somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

কোয়েশ্চেন ইন ডার্ক সাইকোলজি

৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সতর্কতা: অনুগ্রহ করে ডার্ক সাইকোলজি তে আলোচিত বিষয়গুলো কারো প্রতি প্রয়োগ করবেন না। এতে করে উক্ত ব্যক্তি ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারেন এবং এজন্য আমি কোনো দায় নিতে রাজী নই। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আপনি নিজে সচেতন থাকুন এবং কাছের মানুষদেরকেও সচেতন রাখুন।

'প্রশ্ন' না করলে অজানা থাকে অনেককিছু কিন্তু 'প্রশ্ন' এক ধরণের হুমকিও বটে। 'প্রশ্ন' এক ধরণের হাতিয়ার। একটি রাষ্ট্র, একটি প্রতিষ্ঠান, একজন ব্যক্তি সবসময় 'প্রশ্ন' কে স্বাগত জানায় না। 'প্রশ্ন' আমাদেরকে সত্যর দিকে নিয়ে যায়। ‘প্রশ্ন’ আধিপত্যবিস্তারে সবচেয়ে বড় বাধা। 'প্রশ্ন' ভাবাতে বাধ্য করে, চিন্তায় নিমজ্জিত হতে বাধ্য করে। ফলে চিন্তাশীল ব্যক্তি বা সমাজ আরো বেশি দায়বদ্ধ, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সৃজনশীল হয়ে গড়ে ওঠে।

ডার্ক সাইকোলজিতে 'প্রশ্ন' ভয়ংকর; এই ক্যানভাসে 'প্রশ্ন' এক ধরণের হাতিয়ার। এমন কি হয়? যদি এমন কেউ থাকে যার সাথে কথা বলায় কমফোর্টেবল নন তাহলে আমার জন্য বিষয়টি বুঝাতে আরো সুবিধে হত।

সাধারণত এমন ব্যক্তি প্রশ্ন করেন বক্তার কাছে থেকে গোপন তথ্য, তার ভয়, ইনসিকিউরিটি সম্পর্কে বিশদ জানার জন্য। পরবর্তীতে তিনি এই সমস্ত কিছু তার টার্গেট কে ব্যবহার অথবা, ব্ল্যাকমেইল করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। এমন হতে পারে, এই ব্যক্তি আপনার নিকটতম কেউ, সহকর্মী বা একজন বন্ধু৷ অনুগ্রহ করে নিজের অনুভূতি, কিছু নিয়ে কোন প্রকার ভয় বা নিজের কোনো গোপন তথ্য শেয়ার করবেন না।

কিছু প্রশ্ন এরকম আছে যে প্রশ্নগুলোতে প্রশ্নকর্তা জেনেশুনেই আপনাকে ছোট করেছেন। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক,

“তুমি এত সেন্সিটিভ কেন? মজাও নিতে পারো না?”

প্রথমে আপনাকে সেন্সিটিভ তকমা দিয়ে দিলো তারপর প্রশ্নের কেন্দ্র ঘুরালো। আবার ঐ জোকস্ এর মধ্যে এমন কিছু কথা বললো তাও মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে। জীবনে কি কখনো এমন কিছু ঘটেছে?

এবার আসি, র‍্যাপিড ফায়ার কোশ্চেন ইন ডার্ক সাইকোলজি তে। এখানে আমি বেশকিছু প্রশ্ন করছি, শুধুমাত্র পড়ে দেখুন আপনার কেমন অনুভব হয়,

১. আচ্ছা, তুমি তোমার মৃত্যুর তারিখ অথবা মৃত্যুর কারণ এই দুটির মধ্যে কোনটা জানতে চাইবে?

২. যদি তোমার বাবা-মায়ের মধ্যে একজনকে হত্যা করতে বাধ্য হও তবে তুমি কাকে হত্যা করবে?

৩. সেক্স করার সময় সবচেয়ে বাজে কি ধারণা মাথায় কাজ করে?

৪. তুমি কি কখনো মানুষের রক্তের স্বাদ গ্রহণ করেছে? কেমন লেগেছে?

৫. সিরিয়াল কিলার সম্পর্কে তো অনেক শুনেছো কিন্তু কার হত্যা করার স্টাইল সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর লেগেছে?

৬. কীভাবে আপনি মৃত্যুবরণ করতে চান? প্রচুর রক্তাক্ত হয়ে নাকি বিশাল আগুনের স্তুপে পুড়ে?

৭. যদি কোনো দ্বীপে একটি জাহাজ আটকে যায় যে জাহাজে তুমি সহ ১০০ জন যাত্রী আছে। আর ঐ দ্বীপে আপনার জন্য মাত্র দুটি উপায় থাকে,
(ক) মানুষের মাংস খাওয়া এবং বেঁচে থাকা
(খ) ক্ষুধার্ত হওয়া এবং মরে যাওয়া
তুমি কোনটি বেছে নেবে?

৮. যদি তোমার ভালোবাসার মানুষ একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটায় তবে কি তুমি তাকে বাঁচানোর জন্য উক্ত হত্যাকাণ্ডের সব প্রমাণ মুছে ফেলবে? নাকি তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করবে?

৯. তুমি দিনে ক'বার মৃত্যু নিয়ে চিন্তা কোরো?

১০. তুমি কি কখনো হন্টেড (ভূতুড়ে) বাড়িতে থেকেছো? কেমন লেগেছে?

১১. যদি কেউ দরজা ভেঙ্গে তোমার বাড়িতে প্রবেশ করে তবে তুমি নিজেকে রক্ষার্থে কি করবে?

১২. ধরো, তুমি আত্মহত্যা করতে চাও। কেমন হবে যদি তুমি একটি রানিং বাস বা ট্রাকের সামনে লাফ দাও?

এই তালিকা অনেক দীর্ঘ করা যায়। এসব প্রতিটি প্রশ্নে আপনার মধ্যে ভয়, Vulnerability, Insecurity খুঁজে বেড়ানো হতে পারে। এসব হিউমার কে 'ডার্ক হিউমার' বলে যা 'ডার্ক সাইকোলজি' তে প্রেজেন্ট করার সমূহ সম্ভাবনা আছে।

প্রথমত, এইসব প্রশ্ন এবজার্ড (অর্থহীন) কিন্তু যদি প্রশ্ন পড়েই অনুভূত হয় আপনি ভালো অনুভব করছেন না তাহলে ভাবুন প্রশ্নকর্তা এই সুযোগে আপনার থেকে কি কি তথ্য সরাসরি পেয়ে যেতে পারে। অনেকটা অনলাইন হ্যাকিং এর মত করে আপনার মনের সাইটে দূর্বলতা খুঁজে দেখা এবং ঐ দূর্বলদিক দিয়েই মনের সাইটে অনুপ্রবেশ করার মতন।

এই ধরণের প্রশ্নকর্তা টার্গেট অনুযায়ী বান্ডিল-বান্ডিল প্রশ্ন সেট করেন এবং টার্গেটের আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মান, আত্মপ্রত্যয় ধূলোর সঙ্গে মিশে দিতে পারেন। এমনকি আপনাকে ‘Nihilistic' ব্যক্তিত্বে রুপান্তর পর্যন্ত করতে পারেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার এক কাছের বন্ধু আমাকে জিগ্যেস করে বসে,

“এমন কিছু তো করছিস না যা এই ডিপার্টমেন্টের নাম পর্যন্ত খারাপ করে?”

বন্ধুটি আমার ফেসবুক এবং ব্যক্তি বন্ধু তালিকায় এখনো আছে। কিন্তু একবার ভাবুন তো, আমি যদি খারাপ কিছু করেই ফেলি তা একান্তভাবেউ উক্ত ব্যক্তির দায়, পুরো ডিপার্টমেন্ট তার জন্য দায় কেন নেবে? বা ডিপার্টমেন্ট চলে কিছু ডিসিপ্লিনের মধ্যে দিয়ে এখন মাস্টার্স শেষে জীবনে ব্যর্থ হলে ডিপার্টমেন্ট সেই বার্ডেন কোনোক্রমেই গ্রহণ করবে না। কারণ আমাদের শিক্ষক যেটুকু পেরেছেন সেটুকু শেখানোর ও বুঝানোর চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু এখানে আমার আত্ববিশ্বাসে ঝামেলা এসেছিলো। মনে হতে শুরু হয়েছিলো যে, আমার এই প্রথাবিরুদ্ধ কাজ হয়তো ডিপার্টমেন্টের সুনাম নষ্ট করবে; যা বাস্তব চিত্রে কোনোক্রমেই হতে পারে না। একটি ডিসিপ্লিন এত মানুষকে মনে রাখতে এমনিতেও সক্ষম নন।

'প্রশ্ন' আপনার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কে নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত করতে সক্ষম। আপনার অনুভূতি কে বাজে ভাবে বিগড়ে দিতেও সক্ষম। এবং আপনার পুরো ব্যক্তিত্বের নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে পারে অন্যের হাতে। কারণ এমন প্রশ্নকর্তা টার্গেট কে এমনভাবে পেচিয়ে রাখেন যে, এরা নিজের জীবনে নিজেই ভিকটিম হয়ে পড়েন; যা খুবই করুণ ঘটনা।

‘12th Fail' সিনেমায় মনোজ কুমার শর্মার হাত যখন তার প্রেমিকা ধরলো তখন তার বন্ধু খুব বাজেভাবে মনোজ কে অপমান করলো। বেশ কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো। বললো, “UPSC ক্লিয়ার করতে না পারলে এমন মেয়েরা কি আর পাশে থাকে?” খেলা ঠিক এখানেই।

মনোজের বন্ধু তার ডার্ক হিউমার কে এত সুন্দরভাবে ভালোদিকে প্রভাবিত করেছেন যা মনোজের প্রেমিকার ইগো কে ভয়ানক হার্ট করেছে। পুরো গল্পে মেয়েটি মনোজ কে নিয়ে যতটা না ভেবেছে তারচেয়ে বেশি ভেবেছে ঐ কতিপয় প্রশ্ন নিয়ে এবং বলতে বাধ্য হয়েছে যে, “তুমি UPSC তে না টিকলেও আমি তোমার সাথেই থাকবো।”

এখন ভাবুন, ঐ প্রশ্নগুলো যদি অন্যদিকে প্রভাবিত করা যেত তাহলে কি ভয়ংকর দশা ঘটতো মনোজের জীবনে! ওমন বন্ধু যেমন অনেক উপকারের তেমনি যদি ওরা চায় তাহলে আপনার জীবনে সামনে পা দেবার রাস্তায় ফুলস্টপ বসিয়ে দেবেন তাও মাত্র কতিপয় প্রশ্ন দিয়ে।

প্রশ্ন করুন, করতেও দিন। কিন্তু প্রশ্নটা নিয়ে একটু ‘Brainstorming’ করুন। জানতে বা অজান্তেই আমি-আপনি ফেঁসে যাচ্ছি না তো হাজারো প্রশ্নের ঝুট-ঝামেলার মধ্যে!

ছবি: Eg's Philosophy (YouTube Channel)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:২২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×