প্রথম প্রথম মনে হয়েছে, “কই আমরা তো আক্রান্ত হই নাই!” তারপর বললাম, “কই আমি তো আক্রান্ত হচ্ছি না!” কিন্তু আমিও যখন আক্রান্ত হলাম তখন বুঝতে পারলাম প্রকৃত অর্থেই এমন একটি ভাইরাস বিদ্যমান এবং এর থেকে রেহাই মিলেনি আমাদের অনেকের।
প্রত্যেকদিন গণনা হতে শুরু করলো, “আজ কতজন মৃত্যুবরণ করেছেন?” ক্রিকেট ম্যাচের স্কোর যেমন খুব মনোযোগ দিয়ে আমরা দেখি ঠিক তেমনি দেখতে শুরু করলাম বিভিন্ন দেশে মানুষের মৃত্যুর ঢল। সর্বশেষ, প্রতিবেশী দেশ ভারতে যখন মানুষ অক্সিজেন না পেয়ে হাসপাতালের রাস্তায় কোনোভাবে হাঁটছে এবং একসময় ওখানেই পড়ে আস্তে আস্তে মারা যাচ্ছেন। এই ভিডিওগুলো আজও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে বিদ্যমান।
নাটকীয়ভাবে আমাদের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা পরিবর্তন হতে শুরু করলো। কেউ কেউ নিশ্চয় ভাবতে শুরু করে দিয়েছিলেন, “আমার হাতে আর বেশিদিন নাই!” এদেশ বাংলাদেশ, এদেশেও মানুষ মানুষের জানাজা পর্যন্ত পড়াতে ভয় পেতে শুরু করলো। একের পর এক চাকুরী হারাতে শুরু করলো। চারপাশে আর কোনো আড্ডা নাই, আলোচনা-সমালোচনা নাই, মানুষ বাড়িতে বসে বসে শুধু দিন গুনছিল এর থেকে কবে রেহাই পাওয়া যায়।
লকডাউন থেকে শাটডাউন শুরু করা হলো চারপাশে। একপাশে ডাক্তার তো আরেকপাশে পুলিশের পাহারা চলমান; দিনের পর দিন। কিন্তু কোনোভাবেই ঠিক ক্ষতিটা সামাল দেওয়া গেল না। এত এত মানুষের প্রাণ চলে গেল। আমরা নিজ নিজ জায়গা থেকে যেটুকু সম্ভব নিজের কাজ চালিয়ে যেতে লাগলাম, কাছের মানুষদের ফোনকল করে মাফ চাইলাম। সে সময় একদিনের জন্য হলেও মনে হয়েছে, “পৃথিবীটা আর কোনোদিন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে না।”
প্রত্যেকদিন মিডিয়া পাড়ার অনর্থক ডিবেট আমাদের আগ্রহের প্রধান কারণ হয়ে উঠলো। পড়ে থাকা সিনেমা বা বই একবার দেখার/পড়ার ইচ্ছে হলো। পা বন্দি জীবনে ওটুকুই ছিলো খোরাক। মধ্যবিত্তরা চরম সংকটে। শহুরে মানুষ বলছে, “গ্রামে যারা আছেন ওদের কথা ভেবে ভয় লাগছে।” আবার গ্রামে যারা আছেন তারা বলছে, “শহরে যারা আছেন ওদের কথা ভাবতেই দমবন্ধ হয়ে আসছে।”
এরপর ভাক্সিন বাজারে আসলো… পরিস্থিতি আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করলো… উপর আল্লাহ্’র শুকরিয়া, আজ যারা এ যাত্রায় বেঁচে গেছি…
এই যে, আমরা যারা বেঁচে গেলাম তারা নতুন করে জীবন শুরু করলাম। নতুন করে জীবনের নকশা আঁকালাম। আমাদের সরকার কারিনা (পড়ুন করোনা) ভাইরাসের কুইক রিকোভারি দিতে সক্ষম হলেন এবং কুইক রিস্টার্ট করাতেও বাধ্য হলেন। কিন্তু ‘কুইক রিকোভারি’ ঠিক থাকলেও ‘কুইক রিস্টার্ট’ বোতামে চাপ দেওয়াটা উচিত হয় নাই। হোক সেটা দেশের আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করে করা হয়েছিলো বা যে কোনো কারণে!
বহু মানুষ তার কাছের মানুষকে হারিয়েছেন, বহু মানুষ তার চাকুরী হারিয়েছেন, বহু মানুষ আর্থিকভাবে ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, বহু যুবক/যুবতী তাদের স্বপ্নগুলো হারিয়েছেন… একবার ভাবুন তো, এমন কোনো গাড়ি যার কাছে প্রয়োজনীয় পেট্রোল নাই, ফিটনেসবিহীন, ঠিকমতো গিয়ার কাজ করছে না এমন গাড়ি নিয়ে ফের হাই-রোডে ৭০-১০০ কিলো./ঘন্টা বেগে কুইক রিস্টার্ট নেওয়া কি প্রাকটিক্যালি সম্ভব? উচিত?
আজ যে চারপাশে মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকার আগ্রহ কমে গেছে বলে মনে হচ্ছে। মানুষের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। পানিক ডিজওর্ডার ও অ্যাংজাইটি দেখা দিচ্ছে। একাধিক রিসার্চ পেপারের এই দাবী দিন দিন স্পষ্ট প্রমাণিত হয়ে চোখে পড়ছে। কিন্তু আজও আমরা মানুষে মানুষের মানসিক অবস্থা ঠিক আছে কিনা খেয়াল করছি না। শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যাকে এক কাতারে রাখতে পারছি না। মানুষ তো দূর আমরা নিজেই নিজেদের দিকে একবিন্দু ঠাহর হয়ে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখছি না।
তবে মনে হয়, এবার এক্সিডেন্ট যদি হয় তাহলেও খুব বেশি অবাক হবো না। ড্রাইভার ছাড়া এ বাসে হাজারো যাত্রী, চলছি হাই-রোডে…
ছবি: The Financial Expres
Also Read It On: ড্রাইভার ছাড়া এ বাসে হাজারো যাত্রী, চলছি হাই-রোডে…
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:৩২