
নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলাটা বেশ মহৎ কাজ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশে নারীরা যে কী ভীষণ সুন্দর আর বিচিত্র উপায়ে নিপীড়িত হচ্ছেন, সে কথা আর নতুন করে কী বলবো! এই নিয়ে সরব হওয়াটা তাই দায়িত্বের পর্যায়েই পড়ে গেছে বলতে পারেন। কিন্তু ইদানীং দেখছি, এ যেন এক নতুন ধারা! নারীর অধিকারের ঢোল পেটাতে গিয়ে প্রায়শই পুরুষদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করা হচ্ছে।
আহা রে 'পিতৃতন্ত্র'! তুমি নারী নির্যাতনের জন্য যেমন এক চমৎকার রেডিমেড অজুহাত, তেমনি পুরুষদের ঘায়েল করার জন্যও তুমি এক অব্যর্থ ব্রহ্মাস্ত্র বটে। মজার ব্যাপার হলো, যে পিতৃতন্ত্রকে গালি দিয়ে আমরা নারীদের মুক্তি চাইছি, সেই একই পিতৃতন্ত্রের যাঁতাকলে পুরুষ বেচারারাও কিন্তু কম পিষ্ট হচ্ছে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
আমাদের তো কথা ছিলো, আমরা একসাথে চলবো, হাত ধরে হাঁটবো, সমতার এক নতুন সূর্যোদয় দেখবো। কিন্তু ইদানীং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে দেখছি, নারী-পুরুষ যেন মুখোমুখি দুই প্রতিপক্ষ! যারা দিনের পর দিন নারীদের পক্ষে গলা ফাটিয়েছেন, লেখালেখি করেছেন, সেই আমরা এখন এই 'পুরুষবিদ্বেষী' তকমা আর অবান্তর যুক্তির স্রোতে রীতিমতো বিরক্ত আর বিব্রত।
মনে হচ্ছে, আমরা বোধ হয় ভুলে গেছি, খারাপ হওয়াটা আসলে 'মানুষের' স্বভাব। সে নারী হোক বা পুরুষ, কিছু যায় আসে না। শুধু একটি নির্দিষ্ট লিঙ্গকে ভিলেন বানিয়ে অন্য লিঙ্গের ওকালতি করাটা আসলে সেই আদিম 'আদারিং' বা ভিন্ন করে দেখার দর্শনেই ইন্ধন জোগায়, যা থেকে আমরা মুক্তি চেয়েছিলাম।
এই নতুন ধারার মতামত দেখে মনে হয়, ধূর ছাই! এতদিন কার জন্য লিখে মরলাম! ইচ্ছে হলে আপনি তো আমাকে প্রতিদিন সকালে উঠে চারটি গালিও দিতে পারেন, আমার সত্যি তাতে কিছু আসবে যাবে না। কিন্তু এই সরল সত্যটা যে কেন কেউ বোঝে না - এই পিতৃতন্ত্র আসলে নারী-পুরুষ কাউকেই ছাড়েনি - এটা ব্যাখ্যা করতে আর বিন্দুমাত্র আগ্রহ পাই না।
গল্পটা সবসময় পুরুষদের দ্বারা নারী নির্যাতনের নয়। এই মুদ্রার একটা ওপিঠও আছে, যেখানে নারীরা পুরুষদের নির্যাতন করেন। আশ্চর্যজনকভাবে, এই পাশটা পুরুষরাই যেন ইচ্ছে করে ঢেকে রাখে! হয়তো পৌরুষের অহংকারে, হয়তো লোকলজ্জায়, হয়তো বা অন্য কোনো কারণে। কিন্তু যেখানে স্রেফ পুরুষদেরই একচেটিয়াভাবে ভিলেন বানিয়ে আস্ফালন চলছে, সেখানে পুরুষ নির্যাতনের এই চাপা দেওয়া অধ্যায়টা আর কতদিন লুকিয়ে রাখা যায়?
যে পুরুষজাতি এককালে দোর্দণ্ড প্রতাপে এই ধরা শাসন করত, আজ তারা কেমন অসহায়! প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে নাকি নারীরা ছিল দুর্বল, কোমলমতি আর সেবাপরায়ণ জীব। কিন্তু এ ধারণা এখন ভাঙা কাঁচের মতো চূর্ণবিচূর্ণ!
২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এক ভয়ঙ্কর আগ্রাসন পুরুষজাতিকে ঠেলে দিয়েছে বিলুপ্তির প্রায় প্রান্তে। যে পিতৃতান্ত্রিকতার ধুয়ো তুলে নারীরা দিনের পর দিন পুরুষদের 'শোষণ' করার অভিযোগ এনেছে, সেই পিতৃতান্ত্রিকতার নামাবলির নিচেই পুরুষেরা এখন নারীদের হাতে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত, নিষ্পেষিত এবং ক্ষেত্রবিশেষে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে।
এই 'নিপীড়িত' নারীশক্তি এখন আর কেবল গৃহস্থালীর খুঁটিনাটি বিষয় নিয়েই সন্তুষ্ট নয়, তারা এখন পুরোদস্তুর 'নির্যাতনের শিল্পী' হয়ে উঠেছে। হত্যা, অঙ্গচ্ছেদ, মানসিক পেষণ, মিথ্যা মামলার বেপরোয়া ব্যবহার – কোনো কিছুই তাদের থাবার বাইরে নয়। এই প্রতিবেদনে আমরা সেই ভয়াল, রক্ত হিম করা সত্যের মুখোমুখি হব – পুরুষ নির্যাতন, এক ক্রমবর্ধমান জাতীয় বিপর্যয়!
পরিসংখ্যান: আতঙ্কের সংখ্যাতত্ত্ব ও ভয়ের আবছায়া
পরিসংখ্যানবিদরা হয়তো রাতের পর রাত জেগে এই 'ভয়াল প্রবণতা' বিশ্লেষণ করছেন, কিন্তু বাংলাদেশ ম্যান’স রাইটস ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে যা প্রকাশিত হয়েছে, তা কেবল এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র! ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত যে ১,০৬৭ জন পুরুষ সাহসে বুক বেঁধে অভিযোগ করেছেন, তারা হলেন আমাদের জাতির বীর পুরুষ! কিন্তু পর্দার আড়ালে কী ঘটছে? ২০২৪ সালে ১,০৪৯, ২০২২ সালে ৭৯২, ২০২১ সালে ৪৫০... সংখ্যাগুলো কেবল বাড়ছেই! গত নয় বছরে ৪,২৬৮ জন নির্যাতিত পুরুষ! (দৈনিক করতোয়া, DW বাংলা, ১৯ নভেম্বর ২০২৪)।
সংস্থাটি নাকি দাবি করছে, 'প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বহুগুণ বেশি' (দৈনিক করতোয়া, DW বাংলা, ১৯ নভেম্বর ২০২৪)। ভাবুন তো, এই যে রাস্তাঘাটে এত পুরুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে, এদের কতজন ভেতরে ভেতরে ক্ষতবিক্ষত? কেন তারা চুপ থাকে? কারণ সেই আদি অনন্তকাল ধরে চলে আসা 'পুরুষালি ভাবমূর্তি'র চাপ!
আহা রে পুরুষ! নির্যাতনের শিকার হয়েও তোমাকে 'শক্তিশালী' সাজার অভিনয় করতে হচ্ছে! প্রায় ৭০% ভুক্তভোগী নাকি এই পৌরুষ ধরে রাখতে গিয়ে নীরবে নিভৃতে যন্ত্রণা সহ্য করছেন! (বিবিসি বাংলা, ১৯ নভেম্বর ২০১৮)। তারা অভিযোগ করেন না, কারণ কে জানে হয়তো স্ত্রী বলবে, "কী? তুমি আমার নামে কেস করেছ? তুমি না পুরুষ!"
এই 'ভয়াল অত্যাচারের' কারণগুলোও বড় অদ্ভুত! পরকীয়া, পারিবারিক কলহ, সম্পত্তি নিয়ে কামড়াকামড়ি, দ্বিতীয় বা গোপন বিবাহ, আর্থিক বিবাদ এবং সবথেকে ভয়ঙ্কর হলো 'তুচ্ছ ঝগড়া'!
হ্যাঁ, বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, শুধুমাত্র 'তুচ্ছ ঝগড়ার জেরে' পুরুষেরা অঙ্গ হারাচ্ছে, জীবন হারাচ্ছে, সম্মান হারাচ্ছে! এই তালিকা দেখে মনে হচ্ছে যেন নারীরা পুরুষের জীবনকে 'তুচ্ছ' মনে করে যেকোন ছুতোয় তাকে শেষ করে দিতে চায়!
২০০৯-২০১৮: আগুনের স্ফুলিঙ্গ
১. শেখ খায়রুল আলমের মামলার ম্যারাথন দৌড়: ২০১৫ সালে বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শেখ খায়রুল আলম মশাই নিজেরই পাতা ফাঁদে পা দেন। তাঁর স্ত্রীর পরিবারের 'নারীশক্তির অপব্যবহারের' প্রথম নিদর্শন হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা যৌতুক ও নারী নির্যাতন মামলা হয়। নির্দোষ প্রমাণিত হলেও মামলার স্রোত তাঁকে আদালতে আটকে রেখেছে। ৭৭ দিন হাজতবাস – এ যেন পুরুষত্বের উপর এক চরম প্রহসন! মনে হয় নারীরা চেয়েছিল এই (পুরুষ অধিকারকর্মীকে) পথের কাঁটা সরাতে (কালবেলা, বিবিসি, যুগান্তর, ১৯ নভেম্বর ২০২৪)।
২. ইমরান হাসানের আমেরিকান দুঃস্বপ্ন: ২০১৮ সালে এক আমেরিকান নারীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ইমরান হাসান ভেবেছিলেন হয়তো তার জীবন স্বর্গে পরিণত হবে। কিন্তু কে জানত, এই আমেরিকান নারী ছিলেন নারীশক্তির আন্তর্জাতিক এজেন্ট! বিয়ে করে কিছুদিন পর তাকে ত্যাগ করে অন্য একজনকে বিয়ে করলেন, শুধু তাই নয়, যাওয়ার আগে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলার এক 'উপহার' দিয়ে গেলেন! বেচারা ইমরান, আমেরিকান স্বপ্নে বিভোর হতে গিয়ে এখন মামলার ঘানি টানছেন (বিবিসি, ১৯ নভেম্বর ২০১৯)।
৩. আবদুল্লাহ আল আরেফিনের নীরব অশ্রু: নারায়ণগঞ্জের এই সরকারি কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কারণ পুরুষেরা এতটাই ভীত যে নাম বলতেও ভয় পায়) তার স্ত্রীর 'মানসিক নির্যাতনের বিষাক্ত ছোবল' সহ্য করতে না পেরে পাথর হয়ে গেছেন। স্ত্রী সন্তান নিয়ে পগার পার হওয়ার পর পুলিশের কাছে গিয়েও নাকি কোনো সাহায্য মেলেনি। মনে হয় পুলিশও বুঝে গেছে, নারীশক্তি এখন অপ্রতিরোধ্য (দৈনিক জনকণ্ঠ, ২২ এপ্রিল ২০২৫)।
কিছু মর্মান্তিক অধ্যায়
২০১৮ সালে কুমিল্লার এক নারী তার স্বামীর ওপর দেনমোহরের জন্য এতটাই 'স্নেহপূর্ণ' (?) চাপ দেন যে বেচারা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন (বিবিসি বাংলা, ১৯ নভেম্বর ২০১৮)। নারায়ণগঞ্জে আরেক নারী তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা যৌতুক মামলার হুমকি দিয়ে ছেলেটির সামাজিক জীবন ধ্বংস করে দেন (আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ২০১৮)।
আর দণ্ডবিধি ৪৯৭ ধারার কথা আর কী বলব! পরকীয়ায় নারী নাকি সম্পূর্ণ 'নিষ্পাপ', আর পুরুষ বেচারা ৫ বছরের জেল আর জরিমানা! এই আইন কি পুরুষজাতির প্রতি এক চরম উপহাস নয়? (বিএমআরএফ চেয়ারম্যান)।
২০১৯: নৃশংসতার উত্থান: এক ভয়ঙ্কর বছরের আগমন
এই বছরটি পুরুষ নির্যাতনের ইতিহাসে রক্তের অক্ষরে লেখা থাকবে। নারীরা তাদের ভেতরের সুপ্ত 'হিংস্রতাকে' যেন পুরোপুরি মুক্তি দিয়েছে।
৪. লাকী মজুমদারের স্বামী হত্যা - ‘ভাগ্য’ যার সহায়: ২২ জানুয়ারি, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে লাকী মজুমদার নামের এক 'ভাগ্যবতী' নারী পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী সনাতন মজুমদারকে গলা কেটে হত্যা করেন। ভাবুন তো, কলহ মেটানোর আর কোনো উপায় ছিল না? গলা কাটাকেই একমাত্র সমাধান মনে করলেন তিনি! (বিডিনিউজ২৪, ২২ জানুয়ারি ২০১৯)।
৫. জিবন্নাহারের দেহব্যবচ্ছেদ - শিল্প না জিঘাংসা?
২৬ জানুয়ারি, গাজীপুরের গারগড়িয়ায় জিবন্নাহার তার স্বামী রফিকুল ইসলামকে ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন। এখানেই শেষ নয়, তিনি নাকি শিল্পীর নিপুণ হাতে দেহটি ছয় টুকরো করে ফেলেন! নারীদের নতুন সৃজনশীলতা? (Dhaka Tribune, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯)।
৬. রাজাপুরের 'আত্মবিশ্বাসী' ঘাতক: ২৭ জানুয়ারি, ঝালকাঠির রাজাপুরে এক নারী তার স্বামীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে সরাসরি ৯৯৯-এ ফোন করে আত্মসমর্পণ করেন। এই আত্মবিশ্বাস দেখে পুলিশও নিশ্চয়ই হতবাক হয়ে গিয়েছিল! মনে হয় হত্যাকান্ড শেষে তিনি একটি সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করতে চেয়েছিলেন! (The Daily Star, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯)।
৭. রিফাত শরীফ হত্যা - লাইভ ব্রডকাস্টে নৃশংসতা: ২৬ জুন, বরগুনায় আয়শা সিদ্ধিকা মিনী তার স্বামী রিফাত শরীফকে প্রকাশ্য দিবালোকে সহযোগীদের নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পুরুষজাতির মনে চরম ভীতি সঞ্চার করে। নারীরা এখন দল বেঁধে আক্রমণ করে! (Wikipedia, ২৬ জুন ২০১৯)।
৮. ডাঃ আকাশের আত্মহত্যা - মানসিক নির্যাতনের চূড়ান্ত রূপ: ১১ সেপ্টেম্বর, চট্টগ্রামের ডাঃ আকাশ তার স্ত্রী তানজিলা মিতুর এমন সূক্ষ্ম ও লাগাতার মানসিক নির্যাতনের শিকার হন যে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করেন। তানজিলা মিতু সম্ভবত মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন! (bdnews24.com, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯)।
২০২০: নির্যাতনের জাল বিস্তার: ঘরে ঘরে আতঙ্ক
এই বছর নারীরা যেন তাদের আক্রমণের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করেছেন।
৯. সুবর্ণা বারেইর 'প্রেমময়' ষড়যন্ত্র: ২ মার্চ, গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় সুবর্ণা বারেই তার প্রেমিককে সাথে নিয়ে স্বামী কমলেশ বারেইকে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে হত্যা করেন এবং লাশ মাটির নিচে পুঁতে ফেলেন। ভালোবাসা এখন হত্যা ও লাশ গুমের সমার্থক! (bdnews24.com, ২ মার্চ ২০২০)।
১০. নারায়ণগঞ্জে মিথ্যা মামলার চেষ্টা - নতুন ধরনের আগ্রাসন: ২০২০ সালে (তারিখ অজানা) নারায়ণগঞ্জে এক নারীর পরিবার তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা যৌতুক মামলা দায়েরের চেষ্টা করে। অর্থ আদায় বা সম্মানহানির এই চক্রান্ত পুরুষদের জন্য এক নতুন বিপদ! (আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ২০২০)।
২০২১: নৃশংসতার চরম প্রকাশ: ভয়াল বছরের পুনরাবৃত্তি
১১. শাহনাজ পারভিনের 'ভালোবাসার' অঙ্গচ্ছেদ: ১২ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার টিকাটুলিতে শাহনাজ পারভিন তার প্রেমিক সাজিব হোসেনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলেন। প্রেমিকের প্রতি এমন 'ভালোবাসা' সত্যিই বিরল! (Dhaka Tribune, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১)।
১২. হাফিজা খাতুনের 'অনৈতিক' রায়: ময়মনসিংহে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে হাফিজা খাতুন তার স্বামীকে হত্যা করেন। আদালত তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে। অনৈতিক সম্পর্ক এখন স্বামীর জীবনের চেয়েও মূল্যবান হয়ে উঠেছে! (সমকাল, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)।
১৩. ফাতেমা বেগম শিল্পীর 'বনানী হত্যা': ১ জুন, ঢাকার বনানীতে ফাতেমা বেগম শিল্পী তার স্বামী ময়না মিয়াকে হত্যা করে লাশ খণ্ড খণ্ড করেন। বনানীর মতো অভিজাত এলাকায়ও এই নৃশংসতা! (Dhaka Tribune, ১ জুন ২০২১)।
১৪. নাজমার 'ব্যাডমিন্টনের ব্যাট' হামলা: ২০ সেপ্টেম্বর, ঢাকার খিলগাঁওয়ে নাজমা কেবল 'তুচ্ছ ঝগড়ার জেরে' তার স্বামী আব্দুর রহমানকে ব্যাডমিন্টনের ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। পুরুষদের এখন ঘরেও খেলার সরঞ্জাম দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতে হবে! (সময় টিভি, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১)।
২০২২: হিংস্রতার ধারাবাহিকতা: অবিরাম তাণ্ডব
১৫. রিমা বেগমের 'মাতৃহৃদয়ের' হত্যা: ১০ মার্চ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রিমা বেগম তার নিজের দুই নিষ্পাপ (?) সন্তানকে বিষ দিয়ে হত্যা করেন। পরকীয়া প্রেমিকও ছিলো! সন্তানরাও কি এখন পুরুষতান্ত্রিকতার প্রতীক! (The Daily Star, ১০ মার্চ ২০২২)।
১৬. আনার কোলির 'শ্বশুর সাফারি': ২১ সেপ্টেম্বর, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সৈকতে আনার কোলি তার শ্বশুর মোঃ হাসানের দেহ অঙ্গ-বিচ্ছিন্ন করে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেন। পতেঙ্গা সৈকত এখন আর শুধু প্রেম নিবেদনের জায়গা নয়, লাশ ফেলার নতুন ঠিকানা! (Dhaka Tribune, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২)।
১৭. বিউটি আখতারের 'স্বামী বিনাশ অভিযান': ২৩ নভেম্বর, চট্টগ্রামের ইপিজেড-এ বিউটি আখতার তার স্বামী মোঃ শাহীনকে লাঠি ও ছুরি দিয়ে হত্যা করেন। বিউটি যখন বিস্ট! (TBS News, ২৩ নভেম্বর ২০২২)।
২০২৩: নির্যাতনের প্রকোপ: কে কাকে সন্দেহ করবে?
১৮. সোমা আক্তার সুমির 'সন্দেহের কুঠার': ২৩ ফেব্রুয়ারি, কুড়িগ্রামের রৌমারীতে সোমা আক্তার সুমি কেবল 'পরকীয় সন্দেহে' তার স্বামী সুমন মিয়াকে হত্যা করেন। সন্দেহ এখন হত্যার লাইসেন্স! পুরুষ তুই তাকাবি কোথায়? (দৈনিক যুগান্তর, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)।
১৯. রাজাপুরে 'আর্থিক লোভে' হত্যা: ১৩ মার্চ, ঝালকাঠির রাজাপুরে এক নারী আর্থিক বিবাদের জেরে তার স্বামীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ৯৯৯-এ ফোন করেন। আর্থিক লোভ এখন মহামারীর আকার নিয়েছে! (প্রথম আলো, ১৩ মার্চ ২০২৩)।
২০. ঢাকায় 'আর্থিক লোভে' হত্যা: একই দিনে, ১৩ মার্চ, ঢাকায় আরেক নারী একই কারণে তার স্বামীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। ১৩ মার্চ পুরুষজাতির জন্য সত্যিই এক 'কালো দিন' ছিল! (The Daily Star, ১৩ মার্চ ২০২৩)।
২১. খুশনায় 'ঘুমন্ত শিকার': ১৬ এপ্রিল, সিলেটের গোয়াইনঘাটে খুশনা ও তার সহযোগীরা স্বামীর খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তাকে অজ্ঞান করে গলায় ফাঁস দেন। পুরুষেরা এখন বাড়িতে শান্তিতে ঘুমোতেও নিরাপদ নয়! (The Daily Star, ১৬ এপ্রিল ২০২৩)।
২২. বানু বেগমের 'দ্বিতীয়' শিকার: ২২ জুন, ঢাকার মোহাম্মদপুরে বনু বেগম তার দ্বিতীয় স্বামীকে কাঠুরে অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে ৯৯৯-এ ফোন করেন। একজন স্বামী যথেষ্ট ছিল না, তাই দ্বিতীয়জনকেও ছাড়লেন না! (Dhaka Tribune, ২২ জুন ২০২৩)।
২০২৪: নৃশংসতার চরম প্রকাশ: কী দেখছে ভবিষ্যৎ?
এই বছর পুরুষজাতির দুর্দশার পারদ যেন সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে।
২২. জিনিয়া ইসলামের 'পারিবারিক' বলি: ২ মার্চ, পটুয়াখালীতে জিনিয়া ইসলাম পারিবারিক অশান্তির জেরে স্বামী মোঃ রাকিব ইসলামকে ছুরিকাঘাত ও ফাঁস দিয়ে হত্যা করে আত্মসমর্পণ করেন। পরিবারের অশান্তি এখন সরাসরি জীবন কেড়ে নিচ্ছে! (bdnews24.com, ২ মার্চ ২০২৪)।
২৩. সুবর্ণা বেগমের 'কর্মজীবনের অন্তিম পরিণতি': ১০ মার্চ, মানিকগঞ্জের মনোহরগঞ্জে সুবর্ণা বেগম তার স্বামী রাসেল মোল্লাকে কেবল চাকরি ছাড়তে না চাওয়ায় হত্যা করেন! চাকরি না ছাড়া এখন মৃত্যুর পরোয়ানা! (The Daily Star, ১০ মার্চ ২০২৪)।
২৪. জাফলংয়ে শিকার: সিলেটের জাফলংয়ে স্বামীকে হত্যার দায়ে স্ত্রী, পরকীয়া প্রেমিক ও তার সহযোগীসহ ৩ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত (বাংলা নিউজ ২৪, ১৬ এপ্রিল ২০২৪)।
২৫. পারভীন আক্তারের 'আন্তর্জাতিক' হত্যা ও পলায়ন: ২ জুন, ঢাকার বসুন্ধরায় পারভীন আক্তার তার স্বামী আরিফুল ইসলামকে হত্যা করে সোজা কানাডায় পালিয়ে যান! আন্তর্জাতিক অপরাধী! পুরুষদের এখন শুধু দেশের ভেতরে নয়, আন্তর্জাতিক নারী ঘাতকদের থেকেও সাবধানে থাকতে হবে! (bdnews24.com, ২ জুন ২০২৪)।
২৬. সবিনা আক্তারের 'ফাঁসীর রায়': ৮ ডিসেম্বর, ঢাকার চকবাজারে সবিনা আক্তার নাজরুল ইসলামকে নাকি বঞ্চনা ও প্রতারণার 'গুরুতর' অভিযোগে গলায় ফাঁস বেঁধে হত্যা করেন। নারীরা এখন নিজেরাই বিচারক এবং জল্লাদ! (bdnews24.com, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪)।
২৭. রুমার 'বিষাক্ত' প্রেম: ১৫ নভেম্বর, নারায়ণগঞ্জে রুমা তার প্রেমিক জসিম উদ্দিন মাসুমকে ওষুধ মেশানো পানীয় খাইয়ে হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করেন। প্রেমিকারা এখন সাক্ষাৎ যমদূত! (The Daily Star, ১৫ নভেম্বর ২০২৪)।
২০২৫: নতুন বছর, পুরনো আতঙ্ক: ভবিষ্যতের কালো ছায়া
নতুন বছর শুরু হয়েছে, আর এই ধারা অব্যাহত।
২৮. নুর জাহানের 'পঞ্চম' প্রতিশোধ: ২৩ ফেব্রুয়ারি, চট্টগ্রামের বলশতারায় নুর জাহান তার স্বামী আলাউদ্দিনকে গোপন 'পঞ্চম বিবাহের' অভিযোগে (!) ছুরি দিয়ে হত্যা করেন। ভেবে দেখুন, একজন পুরুষ যদি এতগুলো বিয়ে করার 'সাহস' করে, তার কী ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে! (Prothomalo, bdnews24.com, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)।
বোনাস
২৯. একজন বাবার পরাজয়: নাকানো বনাম শরীফ মামলা
ইমরান শরীফ ও নাকানো এরিকোর দুই সন্তানের জিম্মা নিয়ে আইনি লড়াইয়ে বাবা ইমরান শরীফের পরাজয় ঘটেছে। ২০২১ সালে সন্তানদের বাংলাদেশে আনার পর মা নাকানো এরিকো আদালতে মামলা করেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে, পারিবারিক আদালত দুই শিশু নাকানো জেসমিন মালিকা ও নাকানো লায়লা লিনাকে মা নাকানো এরিকোর জিম্মায় দেওয়ার রায় দেন, বাবা দেখা করার সুযোগ পান। (সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন, জানুয়ারি ২০২৩)।
২০২৩ সালের মার্চ মাসে, হাইকোর্ট বাবার আপিল খারিজ করে পারিবারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন, অর্থাৎ মায়ের জিম্মাই নিশ্চিত হয়। (সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন, মার্চ ২০২৩)। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, আপিল বিভাগ বাবার লিভ টু আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ আদালতেও সন্তানদের জিম্মা মায়ের পক্ষে বহাল থাকে, যা বাবার আইনি লড়াইয়ের চূড়ান্ত পরাজয় নির্দেশ করে। (সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন, ফেব্রুয়ারি ২০২৪)।
৩০. বনানীতে ছাত্র খুন! কারণ? অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের দেখে হাসা!
এই 'হাসি অপরাধে' নাকি ৩০-৪০ জন মিলে কোপালো। মামলা হলো ৮ জনের নামে। মূল আসামিদের একজন (যিনি আবার ছাত্রনেতাও বটে) বুদ্ধি করে আত্মগোপন করলেন কোথায়? সোজা মামার বাড়ি, কুমিল্লায়!
তবে পুলিশ গভীর রাতে মামার বাড়ি থেকেই তাকে ধরে ফেলেছে। ঢাকায় হাসা বিপজ্জনক। বিশেষ করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের দেখে। আর ঝামেলায় পড়লে মামার বাড়িই ভরসা, তবে খুব সুরক্ষিত নয়!
পরিশেষ
২০০৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, পুরুষজাতি এক ভয়াবহ সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে। নারীদের এই নতুন, ভয়ংকর রূপ পুরুষদের অস্তিত্বের জন্য চরম হুমকি। সময় এসেছে পুরুষদের এই ঘুম ভাঙার! তাদের তথাকথিত পৌরুষ ঝেড়ে ফেলে নিজেদের অসহায়ত্বকে মেনে নেওয়ার!
আর হ্যাঁ, হয়তো এখন থেকেই পুরুষদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো উচিত – যেমন কিচেন নাইফ থেকে কীভাবে বাঁচতে হয়, বা কীভাবে বেলনচাক্কির আঘাত প্রতিহত করতে হয়। সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই 'ভয়াল নারী আগ্রাসন' থেকে পুরুষজাতিকে বাঁচানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন আর শুধু জরুরি নয়, এটি এক অস্তিত্বের লড়াই!
এবার সত্যিই একটা 'পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আইন' দরকার? কে জানে, হয়তো সেটি পাশ হওয়ার আগেই পুরুষজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে!
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণরূপে স্যাটায়ারধর্মী। এখানে ব্যবহৃত ভাষা, অতিরঞ্জন এবং বিদ্রূপ কেবল হাস্যরস সৃষ্টি নয় বরং একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপস্থাপনার ঢঙকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে বর্ণিত প্রতিটি ঘটনা বা পরিসংখ্যানের নিরপেক্ষ সত্যতা যাচাই করা হয়েছে। এই ঘটনাগুলো মোট ঘটনার একটি ভগ্নাংশ মাত্র। এছাড়াও পুরুষ নির্যাতন বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তুলনামূলক কম আলোচনা দেখা যায়।
ছবি: সংগৃহিত
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



