somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক এবং নাট্য পরিচালক সহ - এই বহুমুখী পেশার সাথে জড়িত থাকলেও, আমার মূল পরিচয় একজন গল্পকার।

সরকারী চাকুরী বনাম উদ্যোক্তা

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৪:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আপনি স্নাতক সম্পন্ন করেছেন এরপর স্নাতকোত্তরও সম্পন্ন করলেন কিন্তু এর পরবর্তী ধাপ কি? পাড়া-মহল্লায় যে গুঞ্জন, যে প্রত্যাশা, যে আলোচনা-সমালোচনা, যে পরোক্ষ চাপ আপনি সর্বপ্রথম গ্রহণ করতে একরকম বাধ্য হবেন সেটা হলো, “আপনি কি করেন?” অথবা, “আপনি কি চাকুরী পেয়েছেন?”

দেখুন, এই প্রশ্নটিকে উড়িয়ে দেবেন না। এই প্রশ্নটিকে শ্রদ্ধা করুন। কেন? কারণ চাকুরী যখন থাকে তখন নির্দিষ্ট কিছু সময় ধরে কাজ করা, একটা শুক্রবার এবং কারো কারো জন্য শুক্রবার ও শনিবার ছুটির আনন্দের তুলনা হয় না। এছাড়া ঈদ/উৎসব/সরকারী ছুটিতে বোনাস। এবং সর্বশেষ, মাস শেষে মাইনে আপনার জীবনকে কিছুটা হলেও সহজ করে তোলে; অনস্বীকার্য।

এছাড়াও (সরকারী) চাকুরীর ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠানের কতটুকু লাভ হলো বা ক্ষতি হলো সেটাও দেখার বিষয় খুব কম থাকে। যেমন ধরুন, বাংলাদেশ রেলওয়ে। আপনি মনে করতে বেগ পেতে পারেন, সর্বশেষ কবে এই প্রতিষ্ঠান থেকে লাভ এসেছে? মানলাম, এটি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এবং সরকারের দায়িত্ব আছে জনগনের প্রতি কিন্তু ভীষণ ক্ষতিতে কোনো প্রতিষ্ঠান অদৌ কি চলতে পারে? জানিনা।

একই সাথে এই জীবন এবং একটি সুন্দরতম রুটিন জীবনের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নাই। সেটা কিন্তু যারা চাকুরী করছেন তারা আমার চেয়ে বোধহয় ভালো জানেন। কারণ, আমরা সবাই এটা করি। এখানে নতুন কিছুই নাই। এ যেন খুব পরিচিত নিয়তি। মানতেই হবে, পারতেই হবে। চাকুরী না পেলে ৩০ বছর বয়েস অবধি লড়াই চালিয়ে যেতে হবে, চাকুরী পেলে একটা বিয়ে করতে হবে, বাসা ভাড়া নেবার পর বাচ্চা নিতে হবে, বাচ্চা কে বড় করতে হবে, ওর জন্য কিছু সেভিংস এবং পেনশনের টাকা নিয়ে রিটায়ার্ড করতে হবে।

এ জীবনের নকশা/মানচিত্রের দিকে যদি খেয়াল করেন মানে একটু তলিয়ে ভাবেন তাহলে এ যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম কারাগার। না পেলেও পস্তাতেন, পেলেও পস্তাবেন। বিশেষ করে প্রথম প্রথম অফিস ইউনিফর্ম পরতে কার না মন চায় বলুন! তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু অফিসের পরিবেশ নিয়ে এবং আপনার ছবির উপরিভাগে দু’চার লাইন নিয়ে একটি স্ট্যাটাস! চারপাশে মানুষের আপনাকে নিয়ে গর্বের শেষ নাই।

কিন্তু ওর মধ্যেও কিছু মানুষ জীবনকে ভিন্ন অর্থ দিতে চায়। ওরা একটু জীবনকে ভিন্নভাবে দেখতে চায়। এরা সংখ্যা ঠিক ১০০ জনে কত জন হবেন? আমি সত্যিই ঠিক জানিনা। কিন্তু ২% শতাংশের বেশি হবেন বলে আমার মনেও হয় না। আমরা এদেরকে ‘উদ্যোক্তা’ বলি। মানে এরা সমাজের ঐ সমস্ত মানুষ যাদেরকে সমাজ দু-চোখে দেখতে পারেন না। ‘উদ্যোক্তা’ শব্দটি দিনদিন বাংলাদেশে একটি গালি তে পরিণত হয়েছে। ‘উদ্যোক্তা’ নাম করে মানুষের টাকা লোপাট করা লোকের তো অভাব নাই। সর্বশেষ, মানুষের টাকা লোপাট করে হজ্জ্ব করার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে; এবং এরপর হয়তো মনে মনে গালি দিয়ে ফের নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি আমরা।

একাধিক সূত্র থেকে পাওয়া, বিশ্বব্যাপী ৯০% শতাংশ ‘উদ্যোক্তা’ সফলতার মুখ দেখতে পায় না। আর বাংলাদেশে এর পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। কিছু সূত্র মতে, প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে এখানে যেকোনো উদ্যোগ কোনো না কোনো কারণে মুখ থুবড়ে পড়ে। এখানে সর্বোচ্চ ১% শতাংশ উদ্যোক্তা সফলতা লাভ করেন তাও ভীষণ কষ্টে, পরিশ্রমে।

কিন্তু এরা আমার কাছে অনেক সম্মানের। কেন জানেন? আমার মনে হয়, এরাই হলো সিলেবাসের বাইরের মানুষগুলো। মুখস্ত রুটিন জীবনে এদের আছে তিক্ততা। একটু ভিন্ন কিছু, রুটিন জীবনের বাইরে একটি গল্প তৈরি করা এবং উক্ত গল্প কে মনেপ্রাণে প্রতিষ্ঠা করে এই পরিমাণ রিক্স ফ্যাক্টর বিবেচনায় নিয়ে, উচ্চ সুদের টাকা নিয়ে, একরকম জীবন বাজি রেখে সামনে পা দেবার জন্য একটা দুঃসাহস লাগে; জ্ঞানত যা সবার থাকে না।

যে সেক্টরে আপনি দেখছেন সম্ভাবনা শূন্য, হতে পারে এরা সেই সেক্টরে ভবিষ্যৎ দেখছেন। শুধু চিন্তার মধ্যে কিছু ভিন্নতা। মুখস্ত জীবনে সফলতা পেলে হাততালি পাওয়া যায়, আইডেন্টিটি পাওয়া যায়, সমাজে স্বীকৃতি পাওয়া যায়, কিন্তু একজন সত্যিকারের সফল উদ্যোক্তা এসবের একটিও কি পায়? সমাজ কি তাকে মেনে নেয়? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক বক্তব্যে বলছিলেন, “ওদের তো বিয়ে করতেও নাকি সমস্যা হচ্ছে, নিজের পরিচয় জিজ্ঞেস করলে দিতে পারছে না।” কিন্তু এই বলা পর্যন্তই তিনি থেকে গেলেন, আইডেন্টিটি আর মিললো না।

এদেশে আরো লাখো বেকার তৈরি হবে, নতুবা বিক্রয়কর্মী হয়ে উঠবে, অথবা, গার্মেন্টস কর্মী! কিন্তু এমন পরিবেশে আরো একজন সফল ‘উদ্যোক্তা’ হবার দুঃসাহস কেউ কি আর দেখাবে! চিন্তা করার প্রাকটিস কি বাড়বে? নাকি গোলামী থেকে আমার জীবনে দেখা এ চোখে হয়তো কারো মুক্তি আর মিলবে না, হয়তো আমারও না।

এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিলেবাস এত জ্ঞান ঝাড়ছেই বা কেন! শুরু থেকেই একজন সফল গোলাম/চাকর হওয়ার প্রাকটিস করালে আমার মনে হয় সেটা কয়েকগুণ ভালো হত!

ছবি: Jagoinvestor
Also Read it On: সরকারী চাকুরী বনাম উদ্যোক্তা
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৪:০৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×