somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

তাকে দেখেই মনে হলো—এই তো, আমার গল্পের শুরু!

১০ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আপনি কি জীবনে এরকম পরিস্থিতির সাথে মুখোমুখি হয়েছেন? বিশেষ করে কোনো ঘটনা ঘটার সময় আপনার মনে হয়েছে এমন ঘটনা আপনার জীবনে আগেও ঘটেছিলো! একই রকম পরিস্থিতি এবং একই রকম অভিজ্ঞতার শিকার আপনি আগেও হয়েছেন। এই একই জায়গায় আপনি আগেও ছিলেন, এই একই বিষয়গুলো আপনি আগেও দেখেছেন। এবং, ঐ একই অনুভূতি আপনার মনে আগেও জেগেছিলো।

কোথাও বেড়াতে গিয়ে আপনি একজন মেয়ে কে দেখে হয়তো অনুভব করেছেন, আপনাদের দেখা হবার কথা ছিলো (মেয়েদের ক্ষেত্রে ছেলে)। আপনি ঐ ব্যক্তির যত নিকটে যান তত বেশি আপনার তাকে ভালো লাগে। তার সাথে সময় কাটাতে, ঘুরে বেড়াতে, কথা বলতে আপনার খুব ইচ্ছে করে। কিন্তু নির্দিষ্ট মহলে একাধিক ব্যক্তির উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ঐ মেয়ে/ছেলে কেই আপনার ভালোলাগে। এবং কেন বা কী কারণে আপনার তাকে ভালো লাগে সে বিষয়ে আপনি মোটেই ওয়াকিবহাল নন। ব্যস! আপনার তাকে ভালোলাগে।

আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো, যখন আপনারা একে অন্যের সাথে কথা বলতে শুরু করেন তখন খুঁজে পেতে পারেন আপনাদের প্রিয় শিল্পী, প্রিয় কবিতা, প্রিয় উপন্যাস, প্রিয় সিনেমা, প্রিয় রঙ, প্রিয় ভ্রমণের জায়গা থেকে অনেককিছুই অদ্ভুতভাবে মিলে যাচ্ছে। সাময়িক সময়ের জন্য হলেও মনে হতে পারে, আপনাদের একে অন্যের সাথে এতসব মিল কাকতালীয় হতে পারে না। কোনো একটা গোপন সুতো আছে আপনাদের মধ্যে। কোনো একটা অদৃশ্য শক্তি আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।

আবার আমি কিন্তু ‘দেজা ভু (Déjà vu)’ নিয়ে কথা বলছি না। আমি একটি অদৃশ্য সুতোর কথা বলছি। যে সুতোয় জড়িয়ে আছে আপনাদের পরিচিত হওয়া, বা তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু। আপনি যখন তার সাথে থাকেন তখন আপনার নিরাপদ অনুভব হতে পারে, দুশ্চিন্তা সরে যেতে পারে, এমনকি জীবনে নতুন করে স্বপ্ন দেখাও শুরু করতে পারেন। আপনার কাছে ঐ ছেলে/মেয়ে ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী বলেও মনে হতে পারে। তার কথায়, তার চলায়, তার ভঙ্গিতে বা স্টাইলে আপনি ইতোমধ্যেই মুগ্ধ।

এখন এই ঘটনা ঘটতে পারে বিবিধ জায়গায়। শিক্ষাজীবনে কলেজ ক্যাম্পাসে, কর্মজীবনে অফিসের লিফটে অথবা কোনো কনসার্ট বা ভ্রমণে কোথাও বের হলে। একজন অপরিচিত/অপরিচিতার সাথে পরিচয় হয়ে যেতে পারে। সাধারণত এই সব মহলে অনেক মানুষের উপস্থিতি বিদ্যমান থাকলেও আপনার নির্দিষ্ট একজন মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।

মনে হতে পারে, আপনার ঐ নির্দিষ্ট মানুষের সাথে অনেক আগে থেকেই পরিচয় হওয়ার কথা ছিলো। অবশ্য আপনাদের পরিচয়ও ঘটে সাথে অনেক সময় একে অন্যের সাথে সময়ও অতিবাহিত করার সুযোগ ঘটতে পারে।

প্রশ্ন হলো, এত মানুষের ভীড়ে কেন একজন কে-ই এত বেশি ভালোলাগে? মানে যোগ্যতায়, ক্লাস বিভাজনে, মেধায়, সৃজনশীলতায়, ব্যক্তিগত অবস্থান বিবেচনায় তার চেয়েও ভালো মেয়ে/ছেলে ওখানে উপস্থিত আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আপনার একজন নির্দিষ্ট মানুষকে বেশি ভালোলাগে। কেউ কেউ এই ধরণের সম্পর্ককে প্রেমের সম্পর্কে রুপান্তরিত করেন। আবার কেউ কেউ ভালো বন্ধুও হয়ে যান। বন্ধুত্ব হোক বা প্রেম, আপনি যখন তার সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করেন তখন কিছু আশ্চর্যজনক ক্লু (সূত্র) খুঁজে পেতে পারেন।

আর এই সূত্রগুলোও বেশ অদ্ভুত হতে পারে। তার ছোটবেলার অ্যালবামে খুঁজে পেতে পারেন তার পার্শ্বে আপনি খেলছিলেন। তার সাথে হয়তো নয়, কিন্তু ঐ ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে আপনি আছেন। আপনি খুঁজে পেতে পারেন সে আপনাকে ওভাবেই মূল্যায়ন করে যেভাবে আপনি তার কাছে আপনার মূল্যায়ন চান। চাই আপনি ভুল হোন বা ঠিক, সে আপনাকেই অন্ধভাবে অনুসরণ করছে।

আরো ভয়ানক বিষয় হলো, আপনি জীবনে ঐ পর্যন্ত পৌঁছেছেন তার সমস্ত যুক্তি প্রমাণ করতে পারে, আপনাদের দেখা হওয়া নিশ্চিত ছিলো। অথবা, আপনি ভবিষ্যতে যেসব করতে ইচ্ছুক তার হাত ধরে আপনি সেসকল বিষয়ের সাথে পরিচিত হতে পারছেন।

খুব আশ্চর্যজনকভাবে, আপনি মনে মনে যা যা ভাবছেন বা যা নিয়ে খুবই চিন্তিত, সে এসে এক নিমিষেই তা আপনাকে দেখেই বলে দিতে পারছে। আপনার বিশ্রাম দরকার কিংবা আপনার আরো পরিশ্রমী হওয়া দরকার তার সিদ্ধান্ত নিতেও আপনাকে সাহায্য করছে এবং আপনার সেটাও যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হতে পারে।

হঠাৎ কোনো সিনেমা বা উপন্যাস নিয়ে আলাপ উঠতেই সে বলে দিচ্ছে তার পছন্দের দৃশ্য বা সংলাপ; যেটা কিনা আপনারও পছন্দের। আপনার জীবনে অতীতে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনার যোগসূত্র বারবার প্রমাণ করছে, আপনার তার সাথে দেখা হওয়া নিশ্চিত ছিলো।

কিছুটা ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউড সিনেমা ‘Anjaana Anjaani’-এর মত। রণবীর কাপুর ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সাথে যে হঠাৎ পরিচয় এবং সেখান থেকে প্রেমের গল্প পর্যন্ত। মানে হলো, পৃথিবীতে কোনকিছুই বিচ্ছিন্ন (Random) ঘটনা নয়। সব ঘটনার সাথে একটি অদৃশ্য সুতো যুক্ত থাকে। এমন অনেক বাংলাদেশী ছেলে/মেয়ে আছে যাদের সম্পর্ক দেশেরও বাইরে। কিন্তু পুরো গল্প যদি একটি নির্দিষ্ট ছকে বা প্যাটার্নে সাজানো যায় তাহলে দেখবেন, ওদের একে অন্যের সাথে দেখা হওয়াটা আবশ্যিক ছিলো।

আবার সম্পর্কের ক্ষেত্রে, প্রত্যেকটি সম্পর্কই কোন না কোন কারণে আমাদের জীবনে এসে থাকে। শেখানোর জন্য বা একসাথে শেখার জন্য।

আমি এতক্ষণ কথা বলছিলাম আমাদের ভাগ্যের এক অদৃশ্য সুতো নিয়ে। এই ধরণের অদৃশ্য সুতোকে বলা হয় ‘অদৃশ্য স্ট্রিং তত্ত্ব (The Invisible String Theory)’। এই ধারণা হলো আধুনিক পপ সংস্কৃতিতে জনপ্রিয় একটি আধ্যাত্মিক বা রোমান্টিক বিশ্বাস। এই আধুনিক বিশ্বাসের শেকড় প্রোথিত রয়েছে প্রাচীন পূর্ব এশীয় লোককাহিনীতে, যা ‘ভাগ্যের লাল সুতো (Red Thread of Fate)’ নামে পরিচিত।

চীনা পুরাণ অনুসারে, বিয়ের দেবতা ‘ইউ লাও (月老)’ সেইসব মানুষের গোড়ালিতে একটি অদৃশ্য লাল সুতো বেঁধে দেন, যাদের একে অপরের সাথে দেখা হওয়া এবং জীবন কাটানো ভাগ্যে লেখা থাকে। এই সুতো অদৃশ্য এবং অবিচ্ছেদ্য।

কে-ড্রামা ভক্তদের জন্য এটা বুঝা খুবই সহজ। ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিখ্যাত কে-ড্রামা ‘Queen of Tears’ যারা দেখেছেন তারাও এ বিষয়ে ভালো ধারণা রাখতে পারেন। ড্রামাটি আক্ষরিক অর্থেই অদৃশ্য স্ট্রিং বা ভাগ্য দ্বারা নির্ধারিত সম্পর্কের ধারণার একটি নিখুঁত উদাহরণ। এই ড্রামার গল্পে দেখানো হয়েছে যে, প্রধান দুই চরিত্র—হং হে-ইন (Hong Hae-in) এবং বেক হিউন-উ (Baek Hyun-woo)—শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবেই একে অপরের প্রেমে পড়েনি, বরং তাদের সংযোগ ছিল আরও অনেক গভীর এবং পুরনো। মানে শৈশবে একটি ‘MP3 Player’ কীভাবে তাদের পুরো জীবনকে প্রভাবিত করছে তা দেখার মত ছিলো।

অবশ্য এই বিশ্বাসটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে টেইলর সুইফট এর বিখ্যাত ‘Invisible string’ গানে। এই দর্শনটি খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে: “And isn't it just so pretty to think, all along there was some invisible string tying you to me?”

অদৃশ্য স্ট্রিং তত্ত্ব মূলত ভালোবাসা এবং মানুষের মধ্যকার সংযোগকে দেখার একটি কাব্যিক ও আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। এটি বিজ্ঞান নয়, বিশ্বাস। এটি আমাদের শেখায় যে জীবনের বিশৃঙ্খলার মাঝেও একটি গভীরতর অর্থ ও সংযোগ থাকতে পারে। এটি আমাদের জীবনের গল্পকে আরও বেশি আকর্ষণীয়, জাদুকরী, অর্থবহ এবং সুন্দর করে তোলার একটি শক্তিশালী উপায়।

একটু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘Reddit’ ঘাঁটলেও আমরা দেখতে পাই, পৃথিবীতে অনেক মানুষ এই একই ধরণের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ১১:১৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×