somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

বয়স, যৌবন, সামাজিক চাপ এবং নারীদের উপর তার প্রভাব

২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সাধারণত একজন ছেলের মধ্যে বয়সের সাথে সাথে তার ভূমিকা বাবা, চাচা, দাদু ইত্যাদি তে রুপান্তরিত হয়। ছোটবেলায় শৈশব ও কৈশোরে পাড়া-মহল্লায় বা এলাকায় সমবয়সী বাচ্চাদের সাথে খেলাধূলা করতে নিশ্চয় ভালো লাগে। যৌবনে প্রেমিকাকে নিয়ে একসাথে কফি খাওয়ার একধরণের মজা থাকে। আবার বউকে নিয়ে একই টেবিলে রাতের খাবারে দুষ্টুমি করতেও ভালো লাগে। খুব সম্ভবত দাদুর বয়সী হয়ে গেলে নাতি-নাতনীদের সাথে সময় কাটে, ওদের সাথে খেলাধূলা ও খুনসুটিতে। এরমধ্যে পার হয়ে যায় স্কুল জীবন, কলেজ জীবন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ও কর্ম জীবন। একসময় মৃত্যু তেড়ে আসে। আমরা ধূলায় মিশে যাই।

আমাদের সমাজের যে স্ট্রাকচার বিদ্যমান সেখানে তূলনামূলক একজন মেয়ে বেশি ‘বয়স’ নিয়ে খুব বেশি স্বস্তি বোধ করার বিন্দুমাত্র চ্যান্স নাই। মেয়েদের জন্য বিষয়টি আরো ভয়ানক যখন তাদের বয়স বাড়তে শুরু করে। সবাই পূর্নিমা (দিলারা হানিফ রিতা) বা জয়া আহসান হতে তো পারেন-ই না, তাদের জীবন আরো বেশি সীমাবদ্ধ হতে থাকে এবং শরীরে মেদ বাড়তে শুরু করে। চার দেয়ালের এই জীবন থেকে মেয়েদের মুক্তি কীভাবে দেওয়া যায় সেটা নিয়ে ভিন্ন ধারার আলোচনা ও সমালোচনা আছে কিন্তু মুক্তি দেওয়াটা খুবই জরুরী। কথা বলছিলাম, ‘বার্ধক্য (Ageing)’ নিয়ে।

আমরা যদি একটু ঘনিষ্ঠভাবে আমাদের মিডিয়ার দিকে তাকাই তাহলে সেখানে প্রায় সব চ্যানেলে একজন খবর উপস্থাপিকাও মেয়ে। রিপোর্ট পৌঁছে দিচ্ছেন ছেলে/পুরুষেরাই। ক্যামেরার পেছনে ছেলে থাকলেও ক্যামেরার সামনে কিন্তু থাকতে হবে একজন কমবয়সী মেয়ে/মহিলা। আরো ছোট্ট ও বাস্তব প্রেক্ষাপটে দেখা যাক, সাধারণত প্রায় সবগুলো বড় বড় হোটেলে রিসেপশনিস্ট থেকে শুরু করে প্রায় সকল ধরণের কাস্টমার কেয়ারে থাকেন মেয়েরা। এসব জায়গায় কিছু ছেলেও থাকেন তবে তিনি সুন্দর ও আকর্ষণীয় পাশাপাশি কমবয়সী হওয়া জরুরী।

আবার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জনপ্রিয়তা কতদিন প্রাসঙ্গিক? তাদের বয়েস ধরে রাখতে করতে হয় হাজার রকমের ডায়েট। কিন্তু ‘বার্ধক্য (Ageing)’ কে বা মৃত্যুকে ধরে রাখার কোনো মহাষৌধি দূর্ভাগ্যজনকভাবে নাই। আমরা বেঁচে থাকলে আমাদের বয়স বাড়তেই থাকবে।

উপরের উদাহরণ থেকে কিছু বিষয় ব্যবচ্ছেদ করলে পাবেন আরো তিতা কিছু সত্য। মিডিয়ায় উপস্থাপিকা হিসেবে মেয়েরা/মহিলারা আছেন তাহলে তো এখানে পুরুষদের সাথে বৈষম্য হয়ে গেল তাই না? নাহ্‌। মিডিয়া, সিনেমা, রিসেপশনিস্ট, কাস্টমার কেয়ার সমস্ত জায়গায় একটি প্রতীক দরকার। কি ধরণের প্রতীক? যৌবনের প্রতীক। কেন দরকার? কারণ হলো এই প্রতীক-ই নির্ধারণ করবে ঐ প্রোডাক্ট ক্যামন? ঐ নাটক, সিরিজ বা সিনেমা বা টেলিভিশন টি.আর.পি বা দর্শক কত বাড়বে বা কমবে? লাইক-ফলোয়ারের যুগে কত বেশি অতিরিক্ত লাইক ও ফলোয়ার মিলবে।

বিশ্বাস না হলে, আমরা পরীমনির ফেসবুক পেজে একবার ঢু মেরে দেখবো এবং তারপর আমার এই পোস্টের মন্তব্যে তার একটি ‘নোটেবল (উল্লেখযোগ্য)’ কাজ সম্পর্কে উল্লেখ করবো। আমার হাতে একটিও নাই, উল্লেখ করার মত।

আরো কিছু শব্দ, যেমন, প্রাণবন্ত, চঞ্চল, হাস্যোজ্জ্বল, সুন্দর, যৌবন, আলো ইত্যাদি। এই সমস্ত কিছু আমরা যারা বেঢপ এবং আমারা যারা বয়স্ক তারা কোনোভাবেই উপহার দিতে পারবো না। কারণ হলো জন্মগতভাবে আমরা এক শ্রেণী বেঢপ বা কুশ্রী এবং দ্বিতীয় কারণ হলো ‘বার্ধক্য (Ageing)’; যা অবশ্যম্ভাবী। এখানে বেঢপ বা কুশ্রী বলে আমরা যেটাকে বেঢপ বা কুশ্রী বলে থাকি সেটাকেই বুঝিয়েছি। কোথাও না কোথাও একটু সরলীকরণ না করলে সামনে যাওয়া মুস্কিল। সুতরাং এসব জায়গায় যারা আবেদন করছেন বা করবেন তাদের পার্সেন্টেজ বাংলাদেশের মত দেশে খুব বেশি হবার কথা নয়। এখানেই এক শ্রেণীর মেয়েরা/ছেলেরা প্রথমেই বাদ পড়ে যান শুধুমাত্র তিনি বা তারা কুশ্রী বলে।

দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, চাকুরী পাওয়ার পর থেকে। মানে হলো, আপনার চাকুরীর সুরক্ষা ততক্ষণ অবধি যতক্ষণ আপনার রূপ-যৌবন বিদ্যমান থাকে। আপনার প্রাসঙ্গিকতার সরাসরি সম্পর্ক বিদ্যমান আপনার রুপ-যৌবনের সাথে। আবার রুপ-যৌবন সরাসরি সম্পর্ক বিদ্যমান বয়সের সাথে। মানে আপনি এসব জায়গায় চাকুরী পেলেও খুব দ্রুত অপ্রাসঙ্গিক হতে যাচ্ছেন। আর এজন্যই এখানে পুরুষ ও নারীর বৈষম্যের তর্ক খাটে না।

আমরা অভিজ্ঞতার চেয়ে বেশি শরীরকে সেলিব্রেট (উদযাপন) করছি। বিজ্ঞতার চেয়ে বেশি রুপ-যৌবনকে সেলিব্রেট করছি। জ্ঞানের চেয়ে বেশি কৃত্রিম বিনয়ী হওয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছি। মানবিক সমাজের বৈশিষ্ট্য এরকম কোনোভাবেই হতে পারে না। আমরা কত বয়সে কি করবো সেটা নির্ধারণ করছেন এই বয়সীর মানুষেরা, যেমন, শেখ হাসিনা ৭৭ বছর বয়সেও রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত ছিলেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৮৪ বছর বয়সে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। ওদিকে উন্নত বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বয়েস মাত্র ৭৮ বছর। আগের প্রেসিডেন্টের জো বাইডেনের বয়স ছিলো ৮১ বছর! রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বয়েস মাত্র ৭২ বছর।

কিন্তু তারা যে রাষ্ট্র আমাদের উপহার দিয়েছেন সেখানে বার্ধক্য বা বয়েস বাড়াটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়ার সমতুল্য। আমি বিশ্ব নেতাদের দেখি আর বারবার ভাবি, যদি ৭০+, ৮০+ বয়সে রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায় তবে মাত্র ৪০+ বয়সেও একজন নারী কি ঠিকঠাকমতো উপস্থাপিকার ভূমিকা পালন করতে পারেন? খুব সম্ভবত বেশিরভাগ পারেন না।

বাংলাদেশের এই সমাজ দাঁড়িয়ে আছে একধরনের সুপারফিশিয়াল বিউটি’র উপর ভর করে; যা অত্যন্ত ভঙ্গুর। আরেকদিকে আমরা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছি যৌবনের পর থেকে। মানে যৌবন থেকে সামান্য দূরে গেলেই আমি-আপনি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছি। রাষ্ট্রের শাসনকর্তাদের বাদ দিই, আমরা আর নিজেরাই নিজেকে এক্সেপ্ট করতে পারছি না। আমাদেরও পুনরায় ওমন রুপ-যৌবন দরকার। আমাদের নিজেদের কাছে অন্তত নিজেদের স্বীকৃতির জন্য হলেও আমদের ফের রুপ-যৌবনে ভরপুর হওয়া জরুরী।

কি অদ্ভুত আমাদের মানসিক অবস্থা! যা প্রাকৃতিক, যা অবশ্যম্ভাবী তাকে বারবার সরিয়ে দিয়ে, হটিয়ে দিয়ে কৃত্রিম পথে নিজেকে/নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক ভাবা। আর এই হারিয়ে যাওয়া রূপ-যৌবন ফিরে পেতে বিক্রি হচ্ছে অসংখ্য নাম জানা/অজানা সব পণ্য এমনকি মাদকদ্রব্য পর্যন্ত। দুর্দান্ত শিল্প। বলিউড/হলিউডের অভিনেতা/অভিনেত্রীরা করছেন প্লাস্টিক সার্জারি। সিনেমায় ব্যবহার করছেন হাজার ধরণের VFX থেকে শুরু করে নানান আধুনিক টেকনোলজি।

পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র অনেক পরের কথা, আমরা নিজেই কেন আর একটি নির্দিষ্ট বয়স পর নিজেদের গ্রহণ করতে পারছি না? আমাদের আজীবন যৌবন থাকবে না, কিন্তু আমরা যৌবনকে যেভাবে সেলিব্রেট করি ঠিক একইভাবে আমরা বার্ধক্যকে কেন সেলিব্রেট করতে পারছি না? নিজেকে এক্সেপ্ট করতে পারছি না?

আমরা আমাদের গল্পে কেন সবসময় হিরো/হিরোইন হয়ে থাকতে পারছি না? এই মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করা কি মৃত্যুর চেয়েও কঠিন? তাহলে আমাদের মৃত্যুকে প্রথমে মেনে নিতে হবে; মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। তারপর না-হয় আমরা আমাদের যথাযথভাবে এক্সেপ্ট করতে পারবো। যৌবনের গানের সে-ই যৌবনের ধারা আমৃত্যু বয়ে যাক সকলের দেহ ও মনে, এই কামনায়!

ফুটনোট: লেখাটিকে সূতোয় বাঁধতে সাহায্য করেছে ‘The Substance’ সিনেমা।

Also Read It On: বয়স, যৌবন, সামাজিক চাপ এবং নারীদের উপর তার প্রভাব
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:২৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সমসাময়িক চিন্তা ও পাশের দেশের অবস্থা!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৩৩

পাশের দেশের মি শুভেন্দু বাবু যেভাবে চিন্তা করেন, তাতে তাদের দৈনত্যাই প্রকাশ পায়! অথচ বহু বছর আগেই তাদের জ্ঞানী ব্যক্তিরা আমাদের সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছেন। যাই হোক, এই সবকিছুই থেমে যাবে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনধিকার চর্চা নয়, শান্তিরক্ষি ভারতে প্রয়োজন

লিখেছেন মোহাম্মদ সজল রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৫৫

বাংলাদেশে একজন রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় অভিযুক্ত এবং ইসকন সংগঠন থেকে বহিঃস্কৃত ধর্ম প্রচারক বিতর্কিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, তার মুক্তির জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের এক শ্রেণীর জনগণ যেভাবে ক্ষেপে উঠেছে, তাতে মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমরা উকিলরা কেউ চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াবো না , না এবং না

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২




সাবাস বাংলাদেশের উকিল । ...বাকিটুকু পড়ুন

আগরতলায় হাইকমিশনে হামলা কাকতালীয় না কি পরিকল্পিত?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩২

গতকাল (২ ডিসেম্বর) ভোরে আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভের পর ন্যাক্কারজনকভাবে আক্রমণ করে। বিভিন্ন তথ্যে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত যে বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের সাথে যুদ্ধ করে ভারত লাভবান হবে বলে মনে করি না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০



আমাদের দেশে অনেক মুসলিম থাকে আর ভারতে থাকে অনেক হিন্দু। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধে মুসলিমদের সাফল্য হতাশা জনক নয়। সেজন্য মুসলিমরা ভারতীয় উপমহাদেশ সাড়ে সাতশত বছর শাসন করেছে।মুসলিমরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×