somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

ইমপ্রিন্টিং এবং সংযুক্তি তত্ত্ব: শৈশবের অভিজ্ঞতা কিভাবে আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে?

২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভুল পরিবেশে একজন মেধাবী ছাত্র বড় হলে তার মেধা সম্পূর্ণভাবে বিকশিত হতে পারে না। বাঘ ও বিড়াল দুটোই ফেলিড পরিবারের অন্তর্ভুক্ত প্রাণী। ছোটবেলা থেকে একটি বাঘ যদি বিড়ালের সাথে বেড়ে ওঠে তাহলে খুব সম্ভবত বাঘ বিড়ালের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য নিজের মধ্যে আবিষ্কার করতে পারে। কিন্তু জিনগতভাবে একটি বাঘ কিন্তু বাঘ-ই থেকে যায়।

এটাকে বলা হয় ‘Imprinting (মুদ্রণ করা/অনুলিপি করা)’। প্রাণীরা যখন জন্মগ্রহণ করে তখন তার আশেপাশে যা দেখে থাকে সেটাকেই আপন করে নেয়, সেটাকেই অনুলিপি করতে শুরু করে। ঠিক তেমনভাবেই বাঘ যখন বিড়ালের সাথে বেড়ে উঠে তখন খুব স্বাভাবিক সে বিড়ালের মত করে “মিঁয়াও... মিঁয়াও... মিঁয়াও...” করতে শুরু করতে পারে। বিড়ালের মত ইঁদুরের পেছনে ছোটাছুটিও হতে পারে তার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এতে করে বাঘ কিন্তু বিড়াল হয়ে যায় না।

প্রাণীদের এই আচরণ নিয়ে বিস্তর গবেষণা পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা যদি এই প্রাণী এবং মানুষের মধ্যে পার্থক্য না করি তাহলে ফলাফল ঠিক কি হতে পারে? ‘কনরাড লরেঞ্জ (Konrad Lorenz)’ নামক একজন ‘Ethologist (আচরণবিদ)’ প্রাণীদের মধ্যে এই ‘Imprinting (মুদ্রণ করা/ছাপ থাকা)’ বিষয়ে আমাদের পরিষ্কার করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ‘Imprinting’ কি মানুষের মধ্যে ঘটা সম্ভব? মনোবিজ্ঞান এখানে আমাদের ‘Attachment Theory’ উপহার দেয় যার ভিত্তি কিন্তু ঐ কনরাড লরেঞ্জের আবিষ্কার ‘Imprinting’।

মনোবিজ্ঞানের অন্ধকারের দিকের মধ্যে একটি হলো ‘Attachment Theory (সংযুক্তি তত্ত্ব)’। সংযুক্তি তত্ত্ব, যা জন বোলবি দ্বারা বিকশিত এবং পরে মেরি এইন্সওয়ার্থ দ্বারা সম্প্রসারিত হয়, এটি ব্যাখ্যা করে যে কীভাবে ব্যক্তিদের মধ্যে গভীর আবেগগত বন্ধন গঠিত হয়, বিশেষ করে শিশু এবং তাদের প্রধান যত্নদাতাদের মধ্যে। এই তত্ত্বটি প্রস্তাব করে যে, এই প্রাথমিক বন্ধনগুলি একজন ব্যক্তির আবেগগত বিকাশ এবং তাদের জীবনের সম্পর্কগুলিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।

আমরা কত ভালো বা মন্দ তা প্রধানত শিখে থাকি আমাদের অভিভাবকদের কাছে থেকে এবং পরবর্তীতে এক জীবন আমরা আমাদের অভিভাবকদের থেকে যা যা শিখেছি তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারি। আমাদের আচরণগত দিক নির্ধারিত হয় আমাদের ‘Formative Stage (শৈশবকালে)' এ।

Animals or Human Imprinting কে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে,

১. Filial Imprinting: নতুন বাচ্চা এবং তার পিতা-মাতার প্রতি এক ধরণের শক্তিশালী বন্ধন অনুভব করা।

২. Sexual Imprinting: Formative Stage এ যে ধরণের অভিজ্ঞতা হয় তারই প্রতিফলন ঘটে বড় হয়ে আমাদের ‘Sexual Desire’ বা যৌনতার ইচ্ছা কেমন হবে বা কেমন ব্যক্তির প্রতি আমরা আগ্রহী হবো। এই ধরণের Imprinting সাধারণত ‘Westermarck Effect’ কে প্রকাশিত করে।

৩. Limbic Imprinting: সহজভাবে বলতে গেলে, লিম্বিক ইমপ্রিন্টিং হলো গর্ভাবস্থায় এবং জন্মের পরপরই আমাদের অভিজ্ঞতাগুলি কীভাবে আমাদের মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। লিম্বিক সিস্টেম হলো মস্তিষ্কের একটি অংশ যা আমাদের আবেগ, স্মৃতি এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় আচরণগুলি নিয়ন্ত্রণ করে। যদি গর্ভাবস্থায় বা জন্মের পরপরই এই সিস্টেমে কোনো সমস্যা হয়, তাহলে তা আমাদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আবেগ এবং আচরণগত সমস্যার কারণ হতে পারে। এটি বোঝায় যে, আমাদের প্রাথমিক অভিজ্ঞতাগুলি আমাদের ভবিষ্যতের আবেগগত এবং আচরণগত স্বাস্থ্যের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

একটি উদাহরণ দেওয়া যাক, আমরা বড় হয়ে যার প্রতি যৌনতায় আগ্রহী হই খুব স্বাভাবিক আমরা তার সাথে নরম ও ভদ্রভাবে কথা বলবো। কারণ আমরা ছোটবেলায় শিখেছিলেন বা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন যে আপনার বিপরীত লিঙ্গের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা জরুরী। আর যারা উল্টোপাল্টা আচরণ করেন? তাহলে বুঝে নিতে হবে সে বা তিনি ছোটবেলায় ঠিক কি কি শিখেছেন! অন্তত মনোবিজ্ঞান এখানে সেটাই বলার চেষ্টা করছে। মনোবিজ্ঞান এখানে আরো বলছে, হয়তো সেখানে ভালো জিনিস ছিলো অনুলিপি করার কিন্তু এই ধরণের নারী/পুরুষ অনুলিপি করেছেন খারাপ কিছু।

‘সংযুক্তি তত্ত্ব (Attachment Theory)’ দিয়ে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা হয়। এই কৌশলগুলোকে সাধারণত নিম্নলিখিত ৫টি ভাগে ভাগ করা যায়:

১. নির্ভরশীল করা: একজন ব্যক্তিকে অন্যের উপর নির্ভরশীল করে তোলা। যেমন, কারো কাছে বলা যে, “তুমি ছাড়া আমি কিছুই করতে পারবো না।” এতে সেই ব্যক্তি নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে।

২. আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা: কারো আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা। যেমন, প্রথমে কাউকে খুব ভালোবাসা দেখানো, তারপর হঠাৎ করে অবহেলা করা। এতে সেই ব্যক্তি সবসময় অনিশ্চিত থাকে এবং নিয়ন্ত্রকের প্রতি আকৃষ্ট থাকে।

৩. আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা: কারো আচরণকে পরিবর্তন করা। যেমন, কাউকে এমন কাজ করতে বাধ্য করা যা সে নিজে করতে চায় না।

৪. আত্মসম্মান কমিয়ে দেওয়া: কারো আত্মসম্মান কমিয়ে দেওয়া। যেমন, কাউকে বারবার বলা যে, “তুমি কিছুই করতে পারো না।” এতে সেই ব্যক্তি নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে পারে।

৫. আবেগগত অস্থিরতা তৈরি করা: কারো আবেগকে অস্থির করে তোলা। যেমন, এক মুহূর্তে ভালোবাসা দেখানো, আবার অন্য মুহূর্তে রাগ দেখানো। এতে সেই ব্যক্তি মানসিকভাবে বিভ্রান্ত হয়ে পড়তে পারে।

এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ কৌশলগুলো কেন ব্যবহার করা হয়?

১. অন্যকে নিজের উপর নির্ভরশীল করার জন্য যাতে অন্য ব্যক্তি নিজের সিদ্ধান্ত নিতে না পারে।
২. সম্পর্ককে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যাতে অন্য ব্যক্তি সম্পর্ক ছেড়ে যেতে না পারে।
৩. নিজের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য যাতে অন্য ব্যক্তি নিজের চেয়ে দুর্বল মনে করে।

আজ এ পর্যন্তই। খোদা হাফেজ।

ছবি: Canva Magic Media
Also Read It On: ইমপ্রিন্টিং এবং সংযুক্তি তত্ত্ব: শৈশবের অভিজ্ঞতা কিভাবে আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৪৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×