somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক এবং নাট্য পরিচালক সহ - এই বহুমুখী পেশার সাথে জড়িত থাকলেও, আমার মূল পরিচয় একজন গল্পকার।

ইন গ্রুপ বনাম আউট গ্রুপ বায়াস (শেষ পর্ব)

২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গ্রুপ বা টিম তো আর এমনি এমনি তৈরি হয় না। সকালবেলা উঠে কারো শখ হয়েছে গ্রুপ বানানোর তাই গ্রুপ বানিয়ে ফেললো সেরকম আমি সচরাচর দেখি নাই। প্রত্যেকটি গ্রুপের একটি ভিশন/মিশন থাকে সম্পন্ন করবার। যেমন মিশনারী সংগঠন ‘রেড ক্রিসেন্ট’ (আমার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ উদাহরণ)।

আবার গ্রুপ মানেই খারাপ কিছু এমন নয়। বিভিন্ন দেশে জনহিতকর কার্যে একাধিক কমিউনিটি এগিয়ে আসেন। কারিনা ভাইরাসের সময় একাধিক ইসলামিক গ্রুপ অনেক মানুষের জানাযা পড়িয়েছেন। এছাড়াও বাংলাদেশের বৌদ্ধ কমিউনিটির সমালোচনা কম; সুনাম বেশি।

আবার কিছু হিন্দু সংগঠনও আছে যারা দেশের জন্ম থেকে শুরু করে আজ অবধি দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। মুসলিম কমিউনিটি এখানে সংখ্যাগুরু তাই আমাদের ভালো করাটা কোথাও না কোথাও একরকম দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

আবার এই যে একটু জাতীয়তাবাদ তার সবটুকুই কি খারাপ? যদি একটু জাতীয়তাবাদ খুবই খারাপ হয় তাহলে আজকাল ব্লগে প্রতিবেশি দেশ ‘ভারত’ কে নিয়ে এত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ কেন করছেন? এমন তো নয় যে, ভারতের মানুষের উপর আপনার কোনো রাগ/অভিমান নাই কিন্তু তাদের প্রশাসন নিয়ে চিন্তায় আছেন? এই প্রশ্ন পাশে রইলো।

এক নজরে দেখা যাক, আমরা গ্রুপ কেন তৈরি করি?

(ক) সুরক্ষা প্রদান করা: একই গ্রুপের সদস্যদের যে কোনো সংকটে গ্রুপ পাশে দাঁড়ায় এবং এটা উক্ত গ্রুপের দায়িত্ব বলে মনে করা হয়। ফলে এক ধরণের সুরক্ষা কবজ উক্ত গ্রুপের চারপাশে বিদ্যমান অনুভূত হয়।

(খ) সামাজিক হবার প্রবণতা: মানুষ সামাজিক জীব। সাধারণত একই এলাকায় একাধিক গ্রুপ থাকে। কোন গ্রুপে যুক্ত হচ্ছেন সেটা বড় বিষয় নয় বরং একা থাকা লাগছে না এজন্য কোনো গ্রুপে যুক্ত হওয়া।

(গ) সোশ্যাল নেটওয়ার্ক: বিভিন্ন ক্যারিয়ার ভিত্তিক সংস্থা তে এই বিষয়ে খুব বড় গলায় বলা হয় যে, “Your network is your net worth.”। এই নিয়ে পোর্টার গেল (Porter Gale) নামের এক ভদ্রলোক বই লিখেছেন, “ Your Network Is Your Net Worth: Unlock the Hidden Power of Connections for Wealth, Success, and Happiness in the Digital Age (২০১৩)”। এসব কতটুকু সত্য আমি জানি না। কিন্তু দেখা যায়, আমি কোনো বিষয়ে অজ্ঞ হলে সে বিষয়ে যিনি জানেন তার কাছে থেকে জেনে নিতে সুবিধা হয়। এবং প্রক্রিয়াটি গ্রুপে থাকলে দ্রুত সম্পন্ন হয়।

(ঘ) মিউচুয়াল ইন্টারেস্ট: আমি একটি গ্রুপে কেন আছি সেটা নির্ভর করতে পারে আমার উক্ত বিষয়ে আগ্রহের উপর। ধরুন, আমি বাঙালী এবং প্রবাসে আছি। সুতরাং আমি সেখানে চেষ্টা করতে পারি, বাঙালীদের একটি গ্রুপ তৈরি করার; অন্তত যারা বাংলায় কথা বলেন তাদের একটি গ্রুপ তৈরি করার। এই নিয়ে ‘Diaspora’ নামক একটি টপিক পড়াশোনার বিশেষ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

(ঙ) আর্থিক স্বার্থ: জরুরী নয় গ্রুপের সবাই গ্রুপের উদ্দেশ্য পূরণের সেবা করার জন্য উপস্থিত থাকবে। সেবাও করা যায় কিন্তু সেটা আর্থিক বিনিময়ে। এই ধরণের সদস্য ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রুপে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত তার আর্থিক দায় থাকে। গ্রুপ আর্থিক দায় মেটাতে না পারলে এরা গ্রুপ ছেড়ে দেবে।

(চ) নিজের পরিচয় তুলে ধরা বা উঁচু ক্লাসে অবস্থান করা: কিছু কিছু গ্রুপ দেখবেন প্রচুর নাম কামিয়েছে। আমাদের দেশে ‘বিডি ক্লিন’, ‘বন্ধন’, ‘বিদ্যানন্দ’ বেশ নাম কামিয়েছে যদিও এদের নিয়ে কিছু কঠোর সমালোচনা আছে যা একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না। কিন্তু গ্রুপ যদি এতবড় হয় যে তার অভিজাত্য গ্রুপ সদস্যদের সামাজিক মর্যাদা প্রদান করে তাহলে উক্ত গ্রুপে ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত মর্যাদা উঁচু তে রাখতে যুক্ত হতে পারেন। আমার জানা মতে এরকম গ্রুপ পৃথিবীতে মাত্র কয়েকটা আছে যেসবের মধ্যে ‘Amnesty International’ উল্লেখযোগ্য।

(ছ) ফিজিক্যাল প্রক্সিমিটি: এটি কিছুটা ব্লুটুথ সংযোগের মতন। খেয়াল করে দেখবেন, আপনি যে শহরে যাচ্ছেন সেখানে আপনার আধা-পরিচিত লোকজন আস্তে আস্তে পরিচিত হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, তারা সেসব গ্রুপে অবস্থান করেন আপনিও সেসব গ্রুপে যুক্ত হয়ে পড়ছেন।

‘ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি’ কর্তৃক একটি রিসার্স পেপার পাবেন ‘Ingroup Threat Theory’ এবং ‘Ingroup Emotion Theory’ নিয়ে। পুরো পেপারের উপর মাত্র একবার চোখ বুলানোর সুযোগ হয়েছে। এ বিষয়ে ‘PDF’ ফাইল খুঁজে পাবেন। সুতরাং নিজ নিজ দায়িত্ব নিয়ে একটু পড়ে নেবেন।

একজন স্বৈরশাসক কীভাবে গ্রুপের মধ্যে খেলা করেন? বাংলাদেশ তো গণতান্ত্রিক দেশ; এ বিষয়ে আপনার সন্দেহ আছে? যাকগে, চলুন স্বৈরশাসক গ্রুপের মধ্যে কি করেন?

১. একজন স্বৈরশাসক গ্রুপের মধ্যে সংখ্যাগুরুদের সংখালঘুদের প্রতি খেপিয়ে তোলেন। যুগে যুগে স্বৈরাচারীদের এই আচরণ ইতিহাসে উঠে এসেছে। এরা খুব সুচতুর ভাবে এমন কিছু ন্যারেটিভ তৈরি করে যাতে মনে হয়, “সংখাগুরুরা বিপদে আছেন।”

২. অর্থনৈতিক সংকট যেমন, মুদ্রাস্ফীতি বা ডলার সংকট বা কর্মসংস্থান যত বেশি কমবে তত বেশি এরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে।

৩. গ্রুপের মধ্যে সাব-গ্রুপ তৈয়ার করা। বুঝার জন্য, গ্রুপ যদি ‘বাংলাদেশ’ হয়, জাতীয়তা হবে ‘বাংলাদেশী’। এখানে আমাদের মধ্যে এমন অনিরাপদ অবস্থার তৈরি করা যাতে করে আমরা একে অন্যের দিকে, একে অন্যের ধর্মের দিকে চেয়ে চিন্তা করতে বাধ্য হই, “উক্ত ধর্মের লোক বাংলাদেশী কি!”

৪. প্রত্যেক সাব-গ্রুপের মধ্যে এমন একটি আবেগ তৈরি করা যে তার অন্য কমিউনিটি বা গ্রুপকে শক্রু বলে মনে করে।

৫. যুগে যুগে এমন প্রতিটি স্বৈরশাসকের পক্ষে একাধিক বুদ্ধিজীবী ছিলো। যাদের কথায়, কলমে, শিল্পে তাদের স্বৈরশাসক প্রভু কে ন্যায় ঘোষণা করেছেন। এমনকি হিটলারের সময়েও তার অনেক ভক্ত ছিলো।

৬. আপনাকে যতদূর সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখা। আপনাকে এমন ভয় দেখানো যে, আপনি ভয়ের কারণে সেল্ফ-সেন্সরশীপের চরম পর্যায়ে চলে যাবেন। চারদিকে শুধু ভয় এবং শঙ্কা দেখতে পাবেন। কিছু করা তো দূর, আপনি কিছু বলতেও সাহস পাবেন না।

৭. দেশে টাকা পাচার কেন হচ্ছে? বাজারে ৫০০ টাকা নিয়ে গেলেও পূর্ণ বাজার করে ঘরে ফিরতে পারছেন না কেন? অথবা, আপনার সন্তান চাকুরী পাচ্ছেন না কেন? ধূর ছাই! এসব চিন্তা করবার সময়ই পাবেন না।

৮. আপনাকে ঘৃণা করতে শেখানো হবে। ঘৃণা করুন একে অপরকে। ঘৃণা করুন একে অন্যের ধর্ম কে। আপনার মনোযোগ অন্যদিকে ধাবিত করার নানান প্রসঙ্গ একটার পর একটা উত্থাপিত হতেই থাকবে। আপনার পকেটে কেন টাকা নাই, চাকুরী নাই, কীসের সংকটে ভুগছেন? এত এত চিন্তা করবার সময়ই পাবেন না।

৯. একটি নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া জগতের খোঁজ পাবেন। এই সমস্ত মিডিয়াতে সাধারণ মানুষের সমস্যাকে যত বেশি সামনে আনা হবে তারচেয়ে বেশি দেখানো হবে, সে দেশের মানুষ খুব সুখে আছে।

১০. একজন স্বৈরশাসক নিজেকে আল্লাহ্‌/ঈশ্বর পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে যাবেন (নাউজুবিল্লাহ)। মানুষ তাদের ভক্তি শ্রদ্ধায় এমনভাবে মেতে উঠবে বা বাধ্য হবে যেন তিনি ছাড়া আর কেউ সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না। এটাকে বলা হয়, ‘Hero Worship’।

১১. প্রোপাগান্ডা: যত সমস্যার মূল ‘ইউ*ক্রেন-রা*শিয়া যু*দ্ধ’। আপনি যদি জিজ্ঞেস করেন মূল্যস্ফীতি কেন? কর্মসংস্থান নাই কেন? দুর্নীতি হচ্ছে কেন? জিনিসপত্রের দাম এত বেশি কেন?... তিনি শুধু উত্তরে বলবেন, “ইউ*ক্রেন-রা*শিয়া যু*দ্ধ’ চলছে।”

১২. গণতন্ত্রের প্রতি বিদ্বেষ: যখন একটি দেশের নির্বাচন কমিশন তো দূর কা বাত, কোনো রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান উক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মী বা সদস্যদের মতামত গ্রহণ করতে নারাজ থাকবে। উল্টো তিনি তার মতাবেক কিছু ভার সবার উপর চাপিয়ে দেবেন।

মোটাদাগে এই ছিলো ইন-আউট গ্রুপ বায়াস, জাতীয়তাবাদ এবং একজন স্বৈরশাসকের ভূমিকা।

ছবি: Bing Enterprise
Also Read It On: ইন গ্রুপ বনাম আউট গ্রুপ বায়াস (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:১৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×