নিজের বলি যেন নিজেই দিচ্ছেন ফলতঃ এই অপরাধ সনাক্তকরণ প্রায় এখন অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি ঘটতে পারে শোষিতের নিজ দেশের মধ্যেই, অথবা বিদেশে।
৪. এমন কোন মানুষ নাই যিনি এটি হতে পুরোপুরি মুক্ত। তবে যিনি দরিদ্র, তূলনামূলক অসহায়, দূর্বল তার সাথে বেশি ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
৫. আধুনিক দাসত্ব বেশ কিছু সিরিয়াস ক্রাইম ফর্মে যুক্ত,

(ক) Human Trafficking
(খ) Forced Labour
(গ) Debt Bondage
(ঘ) Commercial Exploitation
(ঙ) Sex Exploitation
(চ) Domestic Servitude

বর্তমান পৃথিবীতে লাখ লাখ মানুষ এই ভোগান্তির শিকার। তাদের মানবাধিকার নিয়ে শঙ্কিত পুরো বিশ্ব। উল্লেখ, এই আধুনিক দাসত্বের পুরো ‘Context’ এর পরিধি বিশাল। আমি শুধু ‘Debt Bondage’ বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করবো। এজন্য সাহায্য নিচ্ছি জাতিসংঘের প্রকাশিত একটি সম্পূরক আর্টিকেল সহ আরো কিছু রিসার্চ পেপার।

ঋণের বন্ড/সিকিউরিটি (Debt Bondage) উপরিভাগ থেকে দেখতে খুব সাধারণ মনে হতে পারে। লোন ভিত্তিক যে কমার্শিয়াল সিস্টেম আমাদের সমাজে প্রচলিত তা অনেকটা দাসত্বের দিকে ঠেলে দেয়। আপনি হয়তো ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বাড়ি করেছেন, আত্মীয়ের কাছে লোন নিয়ে গাড়ি কিনেছেন, অথবা কোন এনজিও থেকে টাকা উত্তোলন করে শিক্ষার খরচ চালাচ্ছেন।

প্রশ্ন হলো, এর বিপরীতে আপনি কি রাখছেন? মানে লোন কি দিয়ে শোধ করবেন? এখন যদি এই সমস্ত কিছু চালিয়ে নেওয়া খুবই জরুরী হয় এবং এই লোনের বিপরীতে খোদ নিজেকেই রাখেন সিকিউরিটির জন্য তাহলে হতেও পারে আপনি স্থায়ী দাসত্বের দিকে কিন্তু এগুচ্ছেন।

এখন এই লোন কোন কারণে পরিশোধ করতে পারছেন না। নিজস্ব কোন সম্পদ/সম্পত্তিও নেই। তাই যেহেতু এই লোনের সিকিউরিটি আপনি নিজে সেহেতু আপনি লোন দাতা কর্তৃক শর্তাবলী পালনে বাধ্য। তিনি চাইলে আপনাকে গাধার মত খাটিয়ে নিতে পারেন, অমানুষের মত আপনার উপর অত্যাচার করতে পারেন।

মধ্যপ্রাচ্যে এই ধরণের বিষয় একটু বেশি প্রচলিত, এক ভিডিওতে দেখলাম এক ব্যক্তি টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাকে বাংলাদেশি এক লোক মরুভূমি এলাকায় চেইন দিয়ে বেঁধে রেখেছেন। অবশ্য খুব বেশি সময় ধরে ঐ ভিডিওটি দেখার সাহস হয়নি।

এই ফাঁদ পূর্বে থেকেই তৈরি করা থাকে। লোন দাতা জানেন যে, আপনি এই লোন পরিশোধ করতে পারবেন না। অন্যদিকে আপনিও ইচ্ছেমতো ব্যয় করতে থাকেন। ধরুন, লোন দাতা আপনাকে মোট লোন দিয়েছে ২০০ ডলার। এখন প্রত্যেকদিন আপনি ২৫ ডলার করে ব্যয় করছেন আপনার প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে। লোন দাতা আপনাকে আরো লোন দিচ্ছে, আপনি আরো ব্যয় করেই যাচ্ছেন…

এক পর্যায়ে মোট অঙ্কের পরিমাণ চক্রাকারে সুদ সহ বিশাল হয়ে সামনে দাঁড়ায়। আপনি এই পাহাড় পরিমাণ ঋণ দেখে পথে বসে যেতে পারেন, এমনকি আপনার যাবতীয় সম্পদ বিক্রয় করতেও বাধ্য হতে পারেন।

উনিশ এবং বিশ শতকে এই ধরণের লোন পরিশোধে দাসত্ব দেখা গেছে পরের প্রজন্ম পর্যন্ত। মানে দাদু লোন নিয়েছিলেন এখন সেটা মেটাতে নাতি কায়িক শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। হোক সেটা চাইল্ড লেবার। বাংলায় জমিদারি প্রথার ইতিহাস পড়লে দেখবেন, কিছুটা এই মডেলের। অথবা ‘জোঁক (আবু ইসহাক)’ গল্প যদি পড়েন তাহলে খানিকটা টের পাবেন যে ‘ফোর্সড লেবার’ কি জিনিস!

প্রবাসীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো ভয়ংকর। কারণ এখানে যে সিন্ডিকেট এবং দালালী করণ যুক্ত আছে তা বিভৎস। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে আপনার সমস্ত ডকুমেন্ট ইস্যু ক্লিয়ার করতে হয়তো সর্বোচ্চ ২ লাখ লাগতো কিন্তু লাগছে ৬-৮ লাখ টাকা পর্যন্ত।

কীভাবে? কারণ একাধিক ফি বা অযাচিত ফি এর সাথে যুক্ত থাকে। এবং ব্যক্তি কে বাধ্য করা হয় নির্দিষ্ট সময় পরপর তা পরিশোধ করবার। একসময় তিনি যে দারিদ্রতা থেকে নিজ পরিবারকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন সেই খোদ তিনিই খুব বাজে ভাবে এই ফাঁদে ফেঁসে যান।

তালিকায় শীর্ষে আছে ভারত (‘Farzi’ ওয়েব সিরিজ দেখবার অনুরোধ) তারপর ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং নেপাল। এই দেশগুলো থেকে সস্তায় লেবার পাওয়া যায়। ফলে উন্নত বিশ্ব সহ মধ্যপ্রাচ্যের আরব পতি এদেরকে ভয়ানক শোষণ করেন। শুনে অবাক হবেন, সৌদি আরবের মত দেশেও সেক্সের জন্য বাংলাদেশ, ভারতের মহিলা কর্মীদের ফোর্স করা হয় (গালি দেবার পূর্বে একটু গুগল সার্চ দিয়ে দেখুন)।

এছাড়া হোয়াইট আমেরিকান রা আফ্রিকান-আমেরিকান দের সাথেও প্রচন্ড বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন, করছেন। কারণ তাদের প্রয়োজনী লেবার নেই, তাই কিছু লোন/বন্ড সোজা বাংলায় বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে এককালীন শ্রম কিনে নিতেন যা কিনা এই আধুনিক দাসত্ব কে রিপ্রেজেন্ট করে। যদিও পরবর্তীতে আমেরিকা কিছু আইন-কানুন নিয়ে এসেছে; তবে সেটুকু যথেষ্ট বলে খোদ আমেরিকান রা-ই স্বীকার করেন না।


প্রশ্ন আসতে পারে, দেশের মধ্যে থাকা কোম্পানিতে কি ‘Debt Bondage’ সচল?

হ্যাঁ, সচল। কীভাবে সচল? যদি কোনো কোম্পানি চাকুরী দেবার বিপরীতে আপনার জব সুইচ করতে না দেয় এবং এজন্য প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট, ডকুমেন্ট জমা রাখে, নির্দিষ্ট কন্ট্রাক্টে সাইন করিয়ে নেয় নির্দিষ্ট সময় ওখানেই কাজ করতে হবে বিবেচনায় তাহলে বুঝে নেবেন এটি একটি ভয়ংকর অপরাধ, আর আপনি দাসত্ব বরণ করতে চলেছেন।

এমনকি বর্তমানে নাইন টু ফাইভ পিএম চাকুরীও ঋণের ফাঁদ তৈরি করছে যাতে করে আপনি এক জীবন ঐ একই কোম্পানি বা সংস্থায় বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে বাধ্য হোন।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি একই ধরণের জব সুইচ করতে গেলেই কিছু ট্রান্সক্রিপ্ট/ডকুমেন্ট আটকে দেওয়া, অথবা পূর্বে থেকেই একটি বড় অঙ্কের টাকা হাতে ধরিয়ে দেওয়া যাতে সেটা পরিশোধ করতে অনেক সময় লেগে যায়। সর্বশেষ, মাইনে বৃদ্ধি করা এবং ভয় দেখানো।

কারণ একটি প্রতিষ্ঠান তার কর্মী (যদি ভালো হয়) সহজে হারাতে চান না। এবং এই ফাঁদ উপরিভাগ থেকে দেখলে পরিষ্কার ও স্বচ্ছ মনে হতে পারে; কিন্তু আসলে সে জল ঘোলা। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত এক ধরণের দাসত্ব দেখা গেছে। মনে করা হয় সেটারই আধুনিক সংস্করণ হচ্ছে এটি।

আমাদের ভারতীয় সমাজে মাত্র তিনবেলা খাবারের বিনিময়ে এক জীবন কাজ করে গেছেন এমন উদাহরণের অভাব নাই। কিন্তু ভারতীয় ইতিহাসে মুসলিমদের ইতিহাস যদি ইতিবাচক হিসেবে নেওয়া হয় তাহলে দেখবেন, দাসত্ব নয় উল্টো ব্যবসায়ী হওয়ার মানসিকতা এঁদের মধ্যে ছিলো।

হাল আমলের যে কলোনাইজড কালচার চাকুরী করা কে প্রোমোট করছে তা ঘৃণিত এবং আমরা ভারতীয়/মুসলিম হিসেবে আমাদের ইতিহাস এবং সংস্কৃত থেকে বিচ্যুত।

Image Credit: University of Technology Sydney
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ১২:১৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×