আজকের দিনে আমরা জানি যে আন্তর্জাতিক মিডিয়া, হোক সিটি প্রিন্ট মিডিয়া, অডিও মিয়িা বা কম্পিউটার বা ইনফরমেশন টেকনোলজি। সিটি আন্তর্জাতিক খবরের কাগজ, আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিনঃ রেডিও ব্রডকাস্টিং ষ্টেশন, ওয়েবসাইট অথবা টিভি স্যাটেলাইট চ্যানেল। আমরা দেখছি যে এগুলোতে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যার বোমা ফাটাচ্ছে। এছাড়াও দেখি আন্তর্জাতিক মিডিয়া ইসলাম সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা পোষণ করে। আমরা দেখি যে আন্তর্জাতিক নিউজ চ্যানেল, তারা এমনটি বলছে যে যুদ্ধ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। কিংবা কিছু আন্তর্জাতিক নিউজ চ্যানেল আছে তারা বলছে শান্তির জন্য যুদ্ধ। তারা এখানে যেটি করছে তা শান্তির জন্য যুদ্ধ নয় শান্তির সাথে যুদ্ধ। অন্য কথায় শান্তির ধর্মের সাথে যুদ্ধ। অর্থাৎ ইসলামের সাথে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মিডিয়া সামগ্রিকভাবে আমরা দেখি যে, তারা ইসলামকে এমনভাবে তুলে ধরেছে যেন এটি একটি সন্ত্রাসের ধর্ম। এটি এমন ধর্ম যেটি এই পৃথিবীতে শান্তি চায় না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুসলিমরা, আমরা কেউ তাদের মিথ্যা প্রচারের প্রতিবাদ করছি না। এই আন্তর্জাতিক মিডিয়া বিভিন্ন কলাকৌশলের মাধ্যমে ইসলামকে সম্পূর্ণ ভুলভাবে তুলে ধরছে।
মিডিয়া ইসলামকে যেভাবে অপবাদ দেয় তার প্রথম কৌশলটি হলো, প্রায়ই দেখা যায় তারা যেটি করে মুসলিমদের মধ্য থেকে কিছু ভাড়াটিয়া কুলাঙ্গারকে তুলে ধরে। আর প্রচার করে যে এটাই হলো মুসলমানদের দৃষ্টান্ত। তারা এভাবে বলে যে ইসলাম হচ্ছে এমন একটি ধর্ম তারা অন্যায়কে উৎসাহ দেয়। আমরাও মানি যে আমাদের মধ্যেও কুলাঙ্গার আছে। কিন্তু কিছু মুসলিম আছে যারা অন্যায় কাজ করে। মিডিয়া এই সব মুসলিমদের তুলে ধরে এবং প্রচার করে যে এরাই হলো ইসলামের দৃষ্টান্ত। প্রচার করে যে ইসলাম এমন একটি ধর্ম যারা এ সব অন্যায় কাজ করাকে উৎসাহ দেয় এবং এই কাজগুলো মানবতার বিরুদ্ধে। আমরা সবাই একথা জানি আন্তর্জাতিক মিডিয়া বলে যে ইসলামি মাদরাসাগুলো নিষিদ্ধ করে দেয়া উচিত। কারণ তারা মানুষকে বদলে ফেলে তৈরি করে একজন সন্ত্রাসীকে। তারা এই পৃথিবীর শান্তিকে নষ্ট করে দেয়।
আল-হামদুলিল্লাহ আমি এরকম হাজারও লোককে চিনি যে লোকগুলো পাস করেছে ইসলামিক মাদরাসা থেকে। আমি এমন একজনকেও দেখিনি যে লোকটি পৃথিবীর শান্তিতে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করে। তার মানে এই না, যারা মাদরাসা থেকে পাস করে বের হয় তারা অন্যায় কাজ করে না। কিছু লোক থাকতে পারে এরা সব মিলিয়ে ১% এর বেশি হবে না। কিন্তু মিডিয়া প্রচার করে যে কুলাঙ্গারই হলো মুসলিমদের দৃষ্টান্ত এবং যে লোকটি কোন ইসলামিক মাদরাসা থেকে পাস করেছে সে এই পৃথিবীর শান্তিতে ব্যাঘাত ঘটাতে চায়। ইতিহাস আমাদের এই কথা বলে।
পৃথিবীর যে লোকটি মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে হত্যা করেছে সে লোকটি কে? কে সেই লোক? তিনি হলেন ‘হিটলার’। এইজন্য অবশ্য তিনি কোন পুরস্কার পাবেন না। এটা সবাই জানে। আমি প্রশ্ন করি হিটলার কোন মাদরাসা থেকে পাস করেছিলেন? হিটলার কোন মাদরাসার ডিগ্রি নিয়েছিলেন। তাছাড়াও ইতিহাস দেখেন, আর এক ঘৃণিত ব্যক্তি মুসোলিনি। মুসোলিনি কোন মাদরাসা থেকে পাস করে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে?
আমরা আরো জানি যে ‘মাফিয়া’ কুখ্যাত ড্রাগ পাচারকারী তারা কোন মাদরাসার ডিগ্রিধারী। একটি লিস্ট করেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপরাধীদের লিস্ট। মিডিয়া যেভাবে বলে তেমন না। সত্যিই যদি কোন প্রমাণ থাকে আপনার কাছে যে, সে লোক অপরাধী। মিডিয়া কাকে সন্ত্রাসী নাম্বার এক বলে আমি তেমন বলছি না কোন প্রমাণ ছাড়া। যে লোকগুলো আসলেই অপরাধী, যেখানে অপরাধের প্রমাণ আছে যে তারা পৃথিবীর শান্তি নষ্ট করেছে। তাদের পরিচয় জানার জন্য চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে আপনি ১% লোকও পাবেন না, যারা মাদরাসায় লেখাপড়া করেছে। তারা লেখাপড়া করেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমিও সেখান থেকে পাস করেছি। হোক সেটি দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্য, আমিও তেমনি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছি। মুম্বাই থেকে পাস করেছি, স্কুল পাস করার পর মেডিকেল কলেজে পড়েছি। যেভাবে একজন ডাক্তার পাস করে।
এভাবে মিডিয়ার মধ্যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কিছু ভাড়াটিয়া কুলাঙ্গার তুলে ধরে বলে যে এরাই মুসলিমদের দৃষ্টান্ত। যদি কেউ ইসলাম ধর্মকে বিচার করতে চায় তাহলে মুসলিমরা বা মুসলিম সমাজ কি করে সেটি বিচার করলে হবে না। আপনারা যদি ইসলাম ধর্মকে বিচার করতে চান আপনাদের ইসলামকে বিচার করতে হবে ইসলামের মূল ধর্ম গ্রন্থগুলো দিয়ে। ইসলাম ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থগুলো হলো পবিত্র কোরআন এবং সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা
মনে করেন আপনি একটি গাড়ি পরীক্ষা করে দেখবেন গাড়িটি কতখানি ভাল এবং বাজারের সবচেয়ে নতুন গাড়িটি। হতে পারে মার্সিডিজ, সিক্সহানড্রেড, এসিএল, মার্কেটে নতুন আসেছে। এখন একজন লোক যে গাড়ি চালাতে জানে না স্টিয়ারিং হুইলের পিচনে বসলো। তারপর গাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনা ঘটালো। আপনি কাকে দোষ দিবেন। গাড়িকে না ড্রাইভারকে? দোষ নিশ্চয় গাড়িকে দিবেন না। যদি কেউ গাড়ি চালাতে না জানে আর সেটিকে নিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায় আপনারা গাড়িকে দোষ দিবেন না। যদি পরীক্ষা করে দেখতে চান গাড়িটি কতখানি ভাল, এর পিকআপ কতো, নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো কেমন, গাড়িটির স্পিড কত, গিয়ারের অবস্থা কি? তারপর বলতে পারেন গাড়িটি কতখানি ভাল। আর যদি গাড়িটি পরীক্ষা করে নিতে চান চালু করে, তাহলে স্টিয়ারিং হুইলের পেছনে বসান একজন দক্ষ চালককে।
একইভাবে যদি কোন মুসলিমকে দিয়ে পরীক্ষা করতে চান যে ইসলাম কতখানি ভাল, এ বিষয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা
অর্থ: যখন তোমরা কোন কাফিরদের দেখবে তাদের মেরে ফেলবে।
আর যদি কোরআন খুলেন এই আয়াতটি দেভবেন এবং অনুবাদটিও দেখবেন। ‘যখনি তোমরা কাফিরদের দেখবে তাদেরকে মেরে ফেলবে’। তবে এটি প্রসঙ্গ ছাড়া উদ্ধৃতি। তারা কোরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি দেয় কোন প্রসঙ্গ ছাড়া। হাদীসের উদ্ধৃতিও তারা দেয় প্রসঙ্গ ছাড়া। এর প্রসঙ্গটা এর প্রথমদিকের আয়াতে আছে, বলা হয়েছে যে, একটি শান্তি চুক্তি হয়েছিল সেখানকার মুসলিম আর মক্কার মুশরিকদের মধ্যে এবং মক্কার মুশকিরাই সেই শান্তি চুক্তির শর্তগুলো ভেঙ্গেছিল। আর তখনি আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা তাওবার ৫নং আয়াত নায়িল করলেন, তিনি এখানে মুশরিকদের উদ্দেশ্য চূড়ান্ত প্রস্তাবটি দিয়েছেন, ‘তোমরা আগামী ৪ মাসের মধ্যে সব ভুল শুধরে ফেল, না হলে তোমাদের যুদ্ধ করতে হবে’ আর সেই যুদ্ধে আল্লহ বলেছেন মুসলিমদের উদ্দেশ্য করে, ‘তোমরা ভয় পেও না, যুদ্ধ কর। যেখানেই তোমাদের শত্র“দের দেখবে মেরে ফেল।’
যেকোন আর্মি জেনারেল তার সৈন্যদের মনোবল বাড়াতে স্বাভাবিকভাবেই একথা বলবেন- যদি শত্র“দের দেখ মেরে ফেল। একথা বলবেন না যে, যেখানে তোমরা শত্র“দের দেখবে সেখানে তোমরা মরে যাও। তাই এখানে যুদ্ধ ক্ষেত্রে কথা বলা হচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন- ‘শত্র“রা যখন তোমাদের আক্রমণ করতে আসবে তোমরা ভয় পেওনা, যুদ্ধ করো এবং তাদের দেখলেই মেরে ফেল’। চিন্তা করুন যদি এখানো আমেরিকা আর ভিয়েতনামের যুদ্ধতি চলতে থাকতো এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বলতেন যুদ্ধক্ষেত্রে অথবা কোন আর্মি জেনারেল সৈন্যদের মনোবল বাড়াতে যে, তোমরা যেখানেই ভিয়েতনামীদের দেখবে মেরে ফেলবে। এটা হলো প্রসঙ্গ। কিন্তু যদি আমরা প্রসঙ্গ ছাড়া বলি যে আজকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বলেছে যে, যেখানেই তোমরা ভিয়েতনামীদের দেখবে তাদের মেরে ফেলবে। তাহলে লোকজন বলতো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট একটা কসাই। এটা প্রসঙ্গ ছাড়া উদ্ধৃতি।
সকল সমালোচককেই দেখেছি হয়তো এখানেই শেষ করে, না হয় একটি আয়াত বাদ দিয়ে দেয়। আর অরুনশুরি ইসলামের একজন বিখ্যাত সমালোচক। ভারতে অর্থাৎ এই উপমহাদেশে তিনি তার বইতে লিখেছেন ‘দি ওয়ার্ল্ড অব ফতোয়াদ’ তিনি সূরা তওবার ৫নং আয়াতের পর লাফ দিয়ে চলে গেছেন ৭ নং আয়াতে। কারণ এই ৬নং আয়াতেই তার এ অভিযোগের উত্তর দেয়া আছে। সূরা তাওবার ৬নং আয়াতে বলছে, কাফিরদেরকেও অর্থাৎ শত্র“দের কেউ আশ্রয় প্রার্থনা করলে শুধু সাহায্য করলে হবে না; বলা হয়েছে তাদের নিরাপদ কোন স্থানে পৌঁছে দেবে, যেন সে আল্লাহর বাণী শুনতে পায়’।
একজন সবচেয়ে দয়াবান, সবচেয়ে দয়াবান আর্মি জেনারেল হয়তো এমনটি বলবেন যে, শত্র“ যদি চলে যেতে চায়, তাহলে তাকে বলে যেতে বল। কিন্তু কোরআন এমনটি বলছে না। কোরআন বলছে শত্র“রা যদি শান্তি চায় তাহলে তাদের নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দাও এবং কোরআনের প্রায় সব আয়াতেই যেখানে বলা হয়েছে যুদ্ধের কথা যুদ্ধ ক্ষেত্রের কথা, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, অবিচারের বিরুদ্ধে। তারপরের আয়াতে বলা হয়েছে যে, শান্তিই সবচেয়ে ভাল ভাল সব জায়গায়, কারণ ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম। ইসলামের অপবাদ দেয়ার জন্য তারা ৩য় কৌশলটি গ্রহণ করে, তা হলো তারা যে সমস্ত উদ্ধৃতি তার ভুল ব্যাখ্যা করে হোক সেটি পবিত্র কোরআন থেকে কিংবা মহানবী (সা
এভাবেই বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন কবে মিডিয়া ইসলামের বদনাম করে। আর এখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দেখি যে মুসলিমদের বলছে মৌলবাদী, চরমপন্থী আর সন্ত্রাসী এবং বেশির ভাগ মুসলিমই অপরাধে ভোগে এবং বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তারা বলে যে আসলে কিছু মুসলিম এসব কাজ করে থাকে কিন্তু আমি মৌলবাদী না, আমি চরমপন্থী না, বেশির ভাগ মুসলমানই অপরাধবোধে ভোগে। কিন্তু এখানে আমরাও উত্তর দিতে পারি। মুসলিমরা তারা হবে দাইয়্যি। ইসলামের বাণী অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়া প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য আবশ্যক। পবিত্র কোরআনে (সূরা আলে ইমরানের আয়াত নং ১১০) এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির জন্যই তোমাদের পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছে, কারণ তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দেও, অসৎকাজের নিষেধ করো এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করো’।
আমাদের বলা হয়েছে শ্রেষ্ঠ উম্মত। কারণ আমরা সৎকাজের নির্দেশ দেই, অসৎ কাজের নিষেধ করি এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করি। আমরা যদি সৎকাজের নির্দেশ না দেই, অসৎ কাজের নিষেধ না করি তখন আমাদের মুসলিম বলা যাবে না। বলা যাবে না শ্রেষ্ঠ উম্মত। মুসলিম হিসেবে আমাদের গর্ব করা উচিত। এখন আমাদের টেবিলটা উল্টে দিতে হবে। আমার মনে আছে, যখন মার্শাল আর্ট শিখতাম তরুণ বয়সে, এখনো তরুণই আছি ‘মাশ্আল্লাহ’। তখন আমি স্কুলে পড়তাম। আমরা শিখতাম মার্শাল আর্ট, হোক সেটি জুডু বা জুজুৎস, সেখানে প্রতিপক্ষের শক্তি দিয়েই তাকে ঘায়েল করা হতো। বাধা দিয়ে নয়। কেউ আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে, সে যদি আকারে বড় হয়। কিন্তু আমাকে তো আপনারা দেখছেন সাইজে আমি হালকা পাতলা। তারপরও আমি সামনে কোন রাখি না। এটাও মিডিয়ার কৌশল। তারা শরীরটাকে ঢেকে রাখে কিন্তু আমি চাই আমরা বডি লেঙ্গুয়েজ সবই দেখেন। তাহলে বড়সড় কোন লোক যদি আমাকে ধাক্কা দেয়, তাকে বাধা না দিয়ে ঐ ধাক্কাকেই কাজে লাগিয়ে তাকে ফেলে দিতে হবে। যত বড় আকার তত সহজে ফেলা যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ১১:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




